বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
লেখকঃ শশুরের জামাই
রাতের বেলা বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরছি। রাত বেশি না, সবে মাত্র ৯.০০ টা বাজে। চাঁদের আলোয় আস্তে আস্তে হাটতেছি। একটু দূরে রাস্তার ওপাশে একটা ল্যাম্পপোস্ট এর নিচে খেয়াল করে দেখলাম একটা জিনিষ ঝিকিমিকি করতেছে।
প্রথমে ভাবলাম হয়তো কোনো চিপস বা অন্য কিছুর প্যাকেট হবে। কিন্তু মনের মধ্যে কেমন যেন একটা খটকা গেলো। রাস্তার ওপাশে গেলাম। ল্যাম্পপোস্ট এর নিচে গিয়ে দেখি একটা নীল রঙের ডাইরি।
চারদিকে তাকিয়ে দেখলাম কেউ নাই। ডাইরিটা হাতে নিলাম। ভাবলাম বাসায় গিয়ে খুলে দেখবো।
হাটতে শুরু করলাম, মনে হলো পায়ের নিচে শক্ত কিছু একটা পড়ছে। নিচে তাকিয়ে দেখি মোটা ফ্রেমের একটা ভাঙ্গা চশমা। ভাবতে লাগলাম এটা কার হতে পারে? এতো রাতে কেউ তো চশমা ফেলে যাওয়ার কথা না।
ধুর এতো কিছু ভেবে লাভ নেই, চশমাটাও নিয়ে নিই। কেউ খোজ করলে দিয়ে দিবো।
ভাঙ্গা চশমা আর ডাইরিটা নিয়ে বাসার দিকে হাটা দিলাম। চলেন যেতে যেতে পরিচয় টা দিয়ে দিই।
আমি নয়ন, আপাতত স্টুডেন্ট, বাকীটা গল্প পড়তে পড়তে যেনে যাবেন।
একটু পর বাসায় চলে গেলাম। ডাইরি আর চশমা টেবিলের উপর রেখে আমি ফ্রেশ হতে চলে যাই। ফ্রেশ হয়ে এসে পড়তে বসলাম কিন্তু পড়ায় মন বসছে না। মনের মধ্যে একটা শয়তানি ঘুরতেছে। ডাইরিতে কি লেখা আছে তা পড়ার জন্য।
বাচ! যেই ভাবা সেই কাজ। ডাইরিটা নিয়ে বিছানায় শুয়ে শুয়ে পড়তে লাগলাম।
নাম ফারিয়া কবির জান্নাত।
আর কোনো পরিচয় দেওয়া নেই, তারমানে একটা মেয়ে। কৌতূহল টা আরো বেড়ে গেলো। আমি আর কোনো কিছু চিন্তা না করে প্রথম পাতা থেকে পড়া শুরু করলাম.....
"" ডাইরি লেখা আমার শখ গুলোর মধ্যে অন্যতম। ক্লাস থ্রি থেকে আমি ডাইরি লেখি। জীবনে অনেক গুলো ডাইরি লিখি আমি তবে এই ডাইরি টা আমার লাইফে একটু বেশিই স্পেশাল।""
আমি একটু থেমে নিশ্বাস নিলাম, কি এমন স্পেশাল তা পড়ার জন্য আমার আগ্রহের আর শেষ নেই। আমি আবার পড়তে শুরু করলাম.....
সেজান নামের একটা ছেলে আমাকে প্রতিদিন ফলো করতো, আমার পেছনে পেছনে ঘুরতো। সে যে আমাকে পছন্দ করে সেটা আমি তার চালচলন দেখেই বুঝছি। ছেলেটাও দেখতে অনেক হ্যান্ডসাম, ভালো ফ্যামিলির ছেলে মনে হয়।
এভাবে কিছু দিন চলে যায়, আমি কলেজ থেকে আসি, আর ও আমার পিছু পিছু আসে। আমার ভালোই লাগে এগুলো। আমিও ছেলেটাকে পছন্দ করতে শুরু করলাম। একদিন আমি কলেজ থেকে বাসায় আসতেছিলাম এমন সময় শুরু হয় ঝুম বৃষ্টি ছেলেটা একটা ছাতা হাতে নিয়ে আমার কাছে আসলো।
সেদিন আমাদের প্রথম কথা হয়....
সেজানঃ এই নিন ছাতাটা ধরুন।
আমিঃ তো আপনি কি করবেন?
সেজানঃ সমস্যা নেই, আমি ভিজতে অভ্যস্ত।
আমি কিছু না বলে একটা মুছকি হাসি দিয়ে ছেলেটার হাত থেকে ছাতাটা নিলাম। তারপর বললাম....
আমিঃ আপনিও ছাতার ভিতর আসুন, আমার কোনো সমস্যা হবে না।
সেজানঃ ধন্যবাদ। আপনার নামটা জানতে পারি?
