বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
কলেজে পড়ার সময় লেখাপড়ার প্রতি যে-পরিমাণ উৎসাহী ছিলেন, সাংসারিক ব্যাপারে ততটাই ছিলেন উদাসীন। অবসর নেবার পর চিত্রটা পুরােপুরি
পালটে গেছে, লেখাপড়ার ধার-কাছ দিয়ে যান না দেখলে মনেই হবে না পড়াশুনাের সঙ্গে কস্মিন কালেও কোনাে সম্পর্ক ছিল তাদের। বদলে বন্যাকে সংসার সম্বন্ধে সেয়ানা করবার জন্যে এমন উঠে পড়ে লেগেছেন যে বন্যার প্রাণ ওষ্ঠাগত। রাহুলের তাড়া থাকে সকালে বেরােবার সময়, কাজেই ফিরে যখন আসে, ঝাপিয়ে পড়েন দুজন একসঙ্গে কারণ স্বামী-স্ত্রীকে এক জায়গায় পেলে কথামৃত শােনাবার সুবিধে হয়। মাসছয়েক ধরে বােঝাবার চেষ্টা করে যাচ্ছেন, অরুণ-বরুণকে রাহুল নিজেই যেন অফিস থেকে ফিরে একটু নিয়ে বসে, কারণ প্রাইভেট মাস্টারমশাইকে দিয়ে ওসব কাজ হয় না। রাহুল বলবার চেষ্টা করেছিল, আপনারা দুই বিদুষী অধ্যাপিকা থাকতে কিনা আমি- অর্থাৎ এক ঢিলে দুই পাখি মারার চেষ্টা। সেটা সঙ্গে সঙ্গে উড়িয়ে দিয়ে বকা-ঝকা পিসিমা বলেছেন, ‘অসম্ভব! পড়াশুনাের মধ্যে আমরা আর নেই। তাছাড়া বাবা ইজ বাবা, এসব ব্যাপারে বাবার কোনাে বিকল্প নেই।
ক্রমাগত বাস্তবের ধাক্কা খেয়ে রােমান্স যখন কলেপড়া ইদুরের মতাে চেপটে গেছে, ক্লান্ত এবং বিধ্বস্ত বন্যা করুণ চোখে চেয়েছিল রাহুলের দিকে, বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পড়ার পর। চাউনির অর্থ বুঝে রাহুল বলেছে, বাঁচতে গেলে মরতে হবে, এ ছাড়া কোনাে উপায় নেই।
‘কিছুই বুঝলাম না।
‘সহজ কথা, আমার অফিসে কাজের চাপ পড়ে যাবে, ফিরতে অনেক দেরি হয়ে যাবে আমার রােজ।
‘তাতে আমার কী সুবিধে হল ?
‘তােমারও কেনাকাটার ব্যাপার থাকবে, সন্ধে ছাড়া সময় কোথায় ?
‘ইল্লি। সংসার সম্বন্ধে দুজন জ্ঞানদায়িনীকে এড়িয়ে আমি বেরিয়ে পড়বাে? যদিই বা পড়ি, ননদিনী রায়বাঘিনীকে ছেটে ফেলবাে কী করে!
‘তাহলে আমাদের সম্পর্ক ভালাে করার একটাই উপায়।
‘বলে ফেলতে আজ্ঞা হােক।
‘সম্পর্কটাকে খুব খারাপ করে ফেলা।
‘আবার হেঁয়ালি করছাে মিতা?
‘হেঁয়ালি নয় বন্যা, সংসারে প্রবেশ করার সময় একবার বলেছিলাম, উপহাস বলে মনে করেছিলে। সেটা ছিল আসলে নির্মম সত্য।
“কী সেটা?
‘পরকীয়া। প্রথম যৌবনে পালন করতে পারনি, শেষ যৌবনে পালন করাে, শান্তি পাবে।”
তােমার সুবিধে আছে গুঁতিয়ে বেড়া ভাঙার, তুমি ছাড়া-গােরু। আমার ইচ্ছে থাকলেও দ্বিচারিণী হবার সুযােগ নেই, আমি বাঁধা গরু।
‘কোন কালে বাস করছাে তুমি! কম্পিউটার আছে, চ্যাটিং আছে, দূরভাষ যন্ত্র আছে-স্বেচ্ছাচারী হতে গেলেই বেড়া ভাঙতে হবে নাকি?”
