বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
অফিস থেকে ফিরে বাসায় ঢুকতে যাবো তখনিই মা আমার স্ত্রী ঐশীকে বলতে শুনলাম,
-নিজেকে কি নবাবের মেয়ে মনে করো??আমার ছেলে অফিস থেকে এই সময়ে ফিরে চা খায় জানো না।
-আসলে মা মাথাটা প্রচন্ড ব্যাথা করছিলো তাই শুয়ে ছিলাম।
-জানি সব ঢঙ।যাও চা বানিয়ে রাখো।আমার ছেলেটা এখনিই আসবে মনে হয়।
আমি বাসায় আর ঢুকলাম না।বাইরে চায়ের দোকানে এসে চা খেয়ে বসে রইলাম।রাত করে গেলাম বাড়িতে।বাড়িতে আসতেই ঐশী আমাকে দেখে তড়িঘড়ি করে বলল,
-কোথায় ছিলে??
-আজকে একটা জরুরী মিটিং ছিলো তাই দেরি হয়ে গেছে।
-আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন।আমি চা বানিয়ে নিয়ে আসি।
-না তার দরকার নেই।আমি চা খাবো না।চা খাওয়াটা কেমন জানি নেশায় পরিণত হচ্ছে।তুমি এক কাজ করিও কাল থেকে চা বানানো বন্ধ করে দাও।
-আচ্ছা।
মা আমার আওয়াজ শুনে বাইরে এসে বলল,
-কাব্য তোর এত লেইট হলো কেন আজকে?
-মা একটা কাজে ব্যস্ত ছিলাম তাই।
রাতে খাবার টেবিলে দেখি অন্যদিনের তুলনায় খাবারে লবণের পরিমাণ একটু বেশি।।আমি ঐশীকে বললাম,
-আজকে কি তোমার শরীর অসুস্থ ছিলো??
-না কেনো??
-খাবারের লবণের পরিমাণ একটু বেশি তাই।
আমার কথা বলতে দেরি কিন্তু মায়ের মুখ থেকে খাবার ফেলতে দেরি হয় নি।মা খাবার মুখ থেকে ফেলে দিয়ে বলল,
-ছিঃ বউমা এইরকম জগন্য খাবার কেউ বানায়।কয়বার বলেছিলাম তোমাকে তরকারির লবণ দেখেশুনে দিও।দেখো আমার ছেলেটা খেতে পারছেনা।
আমি মাকে কোনোরকম শান্ত করিয়ে খাবারটা খেয়ে রুমে চলে আসলাম।ঐশী মেয়েটার ধৈর্য্য শক্তি অনেক আমি জানি।সে সব কিছুই নিরবে সহ্য করবে।তবুও একটু কষ্ট পাবেনা।মেয়েটার সাথে পরিচয়টা অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে হয়েছিলো।অফিসে যাওয়ার পথেই তার ভার্সিটির রাস্তা।একদিন হঠাৎ তার সাথে ধাক্কা লাগে।তখনিই ওকে প্রথমবারের মতো দেখি।আর প্রথম দেখায় প্রেমে পড়ে যায়।মেয়েটা এত মায়াবী কেনো আমি বুঝিনা।পাক্কা এক বছর ওর পিছনে ঘুরে ওকে রাজি করিয়েছিলাম।তাও প্রেমের জন্য না করে দেই সে।ডাইরেক্ট বিয়ে করতে বলে।আমিও বিয়ে করে নিই।ঐশীর মা নেই।ছোট বেলায় নাকি সে মাকে হারিয়েছে।বাবা আছে।।তাই মা ওকে নিয়ে এত রেগে আছে আমি জানি।তবে সব নিরবে সহ্য করা ছাড়া আমার কোনো উপায় নেই।
কয়েকদিন পর অফিসে যাওয়ার জন বের হবো তখনিই মাকে পাশের বাড়ির আন্টির সাথে কথা বলতে শুনি।মা আন্টিকে বলছেন,
-ঐ অনাথকে যদি আমি বাড়ি থেকে বের না করি।তাহলে আমার নাম পাল্টায় নিস।আমার ছেলেটাও যে কি করে বুঝতে পারে না।
অফিস শেষ করে বাসায় আসতেই মাকে নিয়ে ঐশীর কাছে গিয়ে ঐশীকে বললাম,
-চল ব্যাগপত্র গুছিয়ে নাও।
ঐশী কেঁদে দিলো।কাদঁতে কাঁদতে আমাকে বলল,
-কাব্য আমি কি কিছু করেছি?আমাকে এভাবে কেনো রেখে আসবে??আমি চলে গেলে মাকে কে দেখবে।
মাও আমার সাথে ছিল।মা হাসছে।তিনি জয়ী হয়েছেন।ঐশী জানে আমি যা বলি তাই করি।ঐশী চুপচাপ সব কিছু গুছিয়ে নিয়েছে।এবার আমি বললাম,
-আমারগুলো সহ গুছিয়ে নাও।
পাশ থেকে মা বলল,
-কেনো??
-আমার স্ত্রী যাবে আমি যাবো না এইটা কেমন কথা??
-তুই যাবি মানে!!
-হ্যা আমিও যাবো।
-তুই যাবি কেনো??
-আমার বউয়ের সম্মান যে বাড়িতে নেই সেখানে আমি থেকে কি করবো??
-কাব্য কি বলছিস কি এসব??
-জানো মা ঐশীকে যখন বিয়ে করেছিলাম তখন তাকে তোমার কথা বলেছিলাম।ঐশী আমাকে বলেছিলো,
-জানো আমার মা নেই।ছোটবেলায় মাকে হারিয়েছি।কিন্তু দেখো আল্লাহ তায়ালা আমাকে শ্বাশুড়িরুপে আরেকটা মা দিয়ে আমার মায়ের অভাবটা পূরণ করে দিলো।
যে জায়গায় ঐশী তোমাকে মা বলে সম্বোধন করেছে সেখানে তুমি তাকে বউয়ের পরিচয় দিতে চাও না।ঐদিন তার মাথা ব্যাথা করছিলো বলে চা বানিয়ে রাখেনি বলে কত কথা শুনালে।মনে রেখো একদিন তুমিও ওর মতো ছিলে মা।ঐদিন রাতে খাবারে লবণ কম হয় নি।আমি ইচ্ছা করে বলেছিলাম।তারপরেও ঐশী কিছু বলেনি।কারণ সে ভালবাসতে জানে,আপন করে নিতে জানে।সেটা তুমি পারো না মা।তুমি আজ সকালে পাশের বাসার আন্টিকে বলেছিলে ঐশীকে বাড়ি ছাড়া করে ছাড়বেই।।মা জানো সংসার তখনিই সুন্দর হয় যখন একজন শ্বাশুড়ি নিজের ছেলের বউকে নিজের মেয়ে মনে করে এবং একজন বউ তার শ্বাশুড়িকে নিজের মায়ের মতো।তবে দুঃখ এই যে তুমি বউয়ের কাছে মায়ের মতো কিন্তু বউ তোমার কাছে বউয়ের থেকেও নিচু।এত দিন চুপ ছিলাম।সব নিরবে সহ্য করেছি এইজন্যেই যে তোমার পায়ের নিচে আমার জান্নাত।কিন্তু যখন তুমি আমার অর্ধাঙ্গিনীকে নিচু দেখাতে চাইলে।আমি পারলাম না।আমি ঐশীকে কথা দিয়েছিলাম।সব বিপদ থেকে ওকে আমি রক্ষা করবো।ওর সম্মান নষ্ট হতে দিবো না।।ঐশীর সব গুছানো শেষ।আমি ব্যাগগুলো নিয়ে মাকে বললাম,
-মা আসি।ভালো থেকো।আমি ছেলে আমাকে মায়ের কাছে আসতেই হবে।আমি আসবো।একজন ছেলের দ্বায়িত্ব যেমন আমার কাছে পালন করা বাধ্যতামূলক।তেমনি একজন স্বামী হিসেবে ঐশীর প্রতি দ্বায়িত্বগুলোকে পালন করাও বাধ্যতামূলক।
ঐশী আমাকে বলল,
-প্লিজ এমন করো না।মা কিভাবে থাকবে একা??
-চল ঐশী।
ঐশী হাটতে লাগলো।দরজার কাছে আসতেই মা চিৎকার দিয়ে বলল,
-কাব্য কোথায় যাচ্ছিস??
-মা প্লিজ।
-তুই গেলে যাবি।আমার মেয়েটাকে নিয়ে যাবি না।ঐশী আমার সাথে থাকবে।
ঐশী ব্যাগ রেখে দৌড়ে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরলো।মায়ের কথা শুনে দুই ফোটা অশ্রু গাল বেয়ে নিচে পড়লো।আমি সফল। আমি মাকে বুঝাতে পেরেছি।মা এখন কাদঁছে।ঐশী মাকে বলছে,
-মা কাদঁছেন কেনো??
-আমাকে ক্ষমা করে দিস মা।
-ছিঃ মা এসব কি বলছেন??আপনি আমার মা।আর মা হাজারো ভুল করলে সন্তান কিছু বলতে পারবে না।
-তুই এমন কেনো??এত কষ্ট সহ্য করার পরও কেনো এখানে আছিস??
-যেখানে তোমার মতো জান্নাত আছে।সেখান ছেড়ে আমি কিভাবে যায়??
দুজনে কাদঁছে।যাকে বলে সুখের কান্না।আমি তাদের এই দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছি।বেঁচে থাকুক এমন পবিত্র বন্ধন আজীবন।
~সমাপ্ত~
সংগ্রহীত,,
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now