বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
এক নতুন সূর্যদ্বয়ের প্রহরঃ
নাফিজ আহমেদ
সেদিন ৩ই আগস্ট শনিবার ছিল। সরকারের পদত্যাগে এক দফা জারিতে উত্তাল গোটা দেশ। এই দেশের আপামর জনতার সিংহভাগ মানুষই নিজেদের কে রাঙিয়ে তোলে লাল রঙে। ফেসবুকে সকলেই এক লিখে আপলোড করে। সকলেই যেন নিজেদেরকে এক জালিম রক্তচোষা রাক্ষসীর কবল থেকে রক্ষা করার সর্বাত্তক চেষ্টা করে। এই আন্দোলনে একজন ছাত্র শহিদ হলে পাঁচ জন সম্মুখে অগ্রসর হয়। সকলের মুখে একটাই স্লোগান নয় ছয় বুঝিনা গদি ছাড় হাসিনা। ছাত্র জনতা মুখে এইসমস্ত স্লোগানে মুখরিত হয় পুরো দেশ। এখন আর কেউ পিছু হটতে চায় না। সকলে নিজেদের পরিকল্পনা মাফিক এগিয়ে চলে একএক ধাপ সামনে। এমন অনেক আন্দোলনকারীকে বলতে শোনা গেছে সামনে স্বাধীনতা পিছনে পুলিশ সুতরাং আমরা সামনের দিকেই চলব। যত বাঁধাই আসুক নিজেদের জীবন দিয়ে হলেও মোকাবেলা করব। এভাবে এক দফা দাবিতে সকল শিক্ষার্থী চলল ঢাকার কেন্দ্রীয় শহিদ
মিনারের আঙিনায়। এখান থেকেই ঘোষণা হলো এক অসহযোগ আন্দোলনের। পরের দিন ৪ই আগষ্ট সারাদেশে আন্দোলনকারী ও পুলিশের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ দেখা গেল। প্রায় ১১৪ জন এই দিনে শাহাদাৎ বরণ করেছিল। আমার এখনো মনে আছে এই দিনে আমিও আন্দোলনের মাঠে ছিলাম। আমাদের বড় ভাইয়েরা আগের সব পরিকল্পনা আমাদেরকে বলে দিয়েছিল, সেই অনুযায়ী পরদিন সকালে আমরা সকলে এক জায়গায় উপস্থিত হয়ে রওনা করলাম নির্ধারিত জায়গায়। জেলা শহরে আসতেই অবলোকন করলাম অনেক হেলমেট বাহিনীকে। তারা হয়তো আমাদের আন্দোলন নৎশৎ করে দেওয়ার সর্বোচ্ছ চেষ্টা করবে। আমরাও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র না আন্দোলনের মাঠে পৌঁছানোর সাথে সাথে হাতে তুলে নিলাম একটা লাঠি। নিজের নিরাপত্তার জন্য কাছেই রেখে দিলাম। আমাদের কর্মসূচি হলো যশোর চাঁচড়ার মোড় থেকে একেবারে মনিহার পর্যন্ত এক বিশাল মিছিল বাহির হবে। সেই অনুযায়ীই সকলে এক সাথে হাঁটতে শুরু করলাম। সাথে সাথে মুখে আছে নানান ধরনের স্লোগান। ''এক দুই তিন চার হাসিনা তুই গদি ছাড়,, ''কোঠা না মেধা, মেধা মেধা,, ''ফাঁসি চাই ফাঁসি চাই শৈরাচারের ফাঁসি চাই,, এরকম নানান স্লোগানে কম্পিত পুরো যশোর জেলা। চাঁচড়া থেকে মনিহার যাওয়ার পথে যশোর কোতুয়ালি থানা পড়ে। আমরা দেখলাম সকল পুলিশরা শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে থানার সম্মুখে। অনেকে তাদের দিকে ইট খোয়া ছুড়ে মারছে তবুও তারা কোন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না। এগুলো ছুড়তে আমাদের ভাইয়েরা আমাদের বিভিন্ন ভাবে নিষেধ করল। অবশেষে আমরা পৌঁছালাম মনিহারে সেখানে একটু বক্তব্য দিয়ে পরের দিনের কর্মসূচি নির্দিষ্ট সময়ে জানিয়ে দেওয়া হবে বলে আমাদেরকে অবহিত করল। আমরা সকলে যার যার মতো করে বাড়িতে ফিরলাম। পরে জানতে পারলাম ৫ই আগষ্ট গণভবন ঘেরাও করার কর্মসূচি এসেছে। সেদিন অনেকে ঢাকায় আসতে পারেনি। তারমধ্যে আমরাও ছিলাম যশোর থেকে ঢাকায় আসা অসম্ভব হয়ে গেল। কি আর করা, ঘরে বসে মোবাইলেই দেখছি সবকিছু। পুরো ঢাকা শহর লক্ষ লক্ষ ছাত্রের ঢেউ যাচ্ছে গণভবনের দিকে। এইদিনেও শত-শত শিক্ষার্থীর রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল ঢাকার রাজপথ। তবুও পিছুপা হয়নি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা। অবশেষে ছাত্র সমাজ গণভবনে পৌছানোর পূর্বেই অবগত হলো পালিয়ে গেছে ফ্যাসিবাদি হাসিনা ও তার দোসররা। চলে যাওয়ার আগে সে জাতির উদ্দেশ্য একটা ভাষণ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে সেনাবাহিনী তাকে ৪৫ মিনিটের আল্টিমেটাম দেয়। পরিশেষে সে ভাষণ না দিয়ে তল্পিতল্পা গুছিয়ে এদেশ ছেড়ে পালিয় যায় ভারতে। এজাতি এক নতুন সূর্যের উদয় দেখতে সক্ষম হয়। জাতি আবারও ফিরে পায় তাদের কাঙ্ক্ষিত ফল। উপভোগ করে স্বাধীনতার স্বাদ। এদেশের ইতিহাস থেকে মুছে যায় এক শৈরাচারের কলো অধ্যায়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সকলে আনন্দে বিজয় মিছিল করতে থাকে। জাতিকে স্মরণ করে দেয় বিগত ১৫ বছরের কালো ইতিহাস। আবু সাইদ, মুগ্ধ সহ হাজার হাজার শিক্ষার্থীর তাজা রক্তের বিনিময়ে আমরা পেলাম এক নতুন বাংলাদেশ।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now