বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

"ছেলেবেলা"

"স্মৃতির পাতা" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান Merina Afrin Mou (০ পয়েন্ট)

X -আম্মু খেলতে যাই? --না, পড়তে বস। -একটু খানি আম্মু। প্লিজ। ......দ্রুম দ্রুম। ওহ, এটা কিল দেওয়ার শব্দ। বিকেল বেলা খেলতে যেতে চাওয়ার অপরাধ। , ১১ বছরের বালক আদর। মা-বাবা শখ করে নাম রেখেছে আদর। যদিও আদরের চেয়ে শাসনের মুখটাই বেশি দেখে অভ্যস্ত সে। মা-বাবার স্বপ্ন। ডাক্তার হবে তাদের আদর। আদরের সব বায়না গুলোর উত্তরে একটাই জবাব, আগে পড়াশোনা করে বড় হও, তারপর অনেক সময় পাবে। কিন্তু এটুকু কে বোঝাবে, ছেলেবেলা তো আর দ্বিতীয়বার ফিরে পাওয়ার নয়। সে যাক গে, তাও যদি আদর ডাক্তার হয়। , ক্লাসের বন্ধুরা আজকাল স্কুলের বই ছাড়াও আরও যেন কিসব বই পড়ে। আদর আগ্রহ নিয়ে দেখতে যায়। ওগুলো গল্পের বই। মজার মজার গল্প। একটুখানি পড়ে অনেক ভাল লাগল। কিন্তু ক্লাসের সময়। তাই পুরোটা পড়ার সময় হয়ে ওঠেনি। তাই একটা বই আদর তার বন্ধুর কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে যায় বাসায়। রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ। এখন একটু অবসরের মত পেয়েছে আদর। আর আম্মুও অন্য ঘরে শুয়ে আছে। এই ফাকে গল্পের বইটা পড়া যায়। কিন্তু সময় দীর্ঘক্ষণ হল না। আদরের মা চলে এসেছে। , ....এবং আবারো দ্রুম দ্রুম। এবার বোধয় শব্দ টা পরিচিত ই লেগেছে। এবার ও বিশাল অপরাধ করেছে আদর। স্কুলের বই বাদ দিয়ে হাবিজাবি বই পড়ছে। স্কুলের বই পড়লেই তো আরো ভাল রেজাল্ট করা যাবে। এবং রেজাল্ট কার্ড নিয়ে গোল্ড ম্যারি বিস্কুট খেতে খেতে পাশের বাসার ভাবিকে বলা যাবে, ছেলে আমার বড় ভালো। , আদরের দিনগুলো এভাবে চলতে থাকে। একরাশ হাহাকার তার বুকে। যখন সে ছোট্ট এক জানালা দিয়ে খোলা আকাশের এক কোনে ঘুড়ি উড়তে দেখে। ঘুড়ি টা হঠাৎ জানালার ফ্রেমের বাইরে চলে যায়, আদরের মন মানে না। পড়া কেন, কোন কিছুতেই তার মন বসে না। শুধু আক্ষেপ। একটু প্রকৃতির সাথে মিশে যাওয়ার ইচ্ছা। একটু খোলা আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর ইচ্ছা। একটু খোলা আকাশের নিচে বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়ার ইচ্ছা। , এসব ইচ্ছা আদরের মনে সারাক্ষম ঝড় তোলে। কিন্তু মায়ের ভয়ে সে টেবিলেই সীমাবদ্ধ। সময় পেরোতে থাকে। স্কুলের ফাইনাল পরীক্ষার রেজাল্ট বেরিয়েছে। রোল হয়েছে ৪০। ......দ্রুম দ্রুম দ্রুম দ্রুমদ্রুম দ্রুমমম। এ শব্দের সাথে পরিচয় তো আগেই হয়েছে। কারন টা ও অজানা হওয়ার কথা নয়। , আদরের মন আজ খুব খারাপ। কেন সে অন্য সবার মত স্বাভাবিক জীবন কাটাতে পারে না। সকাল থেকে রাত কেন তাকে একটাই শব্দ শুনতে হয়, পড়,পড়,পড়। বাইরের আকাশ, বাইরের বাতাস, এসব কেন তার কাছে অপরিচিত। আদর ভিতর থেকে কুকড়ে যাচ্ছে। বাল্যকালের এই চাপ যেন তাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। , আদর ঘরের দরজা বন্ধ করে বসে আছে। নিরবে কেঁদে যাচ্ছে। আদরের মা ও ঘরে এখনো ওকে বকেই যাচ্ছে। আদর ভাবছে, মা ওকে ভালোইবাসে না। মা শুধু চায় ডাক্তার। কিন্তু আদর তো খারাপ রেজাল্ট করেছে। তাহলে ওর আর ডাক্তার হওয়া হবে না। তার চেয়ে মরে যাওয়া ই ভালো। , মনের আবেগ গুলো কাগজে কলমে লিখছিল আদর। হঠাৎ সুইচ বোর্ডের দিকে চোখ যায়। সুইচ বোর্ডের কাট আউট ধরতে গিয়ে একবার শক খেয়েছিল আদর। সেই কাট আউটের দিকে তাকিয়ে আছে সে। , আদরের মা হঠাৎ ছটফট আওয়াজ পায়। কি হল! কি হল! সাথে গোঙরানির আওয়াজ আসছে। এমন বিভৎস আওয়াজ কেন আসছে! ভয় পেয়ে যায় আদরের মা। আদরের বাবা কে ডাকে ওর মা। দুজনেই ভয় পেয়ে যায় অনেক। দরজাও বন্ধ। তারা আঁতকে উঠছে। দরজা ভাঙতে আর দেরী করে না তারা। দরজা ভেঙে যা দেখে, তা দেখার জন্য তারা একদমই প্রস্তুত ছিল না। , কিছু না ভেবেই হুরমুর করে পাশের বাসার ডাক্তার সাহেব কে ডেকে আনা হয়। আদরের মা বাবা শুধু বলছে, ডাক্তার সাহেব, আমাদের আদর কে বাঁচিয়ে দেন। আর অঝরে কেঁদে যাচ্ছে। -- শান্ত হোন। আপনাদের ভাগ্য টা অনেক ভালো। আদর ইজ আউট অফ ডেঞ্জার। কারেন্ট যদি ঠিক সময় না চলে যেত, তাহলে হয়ত ভয়ানক কিছু ঘটতে পারত। কিন্তু এইটুকু একটা ছেলে এমন কাজ কেন করতে যাবে? কিছু কি যানেন আপনারা? -না তো। ও কেন এমন করবে। কি এমন কম দিয়েছি আমরা যে আমাদের ছেলেটা এত বড় ঘটনা ঘটাবে। , এখনি ওষুধ আনতে হবে। তাই হাতের কাছে একটা কাগজ নিয়ে ওষুধের নাম লিখতে শুরু করে ডাক্তার। পরে প্রেস্ক্রিপশন বানিয়ে দেয়া যাবে। আগে ওষুধ আনা টা দরকার। ওষুধ লিখে সেটা ভাজ করতে যেয়ে উলটা পাশের কিছু লেখা চোখে পড়ে ডাক্তার সাহেবের। সেগুলো সে পড়ে, আর আদরের মা বাবার চোখের সামনে মেলে ধরে। আপনাদের কমতি। , ও একটা বাচ্চা ছেলে। ওর বাল্যকাল টা উপভোগ করতে দিন। বেঁচে থাকার জন্যও কিছু রসদ প্রয়োজন। আর এগুলোই যদি ওকে না দেন, তাহলে অন্য কোনকিছুর আশা করে লাভ নেই। আগে ওকে বাঁচতে দিন। পড়াশোনার দরকার আছে। তাই বলে সেটাকে স্তুপ বানিয়ে মাথার উপর দেওয়া টাকে শিক্ষা বলে না। আদরকে একটা সুন্দর ছেলেবেলা উপহার দিন। যাতে এই ছেলেবেলার শক্তি ওকে সারাজীবন পথ চলতে প্রেরণা দেয়। আশা করি বুঝেছেন। আদরের মা বাবা নিরবে কেঁদে চলেছে। কি বলবে। কি ই বা বলার আছে। তারা যে নিজেদের অজান্তেই নিজ সন্তানের কাছে দস্যু হয়ে গেছে। তারা কেঁদেই চলেছে.... , এক বছর পরে, এবছর ক্লাস ফাইনাল পরিক্ষায় ফার্স্ট হয়েছে.... আদর। এনাউন্সমেন্ট টা শুনে আদরের বাবা মা এর বুক গর্বে ভরে যায়। আদর কে জড়িয়ে ধরে ওর মা।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ২২৬ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
  • Puspita
    User ৪ বছর, ১ মাস পুর্বে
    পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলা প্রয়োজন এটাই ফোটে উঠেছে এই গল্পে শুধু ঘরে বসে পড়ালেখা করলে হয় না বাইরের পৃথিবীটাকেও জানতে হয় অসাধারণ হয়ে গল্পটা gj