বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
উপন্যাস: তোমার জন্য অপেক্ষা
লেখক: বকুল রায়
এক
ঢাকার ধূসর ব্যস্ততায় প্রতিদিনের জীবন একঘেয়ে হলেও, তার মাঝেও কিছু মুহূর্ত রঙিন। আমি, বকুল রায়, এই শহরের এক কোণে বসে নিজের গল্প লিখছি। এটা শুধু আমার গল্প নয়—এটা আমার অনুভূতির গল্প।
আমি একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কাজ করি। আমার সারা দিনের কাজের মধ্যে কিছু মুহূর্ত থাকে, যেগুলো একেবারে আলাদা। কারণ সেই মুহূর্তগুলোতে আমার চোখে পড়ে অন্না দাস।
অন্না, আমাদের অফিসের অ্যাকাউন্টস ডিপার্টমেন্টে কাজ করে। সে হাসলে মনে হয় যেন কোনো শিশিরভেজা সকাল ঢেউ তুলে গেছে আমার হৃদয়ে। তার কথা বলার ধরণ, চুল বাঁধার স্টাইল, মুখের মুচকি হাসি—সবকিছুতেই একটা পরিপূর্ণতা। কিন্তু সে আমাকে দেখে না। কোনোদিন দেখবেও না, জানি।
আমার পরিবার ঢাকার কাছাকাছি একটা এলাকায় থাকে। মা-বাবা, বড় বোন, দাদা, দিদি আর ভগ্নিপতি—সবাই একসঙ্গে থাকে। আমাদের পরিবারে সম্পর্কগুলো খুব মজবুত। কিন্তু আমার জীবনের একাকিত্ব তারা কেউ বুঝতে পারে না।
অফিসে আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু রুদ্র। রুদ্র হাসিখুশি স্বভাবের মানুষ, সবসময় আমাকে উৎসাহ দেয়। আর মনিকা, বিপাশা আর শুভঙ্কর আমার টিমের সহকর্মী। মনিকা অনেকটা চাপা স্বভাবের, কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে দারুণ দক্ষ। বিপাশা রসবোধে ভরপুর। শুভঙ্কর বেশ আত্মবিশ্বাসী। তাদের সবার সঙ্গে অফিসের পরিবেশ প্রাণবন্ত থাকে।
অন্নার ব্যাপারে রুদ্রকে বলেছি। সে বলে, "তুই কেন চুপ করে আছিস? তার সঙ্গে কথা বল।" কিন্তু কী বলব? কোনো মেয়েকে বলা যায় কি, "তোমাকে দেখে আমার হৃদয় ওলটপালট হয়ে যায়"?
অন্নার পরিবারের কথা আমি বেশি জানি না। শুধু জানি, সে তার বাবা-মা, ভাই-বোন নিয়ে থাকে। তার চোখের গভীরে একটা চাপা দুঃখ লুকিয়ে থাকে। কিসের দুঃখ, তা জানতে ইচ্ছা করে।
আমার এই নীরব ভালোবাসা কি কখনো অন্না বুঝবে? নাকি সে শুধু দূর থেকে দেখবে, আর আমি তাকে চিরকাল অনুভব করব?
এখানেই শেষ নয়। এই গল্পের আসল শুরুটা বাকি।
দুই
সকালটা ছিল অন্যরকম। অফিসের লিফটের দরজা খুলতেই অন্না দাসকে দেখা গেল। হাতে কাগজপত্রের ফাইল, চুল খোলা, আর মুখে সেই চিরচেনা গাম্ভীর্যের ছাপ। আমিও ফাইল নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এমন অনেকবার লিফটে একসঙ্গে উঠেছি, কিন্তু কোনোদিন সাহস পাইনি কথা বলার।
আজ যেন পরিস্থিতি নিজে থেকেই তৈরি হয়ে গেল। লিফটে ঢুকেই অন্না বলল,
“আপনার পরিবার কোথায় থাকে?”
আমি একটু অবাক হলাম। এতোদিন পরে হঠাৎ এমন একটা প্রশ্ন! পরিবারের বিষয়ে বলাটা ভালো লাগে না। আমি সামলে নিয়ে বললাম,
“ এখানে কাছেই।মিরপুর ১০ এ আপনি?”
অন্না একটু মুচকি হাসল।
“আমাদের বাড়ি সিলেটে। এখানে ঢাকায় বাবা-মা, ছোট ভাই, আর বড় বোন—সবাই মিলে একসঙ্গে থাকি।”
তার কথায় একটা অদ্ভুত উষ্ণতা ছিল। আমি একটু সহজ বোধ করলাম।
“সিলেটে কোথায়?”
“সুনামগঞ্জে। আপনি কখনো সুনামগঞ্জে গেছেন?”
“না। এখনো যাওয়া হয় নি।”
এইভাবে কথোপকথন শুরু হলো। প্রথমবারের মতো মনে হলো, অন্নার মধ্যে একটা মিষ্টি সরলতা আছে, যা এতদিন দূর থেকে অনুভব করিনি।
লাঞ্চ ব্রেকের সময় অফিসের ক্যান্টিনে রুদ্র এসে বসলো আমার পাশে।
“কী ব্যাপার! আজ তো লিফটে মজার গল্প হচ্ছিল।”
আমি হেসে বললাম,
“হ্যাঁ, প্রথমবার অন্নার সঙ্গে কথা বললাম। জানতাম না, সে সিলেটের মেয়ে।”
রুদ্র মুচকি হেসে বলল,
“এবার কিন্তু সামনে এগোতে হবে। শুধু একপেশে ভালোবাসা নিয়ে পড়ে থাকলে চলবে না। অন্তত বন্ধুত্বটা শুরু কর। সেটাই তো অনেক কিছু।”
পরদিন সকালে অফিসে ঢুকতেই দেখলাম অন্না তার ডেস্কে ব্যস্ত। একটু দ্বিধা নিয়ে তার ডেস্কের পাশে দাঁড়ালাম।
“গুড মর্নিং, অন্না। আজও কি ফাইলগুলো সুনামগঞ্জের পথে নিয়ে যাবে?”
সে চমকে তাকাল, তারপর হেসে বলল,
“না, আজ টেবিলেই থাক। তবে কাল নিয়ে যেতে পারি!”
আমাদের মধ্যে হালকা হাসি বিনিময় হলো। এরপর দিনের কাজ শুরু হলো, কিন্তু আজ যেন পুরো পরিবেশটাই অন্যরকম মনে হচ্ছিল। তার সঙ্গে বন্ধুত্বের শুরুটা যেন নিজেই জায়গা নিচ্ছিল।
(চলবে).......
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now