বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

নন্দিতা

"জীবনের গল্প" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান স্মরজিৎ দত্ত(guest) (০ পয়েন্ট)

X নন্দিতা স্মরজিৎ দত্ত নন্দিতার যেদিন জন্ম হয়েছিল সেদিন অতিন তার একমাত্র প্রিয়তমাকে রাত্রে ভর্তি করে দিয়ে আসার পর সারারাত শোবার ঘরের জানালা খোলা রেখেছিল অতীন। জানালা খোলা রেখে অনেক রাত পর্যন্ত বসে ভাবতে ভালোবাসতো অপরূপা। অতীন ওকে অপু বলেই ডাকে। সেদিন লেবার পেন ওঠার পর হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়ে এসে ফেরার পথে অতীন একটা দোকানের সামনে এসে দাঁড়ায় সেখানে মেলা বাচ্চাদের জামা কাপড় বিক্রি হচ্ছে। সেখান থেকেই চার জোড়া মেয়েদের অ্যাপ্রোন কেনে অতিন । ওর প্রথম সন্তান মেয়েই হবে। তাকে যত্ন করবে তার মা-ই। তবে তার ভালোবাসার প্রথম উপহার, তাকে সে যোগান দেবে, লিপস্টিক কপালের টিপ পাউডার ক্রিম ইত্যাদি। রাত দেড়টা পরিষ্কার আকাশে তারার আনাগোনা পূর্ণিমার চাঁদ তীর্যকভাবে ঢুকে আসছে দক্ষিণ কোণের জানলা দিয়ে। হঠাৎই ফোনটা বেজে ওঠে । নাম্বার দেখে চিনতে পারে অতীন । হাসপাতালের ফোন একটা অজানা ভয় আবার অজানা আনন্দে অতিন নিজেকে সামলাতে পারেনা। ফোনটা তুলে অপরপ্রান্ত থেকে শিশুর কান্নার আওয়াজ পেয়ে বুঝতে পারে অবশেষে সে বাবা হয়েছে। ডাক্তার অনিমেষ চ্যাটার্জি হাসিমুখে বললেন, মিস্টার বোস বেস্ট অফ লাক । তুমি অত্যন্ত সুখী । তোমার শিশুর আমাদের ডাক্তারি শাস্ত্র অনুসারে যা যা থাকা উচিত তার সবটাই আছে। ইউ আর গুড কাপেল। অতিন ফোনটাকে রেখে হাউ হাউ করে কাঁদতে থাকে। অনেক অল্প বয়সে সংসারের হাল ধরতে হয়েছিল তাকে । মা ছিলেন না মাকে হারিয়েছে অনেক আগেই। বাবা বাইরের কাজ করে ঘরে এসে আবার রান্না করেও খাওয়াতেন তাদের ভাই বোনদের। অতিনরা দুই ভাইবোন। দিদির বিয়ে হয়ে গেছে ; তাই অনেক অল্প বয়সেই বাবার ব্যবসার সাথে হাত মিলিয়ে ছিল অতীন। দুঃখে ভারাক্রান্ত হলেও নতুন শিশুর জন্য বাবা হয়ে তার কি কি করা উচিত সেটাই সে ভাবতে বসলো। ঘুমালো কিন্তু ভোরবেলার সূর্য ওঠার অনেক আগেই ঘুমটা ভেঙে গেল। ঘর মুছে স্নান করে পুজো দিয়ে একটা সেদ্ধ ভাত রেডি করে সে বেশ ভালোভাবে সেজেগুজে বেরোলো আজ । তার গর্ব হচ্ছে এই কারণে সে বাবা হয়েছে তার প্রিয়তমার কাছে গিয়ে দাঁড়াবে । হাত বাড়িয়ে তাকে হ্যান্ডসেক করে বলবে কাব্যে যাই বলুক 'সতীর জন্য পতির পূণ্য' তার প্রথম উপহার আমাদের এই সন্তান। নার্সিংহোমের কেবিনের দরজা খুলেই অতিন অপুকে বলে নন্দিতা ভালো আছে? তোমার সাথে কখন দেবে তাকে? অপু মুচকি হেসে বলে, সত্যি তুমি বারবার এমন ভাবে কি করে জিতে যাও আমি জানিনা। নন্দিতা অতীনের সঙ্গে বেট নিয়েছিল। ভালো রেস্টুরেন্টে