বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

অন্য ভুবন (৬)

"রহস্য" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান TARiN (০ পয়েন্ট)

X অন্য ভুবন – মিসির আলি ০৬. শীতের ভোরবেলায় ময়মনসিংহ শহর শীতের ভোরবেলায় ময়মনসিংহ শহর মিসির আলির বেশ লাগল। তিনি অন্ধকার থাকতেই জেগে উঠেছেন। একটা উলের চাদর গায়ে দিয়ে শহর দেখতে বের হয়েছেন! আজ আর দারোয়ন তাঁকে বাধা দেয় নি, গেট খুলে দিয়েছে। এবং হাসিমুখে বলেছে, এত সকলে কই যান? সম্ভবত বরকত সাহেব দারোয়ানকে কিছু বলেছেন। সব মফস্বল শহর দেখতে এক রকম, তবু এই শহরটি ব্ৰহ্মপুত্ৰ নদীর জন্যেই বোধহয় একটু আলাদা। কিংবা কে জানে ভোরবেলার আলোর জন্যেই হয়তো এ— রকম লাগছে। মিসির আলি হেঁটে হেঁটে নদীর পাড়ে চলে গেলেন। নদী শুকিয়ে এতটুকু হয়েছে। চিনির দানার মতো সাদা বালির চর পড়েছে। অদ্ভুত লাগছে দেখতে। মর্নিংওয়াকে বের হয়েছে, এ রকম বেশ কয়েকটি দল পাওয়া গেল। সবই বুড়োর দল। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে হঠাৎ শরীরের জন্যে তাদের মমতা জেগে উঠেছে। এইসব অপূর্ব দৃশ্য আরো কিছুদিন দেখতে হলে শরীরটাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। মিসির আলি নদীর পাড় ধরে দ্রুত হাঁটতে লাগলেন। তাঁকে দেখে মনে হচ্ছে। তাঁর মনে কোনো উদ্দেশ্য আছে। তিনি কিছু-একটা করতে চান! কিন্তু তাঁর মনে কোনো গোপন উদ্দেশ্য ছিল না। ভোরবেলায় নদীর পাড়ের একটি ছোট শহর দেখতে ভালো লাগছে, এই যা! মাইল দু-এক হাঁটার পর খানিকটা ক্লান্তি বোধ করলেন। বয়স হয়ে যাচ্ছে। এখন আর আগের মতো পরিশ্রম করতে পারেন না। ঘড়িতে ছটা বাজছে। এখন উল্টো পথে হাঁটা শুরু করা দরকার। বরকত সাহেব নিশ্চয়ই ভোরের নাশতা নিয়ে অপেক্ষা করছেন। একটা খেয়াঘাট দেখা যাচ্ছে। খেয়াঘাটের পাশে বেঞ্চি পেতে সুন্দর একটা চায়ের দোকান। মিসির আলি বেঞ্চিতে বসে চায়ের কথা বললেন। সিগারেট খাবার ইচ্ছা হচ্ছে। কিন্তু প্যাকেট ফেলে এসেছেন। চা শেষ করবার পর লক্ষ করলেন, শুধু সিগারেট নয়, মানিব্যাগও ফেলে এসেছেন। তাঁর অস্বস্তির সীমা রইল না। তিনি প্ৰায় ফিসফিস করে বললেন, আগামীকাল ভোরবেলা চায়ের পয়সা দিয়ে যাব। আমি ভুলে মানিব্যাগ ফেলে এসেছি। আপনি কিছু মনে করবেন না। চায়ের দোকানি দাঁত বের করে হাসল। যেন খুব মজার একটা কথা শুনছে। কোনো অসুবিধা নাই। দরকার হইলে আরেক কাপ খান। মিসির আলি সত্যি-সত্যি আরেক কাপ চা খেলেন। অল্প অল্প রোদ উঠেছে। রোদে পা মেলে জ্বলন্ত উনুনের সামনে একটা হাত মেলে দিয়ে চা খেতে বেশ লাগছে। মিসির আলি হাসিমুখে বললেন, দোকান আপনার কেমন চলে? লোকজন তো দেখি না। দোকান চলে না। বিকিকিনি নাই। মানুষজন