‘বলছ! পরে সামলাতে পারবে তাে?
‘পরপুরুষকে, না পরস্ত্রীকে?
‘জোরটা যদি নিজেদের থাকে তাহলে পারবো’ রাহুল বলেছে, চেষ্টা করে যাও প্রাণপণে, আমি বলছি সুফল ফলবে।
‘মানে ঘর ভাঙার, না ঘর জোড়ার?
‘অবশ্যই পরেরটা। ব্যভিচার না করলে মানুষকে কেউ মানুষ বলেই গণ্য করে না- আমি একটা দুগ্ধপােষ্য স্বামী এবং তুমি সাধ্বী স্ত্রী। গণ্ডগােলটা হয়ে গেলেই দেখবে আমার জ্ঞানদায়িনী পিসিরা আমাকে সমঝে চলছেন, বেশি ধারে-কাছে আসছেন না।
“আর আমি?
‘তুমি তখন আর ললিত লবঙ্গলতা বৌমা নও, বন্যা নামের এক বিদ্রোহিনী নারী।
এতক্ষণ গল্পের যেটুকু বলা গেল সেটা হল মূল গল্পের প্রস্তাবনা মাত্র। গল্পটা শুরু হবে এইবার।
সন্ধে হয়ে গিয়েছে। শ্বশুরকে এবং দুই পিসি শাশুড়িকে চা দিয়ে এসেছে বন্যা। ননদ ঠাকুরঘরে সন্ধে দিতে গেছে। বকা পিসি চায়ের কাপ হাতে বন্যার ঘরের দিকে ঢুকছিল, ‘রাহুল তাে আজকাল নটা-দশটার আগে ফেরেই না, কী যে এত রাজ্যের কাজ তা বুঝি না, তােমাকেই কথাটা বলি বৌমা, সময় করে বন্যার ঘরে ঢুকে ভুরু কুঁচকে উঠল পিসিরা। বন্যা ফোন করছে কাউকে, হাসি হাসি মুখে কথা বলছে। এতই মগ্ন যে পিসির আগমন পর্যন্ত টের পায়নি। বলেই চলেছে, ‘তবু ভালাে ফোন করলে। কোনােদিন যে পরিচয় ছিল আমার সঙ্গে, সে তো ভুলেই গিয়েছিলে! যাক গে, আসল কথা বলাে “বৌমা!’ বকা পিসি বন্যার দিকে চেয়ে বললেন, ‘কে ফোন করছে?
‘বাবা, বলাে কী, দুই ছেলেও হয়ে গিয়েছে! হায় রে, আমি ভারী বুঝি আমার কথা ভেবে ভেবে তােমার ঘুম হয় না। তা, বউয়ের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেবে না?
‘বৌমা!’ অধ্যাপিকা ভঙ্গিমায় গলা চড়িয়ে ডাকলেন পিসি, আমি একটা কথা জিগগেস করছি তােমায়!
ফোনের মুখটা চেপে ধরে এদিকে চেয়ে বন্যা বললে, ‘ফোন করতে করতে কথার জবাব দেওয়া যায় না পিসিমা। যা জিগগেস করার পরে করবেন। ফের ফোনের মুখ থেকে হাত সরিয়ে বলল, “হ্যা, যা বলছিলাম, কবে আসছাে বলাে বউকে নিয়ে। আরে
শ্বশুরবাড়ি তাে কী হয়েছে, আমার শ্বশুরবাড়ি খুব কনসিডারেট, দুই পিসশাশুড়ি ডাকসাইটে অধ্যাপিকা ছিলেন। চলে এসাে, চলে এসাে।
‘হুঁ! জুতাে মেরে গােরু দান’– দাঁত কিড়মিড় করতে করতে ঘরে গেলেন বকা পিসি।
তা গেলেন, কিন্তু দৃশ্যটা ভুলতে পারলেন না কিছুতেই। সুযােগ পেলেই চেপে ধরবেন বৌমাকে, মনে মনে স্থির করে রাখলেন। কিন্তু সুযােগটা পাবার আগেই ঝর্ণা পিসির কপালেও সেই একই অভিজ্ঞতা জুটল। বলতে যাচ্ছিলেন, কাচাকাচি কাজের মেয়ে খুব কম করে করছে বােধহয়, সময়মতাে কাচা শায়া-ব্লাউজ পাচ্ছেন না তিনি, কিন্তু বলতে গিয়ে দেখলেন, যাকে বলবেন সে নিজের ঘরে ফোন ধরে প্রায় গড়িয়ে পড়ছে হেসে।
“বাবা, বলাে কী! তােমার পেটে পেটে এত! আগে যখন কথা বলতে তখন তাে। একেবারে নিপাট ভালােমানুষ, ভাজা মাছটি উলটে খেতে পারাে না। আর এখন বলছো, আমার মতাে মহিলা তুমি জীবনে দেখােনি।
তােমার বউকে বলতেই হচ্ছে ফোন করে।
কী বললে, উঁহু, ঘুষ চাই, এমনিতে হবে না....সত্যি, পারােও বটে তুমি ! কিছুই কি আটকায় না তােমার মুখে? না না, ফোন করাে, আমার ভালাে লাগে। কথাগুলাে তােমার আগের মতােই রয়েছে..আরে আমি কি ইচ্ছে করলেই পারি নাকি ফোন করতে? বাড়ির বউ বলে কথা, অত স্বাধীনতা কি আছে নাকি আমার!
‘কমও তাে কিছু দেখছি না’- ফিস ফিস করে বলতে বলতে সরে গেলেন ঝকা পিসি। দিদির চোখে পড়েছে একদিন, একটু সাবধানে কথা বলাে এটাই শিক্ষা দিতে এসেছিলেন ভাইপাের বউকে, এসে যা দেখলেন তাতে তাে বাকরুদ্ধ হয়ে যাবারই কথা, বলবেন কী তাকে! দেখেশুনে নিজেদেরই তাে আক্কেল গুড়ুম। বৌমা এমনিতে বেশ চলিয়ে-বলিয়ে হলেও স্বভাব-চরিত্রে যে এরকম গােলমাল আছে সেটা তাে আগে কখনাে বােঝেননি। অবশ্য নিজের বরের সঙ্গেই যে ওইভাবে ঢলেপড়া ভঙ্গিতে কথা বলে আগে আগে চোখে তাে পড়েছে অনেক, তার চালচলন নিয়ে সন্দেহটা আগেই হওয়া উচিত ছিল।
কিন্তু বৌমা নীচে নেমেছে বলেই তারাও নিজেদের সম্মান বিসর্জন দেবেন, এ তাে আর হয় না। কার সঙ্গে বৌমা এত ফষ্টিনষ্টি করছে সেটা জিজ্ঞাসা করতেও তাদের রুচি হয় না, বরং সুজাতাকেই একদিন জানতে বলবেন কথাটা, এইরকম ঠিক করলেন।
মুশকিল হল, সুজাতাকে মুখ ফুটে কথাটা বলবার আগেই সুজাতা নিজেও এ ঘটনার সাক্ষী হয়ে পড়ল। অরুণ-বরুণ মাস্টারমশাইয়ের কাছে পড়তে বসার আগে দুধ দিয়ে কর্নফ্লেক্স খায়। দুধটা কেটে গেছে আজ, ওদের কী খেতে দেবে জিজ্ঞাসা করতে ঢুকেছিল বৌদির কাছে, গিয়ে দেখল হাসতে হাসতে বিছানায় গড়িয়ে পড়েছে বন্যা, বলছে, বলতে পারলে তুমি কথাটা? তুমি কী গাে, ঠাট্টা করেও কি এমন কথা বলতে আছে!
তােমার বউ শুনলে কী ভাববে!
এই দেখাে, আবার সেই প্রস্তাব!
আরে বাবা আমি একটা গৃহবধু, তােমার সঙ্গে সন্ধেবেলা আমি নাটক দেখতে যাবো?
স্বামী?
আমার স্বামী-দেবতাটি আজকাল রাত দশটার আগে বাড়িই ফিরছেন না, জানি না তিনি আবার
নতুন কোনাে প্রেরণার সন্ধান পেয়েছেন কিনা..., আঁ, না না বলেন তাে অফিসে কাজের খুব চাপ পড়েছে। কিন্তু এতক্ষণ পর্যন্ত কি অফিস খােলা থাকে! কী জানি বাপু।-এই, না না, দু-এক দিন অন্তরই ফোন করবে, লক্ষ্মীটি, তােমার এই ফোনটুকুর আশাতেই আমি থাকি সারাদিন।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ...