বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

এতদিন কোথায় ছিলেন

"রোম্যান্টিক" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান Saleh Noor Likhon (guest) (০ পয়েন্ট)

X ছালেহ নূর লিখন (১)সাদা ধবধবে গাড়ির ভিতরের সিটে বসে অস্বস্তি হয় লেট লতিফের। মেয়েটিকে সে ড্রাইভার বানিয়ে ফেলেছে!নিজের বোকামিতে নিজেই লজ্জিত হয়।মেয়েটি যেন কেমন! একটা বাটিতে কাঁচা-মরিচ,লেবু এগিয়ে দেয়।মেয়েটি গোটা গোটা মরিচ খাচ্ছে দেখে সেও মুখে দেয়।এতদিন বাসে যেতে পরিচিত কারও সাথে দেখা না হলেও হঠাৎ করে আজ পরিচিত অনেকের সাথেই দেখা হচ্ছে।। গাড়ি এগিয়ে যাচ্ছে এয়ারপোর্ট রোডের প্রশস্ত রাস্তা ধরে। আকাশে আজ মেঘের ঘনঘটা। তবে বৃষ্টি এখনও নামেনি।পামেলা ড্রাইভিং সিটে। বেশি কথা বলতে পারছে না।তবে সে যে চার্মিং মুডে আছে, লতিফ বুঝতে পারে। মৃদু স্বরে বাজছে রবীন্দ্রসঙ্গীত।লতিফ ভাবে, এটা পামেলাকে একবার জিজ্ঞেস করেই ফেলবে কী বুঝে সে তাকে বিয়ে করলো। একটি বেসরকারি কোম্পানির সাধারণ চাকরি ছাড়া তার আর কিছু নেই।না আছে ফ্ল্যাট, না আছে গাড়ি।না পারিবারিক ভাবে প্রাপ্ত সহায়-সম্পত্তি। তার নায়কোচিত দীর্ঘ দেহ, স্টাইল এখন নেই। ভুঁড়ি আর টাকের কারণে নিজেই উঠতি বয়সীদের থেকে দূর দিয়ে হাঁটে।এইসব উঠতি বয়সীরা পাঁজি হয়।কাউকে সামনে দিয়ে যেতে দেখলে শুনিয়ে শুনিয়ে বান্ধবীকে বলবে 'কুছ কুছ হোতা হ্যায়'।আর এগুলো শুনে গদ গদ হয়ে কেউ যখন ভাব জমাতে যাবে,তখন বলবে তার বয়ফ্রেন্ড অপেক্ষা করছে । তাকে এখনই যেতে হবে। পামেলার সাথে লতিফের বিয়ে হলেও তারা এখনও একসাথে থাকেনা।লতিফ মাঝে মাঝে শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে থাকে। লতিফ যে ফ্ল্যাটে থাকে এখানে আরও দুজন ব্যাচেলর সহকর্মী থাকে। ফ্ল্যাট খালি করে পুরো বাসা সাজাতে আরও ২ মাস লাগবে। বিয়েটা হুট করেই হয়ে যায়। ভার্সিটি জীবনে প্রতিদিন লেট করে ক্লাসে আসায় তার নামের আগে লেট যুক্ত হয়ে যায়।আর দুজন ব্যাচমেটকে তার কোম্পানিতে চাকরি দেয়ার পুরস্কার হিসেবে নামের আগে লেট পাকাপাকিভাবে যুক্ত হয়ে যায়। পামেলা অবশ্য তাকে এনামে কখনও ডাকে নি।বলা যায় নাম ধরেই ডাকেনি।চিরচারিত বাঙালি বধূর অতি ভালোবাসামাখা এই,এ্যা,তুমি শুনে ভালোই লাগে,ভরসাও পায়।গাড়ি থামলো দক্ষিণ খানে লতিফের বাসার আগের রাস্তায় কাছে। সে এমন জায়গায় থাকে চাইলেও পামেলা তাকে বাসা অব্দি নামিয়ে দুজনে দু'কাপ কফিতে মগ্ন হতে পারতো না।পামেলা চলে যায়। লতিফ বাসার দিকে এগোয়।পামেলাকে বাসা অব্দি না আনতে পারার কষ্টটা বুকে বাজে।কতক্ষণ এলাকার নেতাদের মনে মনে গালি দেয়।পরক্ষণেই গালিটা নিজের দিকে ফিরে আসে।আসলেইতো সে এই এলাকায় থাকে কেন?সেতো উত্তরায়ও থাকতে পারে। আসলেই কী পারে?কর্দমাক্ত জুতো, প্যান্ট নিয়ে কর্পোরেট চাকরি করাটা কঠিন। তবু এই অসম্ভব কাজটাই সে করে আসছে গত পাঁচ বছর ধরে। বসের বাস্তবিক জ্ঞান ও মানবিকতা না থাকলে এটি বোধহয় সম্ভব হতো না।তবে,পামেলাকে এ পরিবেশেবেশিদিন রাখা যাবে না।প্রমোশনটা হলেই সে উত্তরায় বাসা নিতে হবে। (২) পামেলাদের সাজানো -গোছানো ড্রইং রুম।নিচে ঘাস বিছানো কার্পেট। দামি শো-পিচ সাজানো শো-কেচ।আর ওয়ালজুড়ে পেইন্টিং। গরমে কাবু হয়ে আসা লতিফ এসি রুমে বসেও বেশ ঘামছে।