জিজেসরা যখন নেপালে (পর্ব ৩)

X জিজেসরা যখন নেপালে (পর্ব ৩) লেখকঃ রোদেলা রিদা আগের অংশের পর...... নেপালের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর পোখারা যা কাঠমুন্ডু উপত্যকার পশ্চিমে এবং নেপালের কেন্দ্রে অবস্থিত। সাত হ্রদের শহর নামে পরিচিত পোখারা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাথে সাথে এই শহর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যেও সমৃদ্ধ। পৃথিবীর মধ্যে যেন এক টুকরো স্বর্গ এই পোখারা শহর। নেপালের সব থেকে সুন্দর জায়গা হলো পোখারা। আমরা থামেল থেকে পোখারা বাসে করে যাবো। বাস ভাড়া করতে সমস্যা হলো না। আমরা থামেলের যেই হোটেলে ছিলাম সেই হোটেলই আমাদের বাসের ব্যবস্থা করে দিল। পরেরদিন আমরা বাসে করে পোখারার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। বাসে আমরা খুব মজা করলাম। বেচারা সিয়াম ভাইয়ারই একটু মন খারাপ ছিলো। তার সামিরাকে ছাড়ে আসতে হলো! বেচারার মনের কষ্ট কে দেখে। বাসে আমরা পোখারায় কি কি করবো সে নিয়ে অনেক কথা বললাম। আমিঃ আমরা কিন্তু পোখারায় অবশ্যই প্যারা গ্লাইডিং করব! আরিজাঃ কিহ!! প্যারা গ্লাইডিং!! না না ওসব কিছু করবো না! ফারহান ভাইয়াঃ কেন?? প্যারা গ্লাইডিং করতে কতো মজা তুমি জানো? আরিজাঃ তুমি আগে কখনো প্যারা গ্লাইডিং করছো ফারহান?? ফারহান ভাইয়াঃ না করিনি! তো কি হইছে এখন করবো! আমিঃ সেটাই এখন করবো! আরিজাঃ না না কোনো প্যারা গ্লাইডিং ট্যারা গ্লাইডিং হবে না! বিজয় ভাইয়াঃ ও মা!!! কিল্লায় হবে না?? আমিঃ অবশ্যই হবে! তোমার ভয় করতেছে তুমি করিও না! আমরা করব! ফারহান ভাইয়াঃ হুমম.. হৃদয় ভাইয়াঃ ঠিকই তো তোমার ভয় করতেছে তুমি করিও না! ওরা করতে চাচ্ছে ওরা করুক! : তুশার ভাইয়াঃ হৃদয় ভাইয়া আপনি প্যারা গ্লাইডিং করবেন না?? হৃদয় ভাইয়াঃ ইয়ে মানে.. আমার তো মাথায় ব্যাথা! তো আমি ওসব করবো না! আমিঃ হৃদয় মিয়া হৃদয় ভাইয়াঃ আমিঃ জান্নাতপি, ইসুপি, তানিম ভাইয়া , জিএফ, রিফাত, ইকবাল, ফড়িং আরও যারা যারা আছো, তোমরা প্যারা গ্লাইডিং করবে তো?? সবাইঃ হ্যাঁ....। আমিঃ ইয়াহু... খুব মজা হবে! আমাদের বাস আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তায় ছুটে চলছে! আমরা এতে অবশ্য বেশ আনন্দ পাচ্ছি! এর মধ্যেই ইসুপি বলল, :- আমারে এনা কেউ চা দেও! ফড়িংঃ এখন চা কই পাবো? ইসুপি? জান্নাতপিঃ হু এখন চা কই পাবে ইসু? আমরা তো এখন বাসে! ইসুপিঃ জানি না! কিন্তু আমি চা খাবো! কেউ আনে দেও! ফারহান ভাইয়াঃ চা তো নাই! কিন্তু আমার কাছে জুস আছে! খাবে? ইকবালঃ আমার কাছে চিপসও আছে! খাবে নাকি ইসুপি? ইসুপিঃ না আমি চা খাবো!! জিএফঃ এক কাজ করো ইসু! তুমি চোখ বন্ধ কর! করে ভাবো তুমি চা খাচ্ছো! আর ভাবতে ভাবতে ঘুমের দেশে চলে যাও আর যখন উঠবা তখন আমরা পৌঁছে যাবো! তখন তুমি যতো কাপ চা খাওয়ার খেয়ে নিও!! ইসুপিঃ নাহারপি রেনুপিঃ কিরে ইসু! তোকে এখনি চা খেতে হবে?? ইসুপিঃ হ্যাঁ! আমার খুব চা খেতে ইচ্ছে করছে! ফড়িংঃ আমারও খুব খিদা লাগছে! ফারহান ভাইয়া: হুমম আমারও অবশ্য খিদা পাইছে! রিধিঃ আমারও! মাহিন ভাইয়াঃ সমস্যা নাই! সাইমন ভাইয়া বলল সামনেই একটা রেস্তোরাঁ আছে! ওখানে আমরা খাওয়া দাওয়া করে নিবো! তারপর আমাদের বাস সেই রোস্তোরায় থামলো। আমরা খাওয়া দাওয়া করে আবার বাসে চড়ে বসলাম। বাসে আমরা গানের কলি খেললাম, শব্দের খেলা খেললাম, চোর পুলিশ খেললাম! খেলতে খেলতে আমরা পোখারায় পৌঁছে গেলাম! পোখারা শহরটা অনেক গুছানো! বাসের জানালা দিয়েই উপভোগ করছিলাম অতিসুন্দর এই শহরটিকে! পোখারায় আমরা আমাদের হোটেলে আসলাম। হোটেলে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে আমরা ঘুরতে বের হলাম পোখারা শহর দেখতে। ঢালিউড/ বলিউডের অনেক ছবির গানের শুটিং এই পোখারা শহরে হয়ে থাকে। আমরা অনেজ ফটোগ্রাফি করলাম। তানিম ভাইয়া বলল, :- আজ বউ থাকলে, বউকে সাথে করে নিয়ে আসতাম! বলিউড / ঢালিউড নায়ক-নায়িকাগুলোর মতো করে আমরাও ছবি তুলতাম! আজ বউ নাই বলে! আমরা সবাইঃ মেহেদি ভাইয়াঃ ভাবি নাই তো কি হইছে ভাইয়া! আসো আমরা ছবি তুলি! গানের শুটিংও করবো নে তানিম ভাইয়াঃ মজা হচ্ছে?? -_- ফিজ ভাইয়াঃ আরে! ভাই মজা হবে কেন! আসোতো ছবি তুলি! তারপর আমরা অনেক ছবি তুললাম! তারপর ডেভি'স ফলস, ভারাহি মন্দির ও বেশ কিছু জাদুঘরও ঘুরলাম! ঘুরতে ঘুরতে সন্ধ্যা নেমে এলো! আমরা হোটেলে ফিরলাম। হোটেলে সব ব্যাগ বোঁচকা রেখে চলে গেলাম লেকের ধারে! লেকের ধারে বসে আমরা সবাই পাহাড়ের আড়ালে সূর্যাস্ত দেখলাম! কি অসাধারণ সৌন্দর্য! সত্যিই অপরূপ লাগছিল দেখতে তারপর আমরা হোটেলে ফিরে আসি। এবার আমরা রাতের পোখারা শহর দেখতে বেরুলাম। সন্ধ্যায় ক্যাফে আর পাবগুলো সরব হয়ে ওঠে পোখারার লেক রোডে। আমরা অনেক দোকান ঘুরে ঘুরে দেখলাম। আমরা মেয়েরা অনেক ধরনের কসমেটিকস কিনলাম। ফারহান ভাইয়া আর তুশার ভাইয়া নেপালি টুপি কিনল। রিফাত আর ইকবাল টি-শার্ট ও জুতা কিনল! রনি ভাইয়া একটা ওয়ালম্যাট কিনল, ফিজ ভাইয়া হাতের ঘড়ি কিনল! বাকিরা কি কিনল জানি না! বোতলবাবা দোকানে কি যেন দেখছিল! তানহা বলল, :- কি বোতলবাবা কি দেখো? :- কিছু না! ভাবতেছি এখানে বোতল বিক্রি করতে বসে পরি! আমি :- হ্যাঁ হ্যাঁ! তুই তোর বোতলগুলো নিয়ে এখানপ বসে পড়! বোতল বিক্রি করিস! :- তোর কি রে?? :- আমার কিছু না! ওহ না থাক! আমাদের যদি আবার তোর বাচ্চাগুলোর মানে পানির বোতল এর প্রয়োজন হয় তখন কি করবো! থাক! আমাদের দেশে রেখে তুই এখানে বোতল বিক্রি করতে বসিস! কেমন?? :- রিদা.... :- কি?? :- ভাগ! :- সোহানপাগলা আমাকে ভাগতে বলে নিজেই রিফাতের সাথে অন্য দোকানে চলে গেল! আমি, আতিয়াপি, জিএফ, ফড়িং, ইসুপি, রিধি, তানহা আর জান্নাতপি অন্য একটি দোকানে গেলাম! ওখানে আমরা নেপালি পোশাক ট্রায়েল করলাম! ওগুলো পড়ে ছবি তুললাম! তারপর আমরা সবাই এখানকার একটা রেস্তোরাঁয় রাতের খাবার সেরে হোটেলে ফিরে ঘুম দিলাম! আমাদের ভোরের আগে উঠতে হবে কারণ আমরা পরেরদিন সারাংকোট থেকে সূর্যোদয় দেখবো! তাই সবাই একটু তাড়াতাড়িই ঘুমায় পড়লাম।....... চলবে......... ( ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ)