বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

অন্য ভুবন (৫)

"রহস্য" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান TARiN (০ পয়েন্ট)

X অন্য ভুবন – মিসির আলি ০৫. মিসির আলি সারাদিন ঘুমুলেন মিসির আলি সারাদিন ঘুমুলেন। দুপুরে এক বার ঘুম ভেঙেছিল। মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা। তিনি পরপর দুগ্লাস ঠাণ্ডা পানি খেয়ে আবার বিছানায় গড়িয়ে পড়লেন। যখন জাগলেন, তখন বেশ রাত। বিছানার পাশে উদ্বিগ্ন মুখে বরকত সাহেব দাঁড়িয়ে আছেন। এক জন বেঁটেমতো লোক আছে, হাতে ষ্টেথিসকোপ। নিশ্চয়ই ডাক্তার। দরজার পাশে চোখ বড়-বড় করে দাঁড়িয়ে আছে নিজাম। বোঝাই যাচ্ছে সে বেশ ভয় পেয়েছে। বরকত সাহেব বললেন, এখন কেমন লাগছে? ভালো। মিসির আলি উঠতে চেষ্টা করলেন। ডাক্তার সাহেব বললেন, নড়াচড়া করবেন। না। চুপ করে শুয়ে থাকুন। আপনার ব্লাড প্ৰেশার অ্যাবনরম্যালি হাই। তিনি কিছু বললেন না। নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে তাঁর সময় লাগছে। ঘুম ঘুম ভাবটা ঠিক কাটছে না! ডাক্তার সাহেব বললেন, হাই প্রেশারে কত দিন ধরে ভুগছেন? প্ৰেশার ছিল না। হঠাৎ করে হয়েছে। যে-জিনিস হঠাৎ আসে তা হঠাৎই যায়। কি বলেন? না না, খুব সাবধান থাকবেন। আমি তো ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম। বরকত সাহেবকে বলছিলাম হাসপাতালে ট্রান্সফার করবার জন্যে। সত্যি করে বলুন, এখন কি বেটার লাগছে? লাগছে। আগের মতো খারাপ লাগছে না। ডাক্তার গম্ভীর ভঙ্গিতে মাথা নাড়তে নাড়তে বললেন, হঠাৎ করে এ রকম হাই প্ৰেশার হবার তো কথা নয়। খুব আনইউজুয়েল। তিনি একগাদা অষুধপত্র দিলেন। যাবার সময় বারবার বললেন, রেষ্ট দরকার। কমপ্লিট রেষ্ট। কিছু খাওয়াদাওয়া করে শুয়ে পড়ুন। একটা ঘুমের অষুধ দিয়েছি। খেয়ে টানা ঘুম দিন। ভোরে এসে আমি আবার প্ৰেশার মাপব। বরকত সাহেব বললেন, আপনি তো সারা দিন কিছু খান নি। এখন খাব। গোসল সেরে খেতে বসবা প্ৰচণ্ড খিদে পেয়েছে। আপনি কি দয়া করে। খাবারটা আমার ঘরে পাঠাবার ব্যবস্থা করবেন? নিশ্চয়ই করব। আপনার সঙ্গে আমি কিছু কথা বলতে চেয়েছিলাম। মিসির আলি বললেন, আজ না, আমি আগামীকাল কথা বলব। ঠিক আছে, আগামীকাল। বরকত সাহেব ঘর থেকে বেরুতে গিয়েও থমকে দাঁড়ালেন। নিচু গলায় বললেন, আপনার কষ্ট হল খুব। আমি লজ্জিত। আপনার লজ্জিত হবার কিছুই নেই। আপনি এ নিয়ে ভাববেন না। দীর্ঘ স্নানের পর মিসির সাহেবের বেশ ভালোই লাগল। ক্লান্তির ভাব নেই। মাথায় সূক্ষ্ম যন্ত্রণা আছে, তবে তা সহনীয়। এবং মনে হচ্ছে গরম এক কাপ চা খেলে সেরে যাবে। খাবার নিয়ে এল নিজাম। মিসির আলি লক্ষ করলেন, নিজাম তাঁকে বারবার আড়চোখে দেখছে। তার চোখে সীমাহীন কৌতূহল! সম্ভবত সে কিছু বলতে চায়, সাহস পাচ্ছে না। মিসির আলি ভারি গলায় ডাকলেন, নিজাম! ত্ত্বি স্যার? তুমি কেমন আছ? জ্বি স্যার, ভালো। তিনি তোমাকে কখনো মাথাব্যথা দেয় নি? নিজাম চমকে উঠল। কিন্তু নিজেকে সামলে নিল! সহজভাবে ভাত-তরকারি এগিয়ে দিতে লাগল। কথা বলছি না কেন নিজাম? কী বলব স্যার? ঐ যে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি তোমাকে মাথাব্যথা দেয় কি না। আমার ধারণা, সবাইকেই মাঝে-মাঝে দেয়। ঠিক বলছি না? জ্বি স্যার, ঠিক বলছেন। তোমাকেও দিয়েছে? জ্বি স্যার। ক’ বার দিয়েছ? অনেক বার। তবু তুমি এ-বাড়িতে পড়ে আছ কেন? চলে যােচ্ছ না কেন? নিজাম জবাব দিল না। মিসির আলি বললেন, আমি ওর অসুখ ভালো করবার জন্যে এসেছি। কাজেই ওর সম্পর্কে সব কিছু আমার জানা দরকার। তোমরা যদি না বিল, তাহলে আমি জানব কী করে? কী জানতে চান স্যার? মানুষকে কষ্ট দেবার এই ব্যাপারটা ও কবে থেকে শুরু করেছে? তিন বছর ধরে হচ্ছে। প্রথম কীভাবে এটা শুরু হল তোমার মনে আছে? জ্বি, আছে। রহিমা তিন্নি আপার জন্যে দুধ নিয়ে গিয়েছিল। তিন্নি আপা খাচ্ছিল না। তখন রাগের মাথায় রহিমা তিনি আপকে একটা চড় দেয়। তার পরই শুরু হয়। রহিমা চিৎকার করতে থাকে, গড়াগড়ি করতে থাকে। ভয়ংকর কষ্ট পায়। রহিমা কি এখনো কাজ করে এ-বাড়িতে? জ্বি। এ-রকম কষ্ট কি সে আরো পেয়েছে? জ্বি স্যার। তবু সে এ বাড়িতে পড়ে আছে? চলে যায় না কেন? নিজাম জবাব দিল না। মিসির আলি লক্ষ করলেন, এই প্রশ্নটির জবাব নিজাম এড়িয়ে যাচ্ছে। এত কষ্টের পরও কাজের মানুষগুলি এখানেই আছে। তার কী কারণ হতে পারে? হয়তো অনেক বেশি বেতন দেয়া হচ্ছে, যে-কারণে থাকছে। কিন্তু এটা বলতে কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়। তুমি বেতন কত পাও নিজাম? জ্বি, মাসে দেড়শ টাকা আর কাপড়চোপড়। মিসির আলির মনে হল, এটা এমন কোনো বেশি বেতন নয়। কাজেই এরা যে এখানে পড়ে আছে, নিশ্চয়ই তার কারণ অন্য। নিজাম। জ্বি স্যার? তুমি কি আমাকে চা খাওয়াতে পার? নিয়ে আসছি। স্যার। আর শোন, রহিমার সঙ্গে আমি কথা বলতে চাই! ওকে পেলে বলবে আমার কথা। জ্বি আচ্ছা! নিজাম চট করে চা নিয়ে এল।। লোকটি করিৎকর্মী। চা-টা হয়েছেও চমৎকার। চুমুক দিতে-দিতেই মাথার যন্ত্রণা প্রায় সেরে গেল। চিনি লাগবে স্যার? না, লাগবে না। খুব ভালো চা হয়েছে নিজাম। বস তুমি। টুলটায় বস, কথা বলি। নিজাম বসল না। জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। মিসির আলি বললেন, তিন্নির মধ্যে আর কি অস্বাভাবিক ব্যাপার তুমি লক্ষ করেছ? নিজাম