বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
তোমার জন্য অপেক্ষা
তিন
অফিসের কাজ শেষ। বিকেলে হালকা বাতাস অফিসের চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে। আমি অফিস থেকে বের হয়ে করিডোর ধরে হাঁটছিলাম। অফিসের পরিবেশ তখন একটু শান্ত। হঠাৎ শুনলাম পেছন থেকে রুদ্রের গলা,
“ওই বকুল! তোর সঙ্গে অন্না কথা বলতে চায়।”
আমি থমকে গেলাম। কিছুটা অবাক হয়ে পেছনে তাকালাম।
“অন্না? আমার সঙ্গে? কী বলছে সে?”
রুদ্র হেসে বলল,
“জানিনা, তবে তোর নাম বললো আর বললো, তুই যেন একটু দেখা করিস। সোজা গিয়ে বসার ঘরে ওকে খুঁজে নে।”
মনটা ধুকপুক করছিল। কেন হঠাৎ অন্না আমার সঙ্গে কথা বলতে চাইবে? অফিসের কাজ নিয়ে হয়তো কিছু বলতে চায়। কিন্তু তার মুখের দিকে তাকালে মনে হয়, সে সাধারণ কোনো কারণে আমাকে ডাকে না। যাইহোক, আগে গিয়ে দেখি।
বসার ঘরে ঢুকতেই দেখলাম, অন্না জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। বিকেলের সোনালী আলো তার চেহারায় পড়ছিল। একদম নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে সে জানালার বাইরে তাকিয়ে ছিল। আমি ধীরে ধীরে গিয়ে বললাম,
“তুমি আমাকে ডেকেছো, অন্না?”
সে পেছন ফিরে তাকালো। তার চোখে এক ধরনের অদ্ভুত নরম অভিব্যক্তি ছিল।
“হ্যাঁ, ডেকেছি। তুমি তো এখানে প্রতিদিন দেখো আমাকে। আমি ভাবলাম, আজ একটু কথা বলা উচিত।”
আমি চমকে উঠলাম।
“তুমি আমাকে নিয়ে ভাবো?”
অন্না একটু হেসে বলল,
“তোমাকে নিয়ে ভাবার মতো কি কিছু আছে?”
একটু থমকে গেলাম। তার কণ্ঠস্বরে এক ধরনের খুনসুটি ছিল। কিন্তু আমি দেখলাম, তার চোখে এক ধরনের মজা করার চাহনি,মুখে দুষ্টুমির হাসি।
“না, মানে...ইয়ে, আমি ভেবেছিলাম, কোনো অফিসের কাজ নিয়ে কথা বলবে নাকি।”
অন্না আবার জানালার দিকে তাকালো। তার খোলা চুলে রোদের আলো লেগে সোনালী দেখাচ্ছে। আমার মধ্যে তার প্রতি অদ্ভুত এক টান অনুভব করছি।
“হ্যাঁ, অফিসের কথাই। তবে তার চেয়েও বেশি কিছুও মনে করতে পারো।”
আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কী বলতে চায়, তা বুঝতে পারছিলাম না।
“তুমি তো খুব শান্ত স্বভাবের। অফিসে সবাই তোমার প্রশংসা করে। কিন্তু তুমি কখনোই কাউকে বেশি সময় দাও না। কেন?”
“দেই তো। সবার সাথেই তো মিশি,কথা বলি।“
“তখন তুমি আমার ডেস্কের সামনে দিয়ে হেটে যাচ্ছিলে। ডাকলাম, শুনলে না।”
“হয়তো অন্যমনা ছিলাম। তাই খেয়াল করি নি।”
“আর তাই রুদ্রকে দিয়ে ডেকে আনতে হলো।”
“আমি… আমি আসলে কি বলবো।”
“আমি ডাকলে শোনো না। আবার অন্যদের কাছে গিয়ে তো ঠিকই গল্প করো।”
“আমি আমার মতো থাকতে ভালোবাসি। আর তখন হয় তো অন্য কিছু চিন্তা করেছি। তাই হয়তো তোমার ডাক শুনিনি।”—আমার কণ্ঠস্বর কিছুটা কাঁপছিল।
অন্না হেসে বলল,
“ঠিক আছে, বকুল। মনে হচ্ছে তুমি আমার সাথে কথা বলতে ইতস্তত বোধ করছো। তোমার সঙ্গে কথা বলে ভালো লাগলো। আমরা দুজনেই তো নতুন জায়গায় নিজেদের মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। আশা করি, একে অপরকে একটু ভালোভাবে বুঝতে পারবো।”
সে চলে গেল। আমি জানতাম না, এই কথাগুলোর মানে ঠিক কী। সে কি আমাকে বুঝতে চাইছে, নাকি তার এই আচরণ শুধুই বন্ধুত্বের?
