বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

সোনাই মাঝি পাট(২)

"রোম্যান্টিক" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান ROHAN- AMIN.. (০ পয়েন্ট)

X -হ্যাঁ, আজ সকালেই তো এসেছিলাম। স্বপনের বাবা মা আরো বেশি ভয়ংকর, সে কথা নৌকায় থাকতে স্বপন আমাকে জানিয়েছে। যখন বললাম তাহলে উপায়? তখন বলল, "বিয়ে করে দু'দিন পর বাড়িতে গিয়ে উঠলেই বাবা মা মেনে নিবে। সে পর্যন্ত বন্ধুর কাছে থাকব।' আমি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বাড়ির কথা মনে করলাম। বাবা মা'কে ছেড়ে চিরদিনের জন্য অজানায় দিলাম পাড়ি। আমাকে নিয়ে দুপুরে তার বন্ধুর কাছে গেল। তার বন্ধু বাড়িতে একা থাকে। বন্ধুর বাবা মা কোথায় আমি জানি না। দুপুরে হোটেলের খাবার খেলাম। আমার আর স্বপনের জন্য তার বন্ধু একটি রুম গুছিয়ে দিলো। আমাকে স্বপন সেই ঘরে নিয়ে যাচ্ছে। আমার কেমন একটু ভয় হলো। সারা শরীরের লোম দাঁড়িয়ে গেল। আমি স্বপনকে বললাম, 'চলো আমরা আগে বিয়ে করি। একটু পরেই তো সন্ধা হয়ে যাবে।' সে আমাকে অবাক করে দিয়ে বললো, 'বিয়ে দুই তিন দিন পর দেখা যাবে। এখন চলো ঘরে যাই, মানুষ দেখলে নানান কথা বলবে।' আমি বিশ্বাস করতে পারছি না স্বপন এমন কথা বলতে পারে! যার জন্য সব ছেড়ে চলে এলাম সে দুই তিন দিন পর বিয়ে করবে কেন? আর বিয়ে ছাড়া আমরা এক ঘরে থাকব কেন? আর দুই তিন পর যদি সে আর বিয়ে না করে? আমার মাথায় হাত। আমি বললাম, 'না স্বপন হাত ছাড়ো। আগে বিয়ে করো।' স্বপন অগ্নিচোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, 'লীলা শুরু করছিস কেন? বলছি না দুই তিনদিন পর বিয়ে করব? আয় ঘরে আয় বলছি।' এই স্বপন আমার ভালোবাসার স্বপন না। এটি অন্য কেউ, আলাদা জগতের কেউ। সে আমাকে টেনে হিঁচড়ে ঘরে নেওয়ার চেষ্টা করছে। আমি স্বপনের হাতে কামড় দিয়ে দৌড় দিলাম। সেও পিছু নিল। কিছু পথ দৌড়ে আসার পর সে আমাকে প্রায় ধরে ফেললো। রাস্তায় চলাচল রতো মানুষের কাছে সাহায্য চাইলাম। চিৎকার করে বাঁচাতে বললাম আমাকে। এই দেশে আর যাই হোক, মেয়েরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে চিৎকার দিলে মানুষের অভাব হয় না। মানুষজন স্বপনকে আটকিয়ে জিজ্ঞেস করল আমাকে দৌড়াচ্ছে কেন? কেউ চড় থাপ্পড় দিচ্ছে। আমি বললাম, ভাইয়েরা আমি নৌকায় উঠা পর্যন্ত এই লোকটাকে ছাড়বেন না। আমি দৌড়ে এসে তোমার নৌকায় উঠলাম। তার পর থেকে তো তোমার সাথেই ভেসে চলছি। নুড়ি এতটুকু বলার সময় কাঁদেনি। কিন্তু বর্ণনা করার সময় চোখ বড়ো করে ঘাড়ের কপালের রগ শক্ত করে বর্ণনা করছিলো। এখন তাকে বেশ শান্ত ও স্বাভাবিক লাগছে। মোটামোটি যুদ্ধে জয়লাভ করার মতো আনন্দিত। কিন্তু একটু আগেই কান্না থামানো যাচ্ছিলো না। পৃথিবী কত বিচিত্র। তার চেয়েও বিচিত্র পৃথিবীর মানুষ। এই হাসি কান্নার খেলায় আমরা সবাই বেশ পারদর্শী। নুড়িকে জিজ্ঞেস করলাম, "বাবা মায়ের কাছে যাবে?" -বাবাকে আমি ভালো করেই চিনি। তার মনে যে আঘাত করেছি আমার চেহারাও দেখতে চাইবে