বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
মূল্যায়ন
"ছোট গল্প" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান FAHAD (০ পয়েন্ট)
X
আট দশ পদের রান্না করেছিলাম সেদিন, সব গুলো রান্না অমৃত হলেও একটাতে লবণ কম হওয়াতে শ্বাশুড়ী যখন মুখ বেকিয়ে বলল,
- লবণ দেওয়ার সময় মন কোথায় থাকে?
আমি বলেছিলাম, এত গুলো রান্নার মধ্যে একটা তো এদিক ওদিক হবে৷ আমি তো আর রোবট না।
উনি পাত থেকে সে তরকারি ফেলে দিতে দিতে বলেছিলেন, বউ হতে গেলে রোবটের চেয়ে বেশি হতে হয়।
ঘর ভর্তি গেস্টের সামনে আমি পানি দিয়ে ভাত আর রাগ দুইটায় গিলে খেয়েছিলাম।সবাই চুপ ছিলো কেউ কোন উত্তর দেয় নি আমার হয়ে।
রাতের বেলা, শুধু সে তরকারির লবণ ঠিক রেখে অন্য সব তরকারির লবণ বাড়িয়ে দিয়েছিলাম।
সবাই বুঝে আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়েছিলো, যেন আমি একটা আতংক। আমি নির্বিকারে যে তরকারির জন্য সকালে কথা শুনানো হয়েছিলো সেটা দিয়ে খেয়ে নিলাম।
পরে সবাই বলেছিলো,
-সকালে সব ভালোই ছিলো৷ শুধু শুধু রাগালে মেয়েটাকে, কষ্ট করে রান্না করেছিলো।
কিন্তু সকালে কেউ আমার হয়ে একটা কথা বলে নি।
এরপর থেকে কেউ আমাকে এইভাবে বলার সাহস পেত না৷
এমন না যে আমি সমালোচনা শুনতে ভয় পাই। ব্যাপার টা হলো মূল্যায়নের। আমি যে এত কষ্ট করে এত রান্না করেছি, সেটার মূল্যায়ন তারা করে নি৷ নয় টা রান্নার গুন যখন একটাকে ছাপিয়ে যায় নি, সেখানে আমার মূল্যায়ন হয় নি। আমার কষ্টের মূল্যায়ন হয় নি।
পরবর্তীতে এইরকম কিছু বলার আগে তারা ভেবেছে। এবং ভাববে৷
প্রতিদিন বিকালে নানা রকম নাস্তা বানাই আমি, ঘরের এক সদস্য বলেছিলো, তার খেতে ইচ্ছে না। তবে সে খেত সব। তার যে ইচ্ছে করে না তা সে বাড়িয়ে চড়িয়ে বলত।
পরবর্তীতে আমি তার জন্য ছাড়া সবার জন্য নাস্তা বানিয়েছে৷ বেশ ভালো পদের৷ শুধু তাকেই দেওয়া হলো না।
এক গাল হেসে বলেছিলাম,
- ভালো লাগে না যখন, কষ্ট করে কেন খাবেন রোজ? আপনার ও কষ্ট কমল। আমার ও।
সে এমন দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো, যেন কোন শব্দেই খুঁজে পাচ্ছে না। তার বিরক্তি প্রকাশ করার জন্য।
এমন না যে আমি তাকে অপছন্দ করি বা খাওয়াতে চাই না। কিন্তু সে আমার যত্ন টা দেখতো না। আমি রোজ নাস্তা বানাচ্ছি যত্ন করে নানা বাহারী সাজে, সেটার মূল্য দিতো না। আমার মূল্যায়ন সে করে নি। তাই আমি তাকে বুঝিয়েছি, কেউ যখন আপনার জন্য করছে তার মূল্যায়ন অবশ্যই দরকার৷
ভোর বেলা কেউ বের হচ্ছে, আমি রাতের র্নিঘুমতার শর্তেও ঘুম ঘুম চোখে উঠে কারো জন্য রুটি বানালাম, সে দেখল আমি বানাচ্ছি, নিষেধ করল না৷ সময় সুযোগ থাকার শর্তেও সে না খেয়ে চলে গেল৷
এরপরের বার থেকে আমি ঘুম থেকেই উঠি নি। যতই আমাকে ডাকা হোক।
এমন না যে আমি উঠতে পারব না কারো জন্য। কিন্তু তার জন্য আমার উঠাটা তাকে মূল্যায়ন করতে হবে।
আমার স্বামীর জন্য রাত অবধি ভাত নিয়ে বসে থাকার পর সে যখন আমি রান্না ঘর থেকে আসার আগেই খাওয়া শুরু দিতো, আমি খেয়েছি কিনা দেখতো ও না।
পরের বার থেকে আমি আগেই ভালো পিস টা দিয়ে খেয়ে বসে থাকতাম।
এমন না আমার অপেক্ষা করতে খারাপ লাগে, কিন্তু যে আমার অপেক্ষার মূল্যায়ন করবে না। তার জন্য আমি কেন বসে থাকবো?