আমিঃ হুম, আমি জান্নাত। অনার্স ১ম বর্ষে পড়ি। আপনি?
সেজানঃ আমি সেজান, মাস্টার্স ফাইনাল ইয়ার। পাশাপাশি বাবার ব্যবসা দেখাশোনা করি।
আমিঃ ওহ গুড।
সেজানঃ আমরা কি ফ্রেন্ড হতে পারি? (একটা হাত বাড়িয়ে দিয়ে)
আমিঃ হুম ওকে ফ্রেন্ডইতো, হওয়া যায় সমস্যা নাই।
সেজানঃ আচ্ছা ধন্যবাদ।
আমিঃ ওকে, শুনেন আমি বাসার সামনে চলে আসছি। আপনি এবার আসতে পারেন। আর হে ছাতা দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
এভাবে আমার আর সেজানের পরিচয় হলো, ছেলেটার মাঝে কেমন যেন একটা জাদু আছে। ওর কথা বলার ধরনটাও অন্যরকম। আমারও ও কে ভালো লাগে।
২য় দিন....
আমি কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে আছি, দেখলাম সেজানও একটু দূরে দাঁড়িয়ে আমাকে দেখছে। আমি ইশারা দিয়ে কাছে আসতে বললাম। সে আসলো....
আমিঃ কি ব্যাপার আপনি এখানে কেন?
সেজানঃ গতকাল কেউ একজন আমার মনটা চুরি করে নিয়ে আসছে। মনটা নিতে আসলাম।
আমিঃ মানে কি মন চুরি করা যায় নাকি?
সেজানঃ হুম যায় তো। আচ্ছা বাদ দেন। চলেন ওদিকে একটু হাটি!
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে চলেন।
সেজানঃ আপনি ইচ্ছা করলে আমাকে তুমি করে বলতে পারেন।
আমিঃ এতো তাড়াতাড়ি তুমি? আচ্ছা ঠিক আছে বলবো। তুমিও আমাকে তুমি করে বলিও।
সেজানঃ আচ্ছা ঠিক আছে। একটা কথা বলবো?
আমিঃ হুম বলো।
সেজানঃ তোমাকে ওই মোটা ফ্রেমের চশমায় অনেক কিউট লাগে।
আমিঃ তাই নাকি?
সেজানঃ হুম, মন কেড়ে নেওয়ার মতো।
আমিঃ ধন্যবাদ।""
এবার আমার মাথায় আসলো আসল কাহিনী। তারমানে ডাইরিটাও মেয়েটার আবার চশমাটাও মেয়েটার। কিন্তু এগুলো রাস্তায় আসলো কি করে? আমি আবার ডাইরি টা পড়তে লাগলাম....
সেজানঃ তোমার সাথে আমি প্রতিদিন দেখা করবো, কোনো সমস্যা হবে?
আমিঃ আরে না সমস্যা কেন? তবে বাসার ওই দিকে যেও না। সমস্যা হতে পারে।
সেজানঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
সেদিন আমি (জান্নাত) আমার সব গুলো ছোট ছোট স্বপ্নের কথা বলে দিলাম, আমার ফেভারিট সব গুলো জিনিষ এর নাম বললাম। সেজানও বললো তার সব ফেভারিট জিনিষের নাম। আসার সময় সেজান আমার fb আইডিটা নিলো। তারপর একটু বাসার দিকে এগিয়ে দিলো।
সেদিন রাতে মেসেঞ্জারে অনেক কথা হয় আমাদের। ছেলেটাকে নিজের অজান্তেই মন দিয়ে দিলাম। সব সময় ওর কথা মনে পড়ে।
৩য় দিন...
সেজান আমাকে কলেজে ওখানে একটা কফিশপে ডেকে নিয়ে যায়। দুজনে বসে বসে কফি খাচ্ছি এমন এময় সেজান আমাকে অনেক বড় একটা ব্যাগ দেয়, আমি জিজ্ঞেস করলাম...
আমিঃ কি এটাতে?
সেজানঃ তোমার জন্য সামান্য গিফট।
আমিঃ আরে কি বলো এতো বড় ব্যাগ, আর তুমি বলো সামান্য। কি আছে এটাতে?
সেজানঃ বাসায় গিয়ে দেখো। এখানে খুলবে না।
আমিঃ ওকে।
বাসায় এসে প্যাকেট টা খুললাম, ভিতরের জিনিষ দেখেই তো আমি অভাক, এতো গুলো গিফট?
