বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
ওদের মা মারা গেছেন তিন বছর হলো। মনিরের ছোট বোনের বয়স তখন দশ কিংবা এগারো! নাম জোনাকী। যদিও ঘরের বেশিরভাগ কাজ মনির আর তার বাবা মিলেই করে, তবে, খেতে বসলে তাদেরকে, মায়ের মতো করে খাবার তুলে দেয় জোনাকী। চাওয়ার আগেই এগিয়ে দেয় গামছা আর পানি। ঘরের টুকটাক কাজ আস্তে আস্তে শিখে নেওয়ার পর, এখন ঠিক মায়ের মতো শাসন করে বাবা আর ভাইকে।
মনির নিজে, এত ভালো ছাত্র যে, এসএসসির ফলাফলের পর উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার বৃত্তি সহ একটি স্মার্টফোনও পুরস্কার পেয়েছিল।
কৃষক বাবার সংসারে নিজের অতিরিক্ত খরচ টুকু পুষিয়ে নেবার জন্য অবসরে মিস্ত্রীর কাজ করে, মোবাইলে ডাটা প্যাক কিনে কলেজের বিষয়গুলো ঘাটাঘাটি করে পড়ে নেয় সে । রুবিনা পড়ে ক্লাস এইটে। খুব লক্ষী, সদাচঞ্চল, বুদ্ধিমতী এই বোনটাকে মনির অন্তর দিয়ে ভালোবাসে।
তবে, গত তিন চার দিন ধরে জোনাকীর যে কি হয়েছে -সে কিছুই বুঝতে পারছে না!
জোনাকী স্কুলে যাচ্ছে না, কারো সাথে ঠিকমতো কথা বলছে না, খাচ্ছে না, মুখ কালো করে বেশিরভাগ সময় শুয়ে আছে।
কিছুদিন আগে ওদের পাশের গ্রামের একটি মেয়েকে কিছু বখাটে ছেলের উৎপাত করার ঘটনা কানে এসেছে মনিরের। সে রকম কিছু নয়তো!! - ভেবে, ভয় পায় মনির।
ঘরে ঢুকে কাঁথা মুড়িয়ে গুটিসুটি শুয়ে থাকা জোনাকীকে দেখে কিচ্ছুক্ষণ ভাবে ও।তারপর, গলা খাঁকারী দিয়ে বলে,
" বুনু, কি হইছে তর? না কইলে বুঝমু কেমনে? কি হইছে ক। কেউ কিছু কইছে তোরে? জামিল্যা কিছু কইছে?কে কইছে ক?"
"দাদা যা ত এইহান থিকা। কিছুই হয় নাই। ভাল্লাগে না তাই শুইছি।"
ঝাঁঝের সাথে উত্তর দিল জোনাকী।
নানাপ্রকার চেষ্টা করেও জোনাকীর মুখ থেকে কিছু বের করতে না পেরে, মনির ওর স্কুলের বান্ধবীর বাসায় যায়। সেই বান্ধবী কে জিজ্ঞেস করতেই সে চোখে মুখে লজ্জার লাল আভা ফুটিয়ে তুলে বলে, " আমি জানি নাতো কিছু ।"
ওর চেহারা দেখে মনিরের ভীষণ সন্দেহ হয় ।কথা বের করার জন্য অনেক রকম প্রশ্ন করেও কাজ হয় না।কিছুতেই কিছু বলে না মেয়েটি।
রাতে খাবার সময় জোনাকীর থমথমে মুখ দেখে, চিন্তায় শুয়ে শুয়ে এপাশ ওপাশ করে মনির।
রাত আরো গভীর হলে হঠাৎ টিউবওয়েল চাপার শব্দে ও উঠে পড়ে নিঃশব্দে। সেখানে গিয়ে দেখে, জোনাকী কত গুলো টুকরো কাপড়ে সাবান মাখাচ্ছে এবং খুব সন্ত্পর্নে টিউবওয়েল চাপছে ধোয়ার জন্য।
উচ্চ মাধ্যমিক ২য় বর্ষে পড়া মনির সেইমুহুর্তে বুঝতে পারে সবই। ওর খুব ইচ্ছা করে, কাপড় গুলো ধোয়ার সময় বোনকে টিউবওয়েল চেপে দিতে। কিন্তু, লজ্জার মাথা খেয়ে সে এগিয়ে যেতে পারে না।চুপচাপ বিছানায় এসে শুয়ে পড়ে।
