বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
একদিন হঠাৎই আমার কাজিনের লেখা একটা ডায়েরি পাই আমি। সেদিন ডায়েরি খুলে পড়তে একটুও দ্বিধা হয়নি। কারণ আমার সেই চঞ্চল বোনটা যে আজ "মেন্টাল হসপিটালে!"
তাহলে চলুন আমার বোনের এমন করুণ পরিণতির আসল কারণটা জেনে আসি সেই ডায়িরের পাতায় লেখা কথাগুলো থেকে।
সময়টা ২০২১,
তারিখ: ২১/০২/২০২১
"আজ আমার জন্মদিন। এই দিনে আমি সব সময় রোজা রাখি। আর গরীব কিছু পথশিশু এবং বৃদ্ধদের সাধ্যমতো খাবার খাওয়ায়। আজকেও খাবারগুলো নিয়ে যাওয়ার সময় আমার হাত থেকে কিছু খাবারের প্যাকেট নিচে পড়ে যায়। তখনই একটা ছেলে কোথা থেকে এসে যেন আমাকে সাহায্য করলো। তারপর একই সাথে আমাকে সাহায্য করলো সবাইকে খাবারগুলো দেওয়ার জন্য। সৌজন্যমূলক একটা হাসি আর ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসবো, ঠিক তখনই সেই আগন্তুক আমাকে ডেকে পরিচয় বিনিময় করলো। আমিও হাসিমুখে তাকে বিদায় জানিয়ে চলে আসলাম।"
তারিখ: ২৬/০২/২০২১
"আজ আবারো তার সাথে দেখা হয়েছিল। আমার নামের সাথে কিছুটা মিল আছে তার নামের। আমার নাম তারিন। আর তার নাম তুষার। আমাদের এলাকায় নতুন এসেছে সে। এখানকার একটা ছাত্রাবাসে থেকে লেখাপড়া করে। এবার অনার্স ১ম বর্ষ। সে আমার থেকে তিন বছরের বড়। আমি সবে মাত্র ইন্টারে উঠলাম। যাইহোক, আজ বেশ কিছুক্ষণ আমি আর তুষার ভাইয়া মিলে গল্প করেছি। আমাদের শহর সম্পর্কেই কথা বললাম। তার শহর সম্পর্কেও জানলাম। আজকের দিনটা ভালো ছিল।"
তারিখ: ১৪/০৩/২০২১
"আমাদের এখন প্রায়ই কথা হয়। বেশ ভালো বন্ধুত্ব হয়েছে আমাদের। আপনি থেকে তুমিতে চলে এসেছি আমরা। আমি চুপচাপ স্বভাবের হলেও আজকাল তার সাথে কথা বলতে খুব ভালো লাগে আমার। তুষার ভাইয়া খুব সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে পারে। আমি মনে হয় তার কথার মায়াজালে ফেসে গেছি। এই যাহ্, এসব কী বলছি আমি! ধ্যাত আজকের মতো এখানেই লেখা সমাপ্ত।"
তারিখ: ২১/০৫/২০২১
"অনেক দিন পর আজ লিখতে বসলাম। এতদিনে অনেক কিছু হয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, আজ তুষার ভাইয়া আমাকে প্রপোজ করেছে। তাও আবার এক গুচ্ছ বেলীফুল দিয়ে! বেলীফুল আমার খুব প্রিয় সেটা সে কীভাবে জানলো কে জানে! আমি সাথে সাথে কিছু বলিনি। লজ্জামাখা মুখ নিয়ে চলে এসেছি। সত্যি বলতে আমারো তাকে অনেক ভালো লাগে। তবে হ্যা বলবো কিনা তা নিয়ে দ্বিধায় আছি।"
তারিখ: ০৩/০৬/২০২১
"তুষার ভাইয়াকে আজ হ্যা বলেছি। সে তো খুশিতে আত্মহারা হয়ে গিয়েছে। আমি শুধু মুচকি হাসছিলাম তার এমন বাচ্চামো কান্ড দেখে।"
তারিখ: ১৩/০৬/২০২১
"আমাদের দিনগুলো ভালোই যাচ্ছে। আমার প্রতি তার এমন পাগলামো দেখে মাঝেমধ্যেই হেসে উঠি আমি। সব সময় আমিই যেন তার ভাবনার রাজ্যে বিরাজ করি। তুষারের মতো একজনকে পেয়ে আমি খুব খুব খুব খুশি।"
তারিখ: ০৯/০৭/২০২১
"আজ আমি প্রচন্ড অবাক হয়েছি তুষারের কথায়। সে আমার ভালোবাসা কতটুকু সত্য তার প্রমাণ চায়। এমন প্রমাণ যা শুনেই আমার মাথা চক্কর দিয়ে উঠেছে। সে আমার সাথে রুমডেট করতে চায়। আমার তো এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না তুষার এমন! কান্না পাচ্ছে খুব। কী করবো বুঝতে পারছি না।"
তারিখ: ১২/০৭/২০২১
"সেদিনের কথাগুলোর জন্য তুষার নাকি খুব লজ্জিত। বন্ধুদের কথায় আমাকে ঐ কথাগুলো বলেছে। তাই আজ মাফ চেয়েছে। আমিও প্রিয় মানুষটাকে মাফ করে দিয়েছি। ভুল করেছে সে। তাই মাফ করাটা যৌক্তিক ছিল। দ্বিতীয় বার এমন করলে আমি আর এই সম্পর্ক রাখবো না সেটাও আজ তাকে বলে এসেছি।"
তারিখ: ২১/০৮/২০২১
"আমার আর তুষারের পরিচয়ের আজ ছয় মাস পূর্ণ হলো। তার চমক দিতে তুষার আমাকে এমন কিছু দেখালো যে আমি বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছি। কিছুদিন আগে তুষার আমাকে নিয়ে একটা বুফেতে যায়। সেখানে নানা রকমের খাবার ছিল। আমি নিজের ইচ্ছা মতো কিছু খাবার নিয়ে খাচ্ছিলাম। তখনই তুষার আমার হাতে একটা কোকের বোতল দেয়। এরপর কী হয়েছিল জানিনা। তবে যখন আমার জ্ঞান ফিরে তখন আমি একদম ঠিক ছিলাম। পরে তুষার বলেছিল আমি হঠাৎ করেই জ্ঞান হারিয়ে ছিলাম। তার কথা বিশ্বাস করেই আমি আর কিছু বলিনি। কিন্তু আজ সে আমার সাথে সেদিন কী করেছিল তার ভিডিয়ো দেখালো। আমার সবচেয়ে বড়ো সম্পদ আমার ভার্জিনিটি আর নেই। এটা দেখার পর আমার পুরো দুনিয়া অন্ধকার হয়ে গিয়েছে। কাউকে কিচ্ছু বলতেও পারবো না আমি। আমার জীবনটা শেষ হয়ে গেল। এই জীবন আর রাখতে চাই না আমি। তবে আমি মরার আগে তুষারের অপকর্ম সবাইকে জানিয়ে যাবো। সুইসাইড নোটে ওর সমস্ত অপকর্মের কথা জানিয়ে যাবো সবাইকে। আফসোস! আর কখনো তোমার মাঝে নিজের কথাগুলো লেখা হবে না। আর কখনো আমার মনের অনুভূতিগুলো তোমায় জানাতে পারবো না। কিন্তু তোমার মাধ্যমেই ঐ নরপশুকে শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করে যাবো আমি। যত্নে থেকো তুমি। তোমাকে খুব মনে পড়বে প্রিয় ডায়েরি।"
এর পরপরই তারিন হাতের শিরা কেটে সুইসাইড করে। সৌভাগ্যবসত তখনই আমি তারিনের ঘরে যাই। আর ওর এমন অবস্থা দেখে চিৎকার করে সবাইকে ডাকি। সাথে সাথে হসপিটালে নিয়ে যাওয়ায় সে যাত্রায় বেঁচে যায় তারিন। কিন্তু বেঁচে গিয়েও সে মৃত হয়ে যায়। এত বড়ো ধাক্কা মেনে নিতে না পেরে শক খায়। আর তারপরই স্মৃতিশক্তি হারিয়ে পাগলামো শুরু করে। বাড়িতে আর রাখা যাচ্ছিলো না ওকে। হুটহাট সবাইকে মারতে যায়। এক প্রকার বাধ্য হয়েই আমরা ওকে মেন্টাল হসপিটালে ভর্তি করিয়ে আসি। ওর এমন অবস্থা দেখে পরিবারের সবাই প্রচন্ড ভেঙে পড়ে। তারিন আমাদের খুব আদরের ছিল। সব সময় পর্দার মধ্যে থাকতো। কিন্তু শয়তানের ধোঁকায় পড়ে নিজের জীবনটা আজ শেষ হয়ে গেল আমার বোনটার। ওর বাবা-মা আজও কাঁদে নিজেদের মেয়ের এমন করুণ অবস্থা দেখে।
তুষারকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার পর জানা যায়, সে এমন অনেক মেয়ের সাথে শারীরিক সম্পর্কের জন্য ভালোবাসার ফাঁদে ফেলে। তারপর সেই ভিডিয়ো ভাইরাল করার কথা বলে হুমকি দিয়ে সেই সকল মেয়েদের দিয়ে খারাপ কাজ করিয়ে টাকা কামায়। আর যারা পুলিশের কাছে যেতে চায় তাদের খুন করে তাদের চোখ, কিডনিসহ শরীরের বেশকিছু অঙ্গ বিদেশে বিক্রি করে। তার এমন জঘন্যতম অপরাধের জন্য একবার ফাঁসি কম হয়ে যায়। তবুও আর কী করার! একবার মরলে তো আর মারা যায় না। তুষারকে গত পরশু ফাঁসি দেওয়া হয়েছে আদালতের নির্দেশে। আর এই কেসটার বিপরীতে উকিল হিসেবে আমি ছিলাম। হ্যা, আমি নিজেই আমার বোনের হয়ে লড়াই করেছি। আমি তো আমার বোনটার ইজ্জত আর ফিরিয়ে দিতে পারবো না। তবুও সমাজ থেকে এমন অমানুষদের ধ্বংস করতে যতটুকু সম্ভব লড়াই করছি।
সবার উদ্দেশ্যে শুধু একটাই কথা বলতে চাই,
"মেয়েরা সচেতন হও। ভালোবাসার নামে মিথ্যে প্রেমের ফাঁদে পড়ে নিজেদের মেরে ফেলার আগেই নিজেদের রক্ষা করতে শেখো সবাই। আর যখনই এমন অমানুষদের দেখবে তাদের শাস্তি দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হও। নিজেদের আত্মরক্ষার জন্য নিজেদেরকেই লড়তে হবে এই কথাটা মনে রেখে এগিয়ে যাও। আর কোনো তারিনের মতো যেন তোমাদের জীবনও ঝড়া পাতার মতো ঝড়ে না যায়!"
★সমাপ্ত★
#ডায়েরি
#লেখায়_নামিরা_নূর_নিদ্রা
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now