বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
#অভিমানে_আছো_তুমি
পর্ব -১
কানিজ ফাতেমা
মিস মিথিলা এই নিন এগ্রিমেন্ট পেপার সাইন করে দিন।নির্ঝরের কথাটা শুনে অবাক হয়ে গেল মিথিলা।আজ মিথিলা আর নির্ঝরের বিয়ে।কিন্তু নির্ঝর মিথিলাকে এসব কি বলছে কিসের এগ্রিমেন্ট পেপার।কিছুই বুঝতে পারছে না মিথিলা।তাই অবাক দৃষ্টিতে নির্ঝর এর দিকে তাকিয়ে আছে মিথিলা।নির্ঝর মিথিলাকে আবার বলে উঠলো,
নির্ঝর---Excuse me mis mithila Sign the agreement paper.
মিথিলা---এগ্রিমেন্ট পেপার মানে।এটা কিসের এগ্রিমেন্ট পেপার।আর আমি কেন এই পেপারে সাইন করব।
নির্ঝর---আপনি যদি এই এগ্রিমেন্ট এর পেপারে সাইন না করেন তাহলে এই বিয়ে হবে না।নির্ঝরের কথাটা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেল মিথিলা।
মিথিলা---মানে আপনি কি বলছেন এই সব।এই এগ্রিমেন্ট পেপারের সাথে বিয়ের কি সম্পর্ক।
নির্ঝর---listen, আমি এত ভোনিতা পছন্দ করি না।এই এগ্রিমেন্ট পেপারে সাইন করলে তবেই বিয়ে হবে নয় তো এই বিয়ে টা হবে না।এই নিন সাইন করুন।এই বলে মিথিলার সামনে একটা কলম আর একটা এগ্রিমেন্ট পেপার রাখল নির্ঝর।মিথিলা এগ্রিমেন্ট পেপার টা হাতে নিলো মিথিলা।
এগ্রিমেন্ট পেপার টা পড়ে চমকে গেল মিথিলা। মিথিলা নির্ঝরকে বলল,
মিথিলা---এই সব এর মানে কি।
নির্ঝর---মানে টা খুবই সিম্পল।এগ্রিমেন্ট পেপারে সবই লেখা আছে।দেখুন আমি আপনার সাথে এত কথা বলতে চাই না।শুনুন মিস মিথিলা আপনি পাঁচ মিনিটের ভিতরে যদি এগ্রিমেন্ট পেপারে সই না করেন তাহলে এই বিয়েটা হবে না।জাস্ট পাঁচ মিনিট সময় দিলাম আপনাকে।
নির্ঝর কেন এমন করছে কিছুই মাথায় ঢুকছে না মিথিলার।বিয়ে ঠিক হবার আগে বা বিয়ে ঠিক হবার পরেও এই এগ্রিমেন্ট পেপার সম্পর্কে নির্ঝরের পরিবার কিছুই জানায় নি মিথিলাকে।মিথিলা কি করবে বুঝতে পারছে না।যদি এই বিয়েটা ভেঙে যায় তাহলে তার বাবা মায়ের মান সম্মান সব শেষ হয়ে যাবে। তার বাবা মা কারো সামনে মুখ দেখাতে পারবেনা। বাবা মায়ের সম্মান বাঁচাতে নিজেকে বিসর্জন দিল মিথিলা। বাধ্য হয়ে এগ্রিমেন্ট পেপারে সই করে দিল মিথিলা। এগ্রিমেন্ট পেপারে সই করে মিথিলা মনে মনে ভাবলো,দেখি আমার ভাগ্য আমাকে ঠিক কোথায় নিয়ে দাঁড় করায়।
মিথিলা আর নির্ঝরের বিয়েটা হয়ে গেল। সব নিয়মকানুন অনুষ্ঠান শেষ করে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে,মিথিলা আর নির্ঝর বাড়িতে এলো।আজকে নির্ঝরের বাবা আর মা সবাই অনেক খুশি।
নির্ঝরের মা সোহানা বেগম মিথিলা কে বলল,
সোহানা বেগম---মিথিলা এই সংসারটা এখন থেকে তোমার। এই সংসারে সুখ দুখ ভালো মন্দের সাথে এখন থেকে তুমি জড়িয়ে গেলে। আর আমার ছেলেটাকে আমি তোমার হাতে তুলে দিলাম।তুমি ওকে দেখে রেখো। মনে রেখো আমার মেয়েদের পৃথিবীতে সর্বশেষ ঠিকানা হলো স্বামীর ঠিকানা। এ শ্বশুর বাড়ি এখন থেকে তোমার কাছে সবকিছু তুমি আমাদের সবাইকে নিজের মতো করে আগলে রেখো। এক সুতোয় এক বন্ধনে বেঁধে রেখো আমাদেরকে।আর আরেকটা কথা মিথিলা আমার ছেলেটা একটু বদমেজাজি। কিন্তু ও মানুষ হিসাবে অনেক ভালো।ওর মনটা ও অনেক ভালো।আমার মনে হয় আমার ছেলেটার খুব কষ্টের একটা অতীত আছে কিন্তু সেই অতীত টা আমরা কেউ জানিনা।তুমি আমার ছেলের সেই অতীতটাকে তোমার নিজের মতো করে ভুলিয়ে দিও মা।এর থেকে বেশি আর তোমার কাছে কিছুই চাওয়ার নেই আমাদের কারো।মিথিলা চেয়েছিল এগ্রিমেন্ট এর কথাটা নির্ঝরের বাবা মাকে জানাতে।
হঠাৎ নির্ঝরের ছোট বোন রাইসা এসে বলল, রাইসা---আসো ভাবি তোমাকে ভাইয়ার রুমে নিয়ে যাই। তারপর মিথিলাকে নির্ঝরের রুমে নিয়ে গেল রাইসা। মিথিলা নির্ঝনের রুমে ঢুকে নির্ঝরের রুমটা দেখে একদম অবাক হয়ে যায়।রুমটা খুব সুন্দর করে সাজানো।এরকম একটা এগ্রিমেন্টের বিয়ে তারপরও রুমটা এত সুন্দর করে সাজানো।কিছুই যেন বোধগম্য হচ্ছে না মিথিলার।মিথিলাকে নির্ঝরের রুমে রেখে চলে যায় রাইসা।রাইসা রুম থেকে চলে যেতেই কেউ একজন মিথিলার পেছন থেকে বলে উঠলো,
---welcome to hall mis mithila.এই বলে জোরে জোরে হাসতে লাগলো।
মিথিলা পিছন ঘুরে দেখে নির্ঝর।হঠাৎ নির্ঝর মিথিলার কাছে এসে মিথিলাকে গুনে গুনে চারটা থাপ্পড় মারে।থাপ্পড় গুলো খেয়ে তাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পড়ে যায় মিথিলা।নির্ঝরের হঠাৎ এই রূপ দেখে মিথিলা রীতিমতো ভয় পেয়ে যায়।
নির্ঝর মিথিলার কাছে এসে বলল,
নির্ঝর---কেমন লাগছে মিস মিথিলা।বাসর রাতের প্রথম উপহারটা। মিথিলা কিছুই বুঝতে পারছে না কেন নির্ঝর তার সাথে এমন করছে।
মিথিলা নির্ঝরকে কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো,
মিথিলা---আপনি কেন আমার সাথে এমন ব্যবহার করছেন আমি কি করেছি।
নির্ঝর তার আঙ্গুল ধরে বলল,
নির্ঝর---একদম চুপ একটা কথাও বলবি না।এই ঘরের ভিতরে ঘটা কোন কথা যদি বাহিরে কারো কানে যায় তাহলে তোকে আমি এই বাড়ি থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেবো।
মিথিলার চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরছে।মিথিলার গালটা এক হাত দিয়ে চাপ দিয়ে ধরে নির্ঝর বলল,
নির্ঝর ---এই চোখের পানি গুলো ভবিষ্যতের জন্য ধরে রাখ।কেবল তো শুরু এতো তাড়াতাড়ি চোখের পানি ফুরিয়ে ফেললে চলবে না। কান্নার থামা।তারপরও মিথিলা কেঁদেই যাচ্ছে।নির্ঝর জোরে একটা ধমক দিয়ে মিথিলাকে বলল,
নির্ঝর ---I say stop crying.