পামেলার বাবা রেলের রিটায়ার্ড উচ্চ পদস্থ-কর্মকর্তা মশিউর রহমান পায়ের উপর পা-তুলে বসে আছেন। চোখে-মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট। সে বিরক্তির ছাপগুলোর ভাষা লতিফ বোঝে।মেয়েকে অন্ততঃ বিসিএস কর্মকর্তার হাতে পাত্রস্থ করতে না পারার ক্ষতটা এখনও শুকায়নি। নিতান্তই জামাই বলে দু'চারটে কথা না বললেই নয়। মশিউর রহমান পায়ের উপর পা-তুলে বসে আছেন। চোখে-মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট। সে বিরক্তির ছাপগুলোর ভাষা লতিফ বোঝে। নিতান্তই জামাই বলে দু'চারটে কথা না বললেই নয়। :তো,কবে ঘর- সংসার শুরু করবে? :এইতো আর ২-৩ মাস লাগবে। :এই কয়েকদিন এখানে থাকলেই পার। :অফিস দূরে হয়ে যায়। :ও আচ্ছা। পামেলার মা অবশ্য মেয়ের জামাই এর আদর -,আপ্যায়ন এর কোনোটির কমতি রাখেননি। জামাইকে উল্টো মেয়ের ব্যাপারে সাবধান করে দিল।আদরে আদরে থেকে মেয়েটি কেমন অলস হয়ে গেছে।চাইলে সব এনে হাজির করো না। আচ্ছা,বলে সায় দেয় লতিফ। মনটা বড্ড খারাপ হয়,লতিফের।পামেলা ডেকে নেয় নিজের রুমে। আজ পামেলাকে অনেক সুন্দর লাগছে।তার সামনে যেন শ্বেত-শুভ্র পরী বসে আছে।যেন বাইরে মেকাপে ঢাকা পামেলার চেয়েও এই পরী অনেক সুন্দর। লতিফ এখনও ভেবে পায় না পামেলার সাথে তার বিয়ের পূর্বে মাত্র ৩ দিন কথা হয়েছে। অথচ মেয়েটি তাকে প্রচণ্ড ভালোবাসে।কীভাবে সম্ভব।মেয়েটিকেও তার কেন যেন আপন মনে হয়।মেয়েটির জন্য সে অন্তত তার বাবার চোখ রাঙানি সহ্য করতে পারে।পামেলা পুরানো অ্যালবাম বের করে। লতিফও সেটিতে আগ্রহ দেখায়।অ্যালবামের পাতা উল্টাতে থাকে।প্রতিটি ছবি আগ্রহ নিয়ে দেখে। পামেলাকে এখনও অনেক জানার বাকি।হঠাৎ একটি ছবিতে চোখ আটকে যায় লতিফের।মেয়েটিকে তার অনেক চেনা।লতিফ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ম বর্ষে পড়ার সময় শহরের একটি লাইব্রেরিতে আসতো ক্লাস টেনে পড়া মেয়েটি। কথা হয়েছিল ১ দিনই।মেয়েটির বাড়ি নাটোরে।বই নিয়ে কথা।মেয়েটি জীবনানন্দ দাশের লেখা সম্পর্কে কিছু বই খুঁজে দিতে বলল।দেখা হয়েছে ৪-৫ দিন।মেয়েটি অসম্ভব রূপবতী ছিল।চুল গুলো দীঘল ঘন কালো ছিল।মেয়েটির চাহনিতে অপার রহস্য ছিল। চোখগুলো মায়াবী ছিল। কিন্তু মেয়েটি জীবনানন্দ দাশের বনলতা সেনের মতো তার মনেও দীর্ঘ একটা ছাপ ফেলে গিয়েছিল। মেয়েটিকে পাওয়ার বাসনা সুতীব্র হওয়ার আগেই মেয়েটি উধাও হয়ে গিয়েছিল।বাবার বদলির চাকরির কারণেই হয়তো। আর উধাও হওয়ার পর বহু বছর মনের মহাকাব্য হয়ে ছিল মেয়েটি।মেয়েটির নাম জানা হয়নি।যোগাযোগ এর অন্য মাধ্যম জানা হয়নি।তাই নাটোরের বনলতা সেন হয়েই মনের মনিকোঠায় বেঁচে রইলো। কিন্তু মেয়েটির ছবি পামেলার অ্যালবামে কেন? লতিফ ভালো করে তাকাতে থাকে পামেলার দিকে।বনলতা পামেলার মতোই সুন্দর ছিল।চোখের নিচে,থুতনিতে তিল ছিলো। পামেলারতো তাই আছে।বনলতার হাসলে গালে টোল পড়তো।পামেলা লাজুক ভঙ্গিতে হাসছে। পামেলার গালেও টোল পড়ে।তাহলে কী ওটা পামেলাই ছিলো? মনের মানুষ মনের গহীন কোণায় লুকিয়ে থাকতে থাকতে হারাতে হারাতে ফিরে পাওয়ার তীব্র খুশিতে পামেলাকে শক্তভাবে জড়িয়ে ধরে। ঝাপসা হয়ে আসা কক্ষে ওদিক থেকে অস্ফুট প্রশ্ন ভেসে আসে লেট লতিফের কাছে - 'এতদিন কোথায় ছিলেন? '


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৫৫১ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now