বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
এক নাস্তিকের প্রশ্ন
লিখেছেনঃ সৈয়দ আরাফ হাসান আদনান।
মেঘলা দিনের ঠান্ডা হাওয়া -
রিমঝিম বৃষ্টির বেলা, মনে পড়ে যায় সেই দিনগুলি শৈশবে বৃষ্টি নিয়ে খেলা। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। দুপুর ২ টা বাজে। দিনটি যেন এক অন্ধকার রাতের মতো।মানে মেঘের কারণে আকাশটি অন্ধকার হয়ে আছে। রুমে গিয়ে দেখি মাজেদ জানালার পাশে বসে পড়াশোনা করছে। কারণ আগামী দিন
তার পরিক্ষা আছে। আমি মাজেদকে বললাম :
___ বহুদিন হয়েছে আমরা বই ঘরে যাই নি, চল আজকে
আমরা বই কিনতে যাই।
মাজেদ বলল___ ঠিক আছে।
আমি আর মাজেদ বাসা থেকে দুইটি ছাঁতা নিয়ে বের হলাম।
আরে বের হয়ে দেখি বৃষ্টি নাই। কিরে বৃষ্টি কোথায়। বৃষ্টির বদলে এখন টকটকে রোদ। হঠাৎ করে অন্ধকার আকাশ
যেন আলোতে উজ্জ্বল হয়ে যায়। ☁ মেঘলা আকাশটি
এখন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে গেল। কোথাও বৃষ্টির সাড়া
শব্দ নেই। আমি মনে মনে ভাবছি যে আল্লাহ কতো মহান।
মুহুর্তের মধ্যে বৃষ্টি থেকে রোদ। কিছুক্ষণ আগে বৃষ্টি ছিল
এখন রোদ। ( সুবহানআল্লাহ)। আল্লাহ মহান আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নাই। আল্লাহর ক্ষমতার কোনো শেষ নাই।
আল্লাহর দয়ার কোনো শেষ নাই। তিনি মহাপরাক্রমশালী, মহাপ্রজ্ঞাময়। তিনি কমপক্ষে নিরানব্বইটি নামের অধিকারী, রহমান (দয়ালু), রাহীম (দয়াবান), মালিক (অধিকর্তা), খালিক (স্রষ্টা), হালিম (সর্বোচ্চ ধৈর্যশীল), আলিমুন (সর্বজ্ঞাত), বাছিরুন (সর্বদ্রষ্টা), সামিউন (সর্বশ্রোতা), আলিমুম বিজাতিস-সুদুর (আল্লাহ অন্তর্যামি)।
তখন মাজেদ বলল ___ কী হয়েছে? কী চিন্তা করছিস?
____ না না কই কিছু না।
মাজেদ ও আমি রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছি।
হঠাং করে একটা রিকশা টং টং করে আমাদের কাছে চলে
এসেছে। আমরা এই রিকশাতে উঠলাম। রিকশা মামা
আমাদেরকে বই ঘরে নিয়ে যাচ্ছিলেন। টানা ৫ মিনিট পর
আমরা বই ঘরে আসলাম। বই ঘরে এসে আমরা পছন্দের
বই গুলো খুঁজে বের করায় বেস্ত। মাজেদ একদিকে ও আমি
আরেক দিকে। আমি একটি ইসলামিক বই কিনলাম।
মাজেদ আমার বই দেখে বলল
মাজেদ : এ বই কেন কিনলি?
আমি বললাম ____ পড়ার জন্য কিনছি।
মাজেদ আল্লাহকে বিশ্বাস করে না। সে বলে, যেটা দেখা
যায় না, অনুভব করা যায় না, শুনা যায় না তাকে বিশ্বাস
করি না। সুতরাং সে একজন নাস্তিক।
আমি তাকে বললাম _____ তুমি কেন আল্লাহকে বিশ্বাস
কর না? আল্লাহ তো মহান। আল্লাহ তো সমগ্র জগতের প্রতিপালক। আল্লাহ তো আমাদের সৃষ্টিকর্তা।
তখন মাজেদ বলল ___ আল্লাহ যদি আমাদের প্রতিপালক হন।আল্লাহ যদি আমাদের রব হন তাহলে আল্লাহ কে
দেখা যায় না কেন? তার নিদর্শন দেখা যায় না কেন?
আমরা আল্লাহকে দেখি না কেন?
