বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
#আরব্য_বেদুঈন
#পর্ব_০৩
ভোরের সূর্যের নরম আলো ফুটতেই শিবিরের ঘোড়াগুলো আর উটগুলোর মধ্যে অস্থিরতা শুরু হলো। আমার ছোট্ট পঁচিশটা ঘোড়সওয়ারের দল বেড়ে বেড়ে আজ ছোটখাটো সেনাবাহিনীতে পরিনত হয়েছে। সেনাবাহিনীতে বাঁদী থাকে না, আমার দলে কম করে পনেরোটা হৃষ্টপুষ্ট অল্পবয়সী বাঁদী রয়েছে। বান্দা মরদ রয়েছে বেশ কিছু। ঘোড়া উট মিলিয়ে তাও আশিটার মত।
উট আর ঘোড়াগুলোর চিৎকারে আর তাঁবুতে থাকা গেল না। বাইরে বেরিয়ে এলাম। নরম রোদ এখনো তার তীব্র ঊষ্ণতা ছড়ানো শুরু করেনি। ঠান্ডা বালির ওপর পড়ে চিক চিক করছে আদিগন্ত। যতদূর চোখ যায়, কোথাও উঁচু কোথাও নিচু, এ যেন কোনো যৌবনবতী রমনীর শরীর। নিরাভরণ শুয়ে আছে কোথাও দুই বাহু প্রসারিত করে, আবার কোথাও মনে হয় তার উন্নত নিতম্বদেশ সগর্বে ঘোষণা করছে যৌবনের জয় গৌরব।
আবদুল্লাহর কথায় ভ্রম ভাঙলো। ফিরে দেখলাম, একান্ত অনুগত অনুচরটি প্রভাতী সম্মোধন জানিয়ে অপেক্ষা করছে আমার উত্তরের।
- বলো আবদুল্লাহ, কি বলতে এসেছো।
- এতো বড় দল নিয়ে চলা ভারি মুশকিল জনাব।- আমার মনের কথাটাই তুমি বলেছো, এ ব্যাপারে আমি তোমাদের সঙ্গে আলোচনা করবো ভাবছিলাম।
- আজ যদি হুজুর জয়নাল শেখের কাছে কিছু আউরৎ বিক্রি করে দেন তো ভালো হয়।
- শুধু আউরৎ কেন, বান্দা ভি বেচবো, ঘোড়া উট ভি বেচবো। এই ভীরান মরুভূমিতে এতো বড়ো দলের খাবার জোগানোও তো খুব একটা সহজ কাজ নয়।
- জি হুজুর। দল ছোট হলে আগের মত ক্ষিপ্র গতিতে আমরা ডাকাতি করতে পারবো, লুঠ করতে পারবো।
- ঠিক বলেছো।
- কিন্তু হুজুর, গুস্তাখি নেবেন না, বান্দা গুলোকে দলে রাখলে মাল বহন করার কাজে লাগে। দেখলেন তো তখন আঁধি আসতে কত জলদি তাঁবু গুটিয়ে ফেলেছিলো।
- হুম। আবার কতো জলদি, রাতো রাত তাঁবু খাটিয়ে ফেলেছিলো।
- জ্বী জনাব!
- তাঁবু ওঠানোর হুকুম দাও! চলো, সবাই মরুদ্যানের কাছে গিয়ে তাঁবু ফেলতে হবে।
আমার হুকুম তামিল করলো আবদুল্লাহ, সোলেমান এলো, বললো, শেখের বড়ো বেগম ইজাজত চেয়েছে, দেখা করতে চায়। শেখের বাকি বেগম দুটো ওর হিফাজতে আছে। প্রথমে মনে হলো পরে যাওয়া যাবে, তারপর কি মনে হলো বললাম, চলো, শুনেই আসি ওর খোয়াইশ।
তাঁবুতে প্রবেশ করতেই যে বাঁদিটার দিকে চোখ আটকে গেল, সেটাকে আগে কখনো দেখেছি বলে মনে করতে পারলাম না। মেয়েটা শেখের বেগমদের তাঁবু থেকে বেরিয়ে আসছিলো, নাঃ মুখে কোনো নকাব ছিলো না, হয়তো ভাবতেই পারেনি এ সময় কোনো মরদ এখানে আসতে পারে। আমাদের দেখে ভয়ে সচকিত হয়ে দৌড়ে চলে গেল। আমি ওর চলে যাবার দিকে ঘুরে তাকালাম। ওর নিতম্বের আস্ফালন আমার হৃদয়ের স্পন্দন বাড়িয়ে দিলো।
- আজ হুজুরের খিদমতে পেশ করবো নাচিজকে?
প্রশ্ন করে সোলেমান। হাসলাম। আগে তো শুনে আসি, মোক্তরমা কি বলে!
আমাকে সোলেমানের সঙ্গে দেখেই এগিয়ে আসে শেখের বড় বেগম। বেশ খানিকটা বয়স হয়ে গেছে। এক সময় সুন্দরী ছিলো সেটা বোঝাই যায়। এখন শরীরে মেদ জমেছে। শেখ ওকে ভালোবাসতো, পরিস্কার বোঝা যায়। না হলে এই শরীরটাকে কোনো শহরের মসজিদের বাইরে ভিখ মাগতে দেখা যেতো। আজ শেখ নেই। তাই মেয়েছেলেটা আমার কাছে প্রাণ ভিক্ষা করতে চায়। তাই ডেকে পাঠিয়েছে নিশ্চয়ই।
- সালাম... ভদ্রতা জানে মেয়েছেলেটা। কিন্তু যাকে ভদ্রতা দেখাচ্ছে সে ভদ্রতা জানে কিনা সেটা পরখ করেনি বোকাটা!
আমি নিষ্ঠুর দস্যুদলের দলপতি। শেখের তুলতুলে ভারি বেগমের চর্বিযুক্ত মাংস আমামার অন্ততঃ রুচবে না। এ কথাটা বুড়িটাকে আজ বুঝিয়ে দিয়ে যাবো। এটাও বুঝিয়ে দেবো, যে এই মরুভূমিতে ওকে খাইয়ে দাইয়ে বয়ে বেড়ানোর মত বুদ্ধু আমি নই। জয়নাল যে
ওকে কিনবে না, তা আমি হলফ করে বলতে পারি, ওকে ছেড়ে দেব আমার দলের ওই কাফের বান্দাগুলোর হাতে। ওরা খুব খানিক মৌজ মস্তি করে ওর শরীরটাকে ফেলে রেখে চলে যাবে আসমানের শকুনগুলোর ভুরিভোজের জন্যে। আসমানের শকুনগুলো আমাকে অনেক দোয়া দেবে। হাঃ হাঃ হাঃ। ভাবতেই হাসি পেয়ে গেল আমার।
- শেখকে মেরে ভালোই করেছো তুমি! আমার কাজ কমিয়ে দিয়েছো!
এ কি কথা বলছে, শেখের বড়ো বেগম সাহেবা। চমকে উঠলাম। অবাক হয়ে তাকালাম ওর দিকে!
- অবাক হচ্ছো! অবাক হবারই কথা! শেখ আর আমাকে আগের মতো ভালো বাসতো না!
- ওহ্! এই ব্যাপার!
একতাল মাংসপিন্ডকে ভালবাসা যায় নাকি? মনে মনে বললাম কথাটা।
- তুমি আমায় ভালোবাসবে? এ মেয়েটা ভালোবাসার বড়ো কাঙাল গো! আমি তোমাকে ভালোবাসায় ভরিয়ে দেবো!
পাগল কোথাকার। আমি নিজেই একটা জাহান্নামের কীট। এতো সুন্দর মেহেরকেই আমি ভোগ করি, এক বিন্দুও ভালোবাসি না। তো তোমাকে আমি ভালোবাসবো?দুনিয়ায় ভালোবাসা কী জিনিস তাই আমার জানা হলো না। আর আমার কাছে এসেছো প্রেম ভালোবাসার কথা বলতে!
