বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

রক্ত মাতৃকা ৩

"ভৌতিক গল্প " বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান FAHAD (০ পয়েন্ট)

X মাঝরাতে হঠাৎ দিশার ঘুম ভেঙে গেল। ঘুম চোখেই বললো,”উফফফ কী ঠান্ডা।” চোখ খুলে দেখলো দিশা, পায়ের ধারের জানলাটা খোলা, সেই জানলা দিয়ে এক বিভৎস ঠান্ডা হিমেল হাওয়া আসছে ঘরের ভিতর। পা-গুলো যেন বরফ হয়ে গেছে দিশার, নড়তে পারছে না। কিন্তু এই গরমকালে ঘরে এসিও নেই। ঘরটা এত ঠান্ডা হলো কী করে। কোনো মতে মায়ের দিকে তাকালো দিশা, দেখল ওর মা-ও একদৃষ্টিতে দেখছে জানলার দিকে। ঠিক তখনই দিশা শুনতে পেল এক মারাত্মক গোঙানির শব্দ। কেউ যেন ওর কানে এসে ফ‍্যাসফ‍্যাসে গলায় বললো, “আয়…আয় আমার কাছে, আয়। কী রে আমি মা তো।” দিশা সোজা উঠে বসলো বিছানায়। ঠিক সেই সময় অনন‍্যা ওকে টেনে ধরে শুইয়ে দিল, অনন‍্যার মনে হলো দিশার সারা শরীর পাথরের মতো ঠান্ডা আর ভারী। অনন‍্যা বুকের মধ্যে আগলে নিল দিশাকে তারপর বললো, ” দিশা তুই মায়ের কাছে আছিস, কেউ নিতে পারবে না তোকে আমার কাছে থেকে।” কথাটা শেষ হওয়ার আগেই গোঙানির মাত্রা যেন আরও ভয়াবহ হল। ঘরটা ক্রমশ ঠান্ডা হয়েই চলেছে। পর্দাটা এক ভাবে উড়ছে। হঠাৎই যেন একটা কালো ছায়া ঢুকলো জানলা দিয়ে। দিশার কানে এসে বললো ফ‍্যাসফ‍্যাসে স্বরে বললো, “দিশা….দিশা….। মায়ের কাছে আয়।” দিশা অনন‍্যার মুখের দিকে তাকালো, কিন্তু কে এটা! এটা তো ওর মা নয়। যে ওকে জড়িয়ে আছে তার চোখদুটো কোটরে ঢোকা আগুনে গোলার মতো মুখটা ফ‍্যাকাশে, ওকে জড়িয়ে রয়েছে একটা সাদা ফ‍্যাকাশে হাত, দিশার ঠোঁটটা কাঁপতে থাকলো, সারা শরীর ভয়ে কুকড়ে গেল, অস্ফুট স্বরে বললো,”মাম মাম।” একটা হ‍্যাচকা টানে অনন‍্যা টেনে নিল দিশাকে,”এই তো মা। আমি তোর মা।” সেই ফ‍্যাকাশে মূর্তি এক ঝটকায় সরে গেল। অনন‍্যা কোনোক্রমে চিৎকার করলো, “দাদা…দাদা…” কোনো সাড়া এলো না। ওই ছায়ামূর্তি আবারো হাত বাড়ালো। ঘরের শীতলতা আরও বাড়লো। অনন‍্যা আবারও চেঁচিয়ে ডাকল,”দা….দা….।” সুব্রত বাবু লাফিয়ে উঠলেন বিছানায়। ওনার স্ত্রীকে বললেন, “এটা অনন‍্যার গলা না!”…”হুমম তাই তো মনে হলো। কী হলো বলোতো। শিগগির চলো।” পাশের ঘর থেকে সুব্রত বাবু ছুটে এসে লাইট জ্বালালেন। পর্দাটা এক ঝটকায় নেমে গেল। সুব্রত বাবু বললেন,”কী হয়েছে? ঘরটা এত ঠান্ডা কেন? ফ‍্যানের সুইচ তো অন। অথচ ফ‍্যানটা চলছে না। কিন্তু ঘরটা…!” বলেই তাকালেন, দিশা অনন‍্যার দিকে ওদের চোখ মুখ ফ‍্যাকাশে হয়ে গেছে। সে রাতে আর কারো ঘুম হলো না। সকাল উঠেই অনন‍্যা বললো,”এখানে আর এক মূহুর্ত নয়। আজই চলে যাবো আমরা।” অনন‍্যার বৌদি ইপ্সিতা বললো,”তুমি যা বলছো! মানে আমরা কিন্তু কিছুই ফিল করি নি।” সুব্রত বাবু বললেন,”তবে কালকের ঘটনা আমাকেও একটু ভাবাচ্ছে।” “আমি দিশাকে ডাকি দাদাভাই। এখানে এমন কিছু আছে, যেটা তোদের ক্ষতি না করলেও আমার দিশার ক্ষতি চাইছে। আমি এখানে আর থাকবো না দাদাভাই।” বলেই অনন‍্যা সুব্রত বাবুর বেডরুমে গেল। দিশার গায়ে হাত দিয়ে ডাকতে গেল, একি ওর গা তো জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। অনন‍্যা চিৎকার করে ডাক দিল, “বৌদি! ও বৌদি! একটা থার্মোমিটার আনো না!” দিশার জ্বর ১০৪ ডিগ্রি। অনন‍্যা মাথায় হাত দিয়ে বসে বললো,”কী করে নিয়ে যাবো আমি এই মেয়েকে।” সুব্রত বাবু বললেন,”কোথাও নিতে হবে না, ও সুস্থ না হলে কোথায় নিয়ে যাবি ওকে। আমি এক্ষুনি ডাক্তার ডেকে আনছি।” অনন‍্যা বললো,”আমিও যাবো দাদাভাই।” “না তুই ওর কাছে থাক। আমার মনে হয় তোর থাকাটা দরকার।” সুব্রত বাবু গেলেন ডাক্তারের খোঁজে। ইপ্সিতা আর অনন‍্যা জলপট্টি দিতে লাগলো দিশার মাথায়। কিন্তু জ্বর কমার কোনো নাম গন্ধ নেই। মাঝে মাঝে কাঁপুনি হতে লাগলো দিশার। ইপ্সিতা অনন‍্যাকে বললো,”আমি কিছু খাবার নিয়ে আসি রে তুই বোস।” “আচ্ছা বৌদি তোমার কোনো কাজের লোক দেখছি না! এত বড়ো বাড়ির কাজ তুমি একা করো!” “এসে অনেক খোঁজ করেছি রে কাজের লোকের, কেউ কাজে আসতে চায় না এ বাড়িতে। সবাই নানা অজুহাতে কাটিয়ে দেয়। তোমার কিছুই অদ্ভুত লাগেনি কখনও?” “নারে এ কদিনে তেমন তো কিছু বুঝিনি।” “তুমি একটু বসো দিশার কাছে। আমি আসছি একটু।” বলেই পাশের ঘর মানে যে ঘরে ওরা রাতে ছিল সেই ঘরে গেল অনন‍্যা। ঘরের দরজা খুলে ভিতরে ঢোকার আগে ইপ্সিতাকে জিজ্ঞেস করলো, “আচ্ছা এই বই-এর শেল্ফটা বা এই আলমারিটা ব‍্যবহার করো তোমরা?” “না রে আমাদের নিজেদের এতো ফার্নিচার, কতো গোছাবো বলতো? তাই আর ব‍্যবহার করিনা। আর এলামও তো কদিন হলো। তোর দাদাকে বলেছি সব ধরে বেঁচে দিতে, তাই আর ঘেঁটে দেখিনি। কিছু পুরোনো জিনিস পত্র আছে বোধ হয় পুরোনো ভাড়াটের।” কথাগুলো শুনতে শুনতেই ঘরটাতে ঢুকলো অনন‍্যা। আলমারিটা খুলতেই একটা বোটকা পুরোনো গন্ধ এলো নাকে। আলমারির ভিতরে বেশ কিছু শাড়ি আর শার্ট প‍্যান্ট দেখে বোঝা যায়, যারা ছিলেন তাদের মধ্যে অন্তত একজন পুরুষ আর একজন মহিলা ছিলেন। হঠাৎই একটা গোঙানির শব্দ পেল অনন‍্যা, কোনো মহিলা যেন গোঙাচ্ছে, আওয়াজটা ক্রমাগত তীব্র হচ্ছে। আলমারি ঘাটতে ঘাটতে বেশ কয়েকটা ব্লাড রিপোর্ট খুঁজে পেল অনন‍্যা, তার মধ্যে একটা প্রেগনেন্সি রিপোর্ট, পজেটিভ‌, তারিখটা ১৩ বছর আগের। হঠাৎই আলমারির পাল্লাটা বন্ধ হয়ে গেল, আলমারির কাঁচে সেই ছায়ামূর্তি, খাটের ওপর বসা, অনন‍্যা ঘুরে দাঁড়িয়ে চিৎকার করলো,”কে? কে তুমি?” গোঙানির আওয়াজটা আরও তীব্রতর হলো। ঘরের দরজার দিকে এগোতে গেল অনন‍্যা, দরজাটা এক ঝটকায় বন্ধ হয়ে গেল। ও দিক থেকে চিৎকার করলো ইপ্সিতা, “কী হলো? হঠাৎ!” “বৌদি দরজা খোলো। খোলো…!” কথা শেষ করার আগেই কেউ যেন এক ঝটকায় মাটিতে ফেলে দিল অনন‍্যাকে। ইপ্সিতা চিৎকার করলো,”দরজা তো ভিতর থেকে বন্ধ।” একটা অদ্ভুত শব্দ হতে থাকলো। বারবার কাঁচি খোলা বন্ধ করলে যেমন শব্দ হয় ঠিক তেমনি। সাথে একটা চাপা কান্না। হঠাৎই অনন‍্যার পা-টা হিরহির করে টানলো কেউ, অন‍্য একটা ঘরে নিয়ে গেল, যেখানে অসম্ভব আলো। কারো কথপোকথন কানে এলো। “অরণ‍্য শেষ পর্যন্ত আমরা আমাদের নতুন বাড়িতে।” “ইয়েস। এতদিনে শান্তি। এবার আমরা আমাদের মতো বাঁচব। একদম নিজেদের মতো অনীশা, কোনো বাধা নেই কোনো নিষেধ নেই।” অনন‍্যা যেন অন‍্য কোনো পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে। কেউ কিছু দেখাতে চাইছে ওকে। সব ঘটনা ওর চোখের সামনে ঘটছে। একটা খুশি পরিবার। দুটো মানুষের সুখী সংসার। কিন্তু বড়ো বাড়ির মেয়ে অনীশার পছন্দ অপছন্দের তালিকা অতি দীর্ঘ। সেই চাহিদা মেটাতে মেটাতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে অরণ‍্য। দূরত্ব বাড়তে থাকে, বাড়তে থাকে মনোমালিন্য। “না না আমি পারবো না অনীশা। আমার পক্ষে তোমার এত চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। আমার মাইনেতে যেটুকু কুলোবে আমি তো সেটাই করবো।” “তাহলে বিয়ে কেন করলে? বউ-এর চাহিদা মেটাতে হয় জানো না।” “আমি পারবো না অনীশা,আমি পারবো না। এত বড় বাড়ি ভাড়া করতে কত টাকা লাগে জানো?” “যখন অত বড়ো বাড়ির মেয়েকে বিয়ে করে রাখার মুরোদ নেই, বিয়ে করলে কেন?” “নেই নেই। ফিরে যাও, সেখানেই। পারছি না আমিও আর।” ডুকরে কেঁদে অনীশা বললো,”আজ এত ভালো একটা খবর দিলাম, তা সত্ত্বেও এমন ব‍্যবহার তোমার। কী করে যাবো এ অবস্থায়।” “আমি চাই না এই বাচ্চা। ক্যারিয়ারের এই অবস্থায় আমার পক্ষে এত বড়ো দায়িত্ব সম্ভব নয়। সামর্থ্য নেই আমার।” হঠাৎই ঘরের আলো কমে গেল, আবার সেই চাপা কান্না আর গোঙানির আওয়াজ আর কাঁচির সেই কচকচানিটা যেন আরও বেড়ে গেল। ঘরের মধ্যে গম গম করতে থাকলো দুজনের কথা কাটাকাটি, চিৎকার। আবার হালকা আলোয় অনন‍্যা দেখলো অন্তঃসত্ত্বা অনীশাকে বেশ অনেক মাস দেখে মনে হলো। অরণ‍্য ঢুকলো ঘরে মদ‍্যপ অবস্থায়, “আমার চাকরিটা চলে গেছে অনীশা।” “কী তাহলে?” “জানিনা।” অনীশা অরণ‍্যর কাঁধে হাত রেখে বললো, “অরণ‍্য কিছু হবে না।” এক ঝটকায় কাঁধ সরিয়ে ধাক্কা মারলো অরণ‍্য, মাটিতে উপড় হয়ে পড়লো অনীশা। অনন‍্যা হাত দিয়ে বাধার মতো ভঙ্গিতে এগিয়ে বললো,”আহা।” ছটফট করতে থাকলো অনীশা, রক্তে ভেসে গেল ঘর। অরণ‍্য ডাক্তার নিয়ে এলো কিন্তু অনীশা আর তার বাচ্চাকে বাঁচানো গেল না। পাগলের মতো অরণ‍্য ঘরের রক্ত মুছতে থাকলো, “অনীশা আমি আর পারছিলাম না। আর পারছিলাম না। আমি চাইনি, আমি চাইনি। বিশ্বাস করো। এত রক্ত মুছছে না, মুছছে না। কী করবো আমি! কী করবো আমি!” পাগলের মতো ঘরের এদিক ওদিক অপ্রকৃতস্থর মতো ঘুরতে থাকল অরণ‍্য। চোখের নিমিষে টেবিলের ওপর বড়ো লোহার কাঁচিটা অরণ‍্য নিজের গলায় চালালো। মেঝেতে লুটিয়ে পড়লো অরণ‍্য। অনন‍্যা নিথর মূর্তির মতো দেখছিল এসব, পিছনের দেওয়ালে ক‍্যালেন্ডারে একটা তারিখ জ্বলজ্বল করে উঠলো, ১৩ই ডিসেম্বর ২০০৬। আঁতকে উঠলো অনন‍্যা, মনে মনে বললো,”এটা তো দিশার জন্মদিন।” কাঁচির আওয়াজটা আরো তীব্রতর হলো, সাথে চাপা গোঙানির। অনন‍্যা চিৎকার করে বললো,”দিশা আমার মেয়ে তোমাদের নয়।” যেন একটা দমকা হাওয়া এসে অনন‍্যাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল। দৌড়ে দরজা খুলতে গেল অনন‍্যা, পারলো না। অনন‍্যা ঘর থেকে চিৎকার করে বললো,”বৌদি দাদা…!” ইপ্সিতা আর সুব্রত চিৎকার করলেন,”দরজাটা খোল অনন‍্যা। কোথায় গেলি তুই।” খাটের ওপর দেখা সেই মূর্তি এগিয়ে এলো অনন‍্যার কাছে, আবার সেই ফ‍্যাসফ‍্যাসে গলায় বললো, “আমার, ও আমার মেয়ে। নিয়ে যাব। নিয়ে যাবোই।” এবার অনন‍্যা স্পষ্ট দেখলো ওই মূর্তি অন্তঃস্বত্তা, বুঝতে বাকি রইলো না এরাই ওকে এসব দেখাচ্ছিল। এরা কখনোই মানুষ নয়। দিশাকে বাঁচাতেই হবে, যে ভাবে হোক। চলবে,,


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৪৬৮ জন


এ জাতীয় গল্প

→ রক্ত মাতৃকা ৫ (শেষ পর্ব)
→ রক্ত মাতৃকা ৪
→ রক্ত মাতৃকা ২
→ রক্ত মাতৃকা ১

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now