বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

নীড় ছাড়া পাখি

"ছোট গল্প" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান নাফিজ আহমেদ (০ পয়েন্ট)

X নীড় ছাড়া পাখি নাফিজ আহমেদ অনেকদিন হলো দূরের কোন জায়গায় ঘুরতে যায়নি। তাই আজকে একটু সময় বাহির করলাম এই ধরাধাম পৃথিবীকে আপন করে চেনার জন্য। পড়ন্ত বিকালে রওনা হলাম আপন নীড় ছেড়ে। কিছুটা পথ পাড়ি দিতেই সম্মুখে দেখি এক দশবারো বছরের ছেলে বসে আছে। আমিও কিছু একটা ভেবে তার পাশে উপবিষ্ট হলাম। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম তোমার নাম কি? সে একটু দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে বলল আমার নাম হাফিজ। তা এখানে একাকী বসে কি করছো? (আমি জিজ্ঞাসা করলাম) সে বলল তেমন কিছু না মায়ের কথা ভাবছি। তোমার মা কোথায়? এবার সে গভীর ভাবে শোকাহত হয়ে আমার হাতটি শক্ত করে ধরে পাশে এক নিস্তব্ধ জায়গায় নিয়ে আসল। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম এখানে নিয়ে আসলে কেন? সে বলল, আপনি জানতে চাইলেন না আমার মা কোথায়! ঐযে আমার মা ওখানে শায়িত আছে। আমি অবাক দৃষ্টিতে অবলোকন করে সেখানে একটা কবর আবিষ্কার করলাম। আমার আর বুঝতে বাকী রইল না হয়তো তার মা এই নিছক মায়াজাল ছেড়ে গমন করেছে পরপারের দিকে। সে আপন দায়িত্বে বলতে শুরু করল কয়েকদিন আগে আমরা আগমন করেছিলাম এই ব্যস্ত শহরে। এর আগে আমরা গ্রামেই থাকতাম। গ্রামের মেঠোপথের ধারে আমাদের একটা ছোট্ট ঘর ছিল। সেখানে আমি মা আর আব্বা আমরা তিনজন বসবাস করতাম। মাস দুয়েক আগে আব্বা হঠাৎই আমাদের ছেড়ে চলে গেছে তার রবের নিকট। আমি তার কথাগুলো এক নাগারে শুনতে থাকলাম এবং হৃদয়ের অতল গহব্বরে তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর প্রতিচ্ছবি অংকন করতে চেষ্টা করলাম। আব্বার ইন্তেকালের পরে এক হঠাৎ দুপুরে আমি আর মা ঘরেই বসে আব্বার কথা চিন্তা করছিলাম। কেন জানি আমার চাচা এসে আমাদেরকে বাড়ি ছেড়ে বাহির হয়ে যেতে বলল। মা জিজ্ঞাসা করল কেন? চাচা বলল এটা আমার জমি। মফিজ আমার কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছিল আর বলেছিল টাকা দিতে না পারলে আমার বাড়ি বিক্রি করে টাকা পরিশোধ করবো। ওতো টাকা দিতে পারিনি হঠাৎ মারা গেল। এখন তোমরা বাড়ি ছেড়ে চলে যাও। মা কাঁদতে কাঁদতে বলল আমাদের কিছুদিন সময় দেন। চাচা কর্কষ ভাষায় বলল ঠিক আছে একসপ্তাহ এর মধ্যে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে। আমি দরজার পাশে দাঁড়িয়ে সব কিছু দেখছিলাম। মা কি করবে কিছুই বুঝতে পারছিল না। পরে সবকিছু ছেড়ে আমরা এই নিষ্ঠুর শহরে আগমন ঘটালাম। গ্রামের কিছু লোক বলল গাজীপুর নাকি অনেক গার্মেন্টস আছে ওখানে কাজের কোন অভাব নেই। তোরা ওখানে চলে যা দেখবি ঠিক কোন না কোন ব্যবস্থা হয়েই যাবে। গ্রামবাসীদের কথা শুনে আর কোন উপায় না দেখে আমি আর মা চলে আসলাম এই শহরে। এখানে এসে মা অনেক কাজ খুঁজেছে কিন্তু কোন কাজ পাইনি। নানান চিন্তা প্রেশানিতে পরে আমার মা কেমন জানি করতে থাকল। ফুটওভারের নিচে আমরা আশ্রয় নিয়েছিলাম। মার শরীরটা হঠাৎই খারাপ হয়ে গেল। আমি আমার মাকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য সর্বোচ্ছ চেষ্টা করেছি অনেকের কাছে সাহায্যে চেয়েছি কিন্তু কেউ আমাকে সাহায্যে করল না। এক শিশির ভেজা ভোরে পড়ন্ত বিকালে ডুবন্ত সূর্যের ন্যায় আমার মাথার উপরে থাকা শেষ আশ্রয় আমার কলিজার টুকরা আমার জননী মা আমাকে এই নিষ্ঠুর দুনিয়ায় একা করে দিয়ে চলে গেল নিজ ঠিকানায়। আসলে আমাদের সকলের একটাই ঠিকানা আর সেটা কবর। এতক্ষণ যাবৎ ছেলেটা কথা শুনে আমি হতভম্ব হয়ে আর দিকে চেয়ে রইলাম। মনে মনে বলতে থাকলাম এই ছোট্ট বয়সে ওর সাথে এত কঠিন ঘটনা ঘটে গেছে। বেচারা এই বয়সে মা-বাবা সকলকেই হারিয়েছে। হয়তো আপন বলতে আর কেউ নেই। আমি তাকে বললাম তুমি কিছু খেয়েছো? সে বলল না। আমি তাকে পাশের একটা হোটেলে নিয়ে ওকে কিছু খাওয়াইলাম। ওকে বললাম আমার সাথে যাবা! ও মাথা নেড়ে বলল হুম। ঠিক আছে খাবার টা শেষ করে চলো আমরা যায়। ওকে বললাম জীবনে চলার পথে অনেক ঝড়ঝাপটা আমাদের সম্মুখে আসবে কখনো হতাশ হবেনা। সব সময়ের জন্য আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখবে দেখবে তিনিই কোন এক পথ দেখিয়ে দিবে। খাওয়া শেষ করে ওর মায়ের কবরে কাছে গিয়ে একটু জিয়ারত করে আমরা চলে আসলাম। ভাবলাম ওকে নিয়ে কি করা যায়! বাসায় এসে কয়েকজনের সাথে পরামর্শ করে ওকে একটা উন্নত মানের এতিমখানা ও হিফজখানায় রেখে আসলাম। যেখানে আরবি ও অন্যান্য পড়া পড়ানো হয়। আসার সময় ওকে বললাম এখান থেকেই নিজের জীবন গড়ে নেওয়া চেষ্টা করিও। চিন্তা করার কোন কারণ নেই আমি প্রায়ই এসে তোমার সাথে দেখা করব। আপাতত এই দুইশো টাকা রাখো আর শোন ভালো করে পড়বা কিন্তু, আমাকে নিজের ভাই মনে করিও। ঠিক আছে! হুম। যখন আসছিলাম ওর মুখে একটা অজানা আনন্দের হাসির রেখা দেখে আমার নিজের ভিতর এক অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করতে থাকল। ভাবতে থাকলাম ওর সাথে দেখা হইলো বলে ওর জন্য কিছু একটা করতে পারলাম নতুবা হয়তো দিনশেষে ও কোন চোর কিংবা ছিন্তায়বাজ হয়ে উঠত। যাইহোক দিনশেষে আল্লাহ যেটা করে ভালোর জন্যই করে, অবশেষে নীড় ছাড়া পাখিটি আবারও ফিরল আপন ঘরে, আলহামদুলিল্লাহ।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৫১ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now