বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

কোথাও কেউ নেই (৪৩)

"উপন্যাস" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান TARiN (০ পয়েন্ট)

X ৪৩. স্যার আমার নাম বাকের স্যার আমার নাম বাকের। চিনতে পারছি। কী ব্যাপার? মঙ্গলবার মঙ্গলবার করে থানায় হাজিরা দিতে বলেছিলেন। তাই এলাম। আজ স্যার মঙ্গলবার। মাঝখানে তো বেশ কয়েকটা মঙ্গলবার চলে গেল। ঢাকার বাইরে ছিলাম স্যার। নেত্রকোনা গিয়েছিলাম। আপনাকে কি হায়ার করে নিয়ে গেল? কি বললেন বুঝলাম না। আগে মফস্বলের লোকজন ঢাকা থেকে ফুটবল প্লেয়ার হায়ার করে নিত। আজকাল মাস্তান হায়ার করে। মাস্তানি এখন মোটামুটি লাভজনক ব্যবসা। আমার ছোটবোনের বিয়ে হয়েছে নেত্রকোনা। দেখতে গিয়েছিলাম। ভবিষ্যতে ঢাকার বাইরে গেলে আমাদের ইনফরম করে যাবেন। জি আচ্ছা। এখন কি উঠব? উঠুন বসে থেকে কি করবেন? বাকের চেয়ার ছেড়ে উঠতে উঠতে বলল একটা কথা স্যার, যদি কিছু মনে না করেন। বলে ফেলুন কিছু মনে করব না। মাঝে মাঝে স্যার মন্ত্রীরা মাস্তান হাযাবি করে নিজেদের জায়গায় নিয়ে যান। গত ইলেকশনের সময় এই অধমকেও একজন নিয়েছিল। এই রকম কেইসে ও কী থানায় খবর দিয়ে তারপর যাব? নাকি সরাসরি চলে গিয়ে কাজকর্ম মিটিয়ে আপনাদের খবর দিব? ওসি সাহেব কিছু বললেন না। ওসি সাহেবের বা পাশে বসা সেকেন্ড অফিসার উচ্চস্বরে হোসে উঠেই ওসি সাহেবের গম্ভীর মুখ দেখে হাসি গিলে ফেলল। বাকের বলল, স্যার তাহলে উঠি? আগামী মঙ্গলবার ইনশাআল্লাহ দেখা হবে। ওসি সাহেব কিছু বললেন না। সেকেন্ড অফিসার দ্বিতীয় দফায় হেসে ফেলে আবার গম্ভীর হয়ে গেলেন। ওসি সাহেব বললেন, থানা হাসি-তামাসার জায়গা নয়–এটা মনে রেখে কাজকর্ম করলে ভাল হয়। বাকের থানা থেকে খুশি মনে বের হল। বেশ ফুর্তি লাগছে। যদিও ফুর্তি লাগার তেমন কোন কারণে নেই। তার থাকার জায়গাই এখনো ঠিক হয়নি। একেক রাত একেক জায়গায় কাটাচ্ছে। গত রাতে বড় ভাইয়ের বাসায় গিয়েছিল। বুক ধকধক করছিল যদি ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। আল্লাহতালাব অসীম অনুগ্রহ দেখা হয়নি। কোথায় যেন গিয়েছে রাত দশটার আগে ফিরবে না। ভাবী ছিল। তাকে দেখে ঠাণ্ডা গলায় বলল, তুমি যে? কী মনে করে? বাকের হক চকিয়ে গেলেও নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, ভাবী ভাল আছেন? হ্যাঁ ভালই আছি। একটু রোগা রোগা লাগছে। আমার শরীর স্বাস্থ্য নিয়ে তোমাকে কনসার্নড হতে হবে না। কোন কাজে এসেছ? ভাইজান কি আছেন? সে আছে কী নেই সেটা তুমি বাড়ি ঢুকবার আগেই খোঁজখবর করেছ। আমি দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। সেখান