বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
গোধূলী বেলা, পাখিরা দলে দলে উরে চলেছে নিজ নিজ গন্তব্যে। খাদ্যের সন্ধানী প্রাণগুলো রওয়ানা হচ্ছে প্রিয় মুখগুলির সকাশে। প্রকৃতি নতুন রুপ নিচ্ছে, ধীরে ধীরে নিকোষ কালো আঁধারে ছেঁয়ে যাবে বলে।
অনেকদিন ধরে একটি সোনার রেসলাইটের বড্ড আকাঙ্খা। অনেকদিনের শখ পূরণে গোধূলীর এ লগ্নে নীল শাড়ি, নীল চুরি পড়ে রিকশায় চড়া। পরিচয়টা বলা যাক -
ভবগুরে এ পৃথিবীর বুকে আমার আপন বলতে কেউ ই নেই। পরিচয় বলতে এক সাধারণ মানবী। পৃথিবীর বুকে কপাল পোড়া এক জাতির অন্যতম। অবহেলার যাদের সীমা পেরিয়ে। হ্যাঁ; মাতা-পিতাহীন এক অনাথ আমি। মামার কাছেই বড় হওয়া। সেও ২ বচর হলো অভিমানের নীল বুকে চেপে না ফেরার দেশে পাড়ি জন্মালেন। আমার বলতে আমি ছাড়া চারকূল শূণ্য।
বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তিগুলো অনাথ আশ্রমে বিলিয়ে একটি বাড়ি আর চলার মত কিছু টাকাকড়ি রেখেছি। পড়াশুনা আর জব এই আমার জীবন যাত্রা। কখনো কেউ লাইফে আসতেও চাইনি, অনাথ বলে কথা। আমিও যাই নি, নিজের মত চলি মাঝে মধ্যে ছোট্টখাট্টো শখ পূরণ করি।
এতক্ষণে পৌঁছে গেলাম। ভাড়া চুকিয়ে দোকানের দিকে পা বাড়াব, তখনই ছোট্ট হাতের আলতো ছোঁয়ায় পেছন ফিরে দেখি! জীর্ণ শীর্ণ পোষাকে ধূলা-বালি মাখা এক রাজকন্যা। সব রাজকন্যারা রাজপ্রাসাদে নয়, কিছু রাজকন্যা রাস্তায় ও হয়। মায়ায় পড়ে গেলাম রাজকন্যার, একি ছোট্ট মায়ামুখে জল। ফুটফুটে এ বাচ্চাটা বলে উঠল -
দিদিকা, আমার ভাইয়া, ভাইয়া..... কান্নার কারণে বলতে সক্ষম হল না।
বলেন রাজকন্যা...
রাজকন্যা নয়, নীলা।
আচ্ছা, বলো নীলা... কী হয়েছে? কাঁদছো কেনো?
আমার ভাইয়া সকাল থেকে কথা বলে না, খুব ক্ষিদে পেয়েছে, খাবারও আনতে যায় নি আজ। চোখ ডলতে ডলতে বলল নীলা।
আচ্ছা চলো, দেখি তোমার ভাইয়ার কী হয়েছে।
কিছুটা মনমরা ছিলো, যাবার সময় পেছন ফিরে দেখছিলাম। কাঁচের ওপাশে থাকা এতদিনের শখটা। মনে মনে ভাবলাম অন্য কোনদিন পূরণ হবে। নীলা আমার হাতটি ধরে, কোন এক বস্তির অলিতে গলিতে ডুকতে লাগল। কী সব বাজে গন্ধ, মুখে আঁচল চেপে যেতে লাগলাম। যেতে যেতে একটি চিপা গলির মুখে নীচে পরে থাকা একটি ৭-৮ বছরের বাচ্চার দিকে আঙুল তুলে ইশারা করল, ৪-৫ বছর বয়সী নীলা - আমার ভাইয়া।
কাছে গিয়ে মাথা কোলে তুলে দেখি কী ভিষন জ্বরে কাতর। কোনভাবে হসপিটালের দিকে ছুটলাম। পথিমধ্যে বস্তির লোকেরা কেমন করে দেখছিল, মন হচ্ছে কোন শো চলতেছে। প্রচন্ড রাগ জমেছিল, এমন অসুস্থ শিশুকে কেউ ডক্টরের কাছে তো নিল না, এখন আবার কী অসহ্যভাবে চেয়ে দেখতেছে।
ডক্টর বলল আর কিছুক্ষণ দেরী করলে প্রাণে বাঁচত না। ডক্টরের খরচ, ঔষুধ খরচ মিলিয়ে গুনতে হল রেসলাইটের অর্ধ কড়ি। রেসলাইট পরেও পাবো, কিন্তু এ অনাথের ভাইটি না থাকলে এ যে, আরো অনাথ হবে। নিজেকে শান্তনা বানী শুনালাম। আমিও অনাথ, তাই অনাথের হাহাকার যন্ত্রণাটা বুঝি।
নীলাকে নিয়ে বাসায় আসলাম। আসার পথে দু'ভাইবোনের জন্য কিছু কাপড় কিনলাম। নীলাকে কাপড় পড়িয়ে ফ্রেশ করে বসিয়ে রন্ধনশালায় গেলাম। কিছু খাবার পাকিয়ে দু'জনে খেয়ে বাকী খাবার টিফিন বক্সে ভরে আবার রওয়ানা হলাম হসপিটালে। সারা রাত সেখানে পার করে পরদিন দু'জনকে নিয়ে বাড়ি ফিরলাম।
কয়েক মাস পর.....
স্কুল গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। ছুটির ঘন্টা পড়তেই দু'টো ছোট্ট প্রাণ আমার দিকে ছুটে এলো। এসেই নিলীমা দিদিকা বলে জড়িয়ে ধরল। হ্যাঁ, এখন আমরা তিন ভাইবোন। ওরা আমার, আমি ওদের।
নিলীমা, নাবীদ, নীলা।
বড়, মেজো, ছোট। হ্যাপি ফ্যামিলি।
এখন ওরাই আমার সুখ, ওরাই আমার অসুখ। এ যেন এক বিকেলের পরম পাওয়া।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now