পরবর্তী দিন
অফিসে ঢুকতেই বিপাশা এসে বলল,
“বকুল! আজ কিন্তু অন্না অনেকবার তোমার নাম বলেছে। তুমি কী করছো, কোথায় যাচ্ছো—সব কিছু জানার চেষ্টা করছিল।”
আমি কিছুটা বিস্মিত হলাম। বিপাশাকে বললাম,
“ও হয়তো অফিসের কাজের জন্য জানতে চাইছিল।”
“হ্যাঁ, হয়তো তাই। তবে তার চোখ-মুখের ভাব দেখে মনে হয়, তোমার প্রতি একটা বিশেষ আগ্রহ আছে।”
সেই মুহূর্তে বুঝতে পারলাম, অন্নার এই আচরণ হয়তো বন্ধুত্বের চেয়ে বেশি কিছু। তবে সেটা বোঝার মতো সাহস আমি সেদিনও পাইনি।
অফিসের কাজ শেষ করে বাসায় ফিরে এসেছি। ঘরটা যেন আজ অদ্ভুত নীরব। আমার চারপাশের সবকিছু ঠিক আছে, কিন্তু মনের ভেতরে যেন ঝড় বয়ে যাচ্ছে। অন্নার সেই কথাগুলো, তার চোখের সেই অভিব্যক্তি, তার মুখের সেই অদ্ভুত হাসি—সবকিছু বারবার মনের দরজায় কড়া নাড়ছে।
“আমরা দুজনেই তো নতুন জায়গায় নিজেদের মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। আশা করি, একে অপরকে একটু ভালোভাবে বুঝতে পারবো।”
তার কথাগুলো বারবার কানে বাজছিল। সে কি সত্যিই আমাকে বুঝতে চায়? নাকি এটা কেবল তার ভদ্রতা? আমি নিজের মধ্যে এক অদ্ভুত দ্বিধায় পড়ে গেছি।
বিছানায় শুয়ে জানালার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। ঢাকা শহরের আকাশে জ্বলজ্বলে তারাগুলো যেন আমার মনের প্রশ্নের কোনো উত্তর দিচ্ছে না।
তাকে প্রথমদিন থেকেই দেখছি। সাদা শাড়িতে সে যখন অফিসে প্রথম এসেছিল, সেই দিনটি এখনো চোখের সামনে ভাসে। কী চমৎকার তার চোখ, কী মায়াময় তার চাহনি! সে যখন কথা বলে, তার কণ্ঠস্বর যেন কোনো সুরের মতো শোনায়। আমি জানি, সে খুব বুদ্ধিমতী, দায়িত্বশীল। কিন্তু তার রূপের সৌন্দর্য... যেন মনকে একেবারে মুগ্ধ করে।
আমি ভাবতে থাকলাম।
“সে কি আমাকে পছন্দ করে? তার এই আচরণ কি শুধু বন্ধুত্বের? নাকি তার মনে কিছু একটা লুকানো আছে, যা প্রকাশ করতে পারছে না?”
নিজেকে প্রশ্ন করতে করতে আমার বুকের ভেতর কেমন জানি একটা কষ্ট হচ্ছিল। কখনো ভাবিনি, অন্না আমার মনের এতখানি জায়গা দখল করে নেবে। কিন্তু সে ধীরে ধীরে আমার হৃদয়ের প্রতিটি কোণ ছুঁয়ে গেছে।
তার চোখের দিকে তাকালেই মনে হয়, সে যেন আমার মনের ভেতরে সবকিছু দেখে নিচ্ছে। তার হাসি, তার কথা, তার উপস্থিতি... সবকিছু আমাকে এক অদ্ভুত আবেশে বন্দী করেছে।
কিন্তু আবার সেই প্রশ্ন—সে কি আমাকে ভালোবাসে?
আমার মন যেন দ্বিধার এক গভীর খাদে পড়ে গেছে। একদিকে, তার ইশারা আমাকে পাগল করে তুলছে। অন্যদিকে, তার আচরণ আমাকে বিভ্রান্ত করছে। যদি সে সত্যিই আমাকে পছন্দ করে, তাহলে সে নিজে কেন এগিয়ে আসে না? কেনো সরাসরি বলে না?
ঘুমানোর চেষ্টা করলাম, কিন্তু চোখ বন্ধ করলেই তার মুখটা ভেসে উঠছে। মনে পড়ছে তার প্রতিটি কথা, প্রতিটি মুহূর্ত। আমার হৃদয়ের প্রতিটি স্পন্দন যেন তার নামেই জপ করছে।
আমি জানি না, এই অনুভূতি কোথায় গিয়ে শেষ হবে। কিন্তু একটা জিনিস স্পষ্ট—অন্না আমার হৃদয় কেড়ে নিয়েছে। তার প্রতি আমার ভালোবাসা দিনের পর দিন আরও গভীর হচ্ছে।
আমি জানি, আমি আর আগের মতো থাকতে পারব না। তার প্রতি এই তোলপাড় অনুভূতিগুলো আমাকে বদলে দিয়েছে।
(চলবে)......
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now