না। মূলত আমার এলাকা আমার পরিচিত। আমার এলাকায় আমি নিরাপদ। তাই সেখান থেকে ছুটে এসে বলেছি মির্জারচরে যেতে। আমার তো আর কোনো ঠিকানা জানা নেই সোনাই। যদি পারতাম তোমার এই নৌকাতেই ভেসে থাকতাম। কূলের মানুষের চেয়ে এই মাঝ নদীর নৌকা ঢের ভালো। আমি বললাম, "এই মাঝ নদীতেও তো একটা মানুষ তোমার পাশে বসা। তাকে ভয় হয় না?" -প্রথমে একটু ভয় লেগেছিল। যখন আমার চোখের পানি মুছে দিলে তখন আর ভয় নেই। যে চোখের পানি মুছে দেয় সে সহজে চোখের পানি ঝরায় না। তোমাতে আমার বিশ্বাস জন্মেছে। তুমি বিয়ে করেছো মাঝি? -বিয়ে না করলে তুমি করবে না-কি? হা হা। আমার সাথে কার বিয়ে হবে? উজান চরে শুধু একটি ঘরই আছে। সেই ঘরে তো আমি ছাড়া আর কেউ থাকে না। আমার বাবা-মা কে আমি জানি না। এই নদীর জলেই আমার ভেসে চলা। চাচা অবশ্য পরে স্বীকার করেছেন। আগে এলাকার কয়েকজন বলেছে। আমাকে না-কি নদী থেকেই পেয়েছে চাচা। নদীতে মাটির হাড়ির ভিতর একটি ছোট্ট শিশু কান্না করছে। সে জানে না সে কোথায় এসেছে কেন এসেছে? পৃথিবীর কোনো নিয়ম কানুনই সে জানে না। ঐ চাচা আমাকে নদী থেকে তুলে মানুষ করলেন। চাচা ছিলেন এই নৌকার মাঝি। চাচারও কেউ ছিল না। মাঝির কাছে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে চায় না। আবার ইঞ্জিনের নৌকা হলে মেয়ের অভাব হবে না। এই নৌকায় আয় কম, শাক শুটকি খেয়ে জীবন পাড়ি দিতে হয়। চাচা আমাকে নয় ক্লাস পড়াইছেন। চাচা মারা যাওয়ার পর আর পড়া হয়নি। কলমের বদলে এই বৈঠা হাতে নিলাম। হয়ে গেলাম মাঝি। এবার বলো কে বিয়ে করবে আমাকে? কে খেতে পারবে বারো মাস শাক শুটকি? নুড়ি চুপ করে নদীর দিকে তাকিয়ে আছে। যেন নীরবতা কোনো ভাষা। নুড়ি হঠাৎ বলে উঠলো, "সোনাই নৈাকা ঘুরাও।" আমি নুড়ির কথা কিছুই বুঝতে পারলাম না। সে কি আবার স্বপনের কাছে যেতে চায়? আমি জানতে চাইলাম, "এত দূর এসে আবার ফিরে যাবে?" নুড়ি বলল, "সোনাই। উজান চরে না তোমার একটা ভিটা আছে? একটা ঘর আছে! সে ঘরে তোমার সাথেও তো একটা মানুষ লাগে। তুমি শাক শুটকি খেয়ে জীবন পার করবে সে শাক শুটকি রান্না করে দেওয়ার জন্যও তো একটা মানুষ লাগে। আমারে তোমার ঘরে নিবা সোনাই? আমি শাক শুটকি খেতে পারি। করবা বিয়া আমারে?" আমি নৌকা ঘুরালাম। আমার ঘরে দু'দিন হলো যাই না। এখন যেতে যেতে সকাল হবে। কিছু বাজার করে নিয়ে যেতে হবে। এই জনমে কোনো মেয়ের হাতের রান্না আমার খাওয়া হয়নি। আমার একটা মানুষ লাগবে। শুধু রান্না করে দেওয়ার জন্য নয়। আমার কোলে কেউ শুয়ে গল্প বলবে, আমি মাথায় বিলি কেটে গল্প শুনব। এতে যদি আমার ভালো মানুষ হয়ে উঠা না হয়, তাতে দুঃখ নেই। আমি গল্পের মতো ভালো মানুষ হতে চেয়েছিলাম। জ্যোৎস্নার আলোয় নুড়ির চোখে নতুন গল্প দেখতে পাচ্ছি। গল্পটা আমাকে সাজাতেই হবে। মাঝির জীবনের গল্পটা নতুন করে সাজানো দরকার। নৌকা চলছে উজানচরের সোনাই মাঝির ভিটার দিকে। সমাপ্ত....


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ২৫০ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now