বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
১
উপজেলা সদর
ব্যাংকে বেশ ভিড়। মহামারী করোনার বয়স যতই বাড়ছে মানুষ ততই অসচেতন হচ্ছে। মাস্ক ছেড়ে দিয়ে সবাই যেন হাফ ছেড়ে বেঁচেছেন। নিতেন মাষ্টার ভিড় ভাট্টা এড়িয়ে ব্যাংকের শেষ মাথার একটা চেয়ারে বসে অপেক্ষা করছেন। কিছুক্ষনের মাধ্যেই তার রিটায়ার্ডমেন্টের টাকাটা পেয়ে যাবেন। অবশেষে তার ডাক পরল। প্রয়জনীয় কাগজে সই দেবার পর তিনি টাকাটা পেলেন। মাস্কটা আরেকটু চেপে নিয়ে আবার চেয়ারে বসে পড়লেন। এই ভিড় ভাট্টার ভেতর দিয়ে তিনি যেতে চান না। পাছে করোনা ধরে বসে এইভয়ে। তিনি খেয়াল করতে ভুলে গেলেন একই রঙয়ের একটা ব্যাগ হাতে এক মাঝ বয়েসি লোক তার পাশে বসে পড়েছেন। এর মধ্যেই একটু তন্দ্রা তন্দ্রা ভাব এসে গেল। চোখ খুলতেই বুঝতে পারলেন ঘন্টাখানেক পেরিয়েছে। ব্যগটা হাতে নিয়ে ব্যংকের তিন তালা সিড়ি বেয়ে নীচে নেমে এলেন। সাইকেলটায় চেপে এবার বাড়ি ফেরার পালা। যাবার আগে ব্যাংকটার দিকে একবার চেয়ে দেখলেন। স্কুলের সাথে সম্পর্ক শেষ হয়েছে দুবছর হবে এবার তার সাথে এই ব্যাংকটাও যুক্ত হতে চলেছে। “কোনদিন যে জীবনের সাথে সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়, আর তুমি কিনা ব্যাংক নিয়ে পরে আছো বুড়ো” ভেবে হাসলেন নিতেন মাষ্টার।
মাস্টার মশাইয়ের বয়েসের মতই ফুস করে লাল সূর্যটা নেমে যায়, তেপান্তরের মাঠ ছাড়িয়ে হরিহরের সুপারির আগায়। ওই একখানা পুরনো ধুতি সামলিয়ে সাইকেল নিয়ে গায়ের এই এক ঘন্টার পথটা উনি হেটে যাবেন। প্রতিদিন ওনার এই সময়টায় সঙ্গ দিতে কেউ না কেউ ঠিক জুটে যাবে।
বাকী সব গ্রামের মতই সুন্দর এই গ্রাম। নাম পলাশডাঙ্গা। এই গায়ের হাইস্কুলেই গনিত পড়াতেন তিনি। চক ডাস্টার নিয়ে বোর্ড মুছতে মুছতে কবে যে সময়টা পেরিয়ে গেল বুঝতে পারেননি। যেই না রিটায়ার্ড করলেন অমনি বড় মেয়েটার বিয়ে ঠিক হল।
.
২
অরুপা বেশ কয়েক দিন যাবত মোবাইলে বেশ ব্যস্ত। কয়েকদিন হল ফিসিফিসিয়ে কথা বলতে শিখেছে সে। তার হবু বড় বীরেন তাকে অনেক কায়দা করে ট্রেনিঙটা দিয়েছে। পাশের ঘরটা নিতেন মাষ্টারের ছোট ছেলে বিকাশের। সেও ব্যস্ত মোবাইলে। তবে তার মাধ্যম ভিন্ন। ভিডিও কলে রাধার সাথে চ্যাটিংয় করতে করতে ম্যাসেনজার চেক করে। ভাল খবর হল দুদিন যাবত তার প্রাক্তন ফিরেছে। একসাথে দুজনকে চালাতে বেশ প্ররিশ্রম করতে হচ্ছে তাকে। তাদের মা দিনের বেশির ভাগ সময় রান্না আর ঘর দোরের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। কাজের সময় ছেলে মেয়েদের মোবাইল আসক্তির প্রতি নিজের বিরক্তি প্রকাশ করে তার বকাবকি চালিয়ে যান। তার এই উচ্চ স্বরগ্রাম থেকে বাঁচতে ছোট ছেলেটা কানে হেডফন গুজে দিয়ে গান শোনে। তবে এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। রান্নার সময় ভুল বসত ভাত পুড়িয়ে ফেলেছেন তিনি। যেটা কিনা অশুভ লক্ষন। স্বামীর অমঙ্গল ঘোচাতে বেশ কবার দেবতাদের নাম আওড়ালেন তিনি।
৩
“বুঝলেন বাবু এই জিনিষ পত্তরের যা দাম বেড়েছে বউ বাচ্চা নিয়ে বেঁচে থাকাটাই দায় …” লোকটার কথা শেষ না হতেই মাষ্টার মশাই শুরু করলেন, “ঠিকি বলেছ সাবু। কি আর করবে বল?”