তার হাজার দোষ থাকার শর্তেও সে যখন আত্মীয় স্বজনের সামনে আমার ছোট্ট ভুলে অট্টহাসিতে ফেটে পড়েছে।
আমি তার হাজার খানিক দোষ রসিয়ে রসিয়ে শুনিয়েছি সবাইকে।
এমন না যে আমি প্রতিশোধ প্রবণ। কিন্তু তাকে বুঝিয়েছি, প্রিয় মানুষ টার সম্মান রাখা নিজেরেই দায়িত্ব।
আমাকেও মূল্যায়ন করতে হবে, সে আমার একটা দোষ জানলে আমি তার হাজার টা জানি, আমি যখন কাউকে বলছি না সে কেন তা নিয়ে অন্য দের সাথে হাসাহাসি করবে?
এক আত্মীয়ের জন্য স্বেচ্চায় নিজেকে ছোট করেছিলাম, কিন্তু সে আড়ালেও আমাকে একটা ধন্যবাদ দেয় নি, এরপর থেকে আমি তার হাজার ডাকেও ফিরে তাকাই নি।
কারণ সে আমার সম্মানের মূল্যায়ন করে নি। আমার ছোট হওয়াটা তার কাছে কিছুই ছিল না।
যে বন্ধুটার মন খারাপে আমি রাত জেগে ছিলাম, কিন্তু ব্যস্ততার অজুহাতে যখন সে আমার মেসেজ সিন করে ফেলে রেখেছিলো, যখন আমার কাউকে দরকার ছিলো, আমি আবার তার মন খারাপের রাতে অনলাইন থেকেও তার কল রিসিভ করি নি৷
কারণ সে আমাকে ব্যবহার করেছে, মূল্যায়ন না৷
ঘরে হোক বা বাইরে যেকোন কাজে মূল্যায়ন দরকার। সেটা সংসার হোক বা কর্মক্ষেত্র।
আপনি যখন অফিসের র্নিদিষ্ট কাজের বাইরে অন্য কাজ করবেন। যার জন্য আর্থিক মূল্য দেওয়া হবে না। তখন আপনার মূল্যায়ন দরকার।
ঘরে সবাইকে খুশি আপনি করতে পারবেন না৷ কিন্তু যখন আপনি চেষ্টা করছেন তখন থেকেই যদি আপনার মূল্যায়ন না হয় মনে রাখবেন আপনার মূল্যায়ন কখনো হবে না। কোন দিনেই না।
সংসার এইটা এমন একটা জায়গা যেখানে অন্যদের জন্য যখন করবেন তখন চাহিদা, প্রত্যাশা শুধু বাড়বেই। কখনো কমবে না।
আপনি সব ঠিকঠাক করতে করতে সবাই এমন ভাব করবে যেন আপনি মানুষেই নয়, হয় ঈশ্বর নয় কোন যন্ত্র। কিন্তু ঈশ্বরের মূল্য ও আপনাকে দেওয়া হবে না।
অকথ্য ভাষা বলতে দুইবার ভাববে না। সত্যি ভাববে না। বিশ্বাস করুন।
তাই নিজেকে অত টা বিলিয়ে দেবেন না প্লিজ যেখানে সবাই মাড়িয়ে যাবে আর একটা শব্দ ও করবেন না।
এতে যদি আপনি ঝগড়াটে বা বেয়াদব আখ্যা পান, মেনে নেবেন। বিশ্বাস করুন অনেক ফ্রেশ মাইন্ডে থাকবেন। এইসব মানসিক যন্ত্রনা থেকে দূরে থাকবেন৷
বেশি করে কথা শোনার চাইতে, কম করে দেখবেন বেশি সুনাম পাবেন যদি মূল্যায়ন টা দাঁড় করাতে পারেন।
অনেক পরিবারে দেখবেন কিছু মানুষ কে যা ইচ্ছে শোনানো যায়, কারণ তারা আবার ঠিক তাদের দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করে। আবার কিছু মানুষ কে অন্যরা ভয় পায় কারণ তার মুখে কিছু আটকায় না। বললে রাগ করে ফেলে। ভুলেও কিছু বলে ফেললে রেশ থাকে অনেক দিন।
এরা কিন্তু কম পরিশ্রমে বেশি সুনাম পায়।
মূল্যায়ন চাওয়া মানে আপনাকে ঝামেলা করতে হবে না এমন না৷ স্রেফ নিজেও যে একটা আলাদা মানুষ। ভুল হবে, দোষ থাকবে, আবার ভালোও হবে সেটা বুঝাবেন হেসে৷ সড়ে গিয়ে, চুপ থেকে৷ কিংবা আমার মতো লবণ ঢেলে দিয়ে।
কারণ মূল্যায়ন ব্যাপার টা কেউ এসে এইটা আপনাকে হাতে ধরিয়ে দিয়ে যাবে না। নিজেকেই করতে হবে সে জায়গা। সে মূল্যায়নের মনোভাব।
তাই নিজেকে মাঝেমধ্যে স্বার্থপর ও বানান যাতে আপনি যে স্বার্থপর না সেটা অন্যরা বুঝে।
মূল্যায়ন
দোলনা বড়ুয়া তৃষা
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now