খাবে তাকে ভালো একটা জামা কাপড় কিনে দিতে হবে; তবে যদি তার ছেলে হয়। অতীন বলেছিল আমার মেয়েই হবে। আর ওর নাম হবে নন্দিতা। আজ অতীন তাই অনেক বেশি হ্যাপি। সেই নন্দিতার আজ জন্মদিন। নন্দিতা জানে তার ছোটবেলা থেকে আজ এই বয়স পর্যন্ত মা যদি ৫০ ভাগ লালন পালন করে থাকে; বাকি ৫০ ভাগ তবে রাখা থাকবে বাবার জন্যই। কোনদিন নন্দিতাকে ভাবতে হয়নি বাড়ি ফেরার পর তার প্রিয় জিনিসটি বাবার হাত থেকে সে পাবে না । এমন কোন দিন হয়নি। এমনকি যেদিন প্রথম নন্দিতা কুমারী থেকে মহিলা পর্যায়ে ঘোষিত হয়েছিল; সেদিন সারাদিন তাকে যে যত্ন করেছিল সেদিনটাকে নন্দিতা কোনদিন ভুলতে পারবে না। আর সেটা তার বাবাই । মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়া, গরম জলের শেক দেওয়া, সেইদিন থেকে কোনদিন কোন ডেটেই তার মনে না থাকলেও বাবার যত্নাদি দেখেই তার মনে পড়তো আমার সময় হয়েছে। যত্ন করতো সেই চারটি দিন। মাকে নির্দেশিকা দিতেন গরম জলে স্নান করিয়ে তাকে স্পঞ্জ করে দাও । কিংবা নন্দিতার প্রিয় কিছু গান চালিয়ে তার সেই বেদনার থেকে নিবৃত্তি দেওয়া। এগুলো আজ অষ্টাদশী নন্দিতাকে বড় বেশি ভাবায়। কোনদিন বাবাকে বয়সের ভারে কুঁজো হতে দেখেনি নন্দিতা। সকালবেলার জগিং, স্পোর্টস, এই সব একটিভিটি মেয়েকে যেমন রেখেছিল হৃষ্টপুষ্ট, বাবাও তেমনি রেখেছিল নিজেকে। তাই নন্দিতার পরম তথা একমাত্র বন্ধু তার বাবাই। কলেজের বন্ধু-বান্ধব তারাও জানতো নন্দিতার বাবা তাদের গ্রুপের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বন্ধু। তাদের ভালো, তাদের মন্দ সমস্ত বিষয়ে সঙ্গ দেওয়া অতিনের তাতেও সময়ের কোনদিন ঘাটতি পারেনি। কিন্তু আজ সেই নন্দিতাই চোখের জলে ভাসিয়ে দিচ্ছে তার একার ঘরে শোয়ার বিছানা। কারণ আগামী ১৭ই অগ্রহায়ন সে সমর্পিত হবেন অন্য কারো হাতে। হয়তো সেও তাকে ভালবাসবে । আলতো হাতে ঘোমটা সরিয়ে কপালে উষ্ণ চুম্বনে তাকে পুলকিত করবে। ওষ্ঠের কম্পনে আন্দোলিত হবে সারারাত। হয়তো সেদিনও সাক্ষী থাকবে পূর্ণিমার চাঁদের আলো । কিন্তু যে যত্ন সে এতদিন ধরে মজ্জাগত করেছে। সেই যত্ন, সেই বাবার যত্ন আগামীর ১৭ই অগ্রায়নের পর থেকে হয়তো সে আর কোনদিন পাবে না। ফিরে উল্টোয় এসেছিল নন্দিতা আর মৃন্ময়। দরজা খুলে অতীন নন্দিতার মুখের দিকে তাকিয়ে বহুক্ষণ খুঁজে ছিল তার যত্নে গড়ে ওঠা নন্দিতার এতোটুকু কোন আঘাত লেগেছে কিনা তাই। মৃন্ময় তার এই ভাবনার রেশে দিয়েছিল আঘাত । বাবাকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে হঠাৎই বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে মৃন্ময় বলে ওঠে; বাবা! মেয়ে তো, তাকে আজ হোক কাল হোক পরের বাড়ি তো যেতেই হবে। তা বলে এই সাত দিনে তোমার চেহারা কি করেছো তুমি দেখেছো? যাও তো আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াও। দেখতো তোমার নন্দিতার কতটুকু অযত্ন হয়েছে আর এই ৭ দিনে তার অযত্নের কথা ভেবে তুমি নিজেকে কতটা অযত্ন করেছ ? তাতে কি তোমার নন্দিতা সুখী হবে? অতীন জড়িয়ে ধরে মৃন্ময়কে গর্বে বুক ভরে ওঠে । কারণ নন্দিতার জন্য পাত্র তিনিই খুঁজেছেন । তবে পাত্র দেখা আর পাত্রস্থ করার পর সেই পাত্রকে উপলব্ধি করা অনেকটাই ফারাক। কেন জানি অতীনের মনে হলো বোধহয় মৃন্ময়, যাকে সে বেছেছে তার নন্দিতার জন্য সে উপযুক্তই বটে। প্রায় দু বছর পর আবার এসেছে মৃন্ময় আর নন্দিতা তার বাবার কাছে। নন্দিতা বাবার ভালোলাগা বাবার খোঁজ নিয়ে তার কি কি প্রয়োজন সব নিয়ে এসেছে সে যত্নে। অতিন ছোটবেলা থেকে নন্দিতার যা যা বায়না ছিল সব ধীরে ধীরে তার পেনশনের পয়সা থেকে বাঁচিয়ে যত্নে কিনে রেখেছে তার নন্দিতার জন্য। অতীন নন্দিতাকে বলে, মা, তুই আমার ঘরে একবার যাস অনেক জিনিস সেগুলোকে গোছাতে সময় লাগবে। তবে তার জন্য তোর চিন্তা নেই আমি তার রাখার ব্যবস্থাও করে দিয়েছি। সেই বাক্সটাইতে নিয়ে যাবি। আর হ্যাঁ ওখানে তোর সাবালক হবার পর প্রতি পুজোয় যেটা তুই সব থেকে আগে চাইতি সেটাও আছে সেটা পড়ে একবার আমার বসার ঘরে আসিস না! আমি তোকে একটু দেখব। মেয়ে ছুটে যায় বাবার ঘরে তার জ্ঞান হবার পরের থেকে আজ অব্দি কোন বায়না হয়তো এতদিনে নন্দিতা ভুলে গেলেও নন্দিতার বাবা ভোলেনি। ললিপপ থেকে ঢাকাই শাড়ি কোনটাই বাদ যায়নি। বাদ যায়নি লিপস্টিক বিশেষ কোম্পানির, যায়নি নেলপালিশ। এমনকি পুজোর সময় সাজার জন্য নেল এক্সটেনশন সেই নেইলও সেই তালিকা থেকে বাদ যায়নি । অঝোরে কাঁদতে থাকে নন্দিতা খুব যত্ন করে ঢাকাই শাড়িটা পড়ে । কপালে সিঁদুর রেখে সীমান্তে দেয় সিঁদুরের টান। আচলটাকে যত্ন করে সামনে টেনে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বহুক্ষণ যত্ন করে নতুন ভাবে দেখে নন্দিতা তাকে। আচলটাকে যত্নে সামনে নিয়ে বাবার ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই দেখে বাবা টেনশনে পায়চারী করে বেড়াচ্ছে । নন্দিতা বাবা বলে ডাক দিতেই অতিন এক নিঃশ্বাসে বলতে থাকে মা আমি কিছু ভুলে যাইনি তো! সব জিনিস তোর এনেছি তো! আজ দুটো বছর পর তুই আমার কাছে এসেছিস। কত জিনিস আমি ভেবে রেখেছি তোর যা যা প্রিয় সব। সেখানে কিছু ভুল করিনি তো! নন্দিতা মুখ তুলে তাকায়। চেয়ারে বসে মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে অঝোরে কাঁদতে থাকে। মেয়ের পরনে ঢাকাই শাড়ি কপালে সিঁদুর।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৫৬ জন


এ জাতীয় গল্প

→ নন্দিতা
→ নন্দিতা

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now