বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

কাশের দোলা

"ছোটদের গল্প" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান পীযূষ কান্তি দাস (০ পয়েন্ট)

X "কাশের দোলা " ----------------------- পীযূষ কান্তি দাস ----------------------- ছোট্ট রাসেলের চোখে আজ কয়েক দিন ধরে ঘুম নাই। সে আর তার বহিন রুকশানা দিন গুনছে রোজ,আর পনেরো -আর চোদ্দ -তের করে কাউন্টডাউন। তাদের আব্বু লন্ডনে বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন উচ্চপদস্থ কর্মচারী । সেখানে তাঁর প্রচুর কাজের চাপ,তাইতো আজ প্রায় পনের বছর তিনি আপন জন্মভূমি থেকে দূরেই রয়েছেন । দূতাবাসের দেওয়া কর্মী আবাসনে তারা তাদের আব্বু ও আম্মির সাথে থাকে ও সেখানেই পড়াশুনা করে। শওকত সাহেব ও জরিনাবিবি দুজনেই উচ্চশিক্ষিত ও মার্জিত । জরিনাবিবিও ওখানেই একটা স্কুলে পাঠদান করেন ।। রাসেল ও রুকশানার জন্ম লন্ডনেই । জন্মের পর তারা কোনদিনই তাদের দেশের বাড়িতে যায়নি । শওকত সাহেব ও জরিনাবিবি বিদেশে থাকলেও স্বদেশের ভাষা ও সংস্কৃতিকে যাতে ছেলে মেয়ে ভুলে না যায় , যাতে শ্রদ্ধা করে, ভালোবাসে সেদিকে সম্মক নজর রাখতেন ।। শওকত সাহেবের বাড়ি বাংলদেশের একটা প্রত্যন্ত গ্রামে যেখানে বর্তমানের হোয়াটস আপ বা স্কাইপি যুগেও আধুনিকতার ছোঁয়া গিয়ে পৌঁছেনি । আজন্ম লন্ডনে থাকলেও আব্বু ও আম্মির মুখে বারংবার শুনে শুনে তারা তাদের ঠাকুর্দা- ঠাম্মি, বড়আব্বু ও বড়আম্মি,রহিম ভাইয়া, রাবেয়া আপা ও ফুফুর ছবি মানসপটে এঁকে নিয়েছে । সেই ফুফুর সাদী আর সেই উপলক্ষ্যেই তাদের বাড়িতে যাওয়ার কথা । শওকত সাহেব তার বোনকে অত্যন্ত ভালোবাসেন আর সেলিনাও জেদ ধরে বসেছিলো যে তার ভাইয়া উপস্থিত না থাকলে সে বরং সারাজীবন কুমারীই থেকে যাবে ।। দেখতে দেখতে দিন এসে গেল । শওকত সাহেব বোনের জন্য বিদেশ থেকে যাকিছু কেনাকাটা করার তা সেরে নিয়েছেন ,জিনিসপত্র প্যাকিংও কমপ্লিট।। নির্দিষ্ট দিনে ফ্লাইট ধরে তাঁরা ঢাকা এয়ারপোর্টে নামলেন । সেখান থেকে একটি কারে করে কিছুটা যাওয়ার পর একটা নদীঘাট। নদীঘাটে পৌঁছে গাড়িকে বিদায় দিলেন । এখান থেকে নৌকো ছাড়া ওঁদের দেশের বাড়ি যাওয়া কিছুতেই সম্ভব নয় । এই অঞ্চল নদীমাতৃক আর নৌকাই হলো এখানকার একমাত্র বাহন । ----সালাম ছোটকর্তা সালাম । আসতে কুনো অসুবিদা হয় নাইতো আপনাগো ? ------তুই পরান না ? তুই আমারে ছোটকর্তা কইছস ক্যান ? কবে থিকা আমি তোর ছোটকর্তা হইলুম রে ক ? আসলে পরান হলো ওদের গ্রামের জগদীশ মাঝির পোলা । শওকত সাহেব ও পরান সমবয়সী । ছোটবেলায় তারা একই সাথে কত যে দস্যিপনা করেছে তার হিসেব নেই । কতবার শওকত জগদীশের বউ কমলার হাতের তাল খেজুরের পাটালি ,চিড়ের মোয়া আমসত্ব খেয়েছে তা লেখাজোখা নেই । কমলাকে সে নিজের আম্মির মতোই দেখতো আর কমলাও সে মুসলিম বাড়ির ছেলে বলে কোনদিন তাকে দূরে ঠেলে রাখেনি । পরান আর শওকত তার কাছে আপন দুইটা পোলার মতোই ।। বর্তমানে ধর্মের নামে এই যে এতো হানাহানি তা তো তৎকালীন বাংলায় কল্পনাও করা যেত না । এই দুইটা সম্প্রদায় পরস্পর বিজয়ার প্রণাম আর ঈদের কোলাকুলি একই সাথে পরম নিষ্ঠার সাথে পালন করেছে । কতছুটির দিনে এই পরান আর সে নৌকো খুলে গ্রামবাংলার কত নাম জানা বা অজানা নদী ও খালে পাড়ি দিয়েছে তার কি কোন হিসেব আছে ! কত বার কত লোক জগদীশকে বলেছে -----জগদীশ সি দিন দেখলাম তুমাগো পোলা আর বশিরুল কর্তার ছোট পোলা শীতলক্ষ্যায় মাইঝ গাঙে লৌকা লিয়া --- হো হো করে হেসে জগদীশ বলতো ---অরে পরান তো জগদীশ পাটনির বেটা নাকি ? লৌকা লিয়ে উ তো পাড়ি দিবই । উহা রে ও পাটনি হুতে হবে না কি ? একদিন সে আর পরান যখন মাঝ গাঙে তখন হঠাৎ উঠা তুফানে তাদের ছোট্ট ডিঙিখানি উত্তাল তরঙ্গে কেমন উথাল -পাথাল খাচ্ছিল আর বাপকা বেটা পরান কেমন অসীম সাহস আর দক্ষতায় তাদের নৌকাটা পাড়ে এনে ভিড়িয়েছিল তাও মনে পড়ে গেল শওকত সাহেবের। ----ভাবি আপনে কেমন আসেন ? আমারি চিনতে পারসেন ? জরিনা শওকত সাহেবের মুখের দিকে তাকান। আসলে বিয়ের পর জরিনাবিবি তো বেশি দিন শওকত সাহেবের দেশের বাড়িতে থাকার সুযোগ পাননি তাই শ্বশুরবাড়ির গাঁয়ের লোকেদের বা আত্মীয় স্বজন দের সাথে তাঁর ভাল করে পরিচিত হওয়ার সুযোগ জুটেনি আর সে সুযোগ হলেও এই এত দীর্ঘ দিনের অদর্শনে তা মনে থাকার কথাও নয় ।। শওকত সাহেব বললেন -ওহ জান ! তোমাকে যে সেই কত বার আমার ছোটবেলার কথা বলতে গিয়ে জগদীশ চাচা ,কমলা আম্মা , পরানের কথা বলেছি সেসব কথা ভুলে গেলে নাকি ? এই সেই আমার প্রাণের প্রিয় পরান আর পরান এদিকে আয় , এ হল আমার কলিজা রুকশানা আর ও দিলকা টুকরা রাসেল । রাসেল রুকশানা এদিকে এসো তোমাদের পরান চাচাকে সালাম করো । রাসেল ও রুকশানা কাছে এসে পরানকে যখন কদমবুচি করলে তখন পরান যার পর নাই বিস্মিত হয়ে গেল । কারণ ইংল্যান্ডে জন্ম নেওয়া ও সেখানেই বেড়ে ওঠা ছেলে মেয়ে কদমবুচি করবে তাও আবার তার মতো কোন অজপাড়া গাঁইয়া লোককে তা সে স্বপ্নেও ভাবে নি । প্রথমটা সে থতমত খেয়ে গেলেও সেই ধাক্কা সামলে রাসেল কে বুকে টেনে নিলে আর তারপর পুতুল তোলার মতো করে রুকশানা কে তুলে নিয়ে উপরে ছুঁড়ে একটু লোফালুফি খেলে নিলে । রুকশনা খিল্ খিল্ করে হাসতেই লাগলো।। তারপর সব্বাই গিয়ে উঠলো পরানের নৌকায় । পরানও পাড়ের গাছে বাঁধা নৌকার রশি খুলে ঠেলা দিয়ে লাফ মেরে নৌকার গলুই উঠে প্রথমে লগি দিয়ে ঠেলে ঠেলে নৌকাকে গভীরজলে নিয়ে গেল ।