বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
#আরব্য_বেদুঈন
#পর্ব_০৭
সমুদ্র যাত্রার অভিজ্ঞতা আমার একেবারেই নেই। সোলেমান আর আবদুল্লাহ যে এ ব্যাপারে কিছুই জানে না, সেটা আমার জানা। মোতির কথায় প্রলুব্ধ হয়ে অজানা পথে পা বাড়াতে সকলেই আমায় বারণ করলো। সোনার রাজ্যে গিয়ে আমাদের কাজ নেই। আমরা যা আছি, এই ভালো আছি।
কিন্তু নারী মোহময়ী। তারপর যদি সে সুন্দরী হয়। অল্প দিনের মধ্যেই মোতিজান আমার মন ঘুরিয়ে দিলো। মেহেরকেও সে বশ করেছে বেশ বোঝা যায়। শেখের মেজো বিবি, যে এখন সলেমনের সঙ্গিনী সেও ওর বশ। ও যা বলে তাই বলছৈ ওরা। এ রকম চলতে থাকলে মেহেরের ওপর, গোটা দলের ওপর ওর প্রভাব বেড়েই চলবে। ও যা বলবে তাই শুনতে হবে আমাদের। কিন্তু ওর কথায় এমন যাদু যে আমরা একদিন স্থির করলাম, সমুদ্র যাত্রা করি বা না করি উত্তরের পথে এগিয়ে যাবো। সমুদ্রের তীরে গিয়ে স্থির করবো সমুদ্র যাত্রা করবো কিনা।
সিদ্ধান্তটা সকলেই মেনে নিলো। পথে পড়বে আজুবা শহর। সে শহর দেখার টানেও সকলে এগিয়ে যেতে মত দিলো।
আমাদের দল ছাউনি তুললো মরুদ্যানের পাশ থেকে।
এক উত্তপ্ত সকালে আমাদের দল এগোনো শুরু করলো উত্তরের পথে। বালুকাময় মরুভূমির ওপর দিয়ে উট আর ঘোড়ার পিঠে চড়ে আমাদের দলটা এগিয়ে চললো। বেলা যতো বাড়লো সূর্যের তীব্র দহন জ্বালা বাড়তে লাগলো। আমার প্রিয় উটের পিঠে আমি আর মেহের, ঘোড়ার পিঠে মোতি। দলটার একেবারে পেছনে দুম্বার পাল। তার পেছনে আমার বফাদার দুই বান্দা।
পুরো তিনটে দিন চলার পর এক পড়ন্ত বিকেলে আমরা পৌঁছে গেলাম শহরটার শেষ প্রান্তে, আঞ্জুম নদীর তীরে। নদীতে জল খুবই অল্প। সব থেকে গভীর জল যেখানে সেখানে কোমরজল বলা যায়। আমার দল নদী পেরিয়ে দাঁড়ালো।
মোতি বললো, এখানেই তাবু লাগানো ঠিক হবে। আবদুল্লাহ ওর কথায় সহমত হলো। আমি উটের পিঠে বসে দূরবীনে চোখ রাখলাম।
