বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
লেখা:সাদিয়া হাসান
এই কৌটার ভেতর কী আছে জানিস?’
‘কী’
‘এর ভেতর দৈত্য আছে। তোর ঘাড় মটকাবে।’
‘হা হা...প্লাস্টিকের কৌটায় দৈত্য!’
কৌতূহল দমিয়ে রাখতে না পেরে আপুর হাত থেকে ছোঁ মেরে কৌটাটা নিয়ে নিলাম।
‘দ্যাখ নিলু, এটা খুলবি না।’
বিশ্বজয়ের মতো একটা হাসি দিয়ে বললাম, ‘কেন, এটা খুললে কী হবে?’
‘এটা খুললে তুই অজ্ঞান হয়ে যাবি। তারপর ডাক্তার আঙ্কেলকে ফোন করতে হবে।’
‘ঠিক আছে, খুলব না। তাহলে বল, এটার ভেতর কী আছে?’
মুখের হাসিটাকে আরও বিস্তৃত করে আপু বলল, ‘ককরোচ...’। বুকের ভেতর ছ্যাঁত্ করে উঠল। এই ছোট্ট প্রাণীকে দেখলেই আমার শরীরের ভেতর ঘিনঘিন করে।
‘তেলাপোকা দিয়ে তুমি কী করবে, আপু?’
‘কাল বায়োলজি ল্যাবে লাগবে। এটাকে কেটেকুটে ব্যবচ্ছেদ করা হবে।’
আপু বলে কী! সত্যিই যদি তেলাপোকা নামক পোকাটাকে কাটা লাগে, তাহলে আমি সায়েন্স পড়ব না। ব্যাঙ কাটা আলাদা জিনিস। তাই বলে তেলাপোকা! ইমপসিবল!
‘আপু, তুই আমাকে পোকাটাকে দেখাবি?’
‘না। এটার মুখ খুললেই পোকাটা উড়ে যাবে।’
খুব কাছ থেকে তেলাপোকা দেখার বিরাট সুযোগ মিস করে মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে থাকলাম।
আপু বুঝতে পেরেছে, তার আদরের বোনের মন খারাপ হয়ে গেছে, তাই কৌটাটা আমার কাছেই রেখে দিতে বলল। কাল কলেজে যাওয়ার আগে নিয়ে যাবে। এই শর্তে যে আমি যেন কৌটার মুখ না খুলি।
আমি আগ্রহ নিয়েই পড়ার টেবিলে কৌটাটা রেখে দিলাম।কিছু খেতে দেওয়া দরকার। কিন্তু তেলাপোকা কী খায়, তা-ই তো জানি না।
সারা দিন আর তেলাপোকা নামক পোকাটার কথা মনে পড়েনি। সন্ধ্যায় পড়তে বসার পর কৌটাটা দেখে মনে পড়ে গেল।
তেলাপোকাটা কি বেঁচে আছে? সারা দিন তো এটাকে কিছুই খেতে দেওয়া হয়নি। তাহলে নিশ্চয়ই মরে গেছে।
প্রচণ্ড আগ্রহ আর খানিকটা ভয় নিয়ে কৌটার মুখ খুলে দেখি, না, তিনি এখনো জীবন্ত এবং বেশ আয়েশ করেই শুঁড় নাড়াচ্ছেন।
এই প্রথম খুব কাছ থেকে আমি তেলাপোকা দেখছি। বাথরুমে মাঝেমধ্যে উড়ে বেড়াতে দেখি। দেখলেই গায়ের ভেতরটা ঘিনঘিন করে ওঠে।
কিন্তু এটাকে খুব কাছ থেকে পরীক্ষা করে দেখে যা বুঝলাম, তেলাপোকা নামক এই খুদে প্রাণী দেখতে খারাপ নয়। মাথার ওপর সুন্দর একটা ডিজাইন। গায়ের রংটাও সুন্দর। শুঁড়টাও অনেক সুন্দর করে নাড়ায়।
কোনো এক বিচিত্র কারণে এটার জন্য খুব মায়া লাগছে। আপু কাল এটাকে কেটেকুটে নাড়িভুঁড়ি বের করবে। কিন্তু এতো ছোট একটা প্রাণী, এর ভেতর কীই-বা আছে ব্যবচ্ছেদ করার মতো?
এটাকে কিছু খেতে দেওয়া দরকার। কিন্তু তেলাপোকা কী খায়, তা-ই তো জানি না।মনে পড়েছে! আপুকে একবার পড়তে শুনেছিলাম, তেলাপোকা সব খায়। এটি সর্বভূক প্রাণী। কাগজের কিছু ছোট ছোট টুকরা খেতে দিয়ে কৌটার মুখ বন্ধ করে কৌটার গায়ে ছোট ছোট ছিদ্র করে দিলাম, যেন বাতাস চলাচলে সুবিধা হয়।
আচ্ছা, এটাকে ছেড়ে দিলে কেমন হয়?
কিন্তু আপু যদি বুঝতে পারে আমি এটাকে ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা মাথায় এনেছি, তাহলে কাল ল্যাবে তেলাপোকার বদলে আমাকেই ব্যবচ্ছেদ করার জন্য নিয়ে যাবে।
নিজে ব্যবচ্ছেদ হওয়ার ভয়েই পোকা ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা মাথা থেকে বাদ দিয়ে ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। বিপত্তিটা তখনই ঘটল। বিছানা ঝাড়তেই দেখি একটা তেলাপোকা মরে পড়ে আছে। চিত্কার দিতে গিয়েও নিজেকে কন্ট্রোল করে নিলাম। মাথার মধ্যে তখনই বুদ্ধিটা খেলে গেল। চোখ বন্ধ করে বাঁ হাত দিয়ে মরা তেলাপোকার শুঁড় ধরে উঁচু করলাম। এটাকে এখন কৌটায় রেখে ওটাকে ছেড়ে দেব। আপু কল্পনাও করতে পারবে না আমার মতো একজন তেলাপোকা ফোবিয়া মেয়েকে দিয়ে এ কাজ হতে পারে!
মরা তেলাপোকাটা হাতে নিয়ে কৌটার মুখ খুলে দেখি, কাগজের টুকরাগুলো নেই, আর পোকাটা আরামে এক কোনায় বসে আছে। যেন সে নিশ্চিত ছিল তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now