বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

আঁখি এবং আমরা ক'জন (৯)

"ছোটদের গল্প" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান TARiN (০ পয়েন্ট)

X নতুন ম্যাডাম আসার কারণে আমাদের স্কুলে অনেক ধরনের পরিবর্তন হতে লাগল–কিছু ভালো কিছু খারাপ। আমরা এখন লাইব্রেরিতে বই পড়তে পারি সেটা ভালো, মাঠে দৌড়াদৌড়ি করে খেলতে পারি সেটা ভালো। আগে বইয়ের কয়েকটা প্রশ্ন মুখস্থ করলেই হত এখন পুরো বইটা পড়তে হয় সেটা খারাপ। আগে একজনের হোমওয়ার্ক দেখে আরেকজন নকল করে ফেলতে পারতাম এখন সবার আলাদা আলাদা করে করতে হয় সেটাও খারাপ। নতুন ম্যাডাম সম্পর্কেও আমরা নতুন নতুন জিনিস জানতে লাগলাম। আগে একজন স্যার-ম্যাডামকে দেখলে আমরা চেষ্টা করতাম দূরে দূরে থাকতে–নতুন ম্যাডাম আসার পর সেটাও পাল্টে গেছে–আমরা নিজে থেকে গিয়ে তার সাথে কথা বলি। আমাদের কথা বলার বেশি কিছু থাকে না কিন্তু মেয়েদের কথা শেষ হয় না। যেমন তারা ম্যাডামকে দেখলে বলে, “ম্যাডাম আপনার শাড়িটা কী সুন্দর!” আমরা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেও বুঝি না শাড়ির কোন জায়গাটা সুন্দর। শাড়ি তো শাড়িই–সেটা আবার সুন্দর হয় কেমন করে? নতুন ম্যাডাম অবশ্যি মেয়েদের কথাকে গুরুত্ব দেন, হাসি হাসি মুখে বলেন, “থ্যাংকু!” আবার কোনো কোনো মেয়ে বলে, “ম্যাডাম আপনার টিপটা কী সুন্দর!” কপালে ছোট একটা টিপ আছে কী নেই সেইটাই আমাদের চোখে পড়ে না–মেয়েদের ঠিকই চোখে পড়ে। সেইটা না কি আবার সুন্দর! সবচেয়ে সাহস বেশি আমাদের শান্তার, সে একদিন নতুন ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে বলল, “ম্যাডাম-ম্যাডাম আপনার টিপটা মাঝখানে হয় নাই।” কী আশ্চর্য–ম্যাডাম দাঁড়িয়ে গিয়ে বললেন, “তাই না কি?” “জি ম্যাডাম। আরেকটু ডান দিকে যাবে।” নতুন ম্যাডাম টিপটা খুলে নতুন করে লাগালেন, শান্তার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “এখন ঠিক আছে?” শান্তা মাথা নাড়ল, “না ম্যাডাম বেশি ডান দিকে হয়ে গেছে।” নতুন ম্যাডাম আবার খুলে বাম দিকে সরালেন, তারপর জিজ্ঞেস করলেন, “এখন?” “উঁহু। বেশি বাম দিকে হয়ে গেছে!” আমি নতুন ম্যাডাম হলে টিপ ছুঁড়ে দিয়ে শান্তার ঘাড় ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে বলতাম, ভাগো এখান থেকে। কিন্তু নতুন ম্যাডামের ধৈর্যের শেষ নাই, মাথাটা নিচু করে শান্তার কাছে এগিয়ে নিয়ে বলেন, “নাও। তুমি ঠিক করে লাগিয়ে দাও!” শান্তা তখন তার সবগুলো দাঁত বের করে হাসতে হাসতে ম্যাডামের কপালে টিপ ঠিক করে দেয়! এরকম কাণ্ড মনে হয় কেউ জীবনেও দেখেনি। তবে নতুন ম্যাডামকে নিয়ে আমাদের যে কোনো সমস্যা হয় নাই সেটাও ঠিক না। প্রথম দিন আমরা শুনেছি নতুন ম্যাডাম হচ্ছেন ডক্টর রাইসা খালেদ। যার অর্থ ম্যাডাম হচ্ছেন ডাক্তার আমাদের বজলু খবর আনল যে নতুন ম্যাডাম স্টেডিয়াম মার্কেটে রোগী দেখেন, তিনশ টাকা ভিজিট। ম্যাডাম হচ্ছেন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ। সুজন খবর আনল অন্যরকম, সে বলল ম্যাডামের চেম্বার এবিসি টাওয়ারে ভিজিট চারশ টাকা, স্কুলের ছেলেমেয়েদের ফ্রি দেখে দেন। সবচেয়ে বড় কথা ম্যাডাম মোটেও চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ না, ম্যাডাম হচ্ছে নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ। এই