ছোট কিন্তু বর্ধিষ্ণু একটা শহর। কাছে দুরে মসজিদের মিনার গুলো মাথা তুলে দাঁড়িয়ে। অন্ধকার হতে এখনো কিছু সময় বাকি। একটা একটা করে বাতি জ্বলে উঠছে বাড়িগুলোয়। এ শহরে আগেও এসেছে মোতি। ওর বাপ আবুবকরের সঙ্গে। ওই একমাত্র চেনে এই শহরটাকে। আমার দূরবীন ঘুরতে লাগলো, নদীর ধারে এক জায়গায় আচমকাই থমকে গেল ওটা। মেলা বসেছে। আমি দলটাকে হুকুম দিলাম নদীর ধার বরাবর মেলার দিকে এগিয়ে চলতে। ওরা তৈরি হচ্ছিল তাঁবু টাঙাবে বলে সবাই চমকে গেল। মোতি প্রশ্ন করলো, আমার এ ধরনের হুকুম করার কারন কী? আমি মুচকি হেসে বললাম গেলেই দেখতে পাবে!মেলা দেখে অনেকের মন উৎফুল্ল হয়ে উঠলো। মেলা থেকে একটু সরে আমরা ছাউনি পাতলাম। বান্দারা তোড়জোড় শুরু করে দিলো দড়ি দড়া বাঁশ কাপড় নিয়ে তাঁবু খাটাতে। আমার দলের কেউই শহর দেখেনি। মেলা দেখা তো দূরের কথা। ওরা খুব খুশি। আর খুশি মেহের।
ওর তো তর সয় না। তখনই যাবে মেলা দেখতে। আবদুল্লাহ আর সোলেমানকে তাঁবু লাগানোর দেখভাল করার দায়িত্ব দিয়ে আমি মেহের আর মোতিকে নিয়ে চললাম ওর খোয়াইশ পুরী করতে।
নানান পশরা সাজানো এক একটা ছোট ছোট ছাউনি। ছাউনির পেছন দিকে ওদের থাকার যায়গা। সামনে পসরা সাজিয়ে দোকান লাগিয়েছে লোকেরা। মাটির পাত্র, কাঁচের মনহারি জিনিস, লোহার বড় বাক্স থেকে শুরু করে মেয়েদের রকমারি গহনা, পোষাক কি নেই মেলায়? খানিক দুরে পশুদের বাজার, ভেড়া, দুম্বা, উট, মহিষ। এক জায়গায় নাচ হচ্ছে। জিপসি মেয়েরা নাচ দেখাচ্ছে। ওখানটায় বেশ ভীড়।
মেহের অবাক হয়ে মেলাটাকে দেখছিলো। এতো মানুষ যে এক সাথে থাকতে পারে তা ও কল্পনাও করতে পারে নি কখনও। মোতি ওকে বুঝিয়ে দিচ্ছিলো। দূরে ঝুলা দেখে ওরা ছুটলো সেদিকে, ওদের এই ছেলেমানুষি দেখে আমার হাসি পাচ্ছিলো।
দুটো বান্দা গোছের লোক মেয়েদের আর বাচ্ছাদের ঝুলা ঝুলাচ্ছে। আর মোটা মতো একটা লোক টুলের উপর বসে পয়সা নিচ্ছে। লোকটাকে পয়সা দিয়ে ওদের ঝুলায় বসালাম। বান্দা দুটো দোল খাওয়ালো খুব করে। ওরা তো বহুত খুশ। এক জায়গায় সরবৎ বিক্রি হচ্ছিলো, লাল, কমলা, হলুদ রঙের। তিনজনে সরবৎ খেয়ে ফিরে চললাম দলের কাছে।
নদীর পাড়ে রান্না বসিয়ে দিয়েছে বাবুর্চির বান্দাগুলো। তাঁবু খাটানোর পালা শেষ করে মশাল জ্বেলেছে বাকি লোকজন। আবদুল্লাহ এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো, - কেমন দেখলেন মেলা!
- বহোত খুব। তোমরাও ঘুরে এসো।
- রাত বাড়লে, মেয়েদের যাওয়া উচিৎ নয়। ওটা নিয়ম বিরোধী। সাবধান করে দিলো মোতি।
- তাহলে একটু পরে আমরাই তিনজন ঘুরে আসবো একবার। কাল সকালে শহরে ঢোকা যাবে।
বাবুর্চি এসে বললে, গুস্তাখি মাফ হুজুর। কিছু ভালো মশলা এসেছে মেলায় দুর দেশ থেকে। অনুমতি আর পয়সা পেলে সে কিছু কিনে আনে।
- আমরা তো যাবোই! তুমিও চলো আমাদের সঙ্গে। আমার কথায় খুব খুশি হলো লোকটা।
বিশ্রাম চাইছে দলের লোকগুলো। তাঁবুগুলো খাটিয়ে গা এলিয়ে পড়েছে। আমাদর কয়েকজনের শরীরে এখনো ফুর্তি রয়েছে। আমরা চারজন বেরিয়ে পড়লাম। ঘুরতে লাগলাম মেলার ভেতর। এক জায়গায় মেলা থেকে একটু তফাতে, একটা অর্ধনগ্ন মেয়ের ছবি দেখিয়ে একটা লোক খুব কম পয়সা চাইছে। কৌতূহল হলো! কি ব্যবসা করছে লোকটা। আরো খানিকটা দূরে কতকগুলো তাঁবু পড়েছে। লোকটাকে পয়সা দিয়ে অনেকেই ঐ তাঁবু গুলোর মধ্যে প্রবেশ করছে। আবদুল্লাহকে বললাম গিয়ে দেখো তো, ব্যাপারটা কী? ও বাবুর্চিকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে লোকটার সঙ্গে কথা বলে খানিক পরেই ফিরে এলো।
ওখানে বারবনীতারা ছাউনি পেতেছে। ভাবতেই পারিনি। রাত যত বাড়বে, ওদের ছাউনিতে ভীড় হবে তত বেশী। শহরের সভ্যতা এভাবে লুকিয়ে একটা মেয়েকে ভোগ করে। এক রাতে একটা মেয়ের ঘরে যায় একে একে একাধিক পুরুষ। আমরা যা শক্তি দিয়ে হাসিল করি, ওরা তাই হাসিল করে সামান্য পয়সার বিনিময়ে। অল্প পয়সায়, অল্প সময়ের সুখ কেনে শহরের লোক। ভারি মজা তো।
এগিয়ে চললাম। গানের সুর ভেসে এলো কানে, সঙ্গে বাজনার শব্দ। সেই শব্দের দিকে যেতেই চোখে পড়লো সুগন্ধি মশলার দোকান। নাকে এলো তার খুশবু। বাবুর্চিকে ওর মন পসন্দ মশলা খরিদ করে দিয়ে ফেরত পাঠালাম আমাদের ছাউনিতে।
গানের আওয়াজ লক্ষ করে এগিয়ে গেলাম তিনজনে। এখানেও তাঁবু, তাঁবুর বাইরে নফর পয়সা নিচ্ছে, ভেতরে গানেওয়ালী। গান হবে, নাচ ভী হবে। পয়সা দিয়ে ঢুকলাম তিনজনে। পেট্রোম্যাক্সের আলোয় ঝলমল করছে তাঁবুর ভেতরটা। দামী পোষাক পরে রাণীর মত বসে গাইছে একজন অল্প বয়সী তরুণী। তার পাশে বসে এক বুডঢি অউরৎ, খানিক তফাতে বাজনদাররা বসে সুর তুলছে। বসার জায়গায় বসলাম তিনজনে। মেয়েটি গাইছে। বেশ সুরেলা কন্ঠ। মাঝে মাঝে বহোৎ খুব বলে সাবাসী দিচ্ছে শ্রোতারা। বটুয়া থেকে মোহর ছুঁড়ে দিচ্ছে কেউ কেউ। সেলাম করছে মেয়েটা। বুড়িটা পাশে বসে বেশ খুশি হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। গান চলতে লাগলো, দুজন নাচনে ওয়ালী এসে নাচ আরম্ভ করলো। আরবের প্রাচীন নাচ। পাতলা পোষাক মেয়েগুলোর দেহের সবটুকুই দেখা যাচ্ছে। শুধু স্তন বৃন্ত আর নিম্নাঙ্গটুকুই যা ঢাকা। নাচ দেখে, সবাই ইনাম দিলো, আমিও দিলাম। সলেমন আর আবদুল্লাহ খুশিতে হাতে তালি দিয়ে উঠলো।
নাচ গানা শেষ হতে, বুড়িকে বললাম আমার ছাউনিতে গিয়ে মেহেফিল করতে হবে। কতো চাও?
বুড়ির চোখ চকচক করে উঠলো। বলা মাত্রই রাজি হয়ে গেলো। ও যা টাকআ বলল, তাতেই রাজি হলাম। ওকে আগাম কিছু টাকা দিয়ে, ফিরে চললাম ছাউনির দিকে!
চলবে...
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now