তখন আমি বললাম _____ পৃথিবীতে মানুষের জন্য পরীক্ষাটাই হচ্ছে না দেখেও আল্লাহকে বিশ্বাস করা।
দেখ, আগামীকাল তোমার পরিক্ষা। পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত প্রশ্নটা তোমার কাছ থেকে আড়ালে রাখা হয়। কেন জানো তো? কারণ তোমাকে যদি প্রশ্নপত্র আগেই ফাঁস করে দেওয়া হয় তাহলে তোমার পক্ষে তো পরীক্ষায় ভালো ফলাফল নিয়ে আসাটা খুবই সহজ হয়ে যাবে।
আর একইভাবে আল্লাহর ক্ষেত্রেও আমরা তাঁকে দেখতে পাই না অথবা তিনি আমাদেরকে দেখা দেন না এর অনেকগুলো কারণের মধ্যে একটা হয়তো এটা হতে পারে যে, তিনি চান যেন আমরা না দেখেও তিনি যে সত্যিই আছেন এটা বিশ্বাস করি। কারণ দেখে ফেলার পরে তাঁকে বিশ্বাস করাটা তো একেবারে সোজা। কিন্তু কঠিন হচ্ছে তাঁকে না দেখেও বিশ্বাস করা।
অন্যদিকে একজন, যে কিনা একই পরীক্ষায় হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে ভালো ফলাফল অর্জন করল। তার আনন্দটা তোমার মত নয়। তার আনন্দ অনেক বেশি। তোমার আনন্দ সেটাকে ছুঁতে পারবে না।
যেমন প্রত্যেক মুসলিমের উপর আল্লাহকে না দেখে বিশ্বাস করা ফরজ। আর এর বিনিময় আল্লাহ আমাদের পুরস্কার এর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সবচেয়ে বড় পুরস্কার হিসেবে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন তার দর্শন লাভ করাকে কেন্দ্র করে ঊ। যেটা তিনি তার সবচেয়ে প্রিয় বান্দাদের জন্য অনুমিত করেছেন।
এমন একটি প্রতিশ্রুত পুরস্কার আল্লাহ তাআলা ইহজগতে উন্মোচন করতে চাননি, তাই হয়তো আমরা তাকে দেখতে পাইনা। আল্লাহ তাআলা সুরা বাকারার প্রথমেই সফলকাম ব্যাক্তিদের উদাহরণ দিয়েছেন, তাদের প্রথমে বলেছেন যারা অদৃশ্য বিষয়সমূহকে বিশ্বাস করে তারাই সফলকাম । আর সফলতার পুরস্কার হিসেবে আল্লাহ নির্ধারণ করেছেন তার দিদার।
বিভিন্ন নবী রাসুলের উম্মত আল্লাহকে দেখার দাবি জানিয়েছে। কিন্তু আল্লাহ তার নবীদের সামনেও নিজেকে উন্মোচন করেন নি। যেমনটা মুসা আলাই সাল্লাম এর ক্ষেত্রে ঘটেছিল । আর আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন ইহজগতে তার দর্শন লাভ করা সম্ভব নয়।
সুতরাং আল্লাহ হয়তো এই বিশেষ পুরস্কার শুধুমাত্র তাঁর নির্ধারিত বান্দাদের জন্য রেখেছেন। কেননা আল্লাহ বলেন
আর যারা অদৃশ্যে বিশ্বাস করে তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও অফুরন্ত পুরস্কার।
হয়তো একারণে আমার আল্লাহকে দেখতে পাই না।
আচ্ছা তুমি কী জানো আমাদের আশেপাশে কতো ভাইরাস আছে যা আমরা খালি চোখে দেখতে পারি না এর কারণ হচ্ছে আমাদের চোখের সেই পাওয়ার বা ক্ষমতা নেই ভাইরাস কে দেখার।
বাস্তব বলতে স্রষ্টার অস্তিত্ব চিরন্তন সত্য, আর যখন আমরা আল্লাহকে দেখছি না, বা তিনি দেখা দিচ্ছেন না তার দুটো মানেই হতে পারে। ১।আমাদের সেই ক্ষমতা নেই তাকে দেখার তাই আমরা দেখছি না, ২।আল্লাহ চান না তাই আমরা তাকে দেখতে পারি না।
মানব চক্ষু দ্বারা দুনিয়ায় আল্লাহকে দর্শন করা অসম্ভব। তবে মুমিনগণ পরকালে জান্নাতে আল্লাহ দেখতে পাবেন।
রাসুল (সা বলেছেন, তোমরা মৃত্যুর পূর্বে কখনো তোমাদের রবকে দেখতে পাবে না (হাকেম হা/৮৬২০; ছহীহুল জামে‘ হা/২৩১২)
প্রথমত: কারন উনি দেখা দিতে চান না।
২য়ত: আমাদের এই দেহের চোখের দৃষ্টিসিমা খুবি সামান্য। এই চোখ দিয়ে আমরা সৃষ্টিযগতের খুবই সামান্যই দেখার ক্ষমতা আছে। এই চোখ, উনাকে দেখার উপযুক্ত না, এই চোখের দৃষ্টিসিমার বাইরে উনি।
১০৩. কোনো কিছুরই দৃষ্টিসীমা তাঁকে বেষ্টন করতে পারে না, কিন্তু তিনি সবার দৃষ্টি বেষ্টন করতে পারেন। তিনি অত্যন্ত সূক্ষ্মদর্শী, সুবিজ্ঞ।
১০৪. তোমাদের কাছে তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে স্পষ্ট প্রমাণ অবশ্যই এসে গেছে। অতএব যে প্রত্যক্ষ করবে, সে নিজেই লাভবান হবে আর যে অন্ধ হবে, সে নিজেরই ক্ষতি করবে।
(বলে দাও) আমি তোমাদের তত্ত্বাবধায়ক নই।
১০৫. এভাবেই আমি নিদর্শনাবলি বিভিন্নভাবে বর্ণনা করি, যাতে তারা না বলে যে আপনি তো এগুলো অধ্যয়ন করে বলছেন, কিন্তু আমি তো জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করি।
১০৬. তুমি ওই পথ অনুসরণ করো, যার আদেশ তোমার পালনকর্তার পক্ষ থেকে আসে। তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই আর মুশরিকদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও।
১০৭. আল্লাহ যদি ইচ্ছা করতেন, তবে তারা শিরক করত না। আমি তোমাকে তাদের জন্য রক্ষক নিযুক্ত করিনি আর তুমি তাদের কার্যনির্বাহীও নও। (সুরা আনআম : ১০৩-১০৭)
তাফসির : আলোচ্য প্রথম আয়াতের বক্তব্য হলো- জিন, মানব, ফেরেশতা ও যাবতীয় জীবজন্তুর দৃষ্টি একত্র হয়েও আল্লাহর সত্তাকে বেষ্টন করে দেখতে পারে না। পক্ষান্তরে আল্লাহ তায়ালা সমগ্র সৃষ্টি জীবের সৃষ্টিকে পূর্ণরূপে দেখেন।
____আল্লাহ কে দেখা কী সম্ভব নয়?
এ কারণে হজরত মুসা (আ.) যখন 'হে প্রতিপালক, আমাকে দেখা দাও' বলে আল্লাহকে দেখতে চেয়েছেন, তখন উত্তরে বলা হয়েছিল : 'তুমি কখনোই আমাকে দেখতে পারবে না।' হজরত মুসা (আ.) নবী হয়ে যখন এ উত্তর পেয়েছিলেন, তখন অন্য কোনো জিন ও মানুষের পক্ষে আল্লাহকে দেখার সাধ্য আছে কি? তবে এসব কথা দুনিয়ার জীবনের জন্য প্রযোজ্য। কেননা পরকালে মুমিনরা আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করবেন। এ কথা সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। কোরআনেও বলা হয়েছে, 'কিয়ামতের দিন অনেক মুখমণ্ডল সজীব ও প্রফুল্ল হবে। তারা নিজ পালনকর্তাকে দেখতে থাকবে।' (সুরা কিয়ামা : ২২-২৩)
হঠাৎ করে মাজেদের চোখে পানি চলে আসলো।
মাজেদ হু হু কন্ঠে বলল: ___ আসলেই তো আমি বোকা।
আমি এত দিন ভুল পথে ছিলাম। আমি একজন নাস্তিক ছিলাম। কিন্তু আজকে তোমার কথায় আমি আমার নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি। আজকে থেকে আমি আল্লাহকে
বিশ্বাস করি। আল্লাহ মহান। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ
তাআলা ছাড়া কোনো ইলাহ নাই।
তখন আমি বললাম ____ তুই এতদিন নাস্তিক ছিলে।
কিন্তু তুই আজকে সঠিক পথ ফিরে পেয়েছিস।
আজ থেকে আল্লাহর ইবাদত কর এবং আল্লাহর কাছে
ক্ষমা পার্থনা কর।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now