বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

আরব্য_বেদুঈন ,,,পর্ব_০৮

"মজার গল্প" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান ফারিহা তাসনিম ঐশী (০ পয়েন্ট)

X #আরব্য_বেদুঈন #পর্ব_০৮ শহরটা ঘুরে দেখতে বেরিয়েছি। সাধারণ মানুষ গুলো আমাদের অবাক চোখে দেখছে। আমরাও শহুরে মানুষ দেখিনি। দোকানপাট বাড়িঘর এ সব আমাদের চোখে অবাক করা জিনিস। পথের ধারে খালি জায়গায় খেলছে কিছু ছোট ছোট ছেলে। বেশ লাগছে দেখতে। মোতিজান আমাদের বুঝিয়ে দিচ্ছে, দেখতে দেখতে এগোচ্ছি আমরা। হঠাৎ একটা জায়গায় ভীড় দেখে থমকে দাঁড়িয়ে পড়লাম। ভীড়টাকে ঠেলে ঠুলে সামনে এগিয়ে দেখি নিলাম ডাকা হচ্ছে। পন‍্য কিছু দশ বারো বছরের বাচ্ছা। রোগা হাড় ডিগডিগে না খেতে পাওয়া চেহারা। পরনে এক ফালি ছেঁড়া খোঁড়া নেংটি। একটা দশাসই চেহারার লোক হাতে চাবুক নিয়ে মাটিতে সপাং সপাং করে আছড়াচ্ছে। আর সেই শব্দে শিউরে উঠছে বাচ্ছাগুলো। এক জায়গায় জড়োসড়ো হয়ে বসে দাঁড়িয়ে বাচ্ছাগুলো কাঁপছে, একটা উঁচু মত কাঠের তক্তার ওপর একের পর একটা কে দাঁড় করানো হচ্ছে, দাম উঠছে, যে বেশি দাম দিচ্ছে, সে নিয়ে যাচ্ছে ছেলেটাকে। ভালো করে লক্ষ করে দেখলাম দু চারজন নিলাম ডাকছে বাকি বেশিরভাগ লোকজন মজা দেখতে ভীড় জমিয়েছে। যে বাচ্ছাটাকে উঁচু তক্তার ওপর তোলা হয়েছে, লোকগুলো ওর শরীর টিপে টিপে দেখছে, কেউ কেউ আবার কৌপিন সরিয়ে যৌনাঙ্গে হাত দিয়ে হি হি করে হাসছে! যন্ত্রনায় কুঁকড়ে যাচ্ছে বাচ্ছা গুলো। মোটা মত চাবুক হাতে লোকটা হুঙ্কার ছাড়ছে মাঝে মাঝে। তখন বদমাইশ গুলো সরে যাচ্ছে। তারপর আবার এগিয়ে যাচ্ছে মশকরা করে। ভীড়টা থেকে সরে এলাম, এই জায়গাটা বাজার মত, ভীড় বেশ বেশি, সরে এসে ঘুরতে লাগলাম। এক জায়গায় দারুণ খাবারের গন্ধে দাঁড়িয়ে পড়লাম। রুটি আর বিভিন্ন ধরনের ঝোল তৈরী হচ্ছে। আমরা মোট সাত জন। মোতিজান বলল, এটা একটা সরাইখানা। খাবারের গন্ধে খিদে পেয়ে গেল। আমরা কাঠের বসার জায়গায় বসলাম। টেবিলের ওপরে খাবার রেখে সবাই খাচ্ছে। দেখে মজা লাগলো। আমাদের চোখে এটা শহরের বিলাসীতা ছাড়া আর কিছুই নয়। সরাইখানার লোকজন আমাদের দেখাই বুঝতে পারছে আমরা ভিনদেশী। একটা ছোকরা এসে জিজ্ঞেস করলো আমরা কী খাবো। খাবার গুলোর নাম জানা নেই। মোতিও সব খাবারের নাম জানেনা। তবু ওই আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো ছেলেটাকে, কোন কোন খাবার আমরা খেতে চাই। খাবারগুলো বেশ সুস্বাদু, খেয়ে দাম চুকিয়ে বেরিয়ে আসছি, এমন সময় একটা লোকের নজর পড়লো আমার পয়সার