মনিরের মনে পড়ে, চায়ের দোকানে দেখা টিভির বিজ্ঞাপন। পরেরদিনই সে চলে যায় টাউনের এক ফার্মেসীর দোকানে। ইনিয়ে বিনিয়ে এটা সেটা বললেও সে যখন কিছুতেই আসল কথা বলতে পারছিল না, তখন দোকানী হঠাৎ তার দিকে এগিয়ে দেয়, এক টুকরো কাগজ আর কলম ।
সে লিখে, " বোনের জন্য প্যাড।"
ভেতরে ভেতরে কাঁপতে থাকলেও সে যথাসম্ভব স্বাভাবিক ভাবে সেগুলো নিয়ে বাড়িতে আসে। এসে চুপচাপ,গামছা দিয়ে ঢেকে রেখে দেয় জোনাকীর মাথার বালিশের পাশে।
জোনাকি অবাক হয় খুব। খুশিও হয়। লজ্জাও পায়। ভাই বোন কেউ কখনো এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলে না।তা সত্ত্বেও, প্রত্যেক মাসের বাজারের সাথে নির্দিষ্ট প্যাকেটটি ঠিকই হাতে পৌঁছে যায় জোনাকীর। শুধু তাই না, বাসার আশেপাশে কচুগাছ সহ অন্যান্য শাকসবজির চারা বপন করে মনির।প্রতিদিন অল্প হলেও জোনাকীকে সেসব খেতে উৎসাহিত করে।
ভর্তি পরীক্ষার পর, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে খুব ভালো বিষয়ে ভর্তির সুযোগ পায় মনির।সেই আনন্দের সাথে, ভাইয়ের দূরে চলে যাওয়ার দু:খ,সাথে বিশেষ দিনগুলোতে প্রয়োজনীয় সুবিধা হারানোর শঙ্কা একসাথে বাসা বাঁধে জোনাকীর মনে। সে নিজে মুখ ফুটে ভাইকে এব্যাপারে কিছুই বলতে পারে না- এটা অসম্ভব!
তাই আসন্ন দিনগুলোর কষ্টের কথা ভেবে মাঝে মাঝে মনমরা হয়ে থাকে সে।
খুব ভালো ছাত্র হওয়ায়, গ্রামের কিছু স্বচ্ছল সজ্জন ব্যক্তি মনিরকে সবসময় সহযোগিতা করতেন।তাদের কাছে অনুরোধ করে, চলে যাওয়ার কিছুদিন আগে জোনাকীকে চমকে দেওয়ার জন্য ও একটি সেলাই মেশিন বাড়িতে নিয়ে আসে।
জোনাকী খুবই খুশি হয়।
মনির ওকে বলে,
" চালাতে চালাতেই শিখে যাবি দেখিস।পড়াশুনা তো করবিই সাথে কিছু আয় রোজগারও কর, এইটা আমি চাই। তবে, তোরে শিখামু বইলা আমিও নেট দেইখা একটা জিনিস বানাইতে শিখছি।"
ভালো লাগলে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দিয়ে পাসে থাকুন ধন্যবাদ
কিছু কটন ফ্ল্যানেল ও কটন ফ্লিস কাপড়, ফার্মেসী থেকে যোগাড় করা ইনফ্লায়েবল ওয়াটার এজরভার শিট আর সেলাই মেশিন দিয়ে সেদিন বিকেল থেকে মনির, জোনাকীকে সাথে নিয়ে পনেরো টি স্যানিটারী ন্যাপকিন তৈরি করে।
বলে, " টাউনে আমার পরিচিত দোকান আছে। কথা বইলা আসছি।আব্বাকে সাথে নিয়া যাইয়া কিনবি এগুলা। আমি জানি, যেগুলা রেডিমেড বেচে সেগুলা কিনতে যাইতে কইলে, তুই যাইতে পারবি না। তাই চিন্তা কইরা, খুজঁতে খুঁজতে এই বুদ্ধি বাইর করছি। ইউটিউবে আরো অনেক রকম আছে। আমি যাওয়ার আগ পর্যন্ত সেগুলাও দেখ,যেই রকম ভালো লাগে বানাবি ।
খালি তুই না, আমাগো গেরামের আর সব মাইয়্যা গুলারেও তুই চাইলে এখন ভালো রাখতে পারবি বইন।"
মাথা নীচু করে, দুই বেণী ঝুলিয়ে, টলমল লাল চোখে ভাইয়ের কথায় নি:শব্দে সায় দেয় জোনাকী।
- সার্মন মৌরী
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now