বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

শীতের ছুটি

"ছোট গল্প" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান মনির চৌধুরী (০ পয়েন্ট)

X রূপসী বাংলায় চুপি চুপি আবার ফিরে এসেছে শীত। আর এই শীতের সকালে চারিদিকে ঘন কুয়াশায় ঘিরে রেখেছে সবুজ দিগন্ত। আঁকাবাঁকা মেঠো পথ। দিনরাত টিনের চালে টুপটাপ করে পড়ছে শিশির ফোঁটা। হিমেল বাতাসের আলতো ছোঁয়ায় শিশিরকণা গুলো আপন করে নিচ্ছে সরিষার ফুল। কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশে মাঝে মধ্যে মাথা উঁচু করে সকালের রবিটা মিটিমিটি হাসছে। শিশিরভেজা সবুজ পাতার ফাঁকে পাখিরা কিচিরমিচির সুরে জানান দিচ্ছে শুভ সকাল। আর সেই পাখির ডাকে প্রতিদিন সুপ্রভাতে ঘুম ভেঙ্গে যায় আবিরের। তারপর আবির ঘুম থেকে উঠে তাড়াহুড়ো করে ফ্রেশ হয়ে নেয় এবং বই খাতা নিয়ে পড়ার টেবিলে বসে। পড়ার টেবিলে বসে প্রথমে সে স্কুল ব্যাগ থেকে বাংলা বই বাহির করে। তারপর জাতীয় কবি কাজী নজরুলের লেখা 'আমি হব সকাল বেলার পাখি' কবিতাটি পড়ে। কারণ সুপ্রভাতে আবিরের ঘুম ভাঙ্গে পাখির ডাকে। এই জন্যই 'আমি হব সকাল বেলার পাখি' কবিতাটি আবিরের খুব প্রিয়। প্রতিদিন আবির বাংলা বইয়ের এই কবিতাটি কয়েক বার পাঠ করে অন্যান্য বিষয়গুলো মনোযোগ সহকারে পড়ে। পড়ালেখা শেষ হয়ে গেল আবির বাবা-মায়ের সাথে সকালের নাস্তা করে। তারপর সকালের নাস্তা খেয়ে সে স্কুল ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে প্রথমে তার বন্ধু আসিফদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। আসিফদের বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছানোর পর আবির গলা হাঁকিয়ে আসিফকে ডাক দেয়, আসিফ আজকে স্কুলে যাবি না, অনেক বেলা হয়ে গেছে তাড়াতাড়ি স্কুলে চল। বেশি দেরি হয়ে গেলে হেড স্যার আবার বকাবকি করবে। কিন্তু সেদিন আসিফ রুম থেকে বাহির হয়ে আবিরকে বলল, বন্ধু আজকে আমি স্কুলে যাবো না। আগামীকাল থেকে তো স্কুল বন্ধ থাকবে। তখন আবির আসিফকে জিজ্ঞেসা করল, “বন্ধু কেনে আগামীকাল থেকে স্কুল বন্ধ থাকবে?” আসিফ সেই মুহূর্তে আবিরের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে বলল, “আগামীকাল থেকে ১৫ দিন শীতকালীন ছুটি। এই জন্য আমাদের স্কুল বন্ধ থাকবে।” ওও তা না হয় বুঝলাম, তুই আজকে কি কারণে স্কুল যাবি না? সাথে সাথে আসিফ উত্তর দিল, “আমি শীতকালীন ছুটি কাটাতে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছি। এই জন্য আজকে আর স্কুলে যাব না। তুই আজকে একা একা স্কুলে যা বন্ধু।” আসিফের কথা শুনে আবির খুব আনন্দিত হয়। সে মনে মনে ভাবতে থাকে, আসিফের মত আমিও এবার গ্রামের বাড়িতে শীতকালীন ছুটি কাটাতে যাবো। গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দাদির হাতের তৈরি ভাপা পিঠা, পুলি পিঠা মজা করে খাব । রাতের বেলায় দাদাভাইয়ের কাছে মজার মজার গল্প শুনবো। গ্রামের মুক্ত আকাশে পাড়ার দুষ্টু ছেলেদের সাথে ঘুড়ি উড়াব। প্রজাপতির পিছে পিছে ছুটে যাব দূর থেকে বহুদূর। মাঝির নৌকার চূড়ায় বসে সারাদিন নদীর বুকে ভেসে বেড়াব। কত মজাইনা করব গ্রামের বাড়িতে গিয়ে। শহরের এই বন্দি কারাগারের আর থাকতে মন বলছে না। আপাতত পনেরো দিন তো গ্রামের মুক্ত আকাশ, হিমেল বাতাস উপভোগ করতে পারব। এই আশা-প্রত্যাশা মনের মাঝে রেখে, আবির পায়ে হেঁটে কিছুক্ষণের মধ্যে ধীরেসুস্তে স্কুলে পৌঁছায়ে গেল। সে স্কুলে পৌঁছে দেখে অন্যদিনের তুলনায় আজকে ছাত্রছাত্রী কম এসেছে। স্কুল একেবারে ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। তার ক্লাসের পঞ্চাশ জন সহপাঠীদের মধ্যে মাত্র দশজন সহপাঠী শ্রেণীকক্ষে বসে আছে। তখন স্কুলের এই দৃশ্য দেখে আবির মনে মনে বলছে, আসিফ তো ঠিকই বলেছে। আজকে থেকে পনেরো দিন স্কুল বন্ধ থাকবে। সেই জন্য আজকে স্কুল এত ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। আসিফের মত সবাই মনে হয় গ্রামের বাড়িতে শীতকালীন ছুটি কাটাতে গেছে। এই সব কথা বলে আবির স্কুল ব্যাগ পড়ার টেবিলে রেখে ক্লাসের ঘন্টা বাজার অপেক্ষায় বসে থাকল। একটু পর ক্লাসের ঘন্টা বেজে উঠল। ক্লাসের ঘন্টা শুনে প্রধান শিক্ষক ক্লাস নিতে আসলেন। আবির সহ তার সহপাঠীরা প্রধান শিক্ষককে দাঁড়িয়ে সংবর্ধনা জানাল। তখন শিক্ষক মহোদয় আবিরদের নিজ নিজ আসনে বসতে বললেন। তারপর তিনি আবিরদের পর্যায়ক্রমে নাম ডাকলেন। নাম ডাকার পর প্রতিদিনের ন্যায় পাঠদান শুরু করলেন। পাঠদান শেষ করে তিনি বললেন, আগামীকাল থেকে তোমাদের স্কুল শীতকালীন ছুটির জন্য পনেরো দিন বন্ধ থাকবে। অতঃপর শীতকালীন ছুটি ঘোষণা করে শিক্ষাক মহোদয় ক্লাস থেকে চলে গেলেন। স্কুল ছুটির কথা শুনে আবিরের মন আনন্দের ভরে যায়। সে ভাবতে থাকে শীতকালীন ছুটির কথা বাড়িতে গিয়ে আম্মুকে বলতে হবে। যাতে আম্মু, আব্বুর সাথে আলোচনা করে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার রাজি করাতে পারেন। আবির এই কথাগুলো ভাবতে না ভাবতেই, কিছুক্ষণ পর স্কুলের ছুটির ঘন্টা বেজে উঠল। তড়িঘড়ি করে আবির স্কুল ব্যাগ কাঁধে নিয়ে খুশি মনে বাড়ি ফিরে আসল। আবির বাড়ি ফেরার সাথে সাথে সে হাসি মুখে চিৎকার দিয়ে বলল, আম্মু আমাদের স্কুল শীতকালীন ছুটির জন্য পনেরো দিন বন্ধ থাকবে। কি মজা ! কি মজা! এবার আমি তোমাদের সাথে গ্রামের বাড়িতে শীতকালীন ছুটি কাটাতে যাবো। অনেক কয় বছর যাবত তোমরা আমাকে কোথাও বেড়াতে নিয়ে যাওনি। এবার কিন্তু আমাকে অবশ্যই গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে নিয়ে যেতে হবে। আব্বু সন্ধ্যার দিকে বাড়িতে ফিরে আসলে, তুমি কিন্তু আব্বুকে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার কথা বুঝিয়ে বলবে। তখন আবিরের আম্মু মৃদু হাসি দিয়ে বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে বাবা, আগে তোমার আব্বু বাড়িতে ফিরে আসুক। অবশ্যই গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার কথা তোমার আব্বুকে বুঝিয়ে বলব।” সেই যে কবে তোমার দাদা-দাদিকে গ্রামের বাড়িতে রেখে শহরে চলে এসেছি, আজও গ্রামের বাড়িতে ফিরে যাওয়া হয়নি। আমারও খুব ইচ্ছে করছে, তোমার দাদা-দাদিকে দেখার পাশাপাশি গ্রামের সহজ-সরল মানুষের মুখ দেখতে। পল্লীগাঁয়ের সবুজ-শ্যামল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে। এবার তুমি যখন বলছ, অবশ্যই আমরা এবার গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যাবো। এদিকে বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হল, আবিরের আব্বু বাড়িতে ফিরে আসল। সেই মুহূর্তে আবির সাহস করে তার আব্বু দেখে বলল, “আব্বু আমাদের স্কুল শীতকালীন ছুটির জন্য ১৫ দিন বন্ধ থাকবে। এবার কিন্তু আমাকে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে নিয়ে যেতে হবে।” তখন আবিরের মুখে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার কথা শুনে আবিরের আব্বু বললেন, “খুব ভালো একটা প্রস্তাব দিয়েছো বাবা আবির, অবশ্যই আমরা আগামীকাল তোমার দাদা-দাদির গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যাবো। তুমি রাতের খাবার খেয়ে তোমার যাবতীয় পোশাক-আশাকগুলো ব্যাগের মধ্যে গুছিয়ে রাখবে। আমরা আগামীকাল খুব ভোরে তোমার দাদা-দাদির বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হবো।” আবির তখন দাদা-দাদির গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার কথা শুনে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায়। মনে মনে বলতে থাকে কি মজা! কি মজা! অনেক দিন পর শীতকালীন ছুটি কাটাতে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যাবো। সেখানে মজা করে দাদুর সাথে গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ঘুরে ঘুরে দেখব। ঠিকানাঃ দামুড়হুদা,চুয়াডাঙ্গা


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৫৬৭ জন


এ জাতীয় গল্প

→ শীতের ছুটির

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now