বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

সোনাই মাঝি৷ পাট(১)

"রোম্যান্টিক" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান ROHAN- AMIN.. (০ পয়েন্ট)

X সন্ধ্যায় মেয়েটি ছুটে এসে নৌকায় উঠল। হাঁপিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, "মাঝি দ্রুত নৌকা ছাড়ো। খারাপ লোকেরা আমার পিছু নিয়েছে।" আমি আর কিছু জিজ্ঞেস না করেই নৌকা ঠেলে বৈঠা হাতে নিলাম। শ্যামবর্ণ গায়ের রং মেয়েটির। ভাগ্যিস সন্ধা পেরিয়ে রাত হয়নি। চতুর্দিকে শুধু খারাপ মানুষের গল্প শুনি। ছোটো থাকতে চাচা শুধু ভালো মানুষের গল্প বলতেন। অমুক গ্রামের অমুক লোকটা কত ভালো মানুষ ছিলেন, সেসব গল্প। ভালো মানুষগুলো মনে হয় গল্পেই বসত করে। আবার মনে পড়ে চাচার কথা। আমার চাচা একজন ভালো মানুষ ছিলেন। কিন্তু তার কোনো গল্প নেই। মেয়েটির চেহারায় এখনো ভয়ের ছাপ। কোথায় যাবে সেটাও জানি না। বাধ্য হয়েই জানতে চাইলাম, "কোথায় যাবেন? নৌকা কোনদিকে নিয়ে যাব?" মেয়েটি এতক্ষণে আমার দিকে তাকালো। সূর্যের আলো নিভে গেছে। বলল, "আমাকে বাঁশখালী মির্জারচরে নিয়া যান।" শুনে তো আমার মাথায় হাত। আমি বৈঠা থামিয়ে বললাম, "আমার নৌকা তো ইঞ্জিনের না। ইঞ্জিনের নৌকায় ঘন্টা তিনেকের পথ। বৈঠা দিয়ে তো এক দিন এক রাত লাগবে।" মেয়েটি বলল, "আমার অসুবিধে নেই। আপনি নিয়ে চলুন। এই নিন আমার কানের দুল। তবুও আমাকে নিয়ে চলুন।" মেয়েটি হাত দিয়ে কানের দুল খুলতে লাগলো। আমি বাঁধা দিয়ে বললাম, "এখন খুলতে হবে না। কিন্তু রাতের বেলা কূলের দেখা পাবো কীভাবে?" মেয়েটি আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো, "জ্যোৎস্না আছে মাঝি। অসুবিধা হবে না। এই বিপদে আপনিও মুখ ঘুরিয়ে নিলে ভালো মানুষ আর পাব কোথায়?" আমার খুব ভালো মানুষ হওয়ার ইচ্ছে। গল্পের মতো ভালো মানুষ। রাতের বেলা নদী কত শান্ত। যেন ঘুমিয়ে আছে। তার উপর দিয়ে কতশত নৌকা চলে যাচ্ছে তাতে তার ভ্রুক্ষেপ নেই। বৈঠা মেরে সামনে তাকিয়ে দেখি এক খণ্ড চাঁদ। মায়াভরা জ্যোৎস্না মাখা চাঁদ। যেন আকাশের চাঁদ এসে বসে আছে আমার নৌকার ভিতর। কিন্তু চাঁদটা হাসে না। আঁচলে চোখ মুছে। আমি তাকে স্বাভাবিক করতে বললাম, "করিমপুরে আপনার কে থাকে? আর মির্জারচর কার কাছে যাচ্ছেন?" মেয়েটি মাথা তুলে তাকালো। বলল, "নিয়তি টেনে এনেছিল আবার নিয়তিই নিয়ে যাচ্ছে। যেখানে নিয়ে যাচ্ছে সেখানেও থাকতে পারব কি-না নিয়তি ভালো জানেন।" আমি মেয়েটির কথা কিছুই বুঝতে পারছি না। জানতে চাইলাম, "থাকতে পারবেন না কেন?" জবাবে বলল, "বাবা মা আমাকে ত্যাজ্য করেছে। জানি না গেলে আমাকে