বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
লেখকঃ বগুড়ার জামাই
সকালবেলা আব্বার সাথে ৩য় বিশ্বযুদ্ধ করে ৩৩২৭ টাকা নিয়েছি শপিং করার জন্য। যাই হোক টাকাটা নিয়ে উরাধুরা একটা গোসল করে মাথায় সামান্য জ্যাল মাখিয়ে চুল গুলো খাড়া করে, উপরে নিচে বডি স্প্রে মেরে পুরাই হিরো আলম ভাব নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম মার্কের উদ্দেশ্যে।
যাই হোক অবশেষে মার্কেটে এসে পৌছালাম, দোকান গুলোর সামনে দিয়ে যখন যাচ্ছি সব গুলো দোকানদার আমাকে ডাকাডাকি করছে, "ভাই আসেন, স্যার আসেন, ভাই ডিসকাউন্ট চলতেছে। কেউ কেউ তো দোকান থেকে বাহির হয়ে গেছে শুধু একটি বার হাত মেলানোর জন্য। নিজেকে কেমন যেন সেলিব্রেটি মনে হচ্ছে। মনে মনে ভাবলাম এই দুনিয়ায় আমার টিকে থাকাটা কতো গুরুত্বপূর্ণ। কি সুন্দর ইজ্জত দিয়ে কথা বলছে। শুধু সালার আব্বু আম্মু আর বন্ধু গুলার কাছে মান ইজ্জত পাই না। ২ টাকার দামও নাই আমার তাদের কাছে।
খেয়াল করে দেখলাম একটা দোকানে কাস্টমার কম, যাই সেখানে যাই। দেখে দেখে জিনিষ কেনা যাবে।
ভিতরে গেলাম দোকানদার জিজ্ঞেস করতেছে....
দোকানদারঃ ভাই কি লাগবে?
আমিঃ বাচ্চাদের জামাকাপড় আছে?
দোকানদারঃ জি, আছে। বাচ্ছার বয়স কতো?
আমিঃ এই মনে করেন ২২ বা ২৩ বছর হবে।
দোকানদার একটা বিরক্ত ভাব নিয়ে আমার দিকে তাকালো, কিন্তু আমি তাকে পাত্তা দিলাম না। তারপর বলতে লাগলো...
দোকানদারঃ জি আছে। বলেন কি কি লাগবে?
আমিঃ ভাই এখন তো সব কিছু কমন হয়ে গেছে, একটু আনকমন কিছু দেখান।
দোকানদারঃ এই নিন, এই পাঞ্জাবি গুলো আর কেউ কিনেনি, আর লুঙিও।
আমিঃ ভাই এমন কিছু দেখান যেটা লুঙ্গিও না, প্লাজুও না। পাঞ্জাবিও না আবার শার্ট পেন্টও না।
দোকানদার নিচে থেকে বাচ্চাদের কয়েকটা প্যাম্পাস বের করে আমাকে বলে...
দোকানদারঃ এই নিন, এগুলো লঙ্গিও না প্লাজুও না।
দোকানদারের চেহারার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম বেচারা ক্ষেপে আছে। এমন সময় একটা মহিলা কাস্টমার আসলো দোকানে, সালার দোকানদার মহিলা দেখে আমাকে ভুলেই গেলো। আমি নয়ন যে কতো গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট করে এখানে এসেছি, এ সালা তো আর বুঝলো না। যাই হোক মহিলা দেখে দোকানদার বললো....
দোকানদারঃ আপা কি লাগবে?
মহিলাঃ শাড়ী আছে?
দোকানদারঃ জি আছে, কি শাড়ী লাগবে? দেশি, বিদেশি, জামদানী, টাঙাইল.........
মহিলাঃ ভালো দেশি শাড়ী দেখান।
দোকানদারঃ এই নিন এগুলো দেখেন।
মহিলাঃ অন্য ডিজাইনের নেই?
দোকানদারঃ আছে, এই যে এগুলো দেখেন।
মহিলাঃ এটার ভিতর অন্য কালার নেই?
দোকানদারঃ জি আছে, এএএই যে এগুলো দেখেন।
মহিলাঃ ভাইয়া পিংক কালারের কোনো শাড়ী নাই এই ডিজাইনের মধ্যে?
আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখতেছি। অলরেডি দোকানদারের সব গুলো তাক খালি হয়ে গেছে। সব গুলো কাপড় নিচে।
তারপর আমি বললাম...
আমিঃ আন্টি ওই গু কালারের ওটা দেখেন ওটা আপনাকে ভালো মানাবে।
তারপর আন্টি আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো আর বললো...
আন্টিঃ এই গু কালার মানে? এটা হচ্ছে হলুদ কালার। আর আমি হলুদ কালার পছন্দ করি না।
আমিঃ ও আচ্ছা আমি তো আবার কালার ছিনি না।
তারপর মহিলাটা দোকানদারকে বললো...
মহিলাঃ এই আপনার দোকানের শাড়ী গুলো পছন্দ হচ্ছে না, থ্রি পিছ আছে?
দোকানদারঃ জি আছে।
মহিলাঃ দেখান তো...
তারপর আমি মহিলাটাকে বললাম...
আমিঃ আন্টি আপনার মেয়ে আসে নি?
মহিলাঃ আমার মেয়েকে দিয়ে তুমি কি করবা?
আমিঃ না আন্টি দেখতে ইচ্ছে করছিলো।
দেখলাম মহিলা আমার দিকে তাকিয়ে মুখ ভ্যাংচি দিলো। এমন সময় দোকানদার বললো...
দোকানদারঃ আপা, থ্রি পিছ দেখেন।
মহিলাঃ অন্য ডিজাইন দেখান, এগুলো ভালো লাগছে না।
দোকানদারঃ আপা এগুলো দেখেন, নতুন মাল।
মহিলাঃ এগুলোর ভিতর কালার দেখান।
মহিলাটা থ্রি পিছ গুলো গায়ে জড়িয়ে দেখতে লাগলো. তখন আমি বললাম...
আমিঃ আন্টি, গরু কালারের এটা নেন, বা ভেড়ার চামড়ার কালারের এটা নিতে পারেন।
মহিলাঃ তুমি মিয়া চুপ থাকো, কোথায় পাইছো তুমি গরুর কালার।
আমিঃ আন্টি, আপনি ওই ইটের কালারের এটা নেন। এটাতে আপনাকে ৫০ বছরের বাচ্চার মতো লাগবে।
মহিলাঃ ওই মিয়া তুমি চুপ থাকো, কি নিতে আসছো তুমি?
আমিঃ ওয়ালটন কোম্পানির জাঙিয়া নিতে আসছি।
মহিলাঃ কিহ! ওয়ালটন কোম্পানির জাঙিয়া মানে?
আমিঃ জি আন্টি vivo কোম্পানিরও জাঙিয়া বাহির হইছে, কিন্তু আমি তো বাংলাদেশের লোক তাই ভাবলাম দেশীয় পণ্য কিনি।
মহিলাঃ এই তোমার নাম কি? বাসা কোথায়?
আমিঃ আন্টি আমার নাম তো নয়ন, সবাই আদর করে দুলাভাই ডাকে। আপনি তো দুলাভাই বলতে পারবেন না, আপনি জামাই ডাকিয়েন।
মহিলাঃ তুমি মিয়া বেশি পণ্ডিত। দুলাভাই কারো নাম হয়?
এমন সময় দোকানদারের ডাক, বলেন তো কেমন লাগে কি সুন্দর আন্টির সাথে ভাব জমাইতেছিলাম। দোকানদার বললো....
দোকানদারঃ আপা এই থ্রি পিছু গুলো দেখেন। ইন্ডিয়া থেকে আসছে।
একথা শুনার পর আমি দোকানদারকে বললাম..
আমিঃ আরে ভাই আন্টি ইন্ডিয়ান কাপড় পড়ে না। আপনি আফ্রিকা বা উগান্ডার কাপড় দেখান।
একথা বলার পর দেখি আন্টি আমার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। যাই হোক অবশেষে একটা থ্রি পিছ আন্টির পছন্দ হলো, তারপর বললো...
মহিলাঃ এই ভাই এটার দাম কতো.???
দোকানদারঃ আপা এটা ভালো থ্রি পিছ, এটা ১২০০ টাকা পর্যন্ত রাখা যাবে।
মহিলাঃ আরে কি বলেন, আমার পাশের প্লাটের মহিলাটা ৩০০ টাকা দিয়ে নিয়েছে।
তারপর আমি বললাম...
আমিঃ আন্টি ওটা যাকাতের মাল ছিলো।
মহিলাঃ এই তুমি চুপ থাকতে পারো না।
এরপর দোকানদার বললো...
দোকানদারঃ আপা ১০০০ পর্যন্ত রাখা যাবে।
মহিলাঃ ২৫০ টাকা দিবেন?
দোকানদারঃ সরি আপা, এই টাকা দিয়ে কিনতেও পারিনি।
মহিলাঃ আচ্ছা আরো ১০ টাকা দিবো।
দোকানদারঃ জি না আপা পারবো না।
তারপর আমি বললাম...
আমিঃ আন্টি আপনার গায়ে ওটা কতো দিয়ে নিছেন? ১৫০ নাকি আরো কম?
মহিলাঃ এই ব্যাটা তুই বেশি ফাজিল। এটা গ্র্যান্ড হক টাওয়ার থেকে কেনা, ১৮০০ টাকা।
আমিঃ খাইছেরে বড় লোকের বিরাট কারবার। (আস্তে আস্তে বললাম)
আন্টিঃ এই কিছু বললে?
আমিঃ জি না আন্টি।
এমন সময় দোকানদার বললো...
দোকানদারঃ লাস্ট কতো পারবেন আপনি?
মহিলাঃ আচ্ছা যান ২৭০ টাকা দিবো, পারলে দেন।
দোকানদারঃ সরি আপা পারবো না।
দোকানের দিকে তাকিয়ে দেখি একটা মালও উপরে নাই, সব গুলো নিচে এলোমেলো ভাবে পড়ে আছে। দোকানদার মাল গুলো গুছাইতে গুছাইতে বললো...
দোকানদারঃ ভাই আপনার কি যেন লাগবে?
আমিঃ Casio কোম্পানির কোনো জাঙিয়া আছে? ওগুলো আবার ওয়াটার ফ্রুপ। পানি ডুকবে না।
দোকানদারঃ এই ভাই আপনি মানুষ? দেখছেন এমনিতে মাথা গরম হয়ে আছে, আপনি আবার ফাইজলামো করছেন।
আমিঃ ঠিক আছে ভাই, আমি আজকে যাই পরে আসবো। আপনার মাথা ঠান্ডা হোক তারপর আসবো।
আজকে আর শপিং করা হলো না, কালকে আসবো। বাসায় চলে যাই, অনেক খাটাখাটি করলাম দোকানদারের সাথে, হিহিহিহিহি......
টাইপিং আমার গল্প সংগ্রহীত
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ...