বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
কথায় আছে, অভাবে নাকি ভালোবাসা জানালা দিয়ে পালায়। আসলেই সেটা কি সত্য? নাকি মানুষ কথায় কথায় বলে থাকে? সেটা বেশ অজানাই শিমুলের কাছে। তবে সবাই যে এক নয়, তা বেশ ভালো করেই জানে এবং বোঝে। কুসুম গরম দুধের গ্লাসটা হাতে নিয়ে নিজের ঘরে ঢুকলো শিমুল। ঘরে ঢুকেই দেখে, তুলি জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। এই মেয়েটার একটাই স্বভাব, সন্ধ্যার পর পরই সে জানালা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে দূর আকাশে তাকিয়ে থাকে। এতে নাকি তার নিঃশ্বাস নিতে সুবিধা হয়। কি আজব ব্যাপার স্যাপার!
প্রেগন্যান্সি অবস্থায় অনেক ধরণের ইচ্ছের কথা সে শুনেছে। তাই বলে নিঃশ্বাস নিতে এই ধরনের কথা! তাও আবার নাকি সন্ধ্যার পরই এমনটা হয়। মুখ গোল করে নিঃশ্বাস ফেলে শিমুল।দু'কদম এগিয়ে যেতেই চোখ আটকে যায় তুলির আট মাসের গর্ভাবস্থা পেট দেখে। এটা দেখতে তার বেশ ভালোই লাগে, তবে সঙ্গে ভয়ও হয়। দুটোর অনুভূতির সংমিশ্রণে তার অনুভূতি জগাখিচুড়ির মত।
" তুলা..."
শিমুলের ডাকে তুলি পিছন ঘুরে তাকায়। ঠোঁটে, চোখে, মুখে তার অমায়িক হাসি লেপ্টে আছে। তার হাসি দেখে অধর কনে হাসির দেখা মেলে শিমুলেরও।
"রোজ রোজ এসব ভালো লাগে না আমার।"
কপালে ভাঁজ ফেলে শিমুল ভাবল, কেন এমন কথা বলছে তুলি? তখনই তার চোখ পরল তুলির চোখের দিকে, যা তার হাতে ধরা দুধের এক গ্লাসের দিকে স্থির। শিমুল বুঝতে পারলো আজও এই মেয়েকে হাজার কথা বলে কয়ে তবেই এই দুধটুকু খাওয়াতে হবে। ফোনে মায়ের সাথে কথা হবার সময় জেনেছে, দুধ, মাছ, মাংস আর ফলের প্রতি তীব্র অনীহা তার । কিন্তু এমন করলে চলবে কি করে? একে তো অল্প বয়স! হ্যাঁ অল্প বয়সেরই তো তার তুলাটার। মাত্র বিশ বছর দশ মাস। কড়ায় গন্ডায় হিসেবে আছে তার। অল্প বয়সই তো তার তুলার। এই বয়সে মা হওয়া, তার ওপর যদি খাবারে এমন অনীহা থাকে তবে বাচ্চা আর মা দুটোর জন্যই ভীষণ রিস্কি হয়ে যাবে।
শরীরের শক্তি পাবে কোথা থেকে? যদি ঠিকঠাক খাবার গুলোই না খেতে পারে। এমনিতেই গত দেড় বছরে বেশ উথাল-পাথালের মধ্য দিয়ে গেছে তাদের জীবন।
"এদিকে এসো ।"
"না। "
"আমি বলছি এসো।"
"আজ খাব না প্লিজ।"
"তোমার সকল কথা শুনবো, তার আগে আমার কথাও তোমায় শুনতে হবে তুলা।"
তুলি কথা বাড়ায় না। শান্ত স্বভাবের মেয়ে সে। তাই তো শিমুলের কথার বাইরে না গিয়ে তার কাছে গিয়ে বসে পরে। দুধের গ্লাসটা পড়ার টেবিলে রেখে দেয় শিমুল। তুলির হাত দুটো মুঠোবন্দি করে নেয় নিজের হাতে। তারপর আলতো করে চুমু খায় তুলির পেটে।
"এখানে আমার মা আছে, তাই না ?"
"না। বাবা আছে।"
"বলছি তো মা আছে।"
"না বাবা আছে।"
"না মা আছে।"
"আপনি সব সময় মা মা করবেন না তো অসহ্য লাগে।"
"আমি জানি আমার মা'টাই আছে।"
"আর যদি আমার বাবাটা হয় তখন?"
"হবে না, আমি বলছি মা হবে।"
"শিমুল..."
"তুলা...."
শান্ত শীতল পানির মতো হয়ে যায় তুলি। এই ডাকে, এই নামে কি যেন এক জাদু আছে। যা আজও সে বুঝতে পারে না! কিন্তু শিমুল যতবার তাকে এইভাবে এই নামে ডাকে মনের অন্দরমহলে সুখের হাওয়ায় দোল খেলে তার অন্তর আত্মা ।
"যখন তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসলাম সেদিনের কথাগুলো এখনো আমার মনে পরে। তোমার মনে পড়ে না?"
ছল ছল চোখে তাকায় তুলি শিমুলের দিকে। হঠাৎ করেই আজ কেনো এমন কথা বলছে সে? সচারাচর এমন কথা বলেনা শিমুল। তবে আজ হঠাৎ করেই এমন কথার মানে কি? গত পরশু যখন ফোনে কথা হয়েছে তাদের তখনও এমন জাতীয় কিছু কথা বলতে গিয়েও কথা ঘুড়িয়ে নিয়ে আর কিছু বলেনি। এই তো আজ বিকালে হুট করেই তার বাড়িতে আগমন ঘটেছে। লোকটা কি বলতে চাইছে? বা কিছু কি বুঝাতে চাইছে তাকে? কিন্তু কি? তার কথা বোঝার জন্যই অতীতের ভাবনায় ডুব দেয় তুলি।
যখন বাবা তাকে অন্য ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করতে চেয়েছি তখন তুলি বাবাকে সরাসরি বলে দিয়েছিলো,
"আমি এই বিয়ে করতে পারব না আব্বু "।
"কেনো? ছেলে দেখতে শুনতে তো ভালো। মাসে যথেষ্ট পরিমাণ ইনকাম আছে তার। বিয়ে হলে রানীর মত থাকতে পারবে ।"
"আমি রানীর মতো থাকতে চাই না। আর না তো চাই ওই আলিশানে বন্দী হয়ে থাকতে।"
"তুলি ..."
"আমি শিমুলকে ভালবাসি আব্বু , তাকে ছাড়া অন্য কোথাও বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না।"
মেয়ের এমন সাবলীল স্পষ্ট ভাষার কথায় নীরব হয়ে যান ফয়সাল আহমেদ। তার দুটো মাত্র ছেলেমেয়ে। তুলির বড় ফারহান। ছোট্ট তুলির যখন জন্ম হলো তখন ফয়সাল আহমেদ তাকে কোলে নিতেও ভয় পেতেন। কিন্তু কি আশ্চর্য বিষয়! তুলির আগেই এক সন্তানের বাবা হয়েছেন তিনি। তুলোর মতো নরম কোমল ছোট্ট দেহের মেয়েটির প্রতি ভালোলাগা ভালোবাসাটাই ছিল অন্য রকমের।তাইতো ভালোবেসে নাম রাখেন তুলি। মেয়ের জন্মের পর থেকেই ব্যাবসায় বেশ লাভবান হতে থাকেন তিনি। তাই তো জন্ম থেকে এখন পর্যন্ত মেয়েকে উঁচু গলায় তিনি কথা বলেননি। বুকে আগলে রেখে রেখে অতি আদর আর যত্নে বড় করে এসেছেন মেয়েকে।
ছয় বছর বয়স থেকেই ফয়সাল আহমেদ লক্ষ্য করেন মেয়েটা তার আর দশটা বাচ্চাদের থেকে শান্ত, ভদ্র আলাদা। নরম কোমল স্বভাবের মেয়ে। তাইতো তার জন্য ভালোবাসাটাও দিন দিন বৃদ্ধি পেল। কিন্তু হঠাৎ করেই সপ্তাহ দুই আগে রোড সাইডে ফুচকার দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে মেয়েকে দেখেন তিনি। শুধু এতটুকু হলেই হত, কিন্তু মেয়েটা তার একটা ছেলেকে ফুচকা মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছে। যা বোঝার বুঝে জান ফয়সাল আহমেদ। তাইতো এত দ্রুত বিয়ের চিন্তাভাবনা। নয়তো কখনোই এই অল্প বয়সে এসে মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার কথা তিনি ভাবতেন না। ছেলের খোঁজ খবর নিয়েছেন। মেয়ের পছন্দের মান রাখতে গিয়েই মেয়ের গোপনে এই কাজটুকু করা ওনার। কিন্তু খোঁজ-খবর নিয়ে যা জানতে পেরেছেন এ জীবনে কেনো? আগামী সাত জীবনেও এমন ছেলের সাথে মেয়ে বিয়ে দিবেন না তিনি।
"বাবার মতের বাইরে যেতে চাইছো? ভুলে যাচ্ছো কতটা ভালবাসেন তোমাকে উনি ?"
