বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

‘স্যার’ সম্বোধনের বিকল্প খুঁজতে হবে

"ভিন্ন খবর" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান তুষার কবির (০ পয়েন্ট)

X [লেখক: গাজী মিজানুর রহমান লেখক ও সাবেক সিভিল সার্ভেন্ট] জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ের একটি বক্তৃতার সূত্র ধরে ‘স্যার’ সম্বোধন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা চলছে। এ থেকে বোঝা যায়, স্যার সম্বোধন নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা চাপা ক্ষোভ আছে। হয়তো তাদের অনেকের এমন অভিজ্ঞতা আছে-সরকারি কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রবিশেষে ‘স্যার’ বলে সম্বোধন না করলে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। সবাই অবস্থার পরিবর্তন আশা করেন। কিন্তু পরিবর্তন আনতে শুধু সার্কুলার দিয়ে একটি পক্ষকে অন্তর্ভুক্ত করলে হবে না। সম্বোধনের সঙ্গে দুটি পক্ষ, যথা সেবাপ্রত্যাশী জনগণ এবং সরকারি কর্মকর্তা উভয়েরই ভূমিকা রয়েছে। যারা সেবাগ্রহীতা হিসাবে অফিসে যান, তাদের সাহস, সামাজিকতা-জ্ঞান, আত্মবিশ্বাসসহ অন্য কিছুতে ঘাটতি থাকলে সেখানেও প্রণোদনা দেওয়ার প্রয়োজন আছে। ‘স্যার’ সম্বোধনটি কোথায় কোথায় এবং কীভাবে ব্যবহৃত হয়, তা আগে দেখা যাক। শব্দটির উৎপত্তি যেখানে, সেই ইংরেজদের দেশে এর ব্যবহার কয়েক রকম। শ্রদ্ধা দেখিয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ কাউকে ‘স্যার’ বলে সে দেশে সম্বোধন করা হয়। আবার অপরিচিত কোনো ব্যক্তিকে ভদ্রভাবে সম্ভাষণ জানানোর জন্য ‘স্যার’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। আমাদের দেশে এ দুই ধরনের ব্যবহার একরকম নেই বললেই চলে। ওই দেশে শিক্ষায়তনে ছাত্ররা শিক্ষকদের ‘স্যার’ বলেন, এটি আমাদের দেশেও আছে। অফিস-আধিক্ষত্রে পুলিশ বিভাগ ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের নিচের অফিসার কর্তৃক ওপরের অফিসারকে ‘স্যার’ বলার রেওয়াজ ইংরেজের দেশে আছে, কিন্তু সিভিল প্রশাসনে এমন রীতি নেই। আমাদের দেশে উভয় ক্ষেত্রে ‘স্যার’ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। মাঝে মাঝে তা অফিসের বাইরেও ক্ষমতা ও আধিপত্য-জ্ঞাপক সম্বোধন হিসাবে বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়। আমাদের দেশে আমলাতন্ত্রে নিজেদের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ‘স্যার’ সম্বোধন সিনিয়র-জুনিয়রের পরিচয়জ্ঞাপক। যারা ‘স্যার’ শুনতে অভ্যস্ত, তারা ভাবেন চাকরিতে যেমন বেতন আছে, সুযোগ-সুবিধা আছে, তার সঙ্গে জুনিয়রের কাছ থেকে ‘স্যার’ ডাক শুনতে পাওয়া একটি প্রাধিকার। আমলাতন্ত্রের মধ্যে যেসব ক্যাডারে কঠোর আনুগত্য-নীতি মেনে চলা হয়, সেখানে এক ব্যাচ ওপরের অফিসারকে জুনিয়র অফিসাররা ‘স্যার’ বলেন। অন্যান্য ক্যাডারে পদোন্নতি পাওয়ার পর পদাধিকারীকে তার নিচের স্তরের সহকর্মীরা ‘স্যার’ বলেন। এ ধারা এ উপমহাদেশে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমল থেকে চলে আসছে। কর্মকর্তাদের নিজেদের মধ্যে এ সম্বোধন অফিসে এবং অফিসের বাইরে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য। সিনিয়রের সঙ্গে যোগাযোগের সময় হাজার রকম বিনয়-প্রকাশক এবং আনুগত্য-জ্ঞাপক শব্দ, যেমন ‘শ্রদ্ধভাজন’, ‘শ্রদ্ধেয় বয়োজ্যেষ্ঠ’, ‘বিজ্ঞ সিনিয়র সহকর্মী’- ‘স্যার’ সম্বোধন ছাড়া এসব সম্বোধন ব্যবহার করে কেউ একজন হয়তো এক-দুইদিন চালিয়ে নিতে পারবেন; কিন্তু দীর্ঘদিন পারবেন না। ‘স্যার’ সম্বোধনের প্রাপক বিষয়টি লক্ষ করে একদিন ঠিকই ধরে ফেলবেন। ‘স্যার’ বলায় ঘাটতি দেখে সিনিয়র অফিসার কৌশলে তখন তাকে এড়িয়ে যাবেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে, যেখানে পদোন্নতির মাধ্যমে ওপরে ওঠার নিয়ম, সেখানে ‘স্যারের’ প্রচলন আগে না থাকলেও এখন শুরু হয়েছে। বেসরকারি ব্যাংকে কাছাকাছি সিনিয়রকে ‘ভাই’ বলে ডাকলেও বেশ সিনিয়রদের ‘স্যার’ বলা হয়। এটি সরকারি দপ্তরের এক ধরনের অনুকরণ বলা যায়। রাজনৈতিক অঙ্গনে নিজেদের মধ্যে সম্বোধন হিসাবে ব্যবহৃত হয় ভাই, লিডার, নেতা, নেত্রী, আপা, সিনিয়র ইত্যাদি। তবুও এখানে বেশি সিনিয়রদের ‘স্যার’ বলার রেওয়াজ আছে। ‘স্যার’ ব্যবহৃত হলে যার উদ্দেশে এটি বলা হয়, তিনি খুশি হন। আর খুশি করে ফল-লাভ হলে সে কাজ সবাই করতে চাইবেন, এটাই স্বভাবিক। কাজের সময়ে দপ্তরে সিনিয়রকে ‘স্যার’ বলার রেওয়াজ থাকা দোষের কিছু নেই। প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নিজেদের ভেতরে প্রতিষ্ঠানের ভালোর জন্য যে সম্বোধন প্রযোজ্য, তা থাকলে অন্যদের কিছু বলার নেই। কিন্তু ‘স্যার’ বলার ক্ষেত্রটি প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রমান্বয়ে চারদিকে প্রসারিত হয় বলেই কথা ওঠে। অফিসে যারা আসেন, তাদের সেখানে কোনো কাজ থাকলেই অনেক অফিসার ভাবেন, এর কাছ থেকে ‘স্যার’ ডাক শুনতে পাওয়া তার পাওনা। ডাকে ঘাটতি পড়লে তখন কাজ করে দেওয়ায় ঘাটতি পড়ে, এমন অভিযোগ আছে। অভিযোগকারীরা বলেন, এভাবে-ওভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয় ‘স্যার’ বলা দরকার। অন্যদিকে ‘স্যার’ বলে যদি কাজ করে নিতে সহজ হয়, তাহলে অপরদিক থেকে সেটা বলার প্রতি আগ্রহ বাড়ে। কিন্তু ‘স্যার’-এর ব্যবহার সীমিত হয়ে আসতে হবে, কারণ, এর সঙ্গে ঔপনিবেশিক একটা যোগসূত্র আছে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণের স্টেটগুলোয় ‘স্যার’-এর দাপ্তরিক ব্যবহার বেশি। উত্তরের রাজ্যগুলোয় তেমন নেই। আমরা