বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

বটমূল

"অদ্ভুতুড়ে" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান রিদা ‎ (০ পয়েন্ট)

X ছুটির ঘন্টা পড়ে গেল.... আমি আমার আপুর জন্য অপেক্ষা করছিলাম, আপু এসে আমাকে বলল, 'তুমি একটু অপেক্ষা করো প্রাকটিকাল সাইন করাতে হবে। " কি আর করার এখন আপুর ছুটির জন্য অপেক্ষা করতে হবে। স্কুলে একটি বটমূল রয়েছে আমাদের সবার পছন্দের জায়গা,বটমূলের নিচে ব্যাগটা খুলে বসলাম। ভাবলাম কবিতা লিখি কিন্তু কবিতার বিষয়বস্তু খুঁজে পাচ্ছিলাম না। হঠাৎ করে মনে পড়ল, সবাই বলে বটমূলে নাকি ভূত আছে! সত্যি কি তাই!? মাথায় হুট করে এই কথাটা কেন আসল ঠিক বুঝলাম না। ধীরে ধীরে সব ছাত্র -ছাত্রী , শিক্ষক চলে যেতে থাকল, একসময় সবাই চলে গেল। চারদিক সম্পূর্ণ ফাঁকা হয়ে গেল, আমি একাই বসে রইলাম বটমূলের নিচে। বটমূলের চারপাশে অনেকগুলো বসার সিট রয়েছে। কয়েকজন অ্যান্টি আসল সেগুলো পরিস্কার করার জন্য। অ্যান্টি করবেন সেজন্য আমাকে অন্য জায়গায় যেতে বললেন, আমি বটমূলের পাশে আমাদের স্কুলের পুকুরের পাশে এসে দাঁড়ালাম। পুকুরে সাদা রাজহাঁসগুলে সাঁতার কাটছে, পুকুরের ঠিক পাশ ঘিরেই রয়েছে ফুলের বাগান। অনেকগুলো লাল গোলাপ ফুটেছে, বইছে ঠান্ডা শীতল হাওয়া, খুব সুন্দর পরিবেশ ছিল। শান্তিময় এক অপরূপ পরিবেশ। অ্যান্টি সিটগুলো লো পরিষ্কার করে আমাকে আবার এসে বসতে বললেন। আমি আবারও কবিতা লিখার ডাইরিটা হাতে নিয়ে বসে পড়লাম। কি লিখব, কি বিষয়ে লিখব মাথায় কিছুই আসছিল না। ছয় ঘন্টা ক্লাস করার পর আর এনার্জি থাকে না কিছু করার। তেমন কিছু মাথায় আসছিল না তাই ডাইরিটা বন্ধ করে চারদিকে তাকালাম, সব ফাঁকা ফাঁকা বইছে হাওয়া... আকাশের দিকে তাকালাম, বটগাছের ডাল-পাতা আকাশকে আড়াল করে রেখেছে। শুধু ডাল-পাতার মাঝের কিছু ফাঁক দিয়ে রোদের কিরণ এসে পড়েছে।বাতাসে গাছের পাতাগুলো ঝরে পড়ছে। সব ঠিকই চলছিল কিন্তু হঠাৎ করেই কেন জানি মনে হলো আমার পিছনে হয়তো কেউ দাঁড়িয়ে আছে , পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখি কেউ নেই। এমনকি আমার চারপাশেও কোনো মানুষ নেই। চারপাশে নিরবতা বিরাজমান।একেবারেই নিস্তব্ধ। সেই মনোরম শান্ত পরিবেশ নয় কপমন জানি ভুতুড়ে শান্ত পরিবেশ। আমি উঠে দাঁড়ালাম, একটু হাঁটাহাঁটি করি।আবারও পুকুরের পাশে এসে দাঁড়ালাম, সাদা রাজহাঁসগুলোও আর পুকুরে নেই। হঠাৎ মনে হলো আমার পিছনে হয়তো কেউ আছে কিন্তু পিছনে ঘুরে কাউকে দেখতে পেলাম না। আনার অসস্তি হতে লাগল। ভাবলাম আপুর কলেজ ভবনের সামনে যাই, আমি আমার বসার জায়গাটার দিকে তাকালাম, দেখলাম একজন লোক আমার কবিতার ডাইরিটা হাতে নিয়ে দেখছে।দূর থেকে ভালো করে লোকটিকে দেখতে পেলাম না, মনে হচ্ছিল ওই জায়গাটা কালো কিছু দিয়ে ঘেরা। মানে জায়গাটা কালো ধোঁয়াশা লাগছিল কিন্তু কিছুক্ষণ আগেই তো সব ঠিক ছিল। আমার মনের ভুল ভেবে আমি জায়গাটার দিকে অগ্রসর হই। যেতে যেতে আমি হোঁচট খেয়ে পড়ে যেতে ধরি, কোনোমতে নিজেকে সামলে নিলাম। ওই জায়গাটার দিকে চোখ পড়তেই দেখলাম ওখানে কেউ নেই। তাহলে আমি যে দেখলাম! আমি ওই জায়গায় গিয়ে ভালো করে চারপাশে দেখলাম কাউকেই দেখতে পেলাম না। হয়তো আমি ভরদুপুরে সব ভুলভাল দেখছি! আমি ওই জায়গা থেকে চলে আসছিলাম এমন সময় পিছন থেকে কেউ আমাকে ভারি গলায় ডাক দিলো রি..দা.. বলে। আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। আমি কি ভুল শুনলাম? নাকি সত্যিই কেউ আমাকে ডেকেছে! কেন জানি আমার আর পিছনে ঘুরার সাহস হচ্ছিল না। আমি আবারও মনের ভুল ভেবে চলে যেতে লাগলাম। আবার কেউ পিছন থেকে বলল," আরে শুনো..রিদা!" আমি আবার দাড়িয়ে গেলাম, পিছন থেকে শুনতে পেলাম.. " এই যে তোমার ডাইরিটা...." আমার ডাইরি? ও হ্যাঁ, আমার কবিতার ডাইরিটা, আমি ব্যাগে ঢুকাতে ভুলো গিয়েছি। আমি এবার পিছনে ঘুরলাম। দেখি একজন অল্প বয়স্ক লোক দাঁড়িয়ে, কালো রঙের পাঞ্জাবি -পায়জামা পড়া আর গায়ে জড়িয়ে রেখেছে এক লম্বা চাদর। মুখের দাঁড়ি ও মাথার চুলগুলোও বেশ বড় বড়! এই অদ্ভুত লোক আমাদের স্কুলে কিভাবে আসলো? আমি বললাম, 'জি আমাকে ডাকছেন?' 'হ্যাঁ তোমার নামই তো রিদা! ' 'হুমম কিন্তু আপনি আমার নাম জানলেন কীভাবে? ' 'এই যে তোমার ডাইরি! ' উনি আমাকে আমার কবিতার ডাইরিটা এগিয়ে দিলেন , বললাম, ' হ্যাঁ, এটা তো আমার ডাইরি! ' 'হুমম, নেও' আমি লোকটার থেকে ডাইরিটা নিয়ে নিলাম। 'তুমি কবিতা লিখো?' হ্যাঁ মোটামুটি ' 'তোমার কবিতাগুলো পড়লাম, ভালো লিখেছো' 'ধন্যবাদ কিন্তু আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না, আগে তো কখনো দেখিনি আপনাকে এই স্কুলে!' আমার প্রশ্ন উপেক্ষা করে লোকটি বলল, 'এই ভরদুপুরে এখানে কি করছো?স্কুল তো সেই কখন ছুটি হয়ে গেছে' 'কিছু না, আমার আপুর জন্য অপেক্ষা করছি' 'ওহহ' আমার কেমন জানি অদ্ভুত অনুভূতি হতে লাগল, গা ছমছম করছে, প্রখর রোদ থাকা সত্ত্বেও চারপাশের পরিবেশ কেমন শীতল হয়ে আসছিল।বাতাসও নেই। আমার তখন মনে হলো লোকটি হয়তো আমার ওই প্রশ্নটা শুনতে পারেনি আবার জিজ্ঞেস করি৷ আমি জিজ্ঞেস করতেই যাবো দেখি সামনে আর লোকটি নেই, কই গেলেন তিনি? এক নিমিষেই কই উধাও হয়ে গেলেন?! অদ্ভুত! খেয়াল করলাম কেউ আমার পিছনে দাঁড়িয়ে, ঘুরে দেখি লোকটি। আমি একটু চমকে উঠলাম। 'কি ভয় পেয়েছো নাকি খুঁকি?' খুঁকি?! উনি আমাকে খুঁকি বলল! আগের মানুষেরা অল্প বয়সী মেয়েদের খুকি বলত। এখনকার যুগে তো কেউ আর খুকি বলে সম্ভোদন করে না, তাই একটু অবাক হলাম। উত্তরে বললাম, 'ভয়? না ভয় পাবো কেন ? আমি ওতো ভয় টয় পাই না' 'তাই?' 