বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

কে উদাসী বাজায় বাঁশি

"জীবনের গল্প" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান পীযূষ কান্তি দাস (guest) (০ পয়েন্ট)

X "কে উদাসী বাজায় বাঁশি" - - - - - - - - - - - - - - - - - পীযূষ কান্তি দাস - - - - - - - - - - - - - - - - - - অফিস থেকে বেরিয়েই বাসটা পেয়ে গেল তনু। অফিস বলতে সমাজ কল্যাণ দপ্তরের অফিস । এত তাড়াতাড়ি যে বাসটা পেয়ে যাবে স্বপ্নেও ভাবে নি সে। অফিসটাকে শহরের মধ্যস্থল থেকে এই ঢ্যাঁড়ধেড়ে গোবিন্দপুরে তুলে এনে কি সামাজিক কল্যাণ সাধিত হল কে জানে! আগের অফিসে কত কত লোকজন আসতো সামাজিক প্রকল্প গুলোর খোঁজ নিত আর এখন ? সারাদিন তীর্থের কাকের মতো শুধু বসেই থাকা আর বসেই থাকা । লোক আর আসে কই ? আগের জায়গাটাতে লোকজনের যাতায়াতের কতো সুবিধা ছিল। শুধু কি যারা অফিসে দরকারে আসতো তাদেরই সুবিধা হতো? যারা সেই অফিসে কাজ করে আসা যাওয়ার চিন্তা কম থাকায় তাদের মনও ছিল কতো ফুরফুরে ! এটা তো সত্যি কথা যে আসা যাওয়া নিয়ে যদি এত দুশ্চিন্তা থাকে তবে মানুষ মন দিয়ে কাজ করবে কি করে শুনি ! তা এ সবই হল তনুর ভাবনা ॥ তনু চিরটা কালই একটু বেশি বেশি ভাবে। সেটা অবশ্য তার মা সরমাদেবীর কথা । আর বলবেনই না কেন ? তনু যখন কিন্ডারগার্টেন স্কুলে তখন থেকে হাড়ে হাড়ে তাঁকেই তো সবকিছু টের পেতে হচ্ছে! মা , মা আকাশের রঙ নীল কেন ? মাছকে জল থেকে তুললেই ছটফট করে কেন ? ঘাসের রঙ সবুজ না হয়ে লাল হলে কি ক্ষতি হত ? রক্তের রঙ লাল হলেও লোকে নীলরক্ত বলে কেন? দিনের বেলায় চাঁদ মামা কোথায় যায়?এমনি হাজারো প্রশ্নে একেবারে জেরবার করে দিত ! তারপর তনু যখন একটু বড় , তার পিসীর বিয়ে হল আর পরের দিনই পিসি শশুর বাড়ি চলে গেল । তখন আবার তার প্রশ্ন পিসীকেই বা কেন যেতে হবে শশুরবাড়ি ? ওই যে লোকটার সাথে পিসীর বিয়ে হল তারও তো শশুরবাড়ি এটা । তবে সে কেন শশুরবাড়িতে ঘর করবে না ? মোটের উপর তার মায়ের কথায় সে একখানা চলন্ত প্রশ্ন ব্যাংক ! তবে এত প্রশ্ন করলেও তনুর মনটা ছিল পরিষ্কার । কোন রকম মলিনতা , স্বার্থপরতা , ঘৃণা , হিংসা বা দ্বেষ তার অন্তরে কালো ছায়া কোনদিন ফেলতে পারে নি । এমন তো অনেক দিনই হয়েছে টিফিনের সময় নিজে টিফিন না খেয়ে গেটের বাইরে বাচ্চা কোলে বসা পাগলীটাকেই সে সমস্ত খাবার খাইয়ে দিয়েছে ।। সরমাদেবীর তো স্পষ্ট মনে আছে সেই সে বছর তনু তখন ক্লাশ ফ়োর , কনকনে শীত। টিভির নিউজ বলছে এ রকম শীত নাকি লাষ্ট বিশ বচ্ছরেও পড়ে নি । তেমন দিনে তনু বাস থেকে নেমে যখন বাড়ির গলিতে ঠিক ঢুকব ঢুকব, লছমি মানে পাশের রুনাদের বাড়িতে কাজ করে যে বউটা তার সাথে দেখা । লছমি তখন তার বিটিয়া সুখিয়া কে হাসপাতাল থেকে ডাগদার দেখিয়ে ফিরছে । মেয়েটার গায়ে একশ চার জ্বর,কেবল একটা পাতলা ছেঁড়া টেপ ফ্রক তার পরনে ! দুদিন আগেই রোববারে যখন সে রুনার সাথে তাদের বারান্দায় তার লাল টুকটুকে পুতুলের বিয়ে দেখতে গিয়েছিল তখন রুনার মাকে রুনার একগাদা পুরনো মোটা মোটা শীতের জামা দিয়ে বাসনওয়ালির কাছ থেকে বাসন নিতে দেখেছ ॥ সুখিয়া ঠক্ ঠক্ করে কাঁপছিল। তাই না দেখে দয়ার সাগরনি নিজের অত দামী নরম তুলতুলে নতুন সোয়েটারটা খুলে দানছত্র করে নিজেই কাঁপতে কাঁপতে বাড়ি ! শুধু কি তাই ! সেদিন রাত থেকেই তো নিজেই পড়ল ধুম জ্বরে । সেই জ্বর কি আর সহজে সারে ? কত ডাক্তার বদ্যি, কত রক্ত পরীক্ষা , এক্সরে করার আর বিস্তর ওষুধ খাওয়ানোর পর পাক্কা কুড়িদিনের দিন বিছানা থেকে উঠল ॥ বড় হওয়ার সাথে সাথে তনুর আরও একটা বদগুণ লক্ষ্য করা গেছে । সে বদগুণটাও বলিহারি ! অবশ্য তখন সে বেশ বড় মানে ওই উচ্চমাধ্যমিক পাশ । জয়েন্টে ভালো ফল করে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিংতে । বদগুণটা হল একা একা নিশ্চিন্তিপুরে হারিয়ে যাওয়া । তা বুঝলেন না কথাটা ? তবে আসুন সে কথাটাও একটু বলে নিই কি বলেন? নিশ্চিন্তিপুর বলতে আবার আপনারা অপু -দুর্গা মানে মানিকবাবুর বিখ্যাত পথের পাঁচালি ফিল্মের নিশ্চিন্তিপুর ভেবে বসবেন না যেন ! আসলে ওটা নিশ্চিন্তিপুরও হতে পারে আবার দিকশূণ্যপুরও হতে পারে ॥ তনুর বাড়ি শিয়ালদা উত্তর লাইনের সোদপুর স্টেশনে নেমে অটোয় তিন মিনিট । আর অটো না থাকলে হেঁটে মিনিট দশেক । এমন তো অনেক দিন হয় যে নেমে অটোর জন্য লম্বা লাইন । তখন কে আর তিন মিনিট অটোয় যাওয়ার জন্য আধাঘন্টা লাইনে দাঁড়ায় ! তনু ওভাবে অনেকদিনই হেঁটে বাড়ি ফিরে গেছে । তবে সরমাদেবী ওকে হেঁটে আসতে দেখলে মনে মনে আঁতকে ওঠেন ! তিনি তো জানেন আপন কন্যারত্নটিকে ! যা ভুলো মন ! আসলে ভুলো না বলে উদাসী বললেই বোধহয় ভালো বলা হয় ॥ তনু আমার মতে প্রকৃতিপ্রেমী । নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা কিংবা অস্তমিত সূর্যের রশ্মি বলাকার পাখায় দেখলে কাঠখোট্টা মানুষও উদাসী হয়ে যায় ! তেমনি একবার হয়েছিল আমারও জীবনে ॥ এই মরেছে আপনারা আবার আমাকে বিভূতিভূষণের চেলা ভেবে বসবেন না যেন ! বরং শরৎচন্দ্রের একাদশী বৈরাগীই ভাবতে পারেন । তবে আমি কুসীদজীবি নই । কাজ করি ওই সরকারি স্বাস্থ্য দপ্তরে । তবে ওই দপ্তরের উপর যতই রাগ থাকুক না কেন আর জনসাধারণ তাদের গায়ের ঝাল যাদের উপর ঝাড়ে আমি সে পদের ধারে-পাশেও নাই । অতএব ভাবনা আমার কম, হসপিটালে গেলে বউকে অত চিন্তায় থাকতে হয় না।। তা সেই আমি সেবারের একটা ঘটনা বলব । শুনবেন ? নাকি সেটুকু ধৈর্য্যও নাই ? আরে মশাই নাই যদি শুনতে চান সোজা একটা উপায় বরং চুপি চুপি বলে দিই । বলি মোবাইল বা ডেস্কটপের অন্তর্জালের খরচ কে ভরে ? কিংবা বইটা কিনেছেন কার পয়সায় ? নিশ্চয়ই নিজের ? অতএব অন্যপাতায় যাওয়ার জন্য অনুমতি নেওয়ার কি দরকার আছে মশাই ? সেবার সল্টলেকের স্বাস্থ্য ভবন থেকে দুপুর দুপুর ফিরছি এক বিশেষ কাজ সেরে । কি কাজ যদি জিগ্গেস করেন আমি কিন্তু বলতে পারব না । নারে দাদা দুনম্বরী ঢাকার কোন কাজ নয় বা কাউকে বাঁশ বা কারুর পিছনে কাঁঠি দিয়েও নয় । বলায় সরকারি নিষেধ। আমাকেও বউ -বাচ্চাসহ আরও বেশ কিছু লোকের মুখে দুবেলা কিছু তুলে দেওয়ার জন্য চাকরি করতে হয় । নিষেধাজ্ঞা ভেঙে কি চাকরি থেকে হাত ধোবো নাকি ? ফিরছি ট্রেনে, সময়টা ফুরফুরে। বসন্ত হলেও ট্রেনে ঘর্মাক্ত নিদাঘ । ভাগ্যবলে নয়, ট্রেনের আঞ্চলিক নিয়মেই বসার সীট পেলাম । আর পাবি তো পা কিনা এক্কেরে জানলার ধারে ! জানালা দিয়ে মলয় পবন ঢুকছে হূ হূ। শীতল হইল মন প্রাণ । চোখ দুটো জুড়ে আসা স্বাভাবিক । কিন্তু আসে না আসে না ঘুম আসে না । বাইরে কৃষ্ণচূড়ায় আগুন লেগেছে । দূরে নীল আকাশে উড়ছে দেখি চিল । নাহ মশাই ! বাড়ি যাওয়ার কথা ভুলে নেমেই পড়লাম এক স্টেশনে । স্টেশনের নাম জিগ্গেস করবেন না যেন ? সত্যি বলছি দাদা মনে করতে পারছি না । আসলে আমি স্টেশনটার নামটাই তো দেখেনি ॥ নেমে তো পড়লাম । ট্রেনও সাথে সাথেই হুইসেল দিয়ে চলে গেল । দেখলাম কি আমি একাই নেমেছি সেখানে । যেদিকে ট্রেন গেল সেদিকে আর যেদিক থেকে এল সেদিক দু দিকেই তাকালাম । একজোড়া পাত আর ইলেকট্রিক খুঁটি গুলো চলতে চলতে মিলিয়ে গেছে দূরে,জানিনে হায় কোন সে অচিনপুরে ! বাকি দুদিকে শুধু মাঠ আর মাঠ । মনে পড়ে সেই সুর "যেথায় আকাশ মাটিতে কানাকানি "। একটা মেঠোপথ চলে গেছে একদিকে । কি খেয়াল হল জানিনে । নেমে গেলাম সেই পথে। নেমে গেলাম নাকি কেউ আমায় টেনে নিয়ে গেল ! একটু