নাই, চা কে খাইব কন? ভালো জায়গায় গিয়ে দোকান করেন, যেখানে লোকজন আছে। দাড়িওয়ালা লোকটি হাসিমুখে বলল, মনের টানে পইড়া আছি। জায়গাটা বড় ভালো লাগে। মায়া পইড়া গেছে। একবার মায়া পড়লে যাওন মুসিবন্ত! মিসির আলি চমকে উঠলেন। এই বুড়োর কথায় একটা সূত্র পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বুঝতে পারছেন, কেন এত কষ্টের পরও নিজাম বা রহিমা ও-বাড়িতে পড়ে আছে। সেখানেও মায়া ব্যাপারটাই কাজ করছে। এই মায়া তৈরির ব্যাপারে তিন্নিরও নিশ্চয়ই একটি ভূমিকা আছে। মায়া জাগিয়ে রাখছে। তিনি। কেউ তা বুঝতে পারছে না। মানুষের সমস্ত আবেগ এবং অনুভূতির কেন্দ্ৰবিন্দু মস্তিষ্ক। মেয়েটি সেই মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণ করতে পারে অতি সহজেই। মিসির আলির মনে হল, এই মেয়েটি একই সঙ্গে দুটি কাজ করে-আশেপাশের লোকজনদের একটু দূরে সরিয়ে রাখে, আবার টেনে রাখে নিজের দিকে। মেয়েটি নিজের সব ক্ষমতাও সবাইকে দেখাচ্ছে না। যেমন ধরা যাক, দূর থেকে কথোপকথনের ক্ষমতা। এর খবর এ-বাড়ির অন্য কেউ জানে না। কিন্তু কেন জানে না? কেন এই মেয়েটি এইসব তথ্য গোপন রেখেছে? আবার পুরোপুরি গোপনও রাখছে না। তাঁর কাছে প্রকাশ করেছে। কেন করেছে? আশঙ্কা কেন? এর উত্তর বের করতে হবে। একটির পর একটি তথ্যকে সাজাতে হবে। একটি ছকের মধ্যে ফেলতে হবে। মিসির আলি চিন্তিত বোধ করলেন। নিজের অজান্তেই আরেক কাপ চা চাইলেন। চায়ের দোকানি খুশি মনেই চা ছাঁকতে বসল। আমি কাল সকালেই দাম দিয়ে যাব। কোনো অসুবিধা নাই। তিনি কাপ চায়ের লগিন ফতুর হইতাম না। আমরা ময়মনসিং-এর লোক। আমরার কইলজা বড়! নাম কি আপনার? রশিদ। আচ্ছা ভাই রশিদ, আপনার কাছে সিগারেট আছে? সিগারেট নাই, বিড়ি আছে। খাইবেন? দেন দেখি একটা। মিসির আলি চিন্তিত মুখে বিড়ি টানতে লাগলেন। বেলা বাড়ছে, তাঁর খেয়াল নেই। অনেক কাজ পড়ে আছে সামনে কাজ গোছাতে হবে। কীভাবে গোছাতে হবে, তা পরিষ্কার বুঝতে পারছেন না। এ-বাড়ির প্রতিটি মানুষকে জেরা করতে হবে! এলোমেলো প্রশ্ন-উত্তর নয়। পুঙ্খানুপুঙ্খ জেরা। তিন্নির মোর সম্পর্কে খোঁজ নিতে হবে, ভদ্রমহিলার চিঠিপত্র, ডায়েরি– এইসব দেখতে হবে। ভালোভাবে জানতে হবে, তিনি মেয়ে সম্পর্কে কী ভাবতেন। মায়েরা অনেক কিছু বুঝতে পারে। কি ভাবেন? মিসির আলি চমকে উঠে বললেন, কিছু ভাবি না ভাই। চায়ের জন্যে ধন্যবাদ। কাল সকালে আমি আবার আসব। জ্বি আইচ্ছ। আপনে ময়মনসিংয়ের লোক না মনে হইতাছে। জ্বি-না। আমি ঢাকা থেকে এসেছি। কুটুম্ব বাড়ি? জ্বি, কুটুম্ব বাড়ি।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ১৮৭ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now