নিয়ে বজলু আর সুজন প্রথমে তর্ক করল, তারপর ঝগড়া করল শেষে মারামারি করল। সুজন মোটামুটি গুণ্ডা টাইপের সে বজলুকে আচ্ছামতোন পিটিয়ে দিল-মারামারির মাঝামাঝি শান্তা দৌড়ে গিয়ে নতুন ম্যাডামকে খবর দিল-নতুন ম্যাডামও দৌড়ে এসে দুজনকে থামালেন। তারপর কোমরে হাত দিয়ে বললেন, “কী ব্যাপার? স্কুলের ভেতর মারামারি? তোমাদের হয়েছেটা কী?” সুজন বলল, “বজলু আপনাকে নিয়ে মিথ্যা কথা বলছে।” বজলু গর্জন করে বলল, “আমি মিথ্যা কথা বলি নাই–তুই বলেছিস।” সুজন আরো জোরে গর্জন করে বলল, “তুই বলেছিস।” ম্যাডামের সামনেই আবার ঝগড়া লেগে যায় এরকম অবস্থা। ম্যাডাম দুইজনকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “কী মিথ্যা কথা বলেছে?” সুজন বলল, “বজলু বলেছে আপনি না কি চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ। ভিজিট তিনশ টাকা। আসলে–” নতুন ম্যাডাম চোখ বড় বড় করে বলল, “আসলে?” “আসলে আপনি নাক-কান-গলার ডাক্তার। আমি এবিসি টাওয়ারে আপনার নাম দেখেছি।” বজলু গরগর করতে করতে বলল, “দেখে নাই।” আমরা সবাই গোল হয়ে দাঁড়িয়ে এই নাটকটা দেখছিলাম। আবিষ্কার করলাম ম্যাডাম হঠাৎ হাসতে শুরু করেছেন। হাসতে হাসতে বললেন, “এই ব্যাপার?” আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কে ঠিক ম্যাডাম?” ম্যাডাম আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে দুইজনের হাত ধরে কাছে টেনে এনে বললেন, “এর পরের বার আমাকে নিয়ে মারামারি করার আগে আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করে যেও। বুঝেছ?” দুইজনেই পিটপিট করে ম্যাডামের দিকে তাকাল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কেন ম্যাডাম?” ম্যাডাম আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, “তার কারণ আমি ডাক্তার না। আমার কোনো চেম্বার নাই। আমি চিকিৎসা করি না। আমি ভিজিট নেই না।” সুজন মাথা চুলকে বলল, “আপনি ডাক্তার না?” “না।” “কিন্তু অফিসে লেখা আছে ডক্টর রাইসা–” “সেটা লেখা আছে তার কারণ আমি একটা পি-এইচডি করেছি। কেউ পি-এইচডি করলে তাকে ডক্টর বলে।” রিতু মাথা নেড়ে বলল, “ও বুঝেছি! বিএ এমএ যেরকম সেরকম পি-এইচডি।” “হ্যাঁ।” ম্যাডাম মাথা নাড়লেন, “সেরকম।” “ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ যেরকম ডক্টর সেরকম ডক্টর–” ম্যাডাম হেসে ফেললেন, বললেন, “হ্যাঁ। তবে ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ অনেক বড় মানুষ। জ্ঞানী মানুষ–তার সাথে আমার তুলনা কর না, সেটা ঠিক হবে না।” রিতু আরো কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, ম্যাডাম তার আগেই সুজন আর বজলুর দিকে তাকিয়ে বললেন, “এখন তোমরা দুইজন বল তোমাদের কী বলার আছে?” কারো কিছু বলার নেই। দুইজনেই বোকার মতোন একটু হাসার চেষ্টা করল। ম্যাডাম বললেন, “একজন আরেকজনের সাথে হ্যান্ডশেক করে বল, আমি দুঃখিত। আমি আর কোনোদিন মারামারি করব না। বল।” দুজনেই একটু গাঁইগুই করে শেষে একজন আরেকজনের হাত ধরে বলল, “আমি দুঃখিত। আমি আর মারামারি করব না।” . কয়েকদিনের মাঝেই আমাদের নতুন ম্যাডাম অনেক বিচিত্র বিচিত্র কাজ করে ফেললেন। কিন্তু সবচেয়ে বিচিত্র কাজটার কথা আমরা জানলাম মাসখানেক পরে।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ২৫৬ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now