থেকেই শুনছিলাম। ভাবলাম দেখা করে যাই। হাজত থেকে ছাড়া পেয়েছি। সে তো পনের দিন আগেই ছাড়া পেয়েছ। পনের দিন পর দেখা করতে এলে যে? ঢাকার বাইরে ছিলাম। আচ্ছা ভাবী যাই। দাঁড়াও। সেলিনা ভেতর থেকে মুখ বন্ধ খাম এনে দিল। গলার স্বর আগের চেয়েও শীতল করে বলল, তোমার ভাই দিয়ে গেছে। নিয়ে তোমার ভাইকে ধন্য কর। এত রাগ করছেন কেন ভাবী? রাগ কবছি না। রাগ করলে সংসার ছেড়ে অনেক আগেই চলে যেতাম। ঝুলে তো আছি। তুমি থাক কোথায়? ঠিক নেই ভাবী। একেক দিন একেক জায়গায়। এক জায়গায় বেশিদিন থাকতে অসুবিধা হয় তাই না? লোকজন খোঁজ পেয়ে যায়। তা না। ভাবী চা খাব, যদি আপনার অসুবিধা না হয়। ফরিদ চায়ের কথা বলতে গেল। এই ফাঁকে রাকিব খাম খুলে আনন্দে প্রায় লাফিয়ে উঠল। বারশো টাকা। সব চকচকে নোট। ভাইয়ের কাছ থেকে সে মাঝে মাঝে এ রকম পায়। তবে ব্যাপারটা খুবই অনিয়মিত। খুবই অবাক কাণ্ড ফরিদা নিজেই চায়ের কাপ নিয়ে ঢুকল। পিরিচের এক কোণায় এক টুকরো ঠাণ্ডা কেক। দীর্ঘ দিন ফ্রিজে ছিল আজ গতি হতে যাচ্ছে। তোমার ভাইয়ের কথা শুনেছ বোধ হয়। জি না। কি ঝামেলা? চাকরি নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে। বলেন কি? কে ঝামেলা করছে? নামধাম দেন। বডি ফেলে দেব। বাজে কথা একদম বলবে না। বডি ফেলে দেবে মনে? কার বাড়ি তুমি ফেলে দেবে? চা খেতে চেয়েছ চা খাও। চা খেয়ে বিদেয় হও। বড় বড় কথা বডি ফেলে দেব। বাকের নিঃশব্দে চা শেষ করে উঠে এল। মেজাজ খুব খারাপ করা উচিত ছিল। কিন্তু করতে পারেনি কারণ পকেটে এতগুলি টাকা। তাছাড়া ভাই ভাবী এই দুজনের ওপর সে রাগ করতে পারে না। আজও একবার যাবে বলে ঠিক করল। চাকরির ঝামেলা মানে কী ঝামেলা জানতে ইচ্ছা করছে। তবে খোঁজখবর নিয়ে যেতে হবে। ভাই থাকলে যাবার প্রশ্ন ওঠে না। বাকের জলিল মিয়ার স্টলের সামেন এক মুহূর্তের জন্যে দাঁড়াল জলিশ মিয়া ক্যাশ সামালাতে ব্যস্ত তার দম ফেলার সময় নেই। তবু বাকেরের দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে দিল। চা খাইয়া যান বাকের ভাই। বাকের উত্তর না দিয়ে হাঁটতে শুরু করল। রঙবেরঙের নানান পোস্টার চোখে পড়ছে। মহানগর কমিটি। এই বস্তুটি কি কে জানে। পাড়ায় অনেক কিছুই হচ্ছে সে খবর রাখে না। ইয়াদের কাছ থেকে ভেতরের খবর কিছু নেয়া উচিত। কিন্তু তার সঙ্গে দেখাই হচ্ছে না। যে ক’বার গিয়েছে ইয়াদের বউ মুখ কালো করে বলেছে উনি বাসায় নাই। মিথ্যা কথা বলছে না তো? না মিথ্যা কেন বলবে? বাকের অন্যমনস্ক হয়ে পড়ল তখনি চোখে পড়ল। ইয়াদ মাথা নিচু করে হণহন করে যাচ্ছে। বগলে একটা দুধের টিন। চোখে চশমা। ব্যাটা চশমা নিল কবে। ঐ শালা। ঐ ইযাদ। ইয়াদ থমকে দাডাল। বাকের এগিয়ে গেল। দেখাই পাওযা যায় না ব্যাপার কী? চাব দিন গোলাম। দারুণ ব্যস্ত, কেমন আছিস রে দোস্ত। ভালোই আছি। আয়া চা খাই। আজি না দোস্ত বাসায় দুধ নেই। দুধ নিয়ে যাচ্ছি। দেরি হলে বউ মাইণ্ড করবে। দুধ বউয়ের কাছে দিয়ে আয়, তাহলে তো আর মাইড কববে না। নামিয়ে দিয়ে ফুট করে চলে আসবি। আজ বাদ দে দোস্ত। এক জায়গায় যেতে হবে। আমার বড়শালীর ছেলের জন্মদিন। না গেলে খুব মাইন্ড কববে। গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। বিশ্বাস না হয়। আমার সঙ্গে এসে গাড়ি দেখে যা। ডাইহাটসু গাড়ি। বাকের উল্টো দিকে হাঁটা ধরল। মেজাজ খুব খারাপ হবার আগেই সরে যাওয়া ভাল। মুনাদের বাসায় কি একবার যাওয়া যায়? সকালে অবশ্যি একবার দেখা হয়েছে। তাতে কি? রুগী আছে একজন খোঁজখবর করা দরকার। মুনা রাগ নাও করতে পারে। সব সময় যে তাকে দেখলেই মুনা রেগে যায় তাও তো না। মাঝে মাঝে খুবই ভাল ব্যবহার করে। যেমন আজ সকালে বাকের ঘরে ঢোকা মাত্রই মুনা বলল, বাকের ভাই চা খাবেন? বিস্মিত বাকের বলল, হ্যাঁ। তাহলে এক কাজ করুন। ফ্লাক্স দিচ্ছি, ফ্লাস্ক ভর্তি করে দোকান থেকে চা নিয়ে আসুন। ঘরে চা নেই, চিনি নেই, দুধ নেই। বিশ্ৰী অবস্থা। কাল থেকে চা না খেয়ে আছি। বাকের ফ্লাস্ক ভর্তি করে চা নিয়ে এল–সেই সঙ্গে হাফ কেজি চা। দুই কেজি চিনি এবং একটা কনডেন্সড মিল্প,। বাকের ভেবেছিল সঙ্গের জিনিসগুলি দেখে মুনা রাগ করবে। তা সে করেনি। হাসি মুখে বলেছে, থ্যাংকস। মুনার কাছে যাওয়া যায়। অবশ্যই যাওয়া যায়। দুটো মেয়ে মানুষ একা একা আছে এই কারণেই তো যাওয়া দরকার। রাগ করলেই বা কি। তার একটা দায়িত্ব আছে না? বাকের লম্বা লম্বা পা ফেলতে লাগল। আকাশ ঘোলাটে। বৈশাখ মাস শুরু হয়েছে। ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টি হবে। বৎসরের প্রথম কালবৈশাখী। ভাল। খুবই ভাল। ঝড়বৃষ্টি হোক। মাঝে মাঝে ঝড়বৃষ্টি হওয়া দরকার। তা না হলে সব ন্যাত মেরে যায়। লাইফ হেলা হয়ে যায়। বাকের গুনগুন করে একটা সুর উঠাবার চেষ্টা করছে। গানের কথাগুলি হচ্ছে ইয়ে হ্যাঁয় আখেরি জামানা। আখেরি শব্দটার ওপর লম্বা টান। আছে। টান দিয়ে গলা ভেঙে ফেলতে হয়। টানটা ভালই আসছে গলা ভাঙােটা আসছে না। তাঁর গুনগুন করতে ভাল লাগছে ইয়ে হ্যাঁয় আখেরি জামানা। এটা হচ্ছে শেষ সময়। হে প্ৰিয়তম এই শেষ সময়ে তুমি আমাকে ফেলে চলে যে ও না। অভিশপ্ত জীবন থেকে তুমি আমাকে মুক্তি দাও। খুব আধ্যাত্মিক গান।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৪০৮ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now