বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

মুগ্ধ

"জীবনের গল্প" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান ZAiM (০ পয়েন্ট)

X সকাল আটটায় ক্লাস ছিলো। মুগ্ধ কাক ভেজা হয়ে আসছে ক্লাস করতে। এসে শুনে স্যার আসেনি। তারমানে ক্লাসটা ক্যান্সেল। বৃষ্টির কারণে আসতে পারেন নি স্যার ঐদিন। আমরা খুব হাসাহাসি করছিলাম ঐদিন ওকে নিয়ে। ও নাকি ক্লাস করবেই! যাইহোক, পরে দুজন মিলে বাইকে করে গেলাম খান জাহান আলী হলের ২২৯ নাম্বার রুমে। আমার একটা জার্সি দিলাম পড়তে আর ওর শার্টটা বারান্দায় মেলে দিলাম। গামছা দিলাম ভেজা চুলগুলো মুছতে। বলতেছে, "আরে এইসব লাগবে না!" পরে আমি ই জোর করে মুছে দিলাম ভেজা চুলগুলো। বারান্দায় ঐদিন মুগ্ধর যে শার্টটা আমি মেলে দিয়েছিলাম ঐ শার্টটা পরেই মুগ্ধর নিথর দেহটা আজ মাটিতে পরে আছে। গু* লি লাগার পর রক্তভেজা সেই শার্টটা দেখে বুকের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে। মুগ্ধ আমার ইউনিভার্সিটি লাইফের প্রথম বন্ধু একই সাথে প্রথম রুমমেট ছিল। তখন দুজন স্বপ্নপুরী আবাসিক এলাকায় থাকতাম। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাস। শীতকাল ছিলো তখন। আমাদের রুমের উপরে টিনশেড। সারারাত টিনে কুয়াশা জমে জমে ফোটায় ফোটায় বৃষ্টির মত পড়ে পড়ে লেপ তোষক ভিজে যেত। সকাল হলে আর মুগ্ধর দেখা পাওয়া যেত না। সারাদিন এখানে ওখানে ঘুড়ে বেড়াবে। ইউনিভার্সিটিতে এমন কেউ নেই যে কি-না মুগ্ধর বন্ধু নয়। আড্ডা, ছোটাছুটি আর দূরন্তপানা নিয়ে এতই ব্যস্ত থাকতো লেপ তোষকটা যে একটু রোদে দেয়া দরকার এইসব ভাবার সময় কোনোদিনই মুগ্ধর হয়নি। আমিই দিতাম দুজনেরটা, রুমে নিতামও আমি। এসে যখন দেখতো এইসব, হেসে দিয়ে বলতো "আমাকে দিয়ে এইসব জীবনেও হবে না"। পরে অবশ্য দুজন মিলে পলিথিন বেঁধে দিয়েছিলাম রুমে যেন পানি না পরে নিচে। আন্টিকে ফোনে এইসব কথা বলতো। মুগ্ধর কাছ থেকে নাম্বার নিয়ে আমার সাথে প্রায়ই কথা বলতেন আন্টি। আন্টি অনেক স্নেহ করতেন আমাকে। কী সুন্দর করে বাবা ডেকে ডেকে কথা বলতেন। আমি যেন মুগ্ধকে দেখে রাখি এইসব বলতেন। যখন এইসব ওরে বলতাম "আন্টি আমাকে বলছে তোরে যেন দেখে রাখি"। এইসব শুনে হেসে গড়াগড়ি দিতো। বলতো ❝আমি এখন যথেষ্ট বড় হইছি,রবিউল❞। এভাবেই কেটে গিয়েছিল আমাদের ইউনিভার্সিটি লাইফ। কত শত স্মৃতি জমে আছে এখনো মনে। খুলনা ছেড়ে চলে যাওয়ার কিছুদিন আগেও গেলাম একসাথে জবদ হোটেলে খেতে। একসাথে ঘুরাঘুরি,আড্ডা, সিনিয়রদের সাথে রাতের মিটিং, খেলাধুলা, ট্যুরের সেই ৭ টা দিন আরও কত কি! এমন অসংখ্য স্মৃতি ভুলব কিভাবে মুগ্ধ? হ্যাঁ, সত্যিই মুগ্ধ কিন্তু বড় হয়েছিলো। বড় হয়েছিলো বলেই সে পুরো ব্যাচটাকে আগলে রেখেছিলো। শুধু ব্যাচ নয় পুরো ইউনিভার্সিটিটাকেই। আর এখন তো পুরো ইউনিভার্সিটির সীমানা ছাড়িয়ে পুরো বাংলাদেশটাকেই আগলে রাখতে চেয়েছিলো। খুলনা ইউনিভার্সিটির সব কাজে পাওয়া যেত ওকে। এমন কোনো প্রোগ্রাম নেই যেখানে মুগ্ধ দায়িত্ব নেয়নি। আর ঠিক এই কারনেই ক্যাম্পাসে মুগ্ধর জনপ্রিয়তা গগনচুম্বী। মুগ্ধর মুগ্ধতা ছড়িয়ে গিয়েছিলো ক্যাম্পাসের প্রতিটি ব্যাচমেট সিনিয়র জুনিয়রের হৃদয়ে। আর এখন তো সারা দেশজুড়ে। হয়তো একদিন মুগ্ধতা ছড়াতো দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশে। একটা বুলেটের গু* লিতে সব শেষ হয়ে গেলো। আমাদের মুগ্ধর মুগ্ধতা ছড়ানোকে নিশ্চিহ্ন করে দিলো। But you are always in our hearts ???? সবাই আমার বন্ধুর জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ যেনো ওকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন। লেখা : রবিউল আউয়াল ভুঁইয়া, গণিত ডিসিপ্লিন, '১৯ ব্যাচ,খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় আমার মন্তব্য : চলমান কোটা সংস্করণ ও বৈষম্যবিরুধী ছাত্রান্দোলন ( ২০১৮ থেকে শুরু - ২০২৪ এ চলমান ) এর ব্যাপারে আমরা অনেকে অবগত আছি। আমার দেখায় জিজেতে অনেক পূর্বে ন্যায় এবং সত্যের পক্ষে অনেক লেখালেখি হতো। এখন অবশ্য সেসকল অর্থর-রা একটিভ না থাকায় হচ্ছে না । তবে এই পোস্টটি আমি জিজেটে আর্কাইভ করে রাখতে চাই , তাই আপলোড দেওয়া। জিজের প্রতিটি গল্প , জীবনবৃত্তান্ত , সত্য , ইতিহাস , মজার লেখার মাঝে এই একটি জীবনবৃত্তান্তও যোগ থাকুক । তবে জানিয়ে দেওয়া ভালো এই চলমান আন্দোলনে কিন্তু এমন নয় যে একজন শহীদেরই জীবনবৃত্তান্ত আছে । এটি কিন্তু শত পেরিয়ে গেলো ( অনেক জায়গার তথ্যমতে সংখ্যা নয়শত পেরিয়ে ) । আবু সাঈদ ভাই থেকে যে সংখ্যা শুরু হয়েছে, সেটা ওয়াসিম ভাই, ফয়সাল শান্ত ভাই, তানবিন ভাই, ছোট্ট তাহমিদ, ইয়ামিন ভাই, ইরফান ভাই, ফাহাদ ভাই, শাকিল পারভেজ, ফাহমিন জাফর, ফারহান ফাইয়াজ, জিল্লু শেখ, দীপ্ত দে, রুদ্র সেন, হাসান মেহেদী, তাসাউফ উল আলম সহ আরো কত যে শহীদের জীবনবৃত্তান্ত আছে , তাদের জীবনের গল্প আছে , এগুলো সব একত্রিত করতে না পারলেও এটলিস্ট এই একটির মাধ্যমে সবাইকে মনে রাখতে পারব । জিজে আমার কাছে স্মৃতিময় একটি জায়গা , এখানে না হয় আরেকটি স্মৃতির গল্প রেখে গেলাম । কখনো যদি মন চায় স্মৃতিগুলো দেখব, তখন না হয় একবার এদের কথা স্মরণ করব। gj


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৪৩৬ জন


এ জাতীয় গল্প

→ অদ্ভুত মুগ্ধতা - পর্ব ৩
→ অদ্ভুত মুগ্ধতা - পর্ব - ২
→ অদ্ভুত মুগ্ধতা - পর্ব ১

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now