জানি, দাসপ্রথা টিকিয়ে রাখার জন্য দক্ষিণের রাজ্যগুলো চেষ্টা করেছিল। অর্থাৎ, ঔপনিবেশিক মানসিকতা ওসব অঞ্চলে বেশি। আমাদের দেশেও ব্রিটিশ আমল থেকে এ আনুষ্ঠানিক ‘স্যার’ সম্বোধন চলে আসছে। ‘স্যার’ শব্দের ব্যবহার সীমিত করার জন্য তাই পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। তাই জনগণের একজন সদস্যের কাছ থেকে ‘স্যার’ ডাক শোনার প্রত্যাশায় ইতি টানা দরকার। জেলা-উপজেলা অফিসে কাজে গিয়ে যে কোনো ব্যক্তি যে কোনো কর্মকর্তাকে নিজ গরজে শ্রদ্ধা দেখানোর জন্য যদি ‘স্যার’ না বলতে চান, তাতে তার সেবা পেতে যেন কোনো ক্ষতি না হয়, মন্ত্রণালয়গুলোর পক্ষ থেকে তা নিশ্চিত করা দরকার। অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়গুলোয় অতিরিক্তভাবে ‘স্যারচর্চা’ কমানো প্রয়োজন। এখানে দেখা যায়, ঊর্ধ্বতন অফিসারকে বোঝাতে ‘পরিচালক স্যার’, ‘ডিজি স্যার’, ‘সচিব স্যার’, ‘মন্ত্রী স্যার’-এমন বলা হয়। কারও অনুপস্থিতিতে আমরা শ্রদ্ধা প্রকাশ করতে গিয়ে এমন ভুল বাক্য ব্যবহার করে থাকি। সে ক্ষেত্রে ‘পরিচালক মহোদয়’, ‘ডিজি মহোদয়’ ইত্যাদি বরং ভালো শোনায়। শ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশ ঘটে শারীরিক ভাষায় বা কলমের ভাষায়। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শ্রদ্ধা করে যেমন ‘স্যার’ বলা হয়, সম্বোধনটিকে তেমন শ্রদ্ধার মধ্যে রাখতে পারা ভালো। এ সম্বোধনপ্রাপ্তি সরকারি অফিসের কর্মকর্তাদের জন্য থাকতে হবে জনগণের সম্পূর্ণ ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। কাউকে শ্রদ্ধা দেখিয়ে বলতে চাইলে বলবেন, অন্যথায় নয়। এর জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক লেভেলে শিক্ষাটা সঠিকভাবে হওয়া দরকার, যাতে প্রত্যেক নাগরিকের মধ্যে একটা ন্যূনতম ব্যক্তিত্ব জন্ম নেয়, যেন তিনি দেশের নাগরিক হিসাবে নিজস্ব শ্রদ্ধার জায়গা থেকে না হলে কাউকে স্যার বলতে বাধ্য না হন। অন্যদিকে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতি ওপর মহলের নির্দেশনা থাকলেই চলবে, যাতে সম্বোধন নিয়ে বাধ্যবাধকতা আরোপিত না হয়। সম্বোধনের এই রীতি বদলাতে সময় লাগতে পারে। তবে পরিবর্তনের ধারা সূচিত হওয়া দরকার। আর পরিবর্তনমুখী স্রোত শুধু এক আমলাতন্ত্রে নয়, সব স্থানে প্রবাহিত করতে হবে। লেখক: গাজী মিজানুর রহমান লেখক ও সাবেক সিভিল সার্ভেন্ট ©www.jugantor.com


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৩০০ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
  • TARiN
    Golpobuzz ২ বছর, ৭ মাস পুর্বে
    gj

  • SH∀HᗩЯIДЯ
    User ২ বছর, ৭ মাস পুর্বে
    আপনি করেও বলা যায় শিক্ষক ব্যতীত

  • ZAiM
    User ২ বছর, ৭ মাস পুর্বে
    হুম...