বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
কাব্য-কথা(An Indistinct Love)_পর্ব ০৭
Written By: Jahid Hasan
ঝুম এক দৌড়ে কথার রুমে চলে আসে। কথা তখনও নিষ্তেজ শরীরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।ঝুম তার দুই কান ধরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। কান্নার কারনে ঝুম কথা বলতে পারছে না ঠিকমত।কথা ঝুম কে দেখে অভিমানে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। ঝুম কান ধরে কাঁদতে কাঁদতেই বলে,—""সরি আপু।""
কথা উঠে তার লেখার খাতা টা টেবিলের উপর থেকে নিয়ে আসে। তারপর সেখানে কিছু লিখে তা ঝুমকে দেয়। ঝুম লেখা গুলো পড়া শুরু করে,—""কথা বলবি না আমার সাথে।তোরা সবাই পঁচা, খুব পঁচা তোরা।আমায় শুধু মারিস। তুই, ভালো-মা, শয়তান বুড়ি আর ওই রাক্ষস টা সবাই পঁচা।সবাই খুবই পঁচা,আমায় শুধু মারে।""
কথা ফুঁপিয়ে কাঁদছে।আর ঝুম ফুঁপিয়ে উঠে।তার ভিতর টা ছাড়খার হয়ে যাচ্ছে কথার কষ্ট দেখে। ঝুম ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়েই বলে,—""সরি আপু,সত্যি আমরা খুবই পঁচা রে আপু,তোকে শুধু কষ্টই দেয়। তোর মুখে হাসি ফোটাতে আমরা ব্যর্থ। কিন্তু একদিন দেখবি একটা রাজকুমার এসে তোকে রাজারানি করে তার রাজমহলে নিয়ে যাবে।এই রাক্ষসপুরী থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যাবে তার রাজপুরীতে।তোকে তার ভালবাসার চাদরে মুড়িয়ে রাখবে আর তোর গায়ে একটা ফুলের টোকা ও দিতে দিবে না,মারের আঁচর তো দুরের থাক। সেখানে তোর কোন দুঃখ থাকবে না। থাকবে শুধু সুখ আর ভালবাসা। কিন্তু এখন যদি আমাকে ক্ষমা করে দিস তাহলে এত্তগুলা চকলেট আর আইসক্রিম এনে দিব।বল আমায় ক্ষমা করে দিয়েছিস।""
আইসক্রিম আর চকলেট এর কথা শুনে কথার মুখে হাসি ফুটে উঠে। কথার মুখে হাসি দেখে ঝুমের মুখেও হাসি ফুটে উঠে। ঝুম বুঝে গেছে কথা ওকে ক্ষমা করে দিয়েছে।দুই বোনের চোখে জল আর ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি পৃথিবীর সুন্দরতম দৃশ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম।
ঝুম সাথে সাথেই ফ্রিজ থেকে দুইটা কোণ আইসক্রিম আর ওর রুম থেকে একগাদা চকলেট নিয়ে আসে তারপর দুই বোন আইসক্রিম আর চকলেট গুলো খেতে থাকে।
দুর থেকে মিসেস মাহাবুব সবকিছুই দেখেন। ওনারও চোখে জল আর ঠোঁটের কোণে প্রশান্তির হাসি। মিসেস মাহবুব মুখে হাসি রেখেই ভাবেন,—""কতটা অবুঝ হলে কয়েকটা চকলেট আর আইসক্রিম এর জন্য সবকিছু ভুলে যেতে পারে এমনকি নিজের উপর যে কতবড় কলঙ্কের দাগ পড়তে যাচ্ছিলো তাও ভুলে গিয়ে খুব সহজেই ক্ষমা করতে পারে। সৃষ্টিকর্তা হয়তো ওর কষ্ট গুলো কমানোর জন্যই ওকে এই রকম অবুঝ বানিয়েছে সাথে বোবাও বানিয়েছে যেন ওই সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কাউকে অভিযোগ দিতে না পারে।
মেয়েটা তো আর ছোট থেকে কম কষ্ট পাই নি।""ঝুমের জন্যেও মিসেস মাহবুব গর্ববোধ করেন। আজকালকার নিজের ভাই বোনেরা একে অপরকে সহ্য করতে পারে না। জমিজমা,অর্থসম্পদ এমনকি কাপড়চোপড় নিয়েও নিজের আপন মায়ের পেটের ভাই আর বোনের সাথে ঝগড়া করে। সেখানে কথা আর ঝুমের কত মিল। ওদের দেখে মনে হয় না যে ওরা চাচাত বোন বরং মনে হয় নিজের আপন দুই বোন। ঝুম তো কথার ন্যাওটা আর কথা পুরাটাই তার বার্বি ডলের উপর নির্ভরশীল।
কথা পুরোনো কথা গুলো ভাবছিল তখনই ওর সামনে তুরি বাজায় কাব্য।
—""কি হলো??তোমার কি বাসার কথা মনে পড়ছে। বাসায় যেতে চাও??""