একটা পুতুল, অনেক গুলো নীল চুড়ি আর কিটকেট সহ অনেক রকমের চকলেট। আমি সেজানকে কল দিয়ে অনেক গুলো ধন্যবাদ দিলাম। """
ডাইরিটা এভাবে পড়তে ছিলাম, ভালোই লাগছিলো, জীবনে তো কখনো প্রেম করিনি, তাই প্রেমের ১ম অবস্থাটা কেমন হয় জানতাম না। ডাইরিটা পড়ার পর জানলাম আরকি। পরের পাতা উল্টিয়ে পড়তে যাবো এমন সময় আম্মুর ডাক....
আম্মুঃ নয়ন, এই নয়ন! খেতে আয়। অনেক রাত হলো।
আমিঃ এইতো আম্মু আসছি। তুমি রেড়ি করো।
আম্মুঃ তাড়াতাড়ি আয়।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ১১.০০ টা বাজে। ডাইরি পড়তে পড়তে কখন যে এতো সময় হয়ে গেলো টেরও পাইনি।
আমি গিয়ে তাড়াতাড়ি খেয়ে আবার রুমে চলে আসলাম। রুমে এসে আবার পড়তে শুরু করলাম....
৪র্থ দিন.....
আমি রাতে পড়তেছি। সময় সেজান আমাকে কল দিলো....
আমিঃ হ্যালো সেজান বলো..
সেজানঃ কি ব্যাপার আজকে কলেজে আসো নি। আবার মোবাইলও বন্ধ।
আমিঃ আসলে আম্মু অসুস্থ তো তাই, আর মোবাইলে চার্জ ছিলো না। তো কিছু বলবে?
সেজানঃ কালকে তো ভ্যালেন্টাইন ডে মনে আছে?
আমিঃ হুম। কেন?
সেজানঃ কালকে একটু দেখা করতে পারবে প্লিজ?
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
সেজানঃ ওকে তুমি একটা নীল শাড়ি পড়ে, পার্কে চলে আসিও। আমি ওখানে থাকবো।
আমিঃ ওকে চেষ্টা করবো। বাই...
কলটা কেটে দিলাম, আমি সিউর যে সেজান আমাকে প্রপোজ করবে। খুশিতে আমার ঘুম আসছে না।
পরের দিন.....
আমি একটা নীল শাড়ী পড়ে, একটু সেজেগুঁজে পার্কে গেলাম। দেখলাম সেজান আগে থেকেই আমার জন্য অপেক্ষা করছে। সেও অনেক সেজে গুঁজে এসেছে। নীল রঙ্গের একটা পাঞ্জাবি পড়ে এসেছে। ইচ্ছা করছে আমি নিজেই সেজানকে প্রপোজ করি।
তারপর সেজান হাটু ভাঙ্গিয়ে বসে দু হাতে অনেক গুলো গোলাপফুল বাড়িয়ে দিয়ে ফিলমি স্টাইলে আমাকে বললো...
জান্নাত হবে কি আমার একলা পথের পথ চলার সাথী? হবে কি আমার বৃষ্টিতে ভিজার সঙ্গী? হবে কি আমার মনের রাজ্যের রাণী? হবে কি আমার ঘুম ভাঙ্গানো পাখি? ধরবে কি হাত আমার! কথা দিলাম পুরো পৃথিবী ছেড়ে দিবো তবুও তোমার হাত ছাড়বো না। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি জান্নাত।
I Love You Jannat
I Low You So Much
আমি আর কিছু চিন্তা না করে সেজানের প্রপোজ একসেপ্ট করে নিলাম।
আমিঃ আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি সেজান।
I Love You Too...
প্রথমবারের মতো সেদিন সেজান আমার হাত ধরেছে। আমারও অনেক ভালো লেগেছে। অনেক সময় নিয়ে আমরা ঘুরলাম, খেলাম, আনন্দ করলাম""
জান্নাতের ডাইরিটা পড়ে একটা আফসোসের নিশ্বাস ছেড়ে ভাবতে লাগলাম, আমিও যদি জান্নাত আর সেজানের মতো প্রেম করতে পারতাম বা আমি যদি সেজান হতাম কতই না ভালো হতো।
এমন সময় আম্মু আসলো আমার রুমে....
আম্মুঃ কিরে কি করিস?
আমিঃ কি ব্যাপার আম্মু তুমি এখনো ঘুমাওনি?
আম্মুঃ রাত ২.০০ টা বাজে। তোর রুমের লাইট জ্বলছে তাই দেখতে এলাম। এই তোর হাতে এটা কি?
আমিঃ একটা ভালোবাসার ডাইরি?
আম্মুঃ কিহ! তুই প্রেম করিস?
আমিঃ আরে আমি কেন প্রেম করবো? রাস্তায় পেয়েছি। তাই পড়তে লাগলাম।
আম্মুঃ তোর আর কোনো কাজ নেই? যা ঘুমাই যা।
আমিঃ আচ্ছা আম্মু শোনো...
আম্মুঃ হুম বল!
তারপরে......
চলবে.......
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now