মাথা চুলকাতে লাগল। মিসির সাহেব বললেন, ভালো করে চিন্তা করে বল! সে এমন কিছু কি করে, যা আমরা সাধারণত করি না? তিন্নি আপা রোদের মধ্যে বসে থাকতে ভালবাসেন। তাই নাকি? জ্বি স্যার জ্যৈষ্ঠ মাসের রোদেও তিন্নি আপা সারা দিন ছাদে বসে থাকেন। এ ছাড়া আর কী করে? আর কিছু না। মনে করতে চেষ্টা করি। হয়তো কোনো ছোট ব্যাপার। তোমার কাছে হয়তো এর কোনো মূল্যই নেই, কিন্তু আমার কাছে তা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। বুঝতে পারছি আমার কথা? জ্বি স্যার! রাত একটার দিকে মিসির আলি তিন্নির আঁকা ছবিগুলি নিয়ে বসলেন। সব মিলিয়ে পাঁচটি ছবি। প্রতিটি ছবিই গ্লাছ বা গাছজাতীয় কিছুর। বেশির ভাগ গাছ লতানো। গাছের রঙ হলুদ থেকে লালের মধ্যে। সবুজের কিছুমাত্র ছোঁয়া নেই। তিন্নি হলুদ এবং লাল রঙ দিয়ে ছবি আঁকল কেন? সম্ভবত তার কাছে সবুজ রঙ ছিল না। অবশ্যি শিশুরা অদ্ভুত রঙ ব্যবহার করতে ভালবাসে। তাঁর এক ভাগিনী মানুষ আঁকে আকাশি নীল রঙে। মানুষের চোখে দেয় গাঢ় লাল রঙ। অবশ্যি এই পাঁচটি ছবি শিশুর আঁকা ছবি বলে মনে হচ্ছে না। শিশুরা এত চমৎকার আঁকে না। একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে ঝড় হচ্ছে প্রচণ্ড ঝড়। কোনো শিশু, তা সে যত প্রতিভাবান শিশুই হোক, এ-রকম নিখুঁত ঝড়ের ছবি আঁকতে পারবে না। ছবি দেখে মনে হয়, ঝড়ের সময়টায় এই ছবির শিল্পী উপস্থিত ছিল। হাওয়ার যে ঘূর্ণি উঠেছে, তাও সে লক্ষ করেছে। মিসির আলি সাহেব মনে মনে একটি থিওরি দাঁড় করাতে চেষ্টা করলেন। তিনি ভাবতে চেষ্টা করলেন, ছবিগুলি কোনো শিশুর মনগড়া ছবি নয়, কল্পনার ছবি নয়। এই গাছ, এই ঝড়, বাতাসের এই ঘূর্ণি ছবির শিল্পী দেখেছে। যদি তাই হয়, তাহলে এ গাছগুলি কি? পৃথিবীর গাছে সবুজ রঙ থাকবে। ছায়াতে জন্মানে কিছু কিছু হলুদ গাছ তিনি দেখেছেন, কিন্তু এ রকম কড়া সূর্যের আলোয় হলুদ গাছ তিনি দেখেছেন বলে মনে করতে পারলেন না। প্রতিটি ছবিতে দুটি সূর্য। গনুগনে সূর্য। এর মানে কী? পৃথিবীর কোনো ছবিতে দুটি সূর্য থাকবে না। তাহলে কি এই থিওরি দাঁড় করানো যায় যে, ছবিতে যে-দৃশ্য দেখা যাচ্ছে তা অন্য কোনো গ্রহের? তা কেমন করে হয়? তিন্নি অন্য কোনো গ্রহের মেয়ে, এই যুক্তি হাস্যকর। তিন্নি পৃথিবীরই মেয়ে, এতে কোনো সন্দেহ থাকার অবকাশ নেই। এই গ্রহের মেয়ে হয়ে বাইরের একটি গ্রহের ছবি সে কেন আঁকছে? কীভাবে আঁকছে? মিসির আলি গম্ভীর মুখে দ্বিতীয় সিগারেটটি ধরলেন। সব কেমন জট পাকিয়ে যাচ্ছে। এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। ছকে ফেলা যাচ্ছে না। তিনি সিগারেট টানতে টানতে বারান্দায় এসে দাঁড়ালেন এবং ভাবতে