- হাঃ হাঃ হাঃ! তৈরি হয়ে নাও। জয়নাল শেখ আসছে। খুব ভালো করে সেজে গুজে তৈরী হয়ে নাও! তোমার কিস্মত ভালো থাকলে ও তোমাকে কিনে নেবে!
আমার কাছে পেয়ার মোহাব্বতের কোনো মূল্য নেই।
- জ য় না ল!
- চেনো নাকি তাকে?
- জানিনা! হয়তো!
- হাঃ হাঃ হাঃ দেখো তোমার কিস্মত চমকায় কিনা!
বেরিয়ে এলাম ওর তাঁবু ছেড়ে, সোলেমনকে হুকুম দিলাম, সকালে দেখা ঐ বাঁদিটা আমার চাই। ও ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানিয়ে চলে গেল। বান্দার দল তাঁবু গোটানোর কাজ শুরু করে দিয়েছে। মেহেরের খাস বাঁদি দুজন এসে খবর দিলো, ও ওয়েসিসের দিকে এগিয়ে গেছে।
মরুদ্যানের পাশে আমাদের তাঁবু পড়েছে। আবদুল্লাহ আর সোলেমান তদারকি করছে জোর কদমে। আকাশে সূর্য আগুন ছুঁড়ছে রোজকার মত। তাঁবুর ভেতর নতুন বাঁদীটা আমায় আরবি তেল মালিশ করে দিচ্ছে। মেহের মাথার কাছে বসে খেজুরের কোয়া খাইয়ে দিচ্ছে একটা একটা করে।
একটা বাঁদী এসে খবর দিলো জয়নাল শেখ এসেছে। আমি ওর খাতিরদারি করার আদেশ দিয়ে উঠে পরলাম। গা মুছিয়ে দিলো মেহের, আমি পোষাক পরে নিলাম। বেরিয়ে এসে হুকুম দিলাম, আবদুল্লাহ কে ডাকো। ওরা কাছেই ছিলো। দুজনেই এগিয়ে এলো।
- সব ব্যাবস্থা পাকা।
- জ্বী হুজুর।
খুশি হলাম।
জয়নাল শেখ বেশ ভারি দল নিয়ে এসেছে। ওদের খাতিরদারিতে সুরুয়া দেওয়া হয়েছে। ফল দেওয়া হয়েছে।
পন্য দেখানো শুরু হল। উট, ঘোড়ার সওদা হবার পর দশজন বান্দা আর কুড়ি জন বাঁদীকে নাঙ্গা করে লাইন দিয়ে দাঁড় করানো হলো। জয়নালের খাস লোক ওদের ছুঁয়ে পরীক্ষা করে পছন্দ করলো। সেগুলোর সওদাও হয়ে গেল।
এর পর দুজন বাঁদী শেখের বড়ো বেগমকে নিয়ে এলো!
- খাদিজা!
অস্ফুট একটা শব্দ যেন বের হল জয়নালের মুখ থেকে। ভুরু কুঁচকে তাকালাম।
- কতো দাম?
জয়নাল জিজ্ঞেস করলো আমায়!
আশ্চর্য হলাম! - কিনবে?
- দাম বলো!
- দশ হাজার।
- বেশ।
- এতো দাম দিয়ে এই বুড়িকে কিনছো? তোমার মাথার ঠিক আছে তো?
- একে মোহাব্বত বলে! এ তোমার বোঝার কম্মো নয়!
জয়নাল চলে গেল। আমার দলটা এখন আবার অনেকটা হালকা হয়েছে। ও লেন দেন শেষ করে আমাকে একটা গোটা দুম্বা উপহার দিয়েছে। আজ রাতে আমার দলের উৎসব হচ্ছে। নাচা গানা খানা পিনা চলছে। আমার মোটা মাথায় ঢুকছে না কি করে বুড়ো জয়নাল বুড়ি খাদিজাকে পেয়ে খুস হয়ে গেল! যাক সে কথা, আমি এখন বুড়ির বাঁদীটাকে নিয়ে নাচতে যাই। মন্দিরাটা বড়ো ভালো বাজাচ্ছে আবদুল্লাহ।
চলবে...
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now