একটুপরে নৌকার বাদাম টাঙ্গিয়ে হাল ধরে বসে রইল । রাসেল নৌকায় উঠে অব্দি পরানের কাছ ছাড়া হতে চায়নি । সেও পরানের ঠিক পাশটিতে গিয়ে বসলে গল্প শোনার আশে ।। শরতের স্নিগ্ধবাতাস বাদামে লাগায় নৌকাও চললে তরতরিয়ে । রুকশানা ও চলে এল পরানের কাছে । ------পরাণ চাচা -ও পরান চাচা একটা গল্প বলো না প্লীজ --রুকশানার আবদার । পরানও তার এক ঝড়জলের দিনে বুড়িগঙ্গায় নৌকাডুবির গল্প বলা শুরু করেছে এমন সময় নৌকা গিয়ে বড় নদীতে পড়লে । পরান গল্প বলার সাথে সাথে শক্ত হাতে হাল ধরে বসলে ও নৌকাকে যদ্দূর সম্ভব নদীর কিনারে কিনারে নিয়ে চললে ।। নদীর ধারে প্রচুর বক ও সারস মাছের আশায় ধ্যান করে এক পায়ে দাঁড়িয়ে । কোথাও বা জেলেরা খ্যাপলা জাল ছুঁড়ে মাছ ধরছে । একপাল হাঁসও নদীর কিনারে জলে ভেসে ভেসে খাবার জন্য গুগলি খুঁজছে । কখনও বা টুপ করে ডুবে কিছুক্ষণ পরে মুখে এক্মটা মাছ নিয়ে ভেসে উঠছে । মাথার উপর দিয়ে ট্যাঁ ট্যাঁ করে একটা পাখি উড়ে গেল । ------পরান চাচা পরান চাচা ওটা কি পাখি -বিস্মিত রাসেলের প্রশ্ন । -----ওটা গ্যাংচিল । ------গ্যাংচিল ? গ্যাংচিল কি আব্বু ? রুকশানার প্রশ্ন । শওকত সাহেব তখন বললেন, গ্যাংচিল? আরে গ্যাংচিল হলো গিয়ে ওই সি গাল্স । ----ও সি গাল্স ! কি সুন্দর আব্বু ! নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা , দেখে দেখে যাক্ কেটে যাক্ বেলা । শরত্ এলো হাসে বাংলা মা , দূর বিদেশে আর তো থেকো না । সবুজ ধানে ক্ষেত গিয়েছে ভরে বাড়ির কথা শুধুই মনে পড়ে ।। গুনগুনিয়ে গান ধরে পরান । নদীর চর আর পাড় শুধু সাদা আর সাদা । কাশের বনে বাতাসের দোল । হঠাৎ এক জায়গায় একটা দশ -বারো মেয়ে সাথে আট -নয় বছরের ছেলের হাত ধরে সেই কাশবনের মাঝ দিয়ে ছুটে যেতে যেতে অবাক চোখে ওদের নৌকার দিকে তাকিয়ে । -----আব্বু -আম্মি দ্যাখো দ্যাখো ওই যে ওই যে অপু -দুর্গা । সাদা মেঘের ভেলায় মন ভাসিয়ে কাশের মতো দুলতে দুলতে কখন যে বাড়ির ঘাটে নৌকা এসে ভিড়লে তা ওরা টেরই পেল না ॥


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৪৯৭ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now