'জি' 'ওহহ, তাহলে তুমি সাহসী খুকি বটে! আচ্ছা এই নেও চকলেট খাও' ' না আমি চকলেট খাই না' 'এ কেমন কথা তুমি চকলেট খাও না? সব খোকাখুকিরাই তো চকলেট পছন্দ করে, তুমি করো না?' 'না' লোকটি হেসে উঠলো, হাসতে হাসতে বললেন,'তুমি বুদ্ধিমানও বটে!' আমি আর কিছু বললাম না আমার খুব অসস্তি লাগছিল, কে এই লোক, কই থেকে আসছে , আমার সাথেই বা এতো কথা ধরছে কেন , খুব অদ্ভুত। ' কি ভাবো খুকি?' ' নাহ, কিছু না , আমি যাই আমার আপুর ছুটি হয়ে গেছে মনে হয় , আপু জানে না আমি এখানে আছি আমাকে খুঁজবে ' 'তোমাকে যেতে হবে না, তোমার আপু জানে তুমি এখানে আছো, তোমাকে নিতে সে এখানেই আসবে ' আমি অবাক হয়ে বললাম, 'আপনি কিভাবে জানলেন? ' লোকটি হেসে বলল,' আচ্ছা তোমার ক্ষিদে লাগেনি?' উনি আবার আমার প্রশ্ন এড়িয়ে যাচ্ছেন, আমি এবার সরাসরিই জিজ্ঞেস করলাম, ' আপনি বারবার মার প্রশ্ন এড়িয়ে যাচ্ছেন কেন?আপনি কিভাবে জানলেন আপু আমাকে নিতে এখানে আসবে?আপু তো জানে না আমি এখানে আছি আর আপনি কে? আপনার পরিচয় দিন!' লোকটি অদ্ভুতভাবে হাসল। আমি,' কি আজব, আপনি হাসছেন কেন?' লোকটি হাসতে হাসতে বললেন, 'খুকি তোমার নিশ্চয়ই ক্ষিদে পেয়েছে! 'আমি, 'মানে?'আমার মনপ হতে লাগল এই লোকটার মাথায় সমস্যা আছে নিশ্চয়ই, শুধু শুধু অযথা হাসতেছেন। উনি হাসতে হাসতে বললেন, ' আমি সব জানি! সব জানি! আমি এখানেই থাকি! ভালো থেকো খুকি, বিদায়....' আমি পুরাই অবাক হয়ে গেলাম, তারপর আমার চারপাশ কেমন জানি ধোঁয়াশা হয়ে গেল , লোকটাও মনে হলো হাওয়ায় মিশে গেল , নিমেষেই গায়েব! শুনতে পেলাম পিছন থেকে আপু আমাকে ডাকছে, ঘুরে দেখলাম সত্যিই আপু ডাকছে আমাকে। আমার চারপাশের পরিবেশটাও ঠিক আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে গেল, সেই অদ্ভুত অনুভূতিটাও আর আমার হচ্ছে না। সবকিছুই আগের মতো স্বাভাবিক। আমি আপুর সাথে সেখান থেকে চলে আসার সময় আরও একবার পিছনে ঘুরে তাকালাম কিন্তু কাউকেই আর চোখে পড়ল না, সবকিছু স্বাভাবিক। তাহলে এতোক্ষণ কি হলে আমার সাথে? কার সাথে এতো কথা বললাম আমি? কে ছিল সেই লোক? সব কি আমার মনের ভুল?আমার কল্পনা? কিন্তু কল্পনা এতোটা বাস্তবিক কেমনে হয়???


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৩২৪ জন


এ জাতীয় গল্প

→ রমনার বটমূলে

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
  • রিদা ‎رضا
    User ১ বছর, ১ মাস পুর্বে
    ধন্যবাদ

  • ‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎
    User ১ বছর, ৩ মাস পুর্বে
    Aree ota ami chilam

  • হৃদয়
    GJ Writer ১ বছর, ৩ মাস পুর্বে
    লেখনী ভালো হয়েছে,,, গল্পের প্লটটাও ভালো,,, পড়তেও আকর্ষনীয় লেগেছে,,, ভালো লাগল gjgjgj