বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
আমার অসমাপ্ত প্রেম ও একটি ভোরবেলা ~ সারোওয়ারে জুলফিকার
X
সারা রাত্তির বৃষ্টির পর আকাশের গাঁড় কাল রঙ মিশে গিয়ে ধীরে ধীরে ভোর হল। পুরো রাতটা ঘুমিয়ে ছিলাম কি একটা মোহের ভেতর দিয়ে।ঠিক মোহ বলা চলে না, বলতে পার নেশা। আচমকা তুমি করে বলছি বলে মনে কিছু নেবেননা নিশ্চয়। নকল ভদ্রতায় আমার পোষায় না তাই এ সম্বোধন। ও হ্যা কি যেন বলছিলাম? নেশা। বর্ষার রাতে টিনের চালওয়ালা ঘরে বৃষ্টির শব্দে ঘুমনোটা এক প্রকার নেশাই বলা চলে।এই রে! চুলোয় চা দিয়ে এসেছি তা পুরল বোধহয়।
ভদ্র লোক মৃদু হাসলেন। আমি দৌরে রান্না ঘরে গিয়ে চা’টা নামিয়ে নিয়ে এলাম। কাপে চামুচের টুং টাং শব্দে লোকটার ঘুম ঘুম ভাবটা চলে গেল। একটা কাপ লোকটার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে আরেকটা কাপ হাতে নিয়ে ব্যালকুনিতে চলে এলাম। আমার ঘরের পাশেই একটা সবুজ উচু টিলা। বৃষ্টির নতুন পানিতে টিলার সবুজ গাছগুলো আরও সবুজ হয়ে উঠেছে। টিলার চুড়ার একটা গাছে পাখির কিচির মিচির শোনা যাচ্ছে।অবশ্য আমার দু’রুমের বাংলোটাও একটা টিলার উপর। আমি লেখক মানুষ। নিত্য নতুন কন্সেপ্ট মাথায় আনতে পাহাড়ে জঙ্গলে ঘুরি।
ডাইনিঙয়ে যে লোকটা চা খাচ্ছে উনি সুদীপ বিশ্বাস। এই পুরো জঙ্গল মহলের দায়িত্ব ওনার উপর। সংক্ষেপে ফরেস্ট অফিসার। তিন মাস হল এসেছেন। আমি আছি চার মাস হতে চলল কিন্তু এখন পর্যন্ত নতুন কোন গল্প খুজে পাই নি। উত্তর দিকটায় একটা এবড়ো থেবড়ো রাস্তা সোজা লোকালয়ের দিকে চলে গেছে। রাস্তাটায় একটা সরকারী জীপের যান্ত্রিক শব্দ ভেসে আসছিল।আজ সুদীপ সাহেবের স্ত্রী আসবার কথা। স্টেশনে বহু আগেই উনি জীপটা পাঠিয়ে ছিলেন। সুদীপ সাহেবকে জীপ আসবার খবরটা জানাতেই উনি বউ বরনে হন্ত দন্ত হয়ে ছুটলেন।আজ থেকে সম্ভবত ভোরবেলাটায় চা খাওয়ার সঙ্গি হারাচ্ছি। এই নির্জন বনে উনি আমার একমাত্র সঙ্গি তাও ভোরবেলার জন্যে। আমার চা টা শেষ করে বাইনোকুলার, ডায়েরি আর চায়ের ফ্লাক্সটা ব্যাগে ভরে বনের দিকে ছুটলাম। আজ আমি বৃষ্টি ভেজা জঙ্গল দেখব। ভেজা সবুজ পাতায় সূর্যের আলো পড়লে কি রকম আলোর খেলা হয়। আমার সাথে ছিল সুশান্ত। ও গানম্যান। সাড়াটা দিন ঘোরাঘুরি শেষে সন্ধায় আমার কুটিরে ফিরলাম। পাশের ঝর্না থেকে নিয়া আসা পানি দিয়ে গোসল সেরে পেট পুজো শেষে ডায়েরি নিয়ে বসলাম। লিখলাম রিছাং ঝর্ণার কথা। পাহাড়ি একটা বুনো ফুলের অচেনা গন্ধের কথা। পুরো পাতা ভরে গেলে।কলিং বেলের টুং টাং শব্দে আমার লেখার ঘোরের ইতি ঘটল। দরজা খুলতেই সুদীপ সাহেবের হাস্যজ্জল মুখটা চোখে পড়ল। তখন ঠিক সন্ধ্যার সূর্যটা লাল আভায় ডুবতে শুরু করেছে। পূর্বদিকটায় আবছা অন্ধকার নেমে এসেছে। সুদীপ সাহেব ইশারায় আমার দিকে দেখিয়ে ওনার স্ত্রীকে বললেন তোমাকে বলেছিলাম না আমার বাংলোর পাশে একজন বিখ্যাত লেখক থাকেন। উনি সেই মানুষ। পার্থ বোস। আমি কিছুটা লজ্জিত মুখে নমস্কারের ভঙ্গিতে হাত জড়ো করলাম। দিন আনি দিন খাই লেখকের নামে এমন প্রশংসা স্বয়ং ঈশ্বরও মার্জনা করবেন না। যা হোক সন্ধার অন্ধকারে ওনার স্ত্রীর মুখের উপর আমার চোখ পড়ায় আমার সলজ্জ মুখে হঠাত বিষাদ নেমে এলে। এযে আমার পরিচিতার থেকেও বেশি কিছু। কিছু না বলে-কয়ে যার থেকে পালিয়ে এসেছিলাম আড়াই বছর আগে।এযে সেই সন্ধ্যা। গোধূলির গাঁড় অন্ধকারে তার সাদা মুখটাতে কেমন ক্ষোভে ক্ষোভে লাল হয়ে উঠছে তা আমি ক্ষনে ক্ষনে টের পাচ্ছি। সুদীপ সাহেব বক বক করেই চলেছে।রাতের ভোজের নিমন্ত্রন করে ওরা চলে গেল। আমি মনে মনে খুশি’ই হলাম। যাক তবে সন্ধ্যা বেশ একটা ভাল বেতনের বর পেয়েছে। ওর বাবা মানস বিশ্বাসের তেমনটাই ইচ্ছে ছিল। আমি লেখা টেখা দিয়ে যেটুকু পাই তাদিয়ে অন্তত বউ পোষা অসম্ভব। ঘর বাধতে গেলে যে আমার লেখক আত্মাটাকে বলি চড়াতে হত সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত ছিলাম। তাই সেদিন পালিয়েছি। আজ রাতেও পালাব। কারন সন্ধার অনেক প্রশ্নের উত্তর আমার থেকে পাওনা রয়ে গেছে। সেসব উত্তর আমার জানা নেই। আমি চলে যাচ্ছি সবুজ টিলার ভেতর দিয়ে আকাবাকা রাস্তা ধরে। তখনও লাল রঙা সূর্যটা ডুবতে খানিক বাকি ছিল। সন্ধার নতুন সিদুরের থেকেও সূর্যটা লাল ছিল।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now