বটুয়াতে। লোকটা রোগা চিমঢ়ে মত। জঙ্গবাজ আমাদের চোখ এড়ালো না। আমরা তরোয়াল চালাই বিদ‍্যুতের গতিতে। আমাদের মাথার পেছনেও দুটো চোখ আছে। সেই চোখ দুটো দিয়ে দেখলাম লোকটা আমাদের পিছু নিয়েছে। লুকোনো খঞ্জরে হাত চলে গেল। মোতিজান চোখের ইশারায় বারণ করলো, হাত সরিয়ে নিলাম। লোকটা আমাকে না দেখার ভান করে ধাক্কা মারতে এলো। খপ করে ওর টুঁটিটা টিপে ধরলাম। ততক্ষণে আমার কোমর থেকে পয়সার বটুয়াটা ওর হাতে চলে গেছে। এতোটাই সুক্ষ লোকটার হাতের কাজ। আশ্চর্য হয়ে গেলাম। গলাটা ছেড়ে দিলাম লোকটার। কিন্তু আমার হাতের চাপে লোকটা পয়সার বটুয়া ফেলে দিয়ে গলা ধরে মাটিতে পড়ে গেল। আমি বটুয়া কুড়িয়ে কোমরে গুঁজে এগোতে যাবো, দেখি পথের ধারে ঘোড়ার জল খাবার চৌবাচ্ছা থেকে আঁজলা ভরে জল নিয়ে দৌড়ে আসছে মেহের। লোকটাকে চোখে মুখে জল ছিটিয়ে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করছে। মোতি ওকে বললো, বেশি সময় ওখানে থাকলে রাজার কোতোয়ালি থেকে পেয়াদা আসতে পারে। তখন অযথা হুজ্জুতি হবে। লোকটাও একটু সুস্থ হয়েই সুড়ুৎ করে কোথায় কেটে পড়লো। এক জায়গায় শষ্যর আড়ৎ দেখে থমকে দাড়ালাম। আবদুল্লাহকে বললাম এখান থেকে বাজরার আটা আর চালের বস্তা কিনে নিয়ে যেতে। আমাদের মজুত করা শষ‍্য কমে এসেছে। পথে চলতে চলতে বড়ো এক শেখের বাড়ি নজরে এলো। কি তার চমক! মনে মনে ভাবলাম এ শেখকে লুঠ করতে পারলে বেশ হয়। কিন্তু এ তো শহর। ফিরতে ফিরতেই কথাটা পাড়লাম দলের সবার কাছে। সোলেমান বললে, আক্রমণ করলেই হয়। রাতের বেলা লুঠ করে পালিয়ে যাবো। আমাদের ঘোড়া আছে উট আছে কে ধরবে আমাদেরকে? মোতি বললো অত সহজ নয়। রাতে রাজার রক্ষীরা পাহারা দেয় ওরা সৈন‍্যদলকে খবর দিলে জঙ্গ লেগে যাবে। তাতে খুন খারাবি হবে । তার থেকে তোমরা সৌদাগর হয়ে ঢোকো। আর কেউ যদি আগে বাড়িতে নোকর সেজে ঢুকতে পারে, তাহলে বাড়ির ভেতরের সব খবর আমরা পেয়ে যাবো। দুপুর বেলা খেয়ে দেয়ে আমরা পরামর্শে বসলাম। ঠিক হলো পুরো দলটা শহরে ছড়িয়ে পড়বে। শেখের ব‍্যাপারে খোঁজখবর আনবে। তার পর একজন নোকর সেজে ঢুকবে ঐ বাড়িটায়। বিকেলের পর মেলায় ঘুরছি, নাচ গানের ওখান থেকে খবর এলো ওরা আজকেই আসর বসাতে চায়। খোলা আকাশের নিচে ওরা মজলিশ করবে না। আশেপাশের লোক এসে ভীড় জমাবে তাতে। ঠিক হলো বড় তাঁবুটায়, যেখানে বান্দারা এক সাথে শোয়, সেখানে আসর বসবে। সেই মত ফরাস পাতা হলো। সব থেকে কাছে, সব থেকে সুন্দর বসার জায়গায় বসবো আমি, মেহের আর মোতিকে নিয়ে। তারপর বসবে আবদুল্লাহ আর সোলেমান ওদের সঙ্গিনীদের নিয়ে। সব শেষে