সাবু এবার তার মুখে সদ্য জমা পানের পিক ফেলে দিতে দিতে বলে, “বাবু শুনলাম আপনার মেয়ের বিয়া। তা পাত্র পক্ষ কততে রাজী হল? বুঝলে সাবু মাঝে মাঝে মনে হয় “সারাটা জীবন এত খাটা খাটনি… দিনশেষে তো সেই খালি হাতেই ফিরতে হয়” কথাটা শেষ করেই গলাটা কিছুটা নামিয়ে মুখটা সাবুর দিক করে বললেন,
“ইস্কুল থেকে পেলাম বারো লাখ। পাত্রের সরকারী চাকুরী। চেয়েই বসল দশ। তোমার বৌদিটাও ‘ওত ভাল ছেলে অরে পাবে না, বিয়ে দাও, বিয়ে দাও’ বলে সে কি জেদ। আমার আর কি করা… টাকাটাও তোলার সময় হয়ে এল ।
সাবু মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল, “কি আর করবেন কন, আমার মাইটারেও দেইখা গেছে। ওরাও সাতের কমে ছাড়ব না। আমার তো আপনের মত আর চাকুরী নাই যে চাইলে দিয়া দিমু। কয়েক বিঘা জমি আছে , নিজের শ্যাস সম্বল। বেচলে খামু কি?
মাষ্টার মশাই কি একটা ভেবে পকেটে হাত দিয়ে হাজার টাকার একটা নোট বের করে সাবুর হাতে দিচ্ছিলেন আর বলছিলেন, “ধার নিয়ে দেব দেব করে দেওয়াই হল না”। সাবু হাত খানেক পিছিয়ে গিয়ে মুখটা লাল করে বলে উঠল “আরে মাষ্টার করেন কি করেন কি আমার পোলার আপনি মাষ্টার। আপনার কারনেই সে এখন শহরে চাকুরী করতাছে। সে শুনলে কি কইব? থাক ওইটা আপনার মেয়ের জন্যে, আমার তরফ থেকে রাইখা দেন”। মাষ্টার মশাই কিছুক্ষন চেয়ে থেকে টাকাটা পকেটে ঢোকালেন। বোধহয় মানুষের সংজ্ঞাটা এই অশিক্ষিতের থেকে আরও একবার শুধরে নিলেন যেটা শিক্ষিত চাকুরীজীবী পাত্র পক্ষের দাবীতে ভুলতে বসেছিলেন। মোড়টা পেরুলেই সাবুর বাড়ি।
সাবু হাটা থামা দিয়ে কানের কাছে মুখটা এনে বলল, “মাষ্টার মশাই ব্যগটা সাইকেলে ঝুলালাইয়া না রাইখ্যা হাতে পেচায়া নেন, আন্ধার রাইত”। মাষ্টার মশায় হেসে বললেন “সাবু তোমারে বোকা সোকা মনে হলেও তুমি মানুষটা কিন্তু বেশ চালাক”। বলেই ব্যগটা হাতে নিয়েই চমকে গেলেন। একি কি কেমন চাপা চাপা লাগছে বলেই ব্যাগের ভেতরে হাত দিয়ে ভেতর থেকে বের করে আনলেন কাগজের বান্ডিল। সাবুর সাদা মুখটা কালো হয়ে গেল। মাষ্টার মশায়ের কাগজের বান্ডিল ধরা হাতটা কাপতে লাগল। সাবু থমথমে গলায় বলল, “ব্যাগটা কি তাইলে বদল হয়ে গেল”। মাষ্টার মশাই মুখে আর কিছু বলতে পারছিলেন না। হাত থেকে সাইকেলটা পরে গেল। তারপর মাষ্টার মশাই নিজে। একটা শত বর্ষী বটগাছের পতনে যতটা ধুলো উড়ায় তার চেয়ে খানিক কম ধুলো সরে গেল। সাবু সাথে সাথে মাটিতে বসে মাষ্টার মশাইকে ঝাকাঝাকি করতে লাগল। পাশের বাড়ির সাহেব মাতব্বর সবেমাত্র মাগরিবের নামজটা শেষ করে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। সাবুর ডাকাডাকিতে সে বেরিয়ে এল। চারদিকে মুহূর্তেই খবর ছড়িয়ে গেল “উত্তর পাড়ার নিতেন মাষ্টার হার্ট এট্যাক করেছে”।
।শেষ।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now