"আমিও তো শিমুলকে ভালোবাসি আম্মু।"
"দু'দিনের একটা চালচুলো হীন ছেলের সাথে নিজের বাবার ভালোবাসার তুলনা করলে!"
"ভালোবাসা তো ভালোবাসাই হয়, তাই না আম্মু? আমি শিমুলকে....."
কথা শেষ করার আগেই তুলির তুলোর মতো নরম কোমল গালে সপাটে একটা থাপ্পড় মেরে বসেন ফাউজিয়া আহমেদ। এই প্রথম শক্ত পোক্ত ভাবে আঘাত পেল সে। আর কারো সাথে কোন কথা না বলে সোজা ছুটে গেল নিজের ঘরে ।নিজের কাজে এতোটুকু আফসোস বোধ করলেন না ফাউজিয়া আহমেদ। বরং তিনি চিন্তা করলেন বাপ ভাইয়ের সামনে বেহায়ার মত নিজ মুখে বারংবার ভালোবাসার কথা বলা বড্ড বেমানান। তাই তিনি যা করেছেন তা সঠিক। তুলি সোজা ঘরে গিয়ে ভিডিও কল করে শিমুলকে। দুবার রিং হলেও তা রিসিভ না করে কল কেটে দেয় শিমুল। মিনিট খানেক বাদে তুলির ফোনটা কেঁপে ওঠে। দ্রুত হাতে রিসিভ করে সে। কান্না জড়ানো কন্ঠে বলে,
"আমি এখানে আর থাকতে চাই না। প্লিজ আপনার কাছে নিয়ে চলুন। "
"তুলা !"
শিমুল বুঝে উঠতে পারে না হঠাৎ করেই তার এমন কথার মানে কি ?শিমুলের ডাকে তুলির কান্না বেড়ে যায়। কল কেটে দিয়ে ভিডিও কল করে সে পুনরায়। ফর্সা গালে পাঁচ আঙ্গুলের দাগ দেখে বুকে জুড়ে তীব্র ব্যথা অনুভব হয় তার। একে একে শুনতে থাকে কান্নারত হৃদয় হরনীর সকল অভিযোগ পরিবারের প্রতি। নিরব নিশ্চুপ শিমুলকে দেখে হঠাৎ করেই কান্না থেমে যায় তার। চোখে চিকচিক করতে থাকা পানি গুলো মুছে নেয় হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে।
"ভয় পাবেন না শিমুল, আমি জোড় করে আপনার সাথে নিজেকে জুড়তে চাই না। তবে আপনি ছাড়া জীবনে তো অন্য কারো হওয়া ও সম্ভব না ।আপনারা সকলে না হয় এই পৃথিবীর বাসিন্দা হয়ে থেকে গেলেন, দূর দেশে না হয় আমি একাই পাড়ি জমালাম।"
এমন কথার অর্থোদ্ধার করতে খুব বেশি একটা সময় লাগে না তার। যারা খুব রাগ জেদ করে ,তারা নিজেদের ক্ষতির কথা কখনোই ভাবে না ,এমন ধরনের কথা তারা কখনো বলতেও পারে না। কিন্তু যেসব মানুষ শান্ত নীরব তাদের চিন্তা ভাবনা গুলো হয় মারাত্মক রকমের ভয়াবহ। তুলি বায়না করার মত মেয়ে নয় আর না তো সে মিথ্যে বলছে। তার শান্ত ভঙ্গিতে কথা বলার ধরণ দেখেই বোঝা যায় এখন একটা সিদ্ধান্ত না নিতে পারলে সামনে কি ভয়াবহ ঘটনা সে ঘটাবে। গত তিন মাসের সম্পর্কে অনেক টা অবগত হয়েছে তার চিন্তা ভাবনা সম্পর্কে। তুলির এই ছোট্ট কথা দিয়ে কি বোঝাতে চেয়েছে বেশ বুঝার মত বয়স আছে শিমুলের। তবুও আলালের ঘরের দুলালিকে নিয়ে হুটহাট করেই কোন সিদ্ধান্ত নিতে চায়না সে। পরে যদি পস্তাতে হয়?
চলবে....
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now