নির্ঝরের ধমকে ভয় পেয়ে কান্না থামিয়ে দিলো মিথিলা।তারপর আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালো মিথিলা। নির্ঝর মিথিলার কাছে এক পা দু পা করে আগাতে লাগলো।মিথিলা ভয়ে পিছিয়ে যেতে লাগলো। নির্ঝর মিথিলার হাত টান দিয়ে নির্ঝরের কাছে আনল।তারপর নির্ঝর মিথিলার চুলের মুঠি ধরে বলল,
নির্ঝর ---আমাকে দেখে পিছিয়ে গেলে চলবে।যে কয়টা দিন তুই আমার সাথে আছিস সে কয়টা দিন তোর জীবনটা আমি নরক বানিয়ে দেবো।এই রুমটা তোর জন্য জাহান্নাম হয়ে যাবে।আর তুই যেনো নিজে থেকেই এগ্রিমেন্ট শেষ হবার আগেই এ বাড়ি থেকে চলে যাস।
মিথিলা আর এসব সহ্য করতে পারছিল না।মিথিলা তাই একটু চেঁচিয়ে বলে উঠলো,
মিথিলা---- আপনি কেন আমার সাথে এমন করছেন।কি শত্রুতা আপনার সাথে আমার।
সাথে সাথে নির্ঝর মিথিলার চুলের মুঠি ছেড়ে মিথিলার গলায় চাপ দিয়ে ধরল।ধরে বললো,
নির্ঝর---খবরদার এক দম গলা তুলে তুই আমার সাথে কথা বলবি না।তাহলে এর ফল ভালো হবে না।এই বলে গায়ের সমস্ত জোর দিয়ে আরো দুটো থাপ্পড় বসিয়ে দিল মিথিলার গালে। মিথিলা তাল সামলাতে না পেরে পড়ে গিয়ে খাটের কোনার সাথে লেগে ওর ঠোঁটটা কেটে গেল। মিথিলা আহ্ বলে উঠলো।ব্যথায় মিথিলা নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারল না।মিথিলার ঠোঁট কেটে গেছে দেখে নির্ঝর তাড়াতাড়ি তুলা বের ঠোঁটটা মুছে দিলো।নির্ঝরের এই রকম ব্যবহার দেখে মিথিলা আশ্চর্য হয়ে গেলো।মিথিলা মনে মনে ভাবলো, ""নিজেই আমাকে মেরে ঠোঁট কেটে দিল আবার নিজেই ঠোঁট মুছে দিচ্ছে।এ কেমন আজব মানুষ।এরকম মানুষ আমি কোনদিন দেখি নি""
নির্ঝর মিথিলার দিকে তাকিয়ে দেখল ওর গাল দুটো লাল টকটকা হয়ে আছে। থাপ্পরের দাগগুলো স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল ওর গালে।নির্ঝর মিথিলাকে উঠিয়ে খাটে বসালো।তারপর নির্ঝরের আলমারি থেকে একটা শাড়ি বের করে মিথিলার হাতে দিল।শাড়ি টার দিকে তাকিয়ে মিথিলা অনেকটা অবাক হয়ে গেলো।শাড়িটা মিথিলার কাছে খুব চেনা চেনা মনে হল। এরকমই একটা শাড়ি মিথিলা কোথায় যেন দেখেছে। নির্ঝর মিথিলাকে বলল,
নির্ঝর ---যা ফ্রেশ হয়ে এই শাড়িটা পড়ে আয়।
মিথিলা নির্ঝরের দিকে এক পলক তাকিয়ে শাড়িটা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। ওয়াশরুমে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পরলো মিথিলা। সাওয়ার টা অন করে দিও অনেকক্ষণ সাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে রইলো মিথিলা। বেশ কিছুক্ষণ পর মিথিলা ফ্রেশ হয়ে শাড়িটা পড়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো। মিথিলার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নির্ঝর।নিরর্ঝর কে মিথিলার দিকে এই ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মিথিলা ভয় পেয়ে গেল। পরক্ষণের নির্ঝর নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে,একটা বালিশ মিথিলার দিকে ছুঁড়ে দিল।এই নে তোর জায়গা আমার বিছানায় নেই তোর জায়গা এই মাটিতে।মিথিলা কোন কথা না বলে বালিশটা নিয়ে চুপচাপ গিয়ে নিচে শুয়ে পড়লো।
নির্ঝর মিথিলার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল,""তোর জীবনটাকে আমি নরক বানিয়ে দেবো।তোকে আমি সুখে থাকতে দেব না।তোকে আমি তিলে তিলে কষ্ট দিয়ে দিয়ে মারবো।তারপর লাইট অফ করে দিয়ে নির্ঝর ও শুয়ে পড়লো।""
নিচে শুয়ে শুয়ে মিথিলা অঝোরে কাঁদছে আর ভাবছে,""কেন আমার সাথে এমন হলো।কেন এমন একটা এগ্রিমেন্ট এর বিয়ে আমাকে করতে হলো।কেন প্রতিবার সব জায়গাতেই আমাকে ঠকতে হয় সবার কাছে।একটু সুখের আশায় আমি যেখানে গিয়েছি সেখানেই আমি ঠকেছি।সবাই আমাকে ঠকিয়েছে কষ্ট দিয়েছে।ভেবেছি স্বামীর সংসারে এসে একটু সুখ খুঁজে পাবো,কিন্তু সেই সুখ টুকু ও আমার কপালে নেই।এই জীবন থেকে যদি মুক্তি পেতে পারতাম তাহলে হয়তোবা সবচেয়ে বেশি শান্তি পেতাম। বাবা মা যদি কখনো এই কথাগুলো জানতে পারে তারা কষ্টে মরেই যাবে।না না বাবা আর মাকে কিছুতেই এই কথা জানতে দেয়া যাবে না।""
কথা গুলো ভাবছে আর অঝোরে কাঁদছে মিথিলা।কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেলো মিথিলা।
মাঝরাতে হঠাৎ কারো হাতের স্পর্শে ঘুম ভেঙে গেল মিথিলার। মিথিলা চোখ মেলে দেখল........
#চলবে.....
গল্প টা কেমন হলো জানাবেন প্লিজ।আপনাদের ভালো লাগলে নেক্সট পর্ব আপলোড করব। ভালো থাকবেন সবাই।ধন্যবাদ সবাইকে।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now