বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

একজন শুণ্য পকেটের প্রেমিকের গল্প

"জীবনের গল্প" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান সারোওয়ারে জুলফিকার (০ পয়েন্ট)

X রাত ১১ টা ১৯ মিঃ। গুলশানের লেকের ধারে বসে আছি অনেকক্ষণ। পকেট যখন শূন্য থাকে তখন এখানটায় বসি, নিকোটিনের ধোঁয়া ওরাই! জনমানবহিন শূন্য প্রান্তরে তখন আমি আর জোছনা। আজ ভরা পূর্ণিমা! পুরো আকাশ আর মাটি জুড়ে আজ তাই শুধুই জোছনার রাজত্ব! আচমকা একটা কার এসে লেকের ধারে গাছের সাথে ধাক্কা খেল। কারের দরজা খুলতেই সদ্য মাথা ফাটা এক সুন্দরি মেয়ে জ্ঞান হারানোর পর্যায়ে ।গাছের সাথে ধাক্কায় গাড়ির সামনের লাইট ভেঙ্গে গেছে। এমনিতেই শূন্য পকেট, এই মেয়েকে ক্লিনিকে নিয়ে যেতেও টাকার দরকার তার উপর গুলশানের বড়লোক ক্লিনিনিক গুলো টাকা খাওয়ার আশায় হা করে আছে । দেখতে হবে কারটি নষ্ট হয়েছে নাকি ভাল। হ্যাঁ ভাল। আর মেয়েটি পাশে একটা ব্যাগ ও আছে! খুলতেই টাকার পেটিও মিলল, যাইহোক মেয়ে বড়লোক ঘরের, ক্লিনিকের বিল মেটাতে সমস্যা হবে না । বাচা গেলো, এবার কোনমতে হসপিটালে অ্যাডমিট করেই ভাগা যাবে। সোজা ক্লিনিক গেলাম। এরপর নানাবিধ চিকিৎসা শেষে মাথায় ব্যান্ডেজ দিয়ে দেয়া হল সেই মেয়েটির। এতক্ষন ধরে শুধুই বসে পিঠে মনে হয় ব্যাথা ধরে গেছে। দেখতে দেখতে দু’ঘণ্টা চলে গ্যাছে। মেয়েটিকে দেখছিলাম যদি চেনা যায়। সুন্দরী মেয়ে দেখলেই কেন জানি চেনা চেনা মনে হয়। এতো সুন্দরি মেয়ে তার উপর আবার বড়লোক বাবার একমাত্র মেয়ে কেন যে মরার সখ জাগে।হুম! এতক্ষনে সুইসাইড খাইতে যাওয়া সেই মেয়ের জ্ঞান ফিরেছে! জিজ্ঞেস করলাম দুর্ঘটনার কারন কি? পরিচয় কি? ইত্যাদি , ইত্যাদি...... মেয়েটি বলেই চলল...... ওর নাম রিয়া। বাবা বিশাল বড়লোক। সেই সুবাদে বড়লোক পোলার সাথে প্রেম। আজ ওর জন্মদিন তাই সেই বড়লোক পোলার ইচ্ছে ছিল সুন্দরি মেয়েকে বার্থ ডে পার্টির নাম করে বারে নিয়ে গিয়ে হাবি-যাবি খাইয়ে মাতাল করা এরপর প্রেমিকাকে সর্বস্বান্ত(ধর্ষণ) করা। অবশ্য বেশিরভাগ ধনীর দুলালী’ই বারে গিয়ে ড্রিংক করা, তারপর হাবিজাবি করা এসবকে ওরা ইনজয় নামে অভিহিত করে। কিন্তু মেয়েটা ভাল ছিল তাই পার্টিতে যেতে চায় নি! কিন্তু বয়ফ্রেনডের অনুরোধ বলে কথা ।মেয়েটিকে কোল্ড ড্রিংকের নাম করে মদ খাওয়ানো হয় কিন্তু পরিমান কম হওয়ায় মাতাল হয় নি। কিন্তু বোকা পোলা সেটা বুঝতে পারে নি। পোলার মতিগতি খারাপ বুঝে পোলার গালে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে প্রেমিকা ঘটনাস্থল হইতে বিদায় নেয়। কিন্তু বালিকা প্রেম ব্যর্থ প্লাস বিশ্বাস নষ্ট হওয়ার দরুন মনে আত্তহত্যার একটু সখ থাকায়, বড়লোক বাপের দামি গাড়ি নিয়ে ইচ্ছে করেই গাছের সাথে ধাক্কা ধাক্কি তার উপর আবার মদ খাওয়া মতাল। এবার আমার পালা। রিয়া আমার পরিচয় জানতে চাইল। কি করি... ইত্যাদি , ইত্যাদি ! আমার আবার পরিচয়!! আমিঃ - তখন রাত ১১ টা বেজে ১৯ মিনিট। গুলশানের লেকের ধারে বসে আছি অনেকক্ষণ। পকেটে সামান্য ক’টা টাকা ছিল কিন্তু কিছুক্ষন আগে ছিনতাইকারি এসে টাকা চাইতেই তাও দিয়ে দিলাম। এখন পকেটের ইতিহাস শূন্য। ওদের থেকে একটা সিগেরেট চেয়ে নিয়েছিলাম। সেটার ধোয়া’ই উরাচ্ছিলাম। ।ও নামটাই তো বলা হয় নি। আমি রিহান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি, বাবা মা অনেকদিন আগেই বিদায়ের খাতায় নাম লিখিয়েছেন।বাবা মার রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে পড়াশুনার খরচ চলত, টিউশনি করেই মেসের বিল মেটাই কোনমতে। ৩ টা টিউশনি করতাম তার থেকে কমে ১ টিকে ছিল তাও যে মেয়েটাকে পরাতাম ওর কারনে’ই চলে গেলো। রিয়াঃ – কেন? আপনার ছাত্রী আবার কি দোষ করল? আমিঃ- মেয়েটাকে পরাচ্ছি মাত্র দেড় মাস হল। বেয়াক্কেল মেয়ে পড়া বাদ দিয়ে আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে দিয়ছে তার উপর আবার আজ মাসের ২৬ তারিখ । আমি গম্ভীর মুরুব্বী কণ্ঠে না করে দিয়েছি সাথে কিছু উপদেশ বানী। একজন শিক্ষক হিসেবে আমার যতটুকু দায়িত্ব আরকি । মেয়ের মা কান পাতা লোক , সব শুনে ফেলেছে। এরপর আমাকে সসন্মানে বিদায় করে দিল। বেয়াক্কেল মেয়ের কারনে টিউশনি টাও গেলো আবার মাসের টাকাও পেলাম না । ......আমার কথা শুনে রিয়া হাসতে লাগল। মনে হয় আত্তহত্যার ইচ্ছা আর নেই । হসপিটালের কাজ শেষ। ওর কারে করে ওকে বাসায় পৌঁছে দিলাম। বিদায় বেলায় মেয়েটা আমার নাম্বার চাইল। আমি বললাম ‘ফোন ছিল’ তবে এখন ছিন্তাইকারির হাতে। একটু হেসে একটা কার্ড দিয়ে বলল এখানে দেখা করে নাম বললে আপনার চাকরি কনফার্ম আর এইটা আমার ফোন নাম্বার। বন্ধু মনে করলে কল করতে পারেন। বাসায় ঢোকার সময় মেয়েটা শেষ বার আমার দিকে একটু দেখে একটু মৃদু হেসেছিল মনে হচ্ছিল হুমায়ন আহমদের সেই বিখ্যাত চরিত্র “রুপা”! কিন্তু আমি যে গল্পের হিমু নই, বাস্তব পৃথিবীর এক অতি সাধারন চরিত্র! আমি আবার আমার রাস্তায় চলতে লাগলাম। মেয়েটির নাম্বারটা পকেট থেকে বের করে ছিরে ফেলে উড়িয়ে দিলাম বাতাসে । কি দরকার এই শূন্য পকেটের সাথে আরেকটি জীবন জড়ানোর...। তখন ভরা পূর্ণিমা! পুরো পথে আজ শুধুই চাঁদের রাজত্ব। এই ভরা পূর্ণিমার আলোয় চাঁদের সাথে আমার গল্প চলবে যতক্ষন পথ না ফুরায় । গন্তব্য অজানা!!! প্রায় ৫ বছর পর.. সেদিন ছেলেটি মেয়েটির ফোন নাম্বার ছিরে ফেলেছিল কারন তার পকেট ছিল সুন্য আর অর্থ না থাকলে আবেগ জানলা দিয়ে পালায় ! আর চাকুরীর অফারটাও! কারন সে তার যোগত্যা দিয়েই চাকুরী করতে চেয়েছিল! আজ সে একটি মাল্টি নন্যাশনাল কোম্পানিতে জুনিয়র অফিসার। ছেলেটির আজ পদোন্নতি হয়েছে আর বেতন ও বেড়েছে! ছেলেটা সেদিনের সেই ছেড়া কাগজটা ফেলে দিয়ে আবার কুড়িয়ে নিয়ে যত্ন করে রেখেছিল।আজ সেটা পকেট থেকে বের করে দেখছিল। এর আগে যখন ওর চাকুরী হল সেদিন ছেড়া কাগজটা বের করে কাগজটার দিকে কিছুক্ষন চেয়েছিল! কারনটা জানা যায় নি! আর মেয়েটা ততদিনে নতুন কারও সাথে ঘর বেধেছে। সম্ভবত এক সন্তানের জননিও হয়ে গেছে। তবে মেয়েটার সেদিনের কথা কি মনে আছে?


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৮৪ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now