চেষ্টা করলেন—এইসব অল্পবয়সী একটি মেয়ের কল্পনার ছবি, এর বেশি কিছু নয়। মেয়েটির কল্পনাশক্তি খুব উচ্চ পর্যায়ের, যার জন্যে সে এত চমৎকার কিছু ছবি আঁকতে পারছে। ভোরবেলায় তাকে জিজ্ঞেস করতে হবে।। মিসির আলির ঠাণ্ডা লাগছে। হু-হু করে বইছে উত্ত্বরে হাওয়া। কিন্তু এই ঠাণ্ডায় দাঁড়িয়ে থাকতে বেশ লাগছে। চারদিক খুব চুপচাপ। আকাশে চাঁদ থাকায় চমৎকার জ্যোৎস্না হয়েছে। গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে জ্যোৎস্না ভেঙে-ভেঙে পড়ছে। কী অপূর্ব একটি দৃশ্য! মিসির আলি নিজের অজান্তেই হাঁটতে-হাঁটতে একটা ঝাঁকড়া জামগাছের নিচে গিয়ে দাঁড়ালেন। ঠিক তখন অদ্ভুত একটা ব্যাপার হল। তিনি স্পষ্ট শুনলেন, তিনি বলছে, কি, আপনার ঘুম আসছে না? তিনি আশেপাশে কাউকেই দেখলেন না। দেখার কথাও নয়। এই নিশিরাত্রিতে তিনি নিশ্চয়ই নিচে নেমে আসে নি। তিনি বললেন, কে কথা বলল? মিসির আলি খিলখিল হাসির শব্দ শুনলেন। এর মানে কী? তিন্নির হাসি কোথেকে ভেসে আসছে? মিসির আলি বললেন, তুমি তিন্নি? হ্যাঁ। কোত্থেকে কথা বলছ? আপনি এত বুদ্ধিমান, অথচ কোত্থেকে কথা বলছি, বুঝতে পারছেন না? না, বুঝতে পারছি না। তুমি কোথায়? আমি আমার ঘরেই আছি। কোথায় আবার থাকব? মিসির আলি একটা বড় ধরনের চমক পেলেন। মেয়েটি তার ঘর থেকেই কথা বলছে। সেইসব কথা তিনি পরিষ্কার শুনছেন। টেলিপ্যাথিক যোগাযোগ। অদ্ভুত তো! মেয়েটিও নিশ্চয়ই তাঁর কথা শুনতে পাচ্ছে মেয়েটির সঙ্গে কথা বলার জন্যে নিশ্চয়ই চোঁচাতে হবে না। মনে-মনে ভাবলেই তিন্নি বুঝবে। মিসির আলি কথা বলা শুরু করলেন। এ-রকম অদ্ভুত কথোপকথন তিনি আগে কখনো করেন নি। মিসির আলি : কেমন আছ তিন্নি? তিন্নি : ভালো। মিসির আলি : এখনো জেগে আছ? তিন্নি : হ্যাঁ, আছি। মিসির আলি : কেন? তিন্নি : আমারও আপনার মতো ঘুম আসছে না। মিসির আলি : রোজই জেগে থাক? তিন্নি : মাঝে-মাঝে থাকি। মিসির আলি : তোমার ছবিগুলি বসে-বসে দেখলাম। তিন্নি : আমি জানি। মিসির আলি : খুব সুন্দর হয়েছে। তিন্নি : তাও জানি। মিসির আলি : এগুলি কোথাকার ছবি? তিন্নি : বলব না। মিসির আলি : কেন, বলতে অসুবিধা কি? তিন্নি : বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না। মিসির আলি : ছবিতে দেখলাম দুটি সূর্য। তিন্নি : হ্যাঁ, দু’টি। মিসির আলি : দুটি কেন? তিন্নি : দুটি থাকলে আমি কী করব? একটি আঁকব? কথাবার্তা এই পর্যন্তই। মিসির আলি অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলেন। কিন্তু আর কোনো যোগাযোগ হল না। তিনি বেশ কয়েক বার ডাকলেন, তিন্নি তিন্নি। কোনো জবাব নেই। মিসির আলি নিজের বিছানায় ফিরে এলেন। ঘুম চটে গিয়েছে। শুয়ে