আশ্রয় দিবে কি-না।" আমার হাতের বৈঠা কিছুক্ষণের জন্য চলা বন্ধ হয়ে গেল। আমি বললাম, "অনেক দূরের পথ। কথা বললে সময় কাটবে। আপনি বলুন কেন ত্যাজ্য করেছে আপনাকে?" মেয়েটির দুঃখ দেখে ইচ্ছে করছে, যদি তার মাথা আমার কোলে থাকত। আমি বৈঠা মেরে চলতাম আর তার গল্প শুনতাম। যতক্ষণ ভোর না হয় ততক্ষণ চলতেই থাকত পথচলা, গল্প বলা। মেয়েটি বলতে লাগলো... "আমি নুড়ি। আমরা এক ভাই আর দুই বোন। আমি সবার ছোটো। আমি ছোটো বলেই সবাই আমাকে আদর করত। যাকে আদর করে বেশি, যাকে ভালোবাসে বেশি, সে যদি আঘাত দেয় তা অনেক বড়ো আঁকার ধারণ করে। আমি সবার মনে কষ্ট দিয়েছি, আঘাত করেছি।" নুড়ি কাঁদতে শুরু করলো। আমার থেকে তিন চার হাত দূরে বসা। ইচ্ছে করছে তার চোখের পানি মুছে দিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দেই। কিন্তু এতে আমার ভালো মানুষ হয়ে উঠা হবে না। ভালো মানুষেরা কখনো মেয়ে দেখলেই বুকে জড়াতে চাইবে না। আমি বললাম, "থাক গল্প বলতে হবে না। আমি চাই না আপনি কান্না করুন।" মেয়েটি কান্না থামিয়ে আবার বলতে শুরু করলো... "এলাকায় আমার নামই ছিল দুষ্টু মেয়ে। গাছে উঠা, সাইকেল চালানো, সারা গ্রাম টৈ টৈ করে ঘুরে বেড়ানো ছিল আমার বৈশিষ্ট। কিন্তু একটি ছেলে আমার সব কেড়ে নিলো। আমার দুরন্তপনা, আমার দুষ্টুমি, সব। আমার মনটাকেই নিজের করে নিলো। আমাদের এলাকার এক ভাবীর ছোটো ভাই ছিল সে। প্রায়ই যেত আমাদের গ্রামে। তার নাম স্বপন। সে আমাকে প্রথম ভালোবাসি বলেছিল। আমি না করে দিতে পারিনি। কারণ একই দোষে আমিও ছিলাম দোষী। অল্পদিনেই বাবা মা জেনে গেলেন। মানুষ প্রেমে পড়লে হিংস্র হয়। কিছুটা বেয়াদব হয়, প্রতিবাদী হয়। আমি তর্ক করতাম বাবা মায়ের সাথে, স্বপনের জন্য। বাবা মা আমাকে কাছে রাখতে চেয়েছিল। এত দূরের পথ শুনে স্বপনকে ভুলে যেতে বললো। কিন্তু আমি ভুলব কীভাবে? আমিও যে ততদিনে ভালোবাসার মানুষটিকে পাবার জন্য হিংস্র হয়ে উঠেছি। মাঝি নৌকা কোনদিকে চলে যাচ্ছে দেখেন।" নুড়ির কথা শুনতে শুনতে বৈঠা মারতে ভুলে গেছি। নৌকা উলটো দিকে চলে যাচ্ছে। নৌকা ঘুরিয়ে আবারো বৈঠা মারতে লাগলাম। দৃষ্টি আর মনোযোগ নুড়ির কথার দিকে। "বাবা মা আমাকে শাসন করলেন, মারধোর করলেন। এতে করে আমি আরো হিংস্র হয়ে উঠি। স্বপন তখন তাদের বাড়ি চলে যাবে। তার বড়ো বোন বলেছিল, 'এটা আমার শ্বশুর বাড়ির এলাকা। তোর জন্য আমার সংসারেও সমস্যা হবে। তোকে আর এখানে থাকতে হবে না, বাড়ি চলে যা।' যাদের বাড়ি তারা যদি থাকতে না দেয় তাহলে স্বপনকে অবশ্যই চলে যেতে হবে। কিন্তু স্বপন চলে যাচ্ছে আমি মানতে পারছি না। মনে হচ্ছে চিরদিনের জন্য আমাকে ছেড়ে যাচ্ছে। সে চলে গেলে বাবা মা হয়তো আমাকে বিয়ে দিয়ে দিবে। আমি চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলব স্বপনকে। তাই নির্লজ্জের মতো বাবা মা'কে বলে ফেলেছি, স্বপনের সাথে আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য। বাবা শুনে লাঠি হাতে নিলেন। কেউ বাবাকে আটকাতে পারছে না। আমি বললাম, 'যদি স্বপনের কাছে বিয়ে না দেও তাহলে স্বপনের সাথে চলে যাব।' জানি না তখন মাথায় কোন শয়তান ভর করেছিল আমার। বাবা শুনে আমাকে ঘরে বন্দী করলেন। আমি খাটের নিচ থেকে বটি বের করে ভয় দেখালাম। আমাকে যেতে না দিলে আমি মরে যাব। বাবা তখন চূড়ান্ত রাগ করলেন। আমাকে তেজ্য করলেন। আমিও বাবা মায়ের ভালোবাসার কথা ভুলে ক্ষণিকের ভালোবাসার জন্য স্বপনের হাত ধরে চলে এলাম। বাবা মা'কে যে কষ্ট আমি দিয়েছি, দোজখেও আমার স্থান হবে না।" নুড়ির কান্না কিছুতেই থামছে না। মেয়েটি তার ভুলের জন্য অনুতপ্ত। এবার আমি উঠে গেলাম নুড়ির কাছে। কাছে বসে আমি নুড়ির মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দেওয়ার সময় সে আমার কাঁধে হাত দিলো। সে হাতে মাথা রেখে চোখের জল বিসর্জন দিচ্ছে। আমি চোখের পানি মুছে দিলাম। মানুষ একমাত্র কান্নার সময় আপন পর চিনে না। তখন যাকে কাছে পায় সেই তার কাছে এই দুনিয়ার সবচেয়ে আপন মানুষ। -ও মাঝি, তোমার নাম কী? রাত তখন অনেক। জ্যোৎস্নার আলোয় পানির নিচে চাঁদ দেখা যায়। উপরের চাঁদটা আমাদের সঙ্গী হয়েছে। ছোটো বেলা আমরা দৌড়াতাম আর একজন অন্যজনকে বলতাম, "এই যে চাঁদ আমার সাথে চলে এসেছে। বিশ্বাস না করলে আমার কাছে এসে দেখে যা।" মানুষ খুব দ্রুত বড়ো হতে চায়। কিন্তু যখনি বুঝে সে সত্যি বড়ো হয়ে গেছে তখন আবার ছোটো হতে চায়। চাঁদ নিয়ে খেলা করার মতো ছোটো। -ও মাঝি, নাম বলবা না? নুড়ির কথায় অবাকই হলাম। বললাম, "আমার নাম অনেক বছর ধরে জিজ্ঞেস করে না কেউ। যাদের ইঞ্জিনের নৌকা আছে তাদের একটা নাম আছে। অমুকের নৌকা, তমুকের নৌকা। আমাকে তো সবাই মাঝি বলেই ডাকে। নিজের নাম ছিল সোনাই। অনেকদিন কেউ এই নামে ডাকে না। তুমি ডাকবা নুড়ি?" -তোমার বাবা মা, ভাই বোন তারাও তোমাকে নাম ধরে ডাকে না? কিছুক্ষণের জন্য বৈঠা মারা বন্ধ করলাম। কোনোদিন একটানা নৌকা এত চালাইনি। হাটু ভাঁজ করে বসে নুড়ির দিকে তাকিয়ে বললাম, "চার কূলের তিন কূলেই আমার কেউ নেই নুড়ি। এক কূলে আমার এই নৌকা আর উজান চরে একটা ভিটা। আমার কথা ছাড়ো, তোমার কথা বলো। তারপর স্বপনের সাথে করিমপুরে চলে এসেছিলে?"


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৩৯৮ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now