বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
#আরব্য_বেদুঈন
#পর্ব_১০
বিশাল গোলাকৃতি চাঁদটা আজ যেন পৃথিবীর বড্ড কাছে। আদিগন্ত বিস্তার করে আছে মরুবালুরাশি। কোথাও উঁচু কোথাও নিচু। ঢেউ খেলেছে তার বুকে। চাঁদের রূপালী আলোয় চিকচিক করছে। এই বালির রাজ্যে একটাই কথা মনে আসে, এখানে এই নিষ্ঠুর প্রকৃতির বুকে সুন্দরের অপরূপ দৃশ্য দেখে মনেপড়ে যায় সেই মায়াবী নারীদের কথা। যাদের রূপের ছটায় পতঙ্গের মত ছুটে আসে পুরুষ, তারপর জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যায়। এই মায়াময় প্রকৃতির রূপলাবণ্যে কে না সম্মোহিত হবে। যেন একটা সুবিশাল সমুদ্র কোনো এক অদৃশ্য জাদুকরের জাদুশক্তিতে স্থির স্থবির। কোথাও জলরাশি ফুলে ফেঁপে উঠে থমকে গেছে, কোথাও আবার এতো নিচে নেমে গেছে যেখানে গাড় অন্ধকারে ঢেকে গেছে মরুময় জগৎ। পূর্ণ চন্দ্র বিকশিত হয়ে বালুকারাশির ওপর তার জ্যোৎস্না ছড়িয়ে দিয়েছে। এই অপূর্ব শোভায় যে হারিয়ে যাবে। সেই জল না পেয়ে শুকিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে।
চন্দ্রালোকে আদিগন্ত বিস্তৃত বালুরাশির ওপর দিয়ে ছুটে চলেছে একদল উঠ আর তেজী আরবি ঘোড়া। উটগুলোর পেটের কাছে শক্ত করে বাঁথা রয়েছে দুম্বাগুলো। ওগুলো দৌড়াতে পারে না উঠ আর ঘোড়ার সঙ্গে সমান তালে। তাই ওদের বেঁধে নিয়ে চলেছি। এভাবেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ছুটে চলে যাযাবর বেদুঈন। আর বাঁধা রয়েছে বেদুঈন দলের সমস্থ মালপত্র। তাঁবু, ফরাস, গালিচা। আমরা ছুটে চলেছি উত্তর অভিমুখে। যেখানে সাগর এসে স্পর্শ করবে বালি। আমাদের গতিবেগ অতি দ্রুত, কারণ পেছনে ফেলে এসেছি শহরের সব থেকে পয়সাওয়ালা শেখ ও তার বেগমদের। আমাদের ওষুধের গুনে এখন বেহুঁশ হয়ে পড়ে আছে ওরা। ওদের একেবারে নগ্ন করে সব কিছু লুটে নিয়ে ছুটছি আমরা। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওদের এক্তিয়ারের বাইরে বেরিয়ে যেতে চাই। কারণ, হুঁস ফিরলে রাজার সৈন্যদল অবধারিত ভাবেই আমাদের আক্রমণ করবে। সে সৈন্যদলের সঙ্গে যুদ্ধে এঁটে ওঠা কঠিন। তাই যঃ পলায়তি, সঃ জীবতি।
তিরের বেগে ছুটে চলেছে আমাদের দল। মাঝে মাঝে ভয়ে চিৎকার করে উঠছে অসহায় দুম্বার দল। ওগুলোকে ফেলে যেতেই পারতাম, কিন্তু পথে খাবারের রসদ যদি কম পড়ে যায়! তাই ওদের নিয়ে ছুটে চলেছি। বাড়তি ওজোন বয়ে নিয়ে চলেছি। তেজী আরবী ঘোড়ার পিঠে আমি আর আমাকে জড়িয়ে বসে আছে ... না আজ মেহের নয়, মোতি। ওর বুদ্ধিতেই এই রক্তপাত হীন সম্পদলাভ। আজ ওর এটা প্রাপ্য। আমার কল্পনাতেও আসেনি এই ভাবে লুঠ করা যায়। এ বুদ্ধি ওর। তাই আমার ঘোড়ায় চড়ে আমার আদর মেখে এ পথচলায় ওর অধিকার বর্তায়।
আর মেহের! ও ছুটে চলেছে আমার প্রিয় উটের পিঠে। আবদুল্লাহ আর সোলেমানের ঘোড়া দুটো ছুটছে সবার পেছনে। পেছনে যদি কেউ পালায়, বা গতি কমিয়ে ফেলে তার দিকে তীক্ষ্ম নজর রেখে ছুটছে ওরা। আয়েশা আর দিলরুবা চলেছে উটের পিঠে। বাকি দলটা কেউ উটে, কেউ ঘোড়াতে। বাবুর্চির উটে প্রচুর সামান তুলেছে। বড় বড় গামলা, হাঁড়ি, হাতা, খুন্তি রান্নার সব সামগ্রী ওর জিম্মায়।
সারাটা রাত ছুটে চলে ঘোড়াগুলো চাঙ্গা থাকলেও উটগুলোর মুখ দিয়ে কষ গড়াচ্ছে। চাঁদ আকাশটা প্রদক্ষিণ করে পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়েছে। দূরে কটা খেজুর গাছ মাথা তুলেছে বিশাল বালুকারাশির মধ্যিখানে। এ সময় মরিচিকা দেখা যায় না। ওসব সাধারণত দেখা যায় প্রখর রৌদ্রে। তাই নিশ্চিন্ত হয়ে মোতিজানকে বললাম, ঐ দেখো, দূরে মরুদ্যান দেখা যাচ্ছে, ওখানেই থামবো আমরা। একটু বিশ্রামের প্রয়োজন। ও আমার শরীর বেষ্টন করে আছে। লুঠের তৃপ্তিতে একটু যেন আনমনা। উত্তর দিলো না। ঘোড়ার দৌড়ের ছন্দে আরো আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো আমার দেহ। ছুটতে ছুটতে আমরা পেরিয়ে এসেছি অনেকটা পথ। আর খানিকটা গেলেই সাগর। আমি জানি, কিন্তু এখন বিশ্রাম দরকার একটুখানি। মনে মনে স্থির করলাম, মরুদ্যানের পাশে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করে আবার রওয়ানা দেওয়া যাবে।
খেজুর গাছগুলো সামনে এসে পড়লো। জনমানবহীন পরিত্যাক্ত মরুদ্যানের পাশে এসে দাড়ালো আমার গোটা দলটা। আবদুল্লাহর ঘোড়াটা এসে দাঁড়ালো আমার ঘোড়ার পাশে। সোলেমানের দৃষ্টি তখন বাকি দলটার ওপর পড়েছে। ও তদারকিতে মন দিয়েছে। সকলেই দেখলাম ক্লান্ত। হুকুম দিলাম অল্প বিশ্রাম করে তাঁবু খাটাতে ছোট করে। দিনের বেলা বিশ্রাম নিয়ে রাতে আবার পথ চলবো।
আমার সিদ্ধান্তে সবার মুখে হাসি ফুটলো। আবদুল্লাহ প্রথমেই একটা ঘোড়াকে এগিয়ে নিয়ে গেল জলের কাছে। জল পরিস্কার হলে তবেই ঘোড়া জলপান করবে। নচেৎ নয়। ঘোড়াটা জল পান করলো। অর্থাৎ জল বিশাক্ত নয়। পরিস্কার জলে নিজেদের শীতল করে নিয়ে, কাজে লাগলো সকলে। বাবুর্চি তার দলবল নিয়ে লেগে পড়লো রান্নার তোড়জোড় করতে।
দুম্বা গুলো বাঁধন খুলে জলার কাছে নিয়ে গেল বান্দার দল। সারা রাতের উটের ঝাঁকানিতে পটল তুলেছে দুটো দুম্বা। বাবুর্চি একটু ইতস্তত করছিলো। হুকুম করলাম, এখানে ওগুলো নষ্ট করা বাতুলতা। পরে খাবার না পেয়ে মরতে হতে পারে, ওগুলো বেশিক্ষণ মরেনি। ওগুলোকেই ছাল ছাড়িয়ে নুন মাখিয়ে রান্না চড়িয়ে দাও। খাদ্য নিয়ে বিলাসীতা আমাদের দলের মানায় না। এখানে না আছে জনপদ, না আছে বণভুমি। তাই খাবার এখানে অমূল্য। ও আর কিছু বললো না। এই বালুময় দেশে যেখানে রান্নার কাঠকুটো পর্যন্ত বহন করে নিয়ে পথ চলতে হয় সেখানে দু দুটো দুম্বা ফেলে দেওয়া যায় না। বাবুর্চি অনেক পয়সাওলা শেখের গোলাম ছিলো ও আড়াই পোঁচে দুম্বা খাশি কেটে রান্না করতে অভ্যস্ত, কিন্তু এগুলো ফেলে দিতে আমার মন চাইলো না। আমরা তো আর শেখ না যে বিলাস ব্যাসনে গা ভাসিয়ে দেবো, দরকার মত মরা পশুর মাংস আমাদের খেতে হয় বৈকি।
মোতি নেমে মেহেরের কাছে চলে গেছে আমি আমার ঘোড়া নিয়ে এগিয়ে চললাম এলাকাটা ভালো করে দেখে নিতে। দূরে পুবাকাশে তখন মেটে রঙ ধরেছে। একটু পরেই আকাশ লাল হবে। তারপর টুপ করে কমলা লেবুর মত উঠে পড়বে সুজ্জিমামা। সে এক অপূর্ব দৃশ্য। শীতল মরু ধীরে ধীরে উত্তপ্ত হয়ে উঠবে। তার আগেই বিশ্রামের ব্যবস্থা করতে হবে। গলা চড়িয়ে হুকুম দিলাম সেই মত।
দুলকি চালে এগিয়ে চললাম পুবের দিকে, খানিকটা এগোতেই চোখে পড়লো কঙ্কালের সারি। উট আর মানুষের কঙ্কাল। আমার ভ্রু কুঞ্চিত হলো। জলের এতো কাছে, এরা মরলো কি করে? কি হয়েছিলো। দেখে বুঝলাম হাড় গোড় গুলো মোটেই খুব বেশি পুরোনো নয়। চোখে পড়লো পরিত্যক্ত তিরপল, বাঁশ। আমার দলের বান্দাদের হাঁক দিলাম, এদিকে এসো, খুঁজে দেখ, কিছু পাওয়া যায় কিনা। তেরপল গুলো ভালো থাকলে নিয়ে যাও। বাঁশগুলো নিয়ে যাও জ্বালানির কাজে লাগবে। ভালো করে লক্ষ করতে লাগলাম। মৃতদেহ গুলোকে।
নাঃ এরা জলের অভাবে মরেনি, মরেছে নিজেদের মধ্যে লড়াই করে। শেয়ালে, শকুনে চেটে পুটে খেয়ে বিশেষ কিছু অবশিষ্ট রাখেনি। তার মধ্যেই পেয়ে গেলাম চার পাঁচটা বন্দুক, আর টোটার বাক্স। নিশ্চিতরূপে এখানে মূল্যবান ধনরাশি পাওয়া যাবে। বালির ঝড়ে ঢেকে গেছে। একটু খোড়াখুঁড়ি করলেই পাওয়া যাবে নিশ্চয়ই কিছু। অদম্য উৎসাহে লাফিয়ে নামলাম ঘোড়ার পিঠ থেকে। ততক্ষণে আমার বান্দার দল চলে এসেছে। লুঠের মাল উদ্ধার করতে ওদের ভীষণ লোভ। রাতের ক্লান্তি দূরে সরে গেল এক নিমেশেই। বালি সরিয়ে ধনরত্নের খোঁজে লেগে পড়লো সকলে।
নাঃ, দামী কিছুই পাওয়া গেল না। কোনো রকম ধন রত্নের কাঠের বাক্স বা মোহরের থলি। মনেহয় ওদের মেরে সব কিছু ধনরত্ন নিয়ে পালিয়েছে, যারা জীবিত ছিল। তবে মৃত কঙ্কাল গুলোর শরীরে কিছু গয়না পাওয়া গেল। আর পাওয়া গেল, একটা চামড়ার ভারি জুতোর মধ্যে পাঁচটা দামি হিরে।
চলবে...
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now