বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
তিনি আমার আমার প্রাক্তন সহকর্মী । বাংলাদেশের অন্যসব ব্যস্ত কর্মজীবীদের মতোই খুব ব্যস্ততা নিয়ে অফিসে আসে । তাঁর ক্লান্তি মাখা ঘুম ঘুম চোখ দিয়ে যেন অনেকটা সময় অফিস ব্যস্ততার সরষে ফুল দেখে ।
আমার অনেকটা সময় এমন করেই কাটে । তারপর মধ্যাহ্নের কিছু আগে তার নরম কন্ঠ শোনা যায় । কারন টা হল তিনি মধ্যাহ্ন ভোজের এবং প্রার্থনার বিরতিতে যাবেন ।
আমি স্বাস্থ্য এবং রূপ সচেতন নাগরিক ।কাজের ফাঁকে এক কাপ চা আর সামান্য সালাদেই আমার ক্ষুধা মিটে যায়।তাই আমার মধ্যাহ্ন ভোজ নেই ।আর ব্যস্ত সময়ে কাজে ফাঁকি দিয়ে বেশি সময় প্রার্থনায় মগ্ন হতেও সবাই পারে না । কিছু মানুষ প্রার্থনার উছিলায় অতিরিক্ত সময়টুকু নিজেকেই দেয়।
তাই সে সময়টা তাঁর কাজ গুলো আমাকেই দেখতে হয় । সে সুবাদে আমি যে তাঁর কাছে মন গলে যাওয়ার মতো কিছু পাই তা কিন্তু নয় ।তবে একটা ভ্রম বা আকর্ষণ তো আছে । কিংবা ওই যে মানুষের প্রতি মানুষের মায়া । হতে পারে তার প্রতিদিনের সকাল সন্ধ্যা বুক ফাটা আর্তনাদ ।
যা পাশে বসে কাজ করতে করতে শোনায় । আমি বিস্মিত হয়ে তাঁর আর্তনাদ গুলো একটু একটু করে কুড়িয়ে নেই । তারপর গভীর মায়া নিয়ে তাঁর দিকে তাকাই । দেখি তার উজ্জ্বল শ্যামলা চেহারায় অপরিপক্ক হাতের মেকাপের ছাপ । ভীষণ বেমানান কম দামী ফাউন্ডেশণটা কেমন ভেসে উঠেছে । ঠোঁটের লিপস্টিকটা কোনা বেয়ে গড়িয়ে পড়তে চাইছে ।
এক চোখে কাজল গভীর করে আঁকা ।তো আরেক চোখে যেন হাল্কা হাতের ছোঁয়া লেগেছে । আমি তার পুরো অবয়বে মনে মনে হেসে উঠি । তবে কিছু বলিনা । যদি ভুল বুঝে মিছে কষ্ট পায় । তবে পুরো চেহায় নকশি কাঁথার মায়া বুনা আছে । সংসারের হাজারও ক্লান্তিকর গল্পের ভিড়ে জানা যায় তিনি দুই সন্তানের জননী । কোন একসময়ে পিতা বিয়োগে ভাইদের সংসারে ভীষণ অসহায় হয়ে পড়েন ।
ভাইরা খরচ বাঁচাতে হাতের কাছে থাকা এক ব্যবসায়ীর হাতে বোনকে তুলে দেন । যাও কন্যা নিজের সংসার দেখো । দুই মাসের মাথায় বুঝলেন পাত্রের আগে একজন ভালবাসার মানুষ ছিল । সেই মেয়েটি প্রবাসে স্বামীর সাথে । দ্বিতীয় বাচ্চা কন্যা সন্তান জন্মের পর আরও স্পষ্ট হল তার স্বামী ফেলে আসা প্রেমে নতুন করে হাবু ডুবু খাচ্ছে । বাবা মা হীন অসহায় এই নারী কোথায় যাবে ।তার উপর অবুঝ দুই ছেলে মেয়ে ।
প্রতি দিন রাত এটা সেটা নিয়ে যুদ্ধ হয় । অনেক তাবিজ কবজ হয় । স্বামীর পুরনো প্রেম কিছুতেই যায় না । মনের দিক দিয়ে যে নারী অসহায় একটা কর্পোরেট চাকরি কি তাকে সব টুকু নিরাপত্তা দিতে পারে । তাই মনে আর শরীরে সব সয়ে যেতে হয় ।
মানুষ মাঝে মাঝে ভীষণ ক্লান্ত হয় তার জীবন এবং জগত নিয়ে ।আমি তাকে দেখে অনুভব করি । মানুষ শুধু ক্লান্ত নয় কেমন দিগভ্রম ও হয় । আমাকে তার কাজ গুলো করে দেওয়ার নিয়মিত অন্যায় আবদারে পরিনত হল। কিছুই বলতে পারি না । একটা অদম্য বিরক্তি আমাকে ও অসহ্য করে তুলে । কিন্তু একটা ভদ্রতা আমাকে থামিয়ে দেয় । আমি বাধ্য হয়ে তার প্রতিদিনের বঞ্চনার গল্প শুনি ।
তার জীবনে প্রথম পুরুষ তাঁর স্বামী ।আর তার স্বামীর জীবনে সে দ্বিতীয় নারী । বিয়েই সব নয় ।সামাজিক রীতি সমাজ চালায় ।আর মনের স্বীকৃতি জীবন চালায় ।অমন অগোছালো নারীর মুখে এমন উচ্চমার্গের কথা আমাকে হতবাক করে ।এমন অগোছালো জীবনে কেমন গোছালো দুঃখের পসরা সাজানো । তার শিল্পিত আর স্বেচ্ছাচারী স্বামীর একটা কাল্পনিক অবয়ব আমার মনের গল্প শুনতে শুনতে অঙ্কিত হয় ।
আমি মনে মনে ভাবি হয়তো কোন রূপবান এবং সুপুরুষ । যে কিনা এই বিধ্বস্ত মায়াবী নারীকে অযোগ্য মনে করে ।
এমন করে প্রায় ছয় মাস আমরা পাশাপাশি কাজ করি। সে ব্রাঞ্চ ট্রান্সফার হয়ে যাওয়ার এক সপ্তাহ আগে । কোন একটা প্রয়োজনে এক ভদ্রলোক অফিসে ঢুঁকে কাউকে খুঁজতে থাকে । তখন আমার সহকর্মী মাগরিব নামাযের প্রার্থনায় । ছোট খাটো রোগাটে ভদ্রলোকের সামান্য ঘাড় বাঁকা । কম দূরত্বে মুখোমুখি থাকায় অনিচ্ছা স্বত্বেও তার দিকে আমার চোখ গেল । আমার সামনের পিয়ন কে বললাম চেয়ার টেনে দিতে তাকে বসার জন্য।
কিছুক্ষন পর তিনি নামাজ থেকে ফিরে এলেন । সুপ্রিয় স্বামীকে দেখে আবেগে আপ্লুত হলেন । তাদের দুজনের হঠাৎ প্রেম দেখে আমি বোকা হয়ে গেলাম । আর বুঝলাম পরক্রিয়ায় আসক্ত হতে রূপ , অর্থ কিংবা ব্যক্তিত্বের প্রয়োজন হয়না । আমরা জন্মগত কিংবা স্বভাবগত ভাবেই দ্বিচারিণী । একটা দ্বিমুখী মন আমাদের সবার ভিতরেই লতার মতো প্যাচিয়ে থাকে । যা খুব গোপনে সুযোগ পেলেই নিজের মতো আচরন করে ।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now