থাকার কোনো মানে হয় না। তিনি আবার ছবি নিয়ে বসলেন। যদি নতুন কিছু বের হয়ে আসে। যে-মাটির উপর গাছগুলি দাঁড়িয়ে আছে, তার রঙ কী? আকাশের রঙ কী? গাছপালার ফাঁকে কোনো কীটপতঙ্গ আছে কি? যদি থাকে, তাদের রঙ কী? আপনি এখনো জেগে আছেন? তিনি চমকে উঠলেন। তিন্নি আবার কথা বলা শুরু করেছে। হ্যাঁ, এখনো জেগে আছি। তোমার ছবি দেখছি। কেন দেখছেন? এক বার দেখাও যা এক শ বার দেখাও তা। উঁহু, তুমি ঠিক বললে না। প্রথম বার অনেক কিছু চোখে পড়ে না। আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন। ঘুম আসছে না। আমি কিন্তু আপনাকে ঘুম পাড়িয়ে দিতে পারি। পার নাকি? হ্যাঁ, পারি। দেব? না, তার দরকার নেই। তোমার সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগছে। তাহলে কথা বলুন। আমার সঙ্গে তুমি যেভাবে কথা বলছি, অন্যদের সঙ্গেও কি সেইভাবে কথা বল। না। কেন বল না। বলতে ইচ্ছা করে না। মিসির আলি চেষ্টা করতে লাগলেন আজেবাজে প্রশ্নের ফাঁকে-ফাঁকে দু-একটি জরুরি প্রশ্ন করে খবরাখবর বের করে আনতে। কিন্তু মেয়েটি খুব সাবধানী। সে অনায়াসে ফাঁদ কেটে বেরিয়ে যাচ্ছে। তবু এর মধ্যে একটি হচ্ছে-তিনি শুধু মানুষ নয়, পশুদের সঙ্গেও (যেমন বেড়াল) যোগাযোগ করতে পারে। মিসির আলি জিজ্ঞেস করলেন, বেড়াল তোমার কথা বুঝতে পারে? হুঁ, পারে। তুমি ওর কথা বুঝতে পার? বেড়াল কোনো কথা বলে না। তবে সে যা ভাবে তা বুঝতে পারি। অবশ্যি সব সময় পারি না। কখন-কখন পার? তা জেনে আপনি কী করবেন? আপনি কি বেড়াল? তিন্নি খিলখিল করে হাসতে লাগল। মিসির আলি রোমাঞ্চ বোধ করলেন। মেয়েটি নিজের ঘরে বসে হাসছে, অথচ তিনি কী স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছেন! তিন্নি। বলুন। এই যে তুমি কথা বলছি, আমি শুনছি। আচ্ছা, এ-বাড়িতে অন্য যারা আছে, তারা কি শুনছে? তারা শুনবে কীভাবে, আমি কি তাদের সঙ্গে কথা বলছি? তাও তো ঠিক। আচ্ছা ধর, কাল ভোরে আমি যদি অনেক দূর চলে যাই-তিনচার মাইল দূরে কিংবা তার চেয়েও দূরে, তখনো কি তুমি আমার কথা শুনতে পারবে? তিনি বিরক্ত হয়ে বলল, আপনার সঙ্গে আর কথা বলতে ইচ্ছা করছে না। আমি আর কথা বলব না। মিসির আলি বললেন, শুভরাত্রি তিনি। তার কোনো জবাব তিনি শুনতে পেলেন। না। মাথার যন্ত্রণাটা আবার ফিরে এসেছে। শরীরটা হালকা লাগছে। মিসির আলি ডাক্তারের দিয়ে-যাওয়া ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে ঘুমুতে গেলেন। ভালো ঘুম হল না। আজেবাজে স্বপ্ন দেখলেন, বেশ কয়েক বার ঘুম ভেঙেও গেল।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ২৯৮ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now