পরে দেখলাম একটা সরু খাল । তার উপরে আড়াআড়ি ফেলা দুটো বাঁশ । দেখেই বুঝলাম লোকজন জল থাকলে ওই বাঁশের উপর দিয়েই পেরোয় । এখন অবিশ্যি জল নেই । বয়স নয় নয় করে ওই মধ্যপঞ্চাশ। তথাপি কেমন জেদ চাপল মনে। ওই বাঁশের উপর দিয়ে ব্যালান্স করে পেরুলাম । পেরিয়ে গিয়ে হাততালি দিয়ে নিজেই নিজেকে বাহবা দিলাম । এক মিনিট দাঁড়ালাম। সামনে তাকালাম।তারপর আবার আমার যাত্রা হল শুরু ।। আরও একটুখানি যাওয়ার পর দেখলাম ছোট্ট একটা ডোবা । পাশে একটা মস্ত বটগাছ । তার ডাল থেকে মোটা মোটা ঝুরি নেমে মাটিতে গেছে ঢুকে । তার থেকে হাত দশেক দূরে একটা খেজুর গাছ । বেঁকে গেছে ডোবার ভেতরের দিকে । ডোবার অপরপাশে পাশপাশি হাত পাঁচেক গ্যাপ দিয়ে দুটো বাঁশ পোতা । একটায় একটা মাছরাঙা অন্যটায় একটা লেজঝোলা ফিঙে । মনে হল ওরা আপোষে বন্টন করে নিয়েছে কে কোনটায় বসবে । পাড়ের কাছে কাদায় এক বক একপায়ে দাঁড়িয়ে । মনে হয় কোন ঋষি ভর করেছে তায় । আমি বসে পড়লাম বটের তলায় । দূরে কোথায় কুবো ডাকে কুব কুব। কখন যে সূর্য গেছে ডুবে জানি না । একফালি চাঁদও উঠে গেছে ! বট গাছে হাজার টুনি । আমি বুঝি নেই আমাতে । কতক্ষণ নাকি কত যুগ বসে ছিলাম জানি না । হঠাৎ পকেটে "আমায় একটু জায়গা দাও মায়ের মন্দিরে বসি"! আসলে ফিরে যাওয়ার কথা দুপুর দুপুর । বিকেল গিয়ে রাত্রি হল । কোথায় আছি । তারই খোঁজ । সেদিন তারপর বাড়ি ফিরেছিলাম অনেক রাতে । দেরির কি অজুহাত দিয়েছিলাম তাও মনে নাই ॥ রিটেয়ার্ড করেছি বছর দুই । ব্যস্ত জীবন ছেড়ে অখণ্ড অবসর । সময় যেন কিছুতেই কাটতেই চায় না ! বাড়ি থেকে দশমিনিট হেঁটে স্টেশনে চলে আসি । যদিও লোকজন বেড়ে গেছে প্রচুর । অফিস টাইমে গিজ গিজে ভীড় । সুখের কথা এই,এটা আদতে গ্রামীণ স্টেশন । অফিস টাইম বাদ দিলে এখনও ফাঁকা ফাঁকা । খোকা বিদেশে বেশ আছে । খুকির বিয়ে সমুর মা দিয়ে গেছে । সেও চলে গেল গতবছর । একা একা ঘরে আর কাটে না যে দিন । দুপুর দুপুর চলে আসি স্টেশনে । একলা কেউ বসে থাকলে যেচে আলাপ করি । মনের মতো মানুষ পেলে মনের কথা কই । তেমনি পেয়েছিলাম একদিন এক একা মানুষ । তাঁরই মুখে শুনেছিলাম তনু কথা আর তাঁকে বলেছিলাম আমার পুরনো দিনের কথা । তনু কথা শুনে মনে হয়েছিল এখনও তাহলে "কে উদাসী বাজায় বাঁশি - - - - " মানুষ আছে !!


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৩২৮ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now