বান্দা বাঁদীরা। সন্ধ‍্যের পর দলটা চলে এলো। কাঁচবাতির আলোয় ঝলমল করে উঠলো জায়গাটা। মোটা বুড়িটা আজ খুব সেজেছে। আতর মেখেছে এতো, যে গন্ধে ম ম করছে ওর গা। গানেওয়ালী আসার আগে বুড়িটা এসে বসে সেলাম করলো আমাকে। মেহের মোতিকে চোখ টিপলো ওর সাজ দেখে। তুলতুলে একতাল গোলাকার মাংসপিন্ড দাঁত বের করে হাসছে। বেশ বোঝা যাচ্ছে বুড়িটা পয়সার লালচি। একটা পালকি চড়ে অল্প বয়সী মেয়ে তিনটে এলো খানিক পরে। একজন গাইবে বাকি দুজন নাচবে। তারো কিছুক্ষণ পর শুরু হলো মজলিস। নাচে গানে আসর জমে উঠলো। অর্ধনগ্ন মেয়েদুটোর নাচ আর গায়িকার চাটুল গানের মজা নিচ্ছি সকলে। মাংস আর মদিরার তুফান উঠেছে। মাঝে মাঝে নর্তকী দুজন নাচতে নাচতে আমাদের গায়ে এসে পড়ছে। আমার তো ভালোই লাগছে, কিন্তু মেহের আর মোতি দেখছি হিংসায় সরিয়ে দিচ্ছে মেয়ে দুটোকে। বান্দাদের হুকুম দেওয়া আছে, ওরা পালা করে পাহারা দিচ্ছে গোটা তাঁবু। আগেই বলেছি আমার মাথার পেছন দিকে দুটো চোখ আছে। ওরা পাহারাদারি ছেড়ে মাঝে মাঝে দাঁড়িয়ে পড়ছে, নাচ দেখছে, মস্তি নিতে কে আর ছাড়ে। এই সুযোগে দুটো চোর ঢুকেছে আমাদের এলাকায়। খুঁজে খুঁজে আমার তাঁবুতে ঢুকেছে ব‍্যাটারা, কিন্তু নসীব খারাপ ওদের। কি খেয়ালে নাচ দেখতে এদিকে উঁকি দিতেই ধরা পড়ে গেছে আমার বান্দাদের হাতে। হৈ চৈ হতেই নাচগান বন্ধ করে উঠে গেলাম। মাথা গরম হয়ে গেল। হুকুম দিলাম চোর দুটোকে টুকরো টুকরো করে কেটে নদীর জলে ফেলে দিতে। রক্তের বন‍্যা বয়ে গেল কয়েক মুহূর্তের মধ‍্যে। মজলিস খারাপ হয়ে গেল দেখে মোটি বুড়িটা দৌড়ে এসে বললো, আজ রাতে ওদের তাঁবুতে চলে যেতে। লালচি বুড়ি ভাবছে এ সব ঝামেলায় পয়সা পাবে না! আমি হাসলাম। সেই রাতে, আমার একান্ত অনুচর আবদুল্লাহকে নিয়ে গেলাম ওর তাঁবুতে। তিনটের মধ‍্যে গানেওয়ালীকেই পছন্দ হলো আমার। ওর সঙ্গেই বার বার রতিসুখ করলাম সারা রাত ধরে। দিল খুশ করে দিলো মেয়েটা। সকাল হতে, ওকে ছেড়ে আসতে মন চাইছিলো না। বললাম, আমার সঙ্গে বানজারা জীবনে পা দাও। আমি তোমাকে বিবি বানাবো! ও রাজি হলো না! ও না থাকলে বুড়ি না খেতে পেয়ে মরবে। ওইটুকু মেয়ের বুড়ির প্রতি হামদর্দী দেখে অবাক হয়ে গেলাম। ওকে আমার গলা থেকে মোতির হার উপহার দিলাম। ও বললো, পরে আবার দেখা হবে। ইস্ক, মোহাব্বত যা ছিলো আমার, যতটুকু ছিলো ওই মেহেরের প্রতি। কিন্তু আজ কি হলো কে জানে, মেয়েটাকে বললাম, আবার দেখা হবে। চলবে.....


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৯৭ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now