বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
-বাবা, ওওও বাবা…!
রনি বাবার গায়ে গা ঘেঁষাঘেঁষি করছে। বাবা ব্যস্ত ল্যাপটপে। ল্যাপটপের স্ক্রিন থেকে চোখ না সরিয়েই বাবা রিপ্লাই দিলেন
-হু!
-আহা, শোনই না!
-শুনতে পাচ্ছি তো! তুমি বলো।
-জানো আমাদের টমি না অঙ্ক জানে!
-তুমি কীভাবে বুঝলে?
-যেদিন ওকে আনলাম ওইদিনই আমার খটকা লাগে। রাস্তার পাশে ঝোপের মধ্য থেকে ৪টা পাপিকে যখন ঝুড়িতে তুলে টমিসহ ফিরছিলাম, কিছুক্ষণ পরই টমি ঘেউ ঘেউ শুরু করে দিল। কেন করছিল তা বুঝতে পারছিলাম না।
ঝুড়িতে যখন বাচ্চাগুলোকে তুলছিলাম তখন ও ঘেউ ঘেউ করল না। যেন ও কোনো একজন উদ্ধারকারীর জন্যেই অপেক্ষা করছিল।
কিন্তু যখন টমিকে তুললাম, ও কোনোমতে মাথাটা তুলে পাপিগুলোকে চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছিল। আমরা যেমন করে মনে মনে কিছু কাউন্ট করার সময় চোখ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখি ঠিক তেমন করে। এরপর ঝুড়িটা নিয়ে পেছন ঘুরতে জুড়ে দিল চিৎকার। আহত না হলে নির্ঘাৎ লাফিয়ে নেমে যেত এমন অবস্থা।
তখন শুনতে পেলাম খুব আস্তে আস্তে একটা পাপি ডাকছে। ঝোপের অন্ধকারের মধ্যে ওকে দেখতেই পাই নি।
-আর এতেই তোমার মনে হয়েছে টমি অঙ্ক জানে?
-হুম!
-এমনও তো হতে পারে, টমি ঘাণশক্তির মাধ্যমে টের পেয়েছিল একটা বাচ্চা রয়ে গেছে! জানো তো, কুকুরের ঘ্রাণশক্তি খুবই প্রখর!
-তা জানি! সেদিন আমারও এমনটাই মনে হয়েছিল। কিন্তু এরপর অনেকবার খেয়াল করেছি ও সংখ্যা চিনতে পারে। যোগ বিয়োগ গুণ ভাগ সবই বোঝে।
-যেমন…?
-কয়েকদিন আগে পাপিগুলোর জন্যে এক প্যাকেট বিস্কিট কিনে আনি। প্যাকেট খুলে বিস্কুটগুলো ওদের খাওয়ার প্লেটে ঢালি। কুকুরটা বিস্কুটগুলোর দিকে এক নজর তাকিয়েই শুরু করলো ঘেউ ঘেউ। আমি ভাবলাম এই খাবারটা বাচ্চারা খাক এটা বুঝি ওদের মা চায় না! বাটিটা সরিয়ে নিতে যাব, তাও দেখি আবার ঘেউ ঘেউ করছে।
হঠাৎ কী মনে করে গুনে দেখি বিস্কুট আছে ৮টা। বাচ্চাগুলো তো ছোট, একটা করে খেলেই হয়! তাই ৩টা টমির প্লেটে রেখে বাকি ৫টা পাপিদের প্লেটে রেখে দেই। কুকুরটা শান্ত হয়।
ভাবলাম ও বুঝি নিজে খাওয়ার জন্যে চেঁচাচ্ছিল। কিন্তু ওর প্লেট থেকে একটা তুলে পাপিদের প্লেটে রাখতেই আবার চিৎকার।
কী আর করা! আরেকটা প্যাকেট খুলে আরো ৪টা পাপিদের প্লেটে রাখতেই টমি ঠান্ডা! তার মানে ও চায় বাচ্চারা সমান সমান খাক! বিস্কুট ৫টা দিলে একটা করে পাবে, ১০টা দিলে ২টা করে পাবে। সিম্পল ম্যাথ!
আবার সেদিন রানুকে বললাম ৯ নম্বর চ্যানেল দিতে। আমি ফ্রিজ থেকে একটা আপেল নিয়ে টিভিরুমে এসে দেখি ৯ নম্বর চ্যানেল চলছে। অথচ রানু তখনও কিচেনে! রিমোটটা মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে, টমির পায়ের কাছে।
-এটা আর কিছু না, কো-ইনসিডেন্স! মানে কাকতালীয় ব্যাপার আর কি!
-কিন্তু সেদিন যা হয়েছে সেটা জানলে…
-তোমাকে ‘ড্যাজলিং ডগ’ কমিকসের বইটা এনে দিয়েছিলাম, ওটা পড়া শেষ?
-হুম!
-আর সেদিন টিভিতে ‘বোল্ট’ মুভিটা দেখছিলে দেখলাম; ওটা কুকুর নিয়ে ছিল, রাইট?
-হ্যাঁ! দারুণ একটা মুভি ছিল! একটা সাধারণ কুকুর, যে নিজেকে সুপার পাওয়ারের অধিকারী মনে করে। একদিন সে..
-এবার বুঝেছি কেন তুমি টমিকে স্পেশাল ডগ ভাবছো! মুভি দেখে দেখে চোখের বারোটা বাজিয়েছ তুমি; আর এখন ব্রেনের বারোটা! হিসাব খুব সহজ- তুমি কমিকস পড়ে সুপার ডগ সম্পর্কে জেনেছ। মুভি দেখে তোমার মনে হয়েছে সুপারডগ আছে। তাই টমিকে তোমার সুপার ডগ মনে হচ্ছে!
-কিন্তু বাবা..
-অনেক গল্প হলো! এবার যাও। হাতে অনেক কাজ!
রনি আমসিমুখে বিছানা ছেড়ে নামলো। কেউ বিশ্বাস করছে না তার কথা! আপু, আম্মু, দাদু কেউ না। ভেবেছিলাম বাবা বিশ্বাস করবে। বাবাও বিশ্বাস করল না! ধ্যাৎ, আর কাউকে টমির কথা বলব না!
টমি হলো রনিদের পোষা কুকুর। মাসখানেক আগে রনি ওকে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে আনে। এক্সিডেন্ট করে হাত-পা ভেঙে রীতিমত মুমুর্ষু অবস্থা। সাথে ৫টা ছোট্ট বাচ্চা।
রনি কুকুর আর তার শাবকগুলোকে পরম যত্নে ঝুড়িতে করে বাসায় নিয়ে আসে। শাবকগুলোকে সিঁড়ির নিচে রেখে কুকুরটাকে ভেটের কাছে নিয়ে যায়। ভেট ভাঙা হাত-পা প্লাস্টার করে দেয় আর কিছু ওষুধ প্রেসক্রাইব করেন। রনির আন্তরিক প্রচেষ্টায় কুকুরটা অল্প সময়ের মধ্যেই সেরে ওঠে।
এরপর থেকে কুকুর আর ওর শাবকগুলোই রনির সার্বক্ষণিক সঙ্গী। রনি ওর নাম দেয় টমি।
বাবার ঘর থেকে বের হতে হতে রনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল- টমি অঙ্ক জানে, এটা কেউ জানলো না!
সামনে টমি। বাচ্চাগুলো নিজেদের মধ্যে কুস্তাকুস্তি খেলছে। টমির সেদিকে নজর নেই, নজর রনির দিকে। মুখে উপহাসের হাসি- জেনারেল ম্যাথ শুধু না, বীজগণিত, জ্যামিতি, পরিমিতি সঅঅঅব জানি! একবার যদি কেউ জানতে পারে তো সোজা সার্কাসে নিয়ে যাবে। ভাগ্যিস কেউ জানলো না!
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now