বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

গরিবের ঈদ

"শিক্ষণীয় গল্প" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান মনির চৌধুরী (০ পয়েন্ট)

X ঈদের দিন সকাল বেলা অবুঝ বালক নুমান দৌড়ে গিয়ে তার মাকে বলছে, মা ও মা, পাশের বাড়ি থেকে মাংস পোলাওয়ার ঘ্রাণ ভেসে আসছে আমাদের বাড়িতে। তাই আজ আমারও খুব ইচ্ছে করছে পেট ভরে মাংস পোলাওয়া খেতে। তুমি আজকে আমাদের জন্য মাংস পোলাওয়া রান্না কর না মা। -কি কইলি নবাবের বেটা সাতসকালে মাংস পোলাওয়া খাওয়ার বায়না। আমার সামনে থেকে তাড়াতাড়ি সরে যা। নয়তো গালে কষে দুই থাপ্পর মারব। এক টাকা ইনকাম করার ক্ষমতা নেই, যখন-তখন ভাল-মন্দ খাবার খাওয়ার বায়না। মায়ের কাছে বকাবকি শুনে অবুঝ বালক নুমান মন খারাপ করে তার বড় বোন হালিমার কাছে চলে যায় এবং সে তার বড় বোন হালিমাকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে। পক্ষান্তরে নুমানকে বকাবকি করার পর নুমানের মাও নীরবে-নিভৃত্বে কাঁদে। আর দু'চোখের অশ্রু শাড়ির আঁচল দিয়ে মোছে। এছাড়া যে নুমানের মায়ের কিইবা করার আছে। বহুদিন আগে স্বামী মারা গেছে। যার কারণে স্বামীর অবর্তমানে নুমানের মাকে পরে বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাতে হয়‌। কোনরকম খেয়ে পড়ে দিন কাটাতে হয়। অকালে স্বামীকে হারিয়ে তাদের মত গরিবদের কপালে সুখ বলে কিছুই নেই। এদিকে সাতসকালে মহা খুশির দিন ছোট ভাইকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে দেখে হালিমা নুমানকে বলছে, নুমান কি হয়েছে তোর? এভাবে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছি কেন? মা তোকে বকাবকি করছে নাকি? আমার কাছে আয় তোকে রূপকথার গল্প শুনাই, তাহলে তোর মনটা ভালো হয়ে যাবে। এই বলে হালিমা নুমানকে পাশে বসিয়ে রূপকথার গল্প বলতে থাকে। হালিমার কাছে গল্প শুনার এক পর্যায়ে নুমানের অচেনা মলিন কষ্টের গ্লানি এক নিমেষে দূর হয়ে যায়। আনন্দে নেচে উঠে তার অবুঝ মন। সে মনে মনে ভাবতে থাকে, মা বকাবকি করছে তাতে কি হয়েছে ? আপু তো আমাকে আদর করে কি মজার গল্প শুনাচ্ছে, এতেই আমি খুব খুশি। এই কথা ভাবতে ভাবতে নুমান তার বড় বোন হালিমার কোলে কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়লো। তারপর সে ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্নের মাধ্যমে পরীর দেশে চলে গেলো। আর পরীর দেশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো। এদিকে পরীর দেশে মানুষের আগমন দেখে একটা পরী নুমানের কাছে ছুটে এলো এবং নুমানকে পরীটা বলল, তোমার নাম নুমান তাই না? তোমার আজকে খুব মন খারাপ? ঈদে বুঝি তোমার কোনকিছু কেনাকাটা করা হয়নি? তোমাদের বাড়িতে ভালো-মন্দ খাবারও জোটেনি। তোমার মা, তোমাকে খুব বকাবকি করেছে? পরীটার মুখে নুমানের মন খারাপের কথা শুনে নুমান হতবাক হয়ে যায় এবং সে সাথে সাথে পরীটাকে জিজ্ঞাসা করে, তুমি আমার সম্পর্কে এতো কিছু জানলে কি করে? তখন পরীটা নুমানকে বলে, আমি অদৃশ্য হয়ে তোমাদের মনের কথা সব বুঝতে পারি নুমান। সকাল বেলা মাংস পোলাওয়া খাওয়ার কথা শুনে তোমার মা যখন তোমাকে বকাবকি করছিল, আমি তখন বাতাসী হয়ে তোমাদের দৃষ্টির আড়াল থেকে সব শুনছিলাম। এই জন্য তুমি মোটেও দুঃখ করো না। আমি কালকেই তোমার জন্য ঈদের উপহার দিয়ে আসবো। স্বপ্নের মধ্যে পরীর সাথে কথোপকথনের এক পর্যায়ে বড় বোন হালিমার ডাকে ঘুম ভেঙ্গে গেল নুমানের। তখন ঘুম থেকে উঠে সেই মুহূর্তে নুমান অবাক হয়ে গেল। এদিক ওদিক তাকিয়ে খুঁজতে থাকলো পরীটাকে। কোথায় গেল সেই সুন্দর পরীটা? কোথায় তার ঈদের উপহার‌? অতঃপর কোনকিছু না পেয়ে নুমান বুঝতে পারলো, সে ঘুমের মধ্যে পরীদেরকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছে। তখন নুমান মুচকি হাসি দিয়ে হাত-মুখ ধোয়ার জন্য বাইরের দিকে গেল। তারপর নুমান যেই হাত-মুখ ধোয়া শুরু করল, তখন তার মা রান্না ঘর থেকে গলা হাঁকিয়ে নুমানকে ডাক দিল, “বাবা নুমান, তাড়াতাড়ি রান্না ঘরে ছুটে আয়। দেখে যা কারা এসেছে তোর জন্য ঈদের উপহার দিতে।” ঈদের উপহারের কথা শুনে নুমান দৌড়ে ছুটে গেল রান্না ঘরে। রান্না ঘরে গিয়ে দেখে কয়েকজন অপরিচিত লোক ঈদের উপহার নিয়ে ঘরের দোয়ারে দাঁড়িয়ে আছে। অপরিচিত লোকগুলো তখন নুমানের হাতে উপহারগুলো তুলে দিয়ে বলল, “ছোট ভাই নুমান, ঈদ উপলক্ষে আমাদের পক্ষ থেকে তোমার জন্য সামান্য উপহার দিয়ে গেলাম। বেঁচে থাকলে তোমার সাথে আগামীতে আবার দেখা হবে।” তারপর অপরিচিত লোকগুলো বিদায় নিয়ে নুমানদের বাড়ি থেকে চলে গেল। অপরিচিত লোকগুলো চলে যাওয়ার পর নুমান উপহারের ব্যাগ খুলে দেখলো তাতে শার্ট-প্যান্ট রয়েছে। সে তখন অবাক হয়ে মনে মনে বলতে থাকে, ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে যা দেখলাম তাই তো সত্যি হয়ে গেল। হঠাৎ করে পরীদের মত ঈদের উপহার নিয়ে গরিবের ঘরে হাজির হয়েছে কিছু অপরিচিত লোক। এই অপরিচিত লোকগুলো কারা? আর কেনই বা হতদরিদ্রদের মাঝে উপহার দিয়ে বেড়াচ্ছে? আমার মনে হয় নিশ্চয়ই কোন মানবতার সেবায় নিয়োজিত দল? তা না হলে আমাদের মত গরিব অসহায়দের মাঝে বিনা স্বার্থে কেউ উপহার দিয়ে বেড়ায়? যাই হোক, এই সব কথা ভাবার পর নুমান গোসল করে উপহার কৃত শার্ট-প্যান্ট পরিধান করলো। নতুন শার্ট-প্যান্ট পরিধান করার পর নুমানকে বেশ স্মার্ট লাগছিলো। কেননা বহুদিন পর সে নতুন শার্ট-প্যান্ট পরিধান করেছে। আর তা সম্ভব হয়েছে অপরিচিত লোকগুলোর কারণে। যারা সাতসকালে নুমানকে ঈদের উপহার দিতে এসেছিল স্বপ্নের পরী হয়ে। ঠিকানাঃ দামুড়হুদা, চুয়াডাঙ্গা


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ২০৯৪৩ জন


এ জাতীয় গল্প

→ গরিবের চাপা কান্না
→ গরিবের মেয়ে আর বড়লোকের ছেলের প্রেমের গল্প
→ গরিবের ঈদ
→ মৃত্যু ধনী-গরিবের পার্থক্য বোঝে না
→ গরিবের ঈদ
→ গরিবের কস্ট
→ গরিবের সন্তান
→ গরিবের ভালোবাসা.......
→ গরিবের ছেলে এখন শিক্ষক....
→ গরিবের বেচে থাকাই আনন্দের
→ গরিবের ভালোবাসা

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now