কথা ডানে বামে মাথা ঝাঁকিয়ে না বোঝালো। কাব্য আর কিছু না বলেই বেরিয়ে গেল।আর কথা তার ভাবনার সাগরে আবার ডুব দিল,
সে ওই রাক্ষস পুরীতে আর ফিরে যাবে না। শুধু তার রাজকুমার কে বলে বার্বি ডলকে এখানে নিয়ে চলে আসবে,সে তো তার বার্বি ডল ছাড়া থাকতেই পারে না। বার্বি ডল ছাড়া সে কার সাথে খেলবে??
কথা কাব্যের নাম রাজকুমার দিয়েছে, শুধুই তার রাজকুমার।
প্রেম-ভালবাসা কি?? ভালবাসার অনুভূতি কেমন তা সে জানে না। এগুলো তার অবুঝ মস্তিষ্কে কখনোই ঢুকে নি। ভালবাসার অনুভূতি যে কতটা স্পর্শকাতর তা বোঝে না কথা।
তবে সে এইটুকু বুঝতে পেরেছে কাব্য তার আশেপাশে থাকলে তার খুব ভালো লাগে।তার কাছে নিজেকে সবচেয়ে নিরাপদ মনে হয়।কাব্য যতটা সময় ওর সাথে থাকে পুরোটা সময় খুব ভালো লাগে।
ঝুম মাঝে মাঝে বলত একদিন তোর জন্য ঘোড়ায় চড়ে রাজকুমার আসবে আর তোকে নিয়ে যাবে তার রাজপুরীতে।কথা এই সবের কিছুই বুঝত না। তখন সে টিভিতে দেখা সিনড্রেলার রাজকুমারের কথা ভাবত। হয়তো তার রাজকুমারও সিনড্রেলার রাজকুমারের মত হবে।তাই ও যখন বাইরে বের হত সবার মুখের পানে চেয়ে থাকত। কিন্তু কারো মাঝে তার রাজকুমার কে দেখতে পেত না। খুব বিরক্ত হত সবার উপর।কই এদের কাউকে দেখে তো রাজকুমার মনে হয় না।কেউ তাক তো কেউ মোটা,কেউ বেটে আবার কেউ কালো।এরা রাজকুমার হলে কেমন হতো ভেবেই ওর হাঁসি চলে আসে।ও তো টিভিতে দেখেছে রাজকুমারকে দেখতে অনেক সুন্দর লাগে। রাজকুমার অনেক সুন্দর সুন্দর পোশাক পড়ে।আর রাজকুমার ইয়া লম্বা হয়। কথার মনে হয় রাজকুমার এত লম্বা হয় কেন,তালগাছের মত?? আর অনেক সাদা হয় ভূতের মত। তবুও কেন জানি, রাজকুমার কে ওর খুবই ভালো লাগে খুবই। কিন্তু এতদিনেও সে রাজকুমারের দেখা পাইনি।তাহলে বার্বি ডল কি ওর সাথে মজা করেছে?? পঁচা একটা মেয়ে। শুধু সেই না সবাই পঁচা সবাই এমনকি রাজকুমারও পঁচা।তারপর আবার ভাবে,না তার বার্বি ডল তার সাথে মজা করবে না।হয়তো ওর রাজকুমার অনেক দুর থেকে আসছে। তাই তো রাজকুমারের আসতে দেরি হচ্ছে।এটা ভেবেই খুশিতে মন ভরে উঠে কথার।
আর কাল তো তার রাজকুমার কে পেয়ে গেছে কথা। কাল যখন খিদে সহ্য করতে না পেরে ওই হোটেল থেকে খাবার খেয়ে বের হয়ে আসে তখন হোটেলের ওনার ওর কাছে টাকা চায়।ও অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে খেতে হলেও টাকা দিতে হয় নাকি?? ও তো বাসায় প্রতিদিনই খাবার খায়।কই কখনো তো টাকা দেয়নি।হ্যা শয়তান বুড়ি টা মাঝে মাঝেই ওকে বকা দিত খাবার খাওয়ার জন্য। তখন বার্বি ডল আর ভালো মা বলত যে ও নাকি ওর বাবার পয়সায় খাই। তাছাড়া ভালো বাবাও নাকি ওর সব খরচা উঠাবে। শয়তান বুড়ি কি যেন বলে যেত।কথা সেগুলো না বুঝলেও বুঝত সেগুলো খুবই পঁচা কথা।ওকে কেউ পঁচা বলছে ভাবলেই ওর খুব কষ্ট হত।কালকেও ওই ওনার টা খুব পঁচা পঁচা কথা বলছিল। কথা সেগুলো বুঝতে না পারলেও ওর খুবই কষ্ট হচ্ছিল তাই সে নিচের দিকে তাকিয়ে কাঁদছিল। তখনই কোথা থেকে তার রাজকুমার চলে আসে।কথা প্রথম দেখায় তার রাজকুমার কে চিনে ফেলে।এইতো তার রাজকুমার। টিভির রাজকুমারের মতই দামি দামি পোশাক। টিভির রাজকুমারের মতই লম্বা তালগাছ আর আর সাদা ভূত।কি সুন্দর দেখতে তার রাজকুমার কে দেখতে!!
তার রাজকুমার কে দেখেই কথার ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি ফুটে উঠে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই সে হাসি হারিয়ে গিয়ে অভিমান ফুটে উঠে।কেন এত দেরি করে আসবে তার রাজকুমার??একশ হাজার দিন না না একশ কোটি দিন পরে তার রাজকুমার তার কাছে এসেছে। কিন্তু কাব্য সব ঝামেলা চুকিয়ে যখন অফিসের জন্য চলে যায় তখন কথা অবাক হয়ে যায়। রাজকুমার কি তাকে চিনতে পারে নি। কিন্তু সে তো তার রাজকুমার কে প্রথম দেখায় চিনে ফেলেছে।সেও তার পিছু পিছু যায় কিন্তু কাব্য তাকে টাকা দিয়ে চলে যায়। কথা তখন সত্যিই চিন্তাই পরে যায় তাহলে কি তার রাজকুমার তাকে চিনতে পারে নি নাকি ও অন্যকারো রাজকুমার।না ও শুধু কথারই রাজকুমার শুধু কথারই।
কাব্য যখন রাতের বেলা আবার ফিরে আসে আর ওকে ওর বাসায় নিয়ে যায়। তখন কথা অনেক অনেক খুশি হয়। এটা তারই রাজকুমার।ওকে চিনতে পারে নি তাই চলে গিয়েছিল এখন চিনতে পেরেছে তাই ওকে নিয়ে এসেছে ওর রাজপুরীতে। কিন্তু কথা একটা জিনিস ভেবে পায় না রাজকুমার তো ঘোড়ায় চড়ে আসে তাহলে আমার রাজকুমার গাড়িতে এসেছে কেন??
কথা গাড়ি ভালো করেই চিনে। ওদের নিজেদেরই দুইটা গাড়ি। কথা ভাবে হয়তো ঘোড়াটা আসতে আসতে রাস্তায় মারা গেছে।তাই তো তার রাজকুমারের আসতে দেরি হয়েছে।কথা ঘোড়াকে মনে মনে বকা দেয় —""পাঁজি ঘোড়া একটা তোর জন্য আমার রাজকুমারের আসতে দেরি হয়েছে।সব দোষ তোর।""
—""এই যে মিস,কি এত ভাবেন সবসময়?? এখানে থাকার ফন্দি আটছেন নাকি?? তাহলে সেটা হবে না।""
কাব্যের কথায় কথা ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসে আর একটা টেডি স্মাইল দেয়। কাব্য কথাকে বলে,
—""আমি এখন অফিসে যাচ্ছি তুমি বাসায় থাকবে আর আজ বিকেলে আমরা বাইরে যাব।রেডি থেকো।""
কথা খুশি হয়ে যায় বাইরে যাবার কথা শুনে।ওই বাড়িতে ওকে কেউ বাইরে নিয়ে যেত না।যা একটু যেত তা শুধু বার্বি ডলের সাথে।তাই তারাতাড়ি মাথাটা বাম দিকে কাত করে বোঝায় যে সে রেডি থাকবে।
—""ভেরি গুড,আমি আসছি তাহলে।ভালো থেকো,বাই।''—বলেই কাব্য তার অফিসে চলে গেল...
[ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন]
(To be continued)
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ...