বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
ডায়েরির শেষ পাতা
লেখকঃ নাফিজ আহমেদ
মা-বাবার আদরের ছেলে সিয়াম। তার অল্প বয়স থেকেই একটা ভালো অভ্যাস তৈরি হয়। সে নিয়মিত ডায়েরি লিখতে ভালোবাসত। সারাদিনের ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা সে নিজের ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করে রাখত। আজও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। আজ সে তার বাবার সাথে ঘুরতে গিয়েছিল অনেক দূরে। সারাদিন বাবার সাথে অনেক আনন্দ করেছে। ভ্রমণ করেছে বিভিন্ন দর্শণীয় স্থান। আগে থেকেই পরিকল্পনা ছিল যে আজ সিয়াম এবং তার বাবা বাইরে কোথাও ঘুরতে যাবে। যেই চিন্তা সেই কাজ। যথারীতি তারা ঘরতে চলে গেল তাদের ইচ্ছানুযায়ী নানান জায়গায়। দিনশেষে বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শন করে তারা ফিরল আপন নীড়ে। মায়ের সাথে সারাদিনের ঘটে যাওয়া বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা বলল,এবং রাতের খাবার খাওয়ার পর তার ডায়েরি লেখার কাজ শুরু করল। আজকে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাওয়ার কারণ-ও আছে কেননা সিয়াম আগামীকাল দেশ ছেড়ে চলে যাবে। এইজন্য তার ব্যস্ত বাবা আজ সারাদিন তার সাথে সময় কাটিয়েছে। সিয়াম বেশি রাত না করে যতদ্রুত সম্ভব ঘুমিয়ে গেল। কেননা কাল ভোরবেলা উঠে সবকিছু গোছাতে হবে। ভোরবেলা কোকিলের সুমধুর কন্ঠে কুউহু কুউহু ডাক শুনে ঘুম ভাঙলো সিয়ামের। একটু ফ্রেশ হয়ে দাঁড়িয়ে গেল নামাজের পাটিতে তাহাজ্জুদ আদায় করে, মহান রবের সান্নিধ্যে দোয়ায় ব্যস্ত সিয়াম। একটু পরেই দক্ষিণা বাতাসের সাথে ভেসে আসছে আজানের প্রতিধ্বনি। মসজিদে গেল নামাজ আদায় করতে। মসজিদ থেকে এসে সবকিছু গোছগাছ করে রওনা হচ্ছে নিজ গন্তব্যের দিকে। সন্ধ্যায় ফ্লাইট এইজন্য আগে থেকেই রওনা হয়েছে। যথাসময় ফ্লাইট পেয়ে চলে আসল বিদেশের মাটিতে। আপন বাসভবন থেকে এখন সে কত দূরে! গন্তব্যে পৌঁছানোর পর সে অবলোকন করল সবকিছু নিলেও তার শখের সেই ডায়েরিটা নিতে ভুলে গেছে। কি আর করা এখন তো সে বাড়ি থেকে অনেক দূরে! ইচ্ছা করলেও তো আর উপায় নাই। সিয়াম মূলত এখানে এসেছে লেখাপড়া করার জন্য। সে তার লেখা পড়া শুরু করল। দেখতে দেখতে দুইবছর পাড় হয়ে গেলো। হঠাৎ একদিন সে অবহিত হলো যে তার বাবা ছয় মাস আগে মারা গেছে। খবর শ্রবণ করা মাত্র তার মাথায় আকাশ ভেঙে পরল। সে নিজের কর্ণকহর কে বিশ্বাস করতে পারছে না। তার নিজে বাবা ছয় মাস আগে মারা গেছে আর সে ছয় মাস পরে জানতে পারল এটা অসম্ভব! তার মায়ের কাছে জিজ্ঞাসা করায় তার মা বলল আসলে তখন তোর ফাইনাল পরিক্ষা চলছিল বাবা। আমি যদি তোকে জানাতাম তাহলে তুই হয়তো পরিক্ষা টা দিতে পারতিস না। এইজন্য তোকে কিচ্ছু বলিনি। বলেই মা কেঁদে দিল। সিয়ামও ফোনের ওপাশ থেকে অঝোরে কেঁদে যাচ্ছে। সিয়ামের এখানে লেখাপড়া টা মোটামুটি শেষ। সে কখনো কল্পনাও করতে পারেনি আপন নীড়ে ফেরার আগে এমন একটা খবর তাকে শ্রবণ করতে হবে। আসলে আমাদের জীবনে কিছু কিছু সময় এমন সব মূহুর্ত আসে যেটা আমাদের সকলকেই মেনে নিতে হয়। আর দেরি না করে সে দ্রুত বাড়িতে ফিরল। এসেই তার বাবার কবর জিয়ারত করতে গেল। পরিবারের সকলে সিয়ামকে দেখে পুনরায় আবেগপ্রবণ হয়ে অঝোরে কাঁদছে। রাতে সে তার নিজ কক্ষে আসল। জানালা দিক দিয়ে সে একনজরে তাকিয়ে আছে বৃহৎ ঐ নিকোষ কালো আধারে ঘেরা একাকী আকাশের দিকে, আর নিজে নিজেই কল্পনা করছে তার বাবাকে নিয়ে। হটাৎ সে দৃষ্টিপাত করল তার পড়ার টেবিলের উপর পড়ে থাকা সেই ডায়েরির দিকে। আজও ডায়েরি টা ওখানেই পড়ে আছে। কেউ হয়তো কখনো দেখেনি। সে নিরবচ্ছিন্ন পরিবেশে একাকী ডায়েরি টা পড়তে শুরু করল। এক এক করে উল্টাতে থাকছে ডায়েরির পাতাগুলো। এক পর্যায়ে চলে আসল ডায়েরির শেষ পাতায় যেখানে বিদেশ যাওয়ার আগে তার বাবাকে নিয়ে লিখেছিল। ডায়েরির শেষের পাতা পড়তে পড়তে এক কঠিন প্রহরে তার চোখের কোনায় জড় হলো বাবা-ছেলের বিচ্ছেদের জল। বাবার কথা ভাবতে ভাবতে অন্তিম হলো রাতের অর্ধাংশ শেষ রজনীতে আপন চোখ জুড়িয়ে যেন একটু ঘুম আসল। আর স্বপ্ন জগতে যেন দেখা পেল তার নিজের বাবার। অনেকক্ষণ সাক্ষাৎ হওয়ার পর বিদায় নিলো বাবা।সিয়ামও একটু তৃপ্তি বোধ করল। শুকরিয়া জানালো আল্লাহ তায়ালার।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now