বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
ডিসেম্বর মাস, তাও তুষার বেশ ঘামছে। কারণ, ঘড়িতে এগারোটা বাজতে মাত্র ১৩মিনিট বাকি। আর সে এখনো মোহাম্মদপুর থেকে বের হতে পারে নাই। এভাবে সোজা হাঁটলে দেরি হবে, টোকিও স্কয়ারের সামনে থেকে রাস্তার অপর দিকের একটা গলিতে ঢুকে গেলো সে, তার বিশ্বাস সে হারাবে না।
এলাকাটা তার চেনা না, তাও মনে হচ্ছে এটা কোনও একটা শর্টকাট ওয়ে।এখানে কখনো আসা হয় নাই তাই এভাবে ঢিল মেরে রাস্তা আন্দাজ করতে হচ্ছে তুষারের।আসারও খুব একটা ইচ্ছা ছিলও না, আসতে হলও কারণ প্রিয়-ক্যারিয়ার ডট কমের মিটিং ছিলও রিং রোডে।মিটিং না ঠিক, মিট আপ বলা চলে।
তার কলেজের বন্ধুর বড় ভাই ফারুক হলেন প্রিয় ক্যারিয়ার ডট কমের মালিক, বেশ চালাক এবং উপস্থিত জ্ঞানসম্পন্ন লোক। বিনা বেতনে তার ওয়েবসাইটের জন্য নিয়মিত খাটিয়েছে সে তুষারকে, কিন্তু পারিশ্রমিক চাওয়ার সুযোগ কখনো দেয় নি তুষারকে। যখনি বেতনের কথা বলার জন্য তুষার হা করতে নেয়, তখনই আর বলতে পারে না।
ব্যাপারটা এমন না যে ফারুক ভাই কথা ঘুড়িয়ে অন্য কথায় যান, সত্যটা হলও প্রয়োজনীয় সব কথা শেষ করে সে নিজেই বলে যে,
“তুষার, অনেক দিন ধরেই তো পরিশ্রম করছো। এবার তোমাকে তোমার সম্মানী দিবো”।
তিনি বেশ কয়েকবার এ কথা বললেও, এখন অবধি কথাকে কাজে রূপান্তর করে নাই।হয়ত এর কারণ হলো, পারিশ্রমিককে ঘুরিয়ে “সম্মানী” আখ্যা দিয়েছেন তিনি। হয়ত “সম্মানী” বলার মাধ্যমেই তিনি তুষারকে সম্মান দিয়ে দিলেন, এখন টাকা না দিলেও চলবে এমনটা ভাবছেন তিনি। হতেও পারে, কারণ সম্মান তো আর টাকায় কেনা যায় না।তাই বলে কি, মানুষ সম্মান দিয়ে চাল-ডাল কিনতে পারবে? বাড়িওয়ালা বাড়িভাড়া চাইতে আসলেই,
“ভাই আপনার বাড়িতে থাকি, তাই আপনাকে অনেক সম্মান করি। এর কাছে টাকা-পয়সা তুচ্ছ”
বলে দিলেই তো হয়। চেষ্টা করে দেখতে হবে পদ্ধতিটা। এদেশে শিল্পীদের এই “সম্মানী” শব্দটার মারপ্যাঁচে বেশী পড়তে হয়।তাদের শিল্পের বিনিময়ে শুধু সম্মান করা হয়। হয়তো ভাবা হয়, সম্মান দিলে তাদের পেট ভরবে।
চিন্তা করতে করতে বেশ ক্লান্ত লাগছে তুষারের। ক্লান্তিটা কাটানো দরকার। এখন এক কাপ চা আর একটা সিগারেট হলে খুব ভালো হতো। কিন্তু ভাবনার এই জায়গাটায় এসেই তুষার আটকে গেলো, আগেও এমন হয়েছে অনেকবার।সে সিগারেট খায় না, তাই এবারো চা-সিগারেটের প্লানটা মাঠে মারা গেলো।
শুধু চা খেতে হবে, কিন্তু কোনও টং দেখা যাচ্ছে না। শুধু টং না, সব দোকানই বন্ধ দেখা যাচ্ছে। একে তো এটা বাজার না, তাই দোকানপাট কম। তার উপর যা হয়ত ছিলও, সব গুলোর শাটার নামানো। এত তাড়াতাড়ি সব দোকান বন্ধ কেনও?ফোনে সময় দেখেই তুষার উত্তরটা পেয়ে গেলো।
এগারোটা সাইত্রিশ বাজে। ব্যাপারটা বেশ বাজে।পরিবেশও খুব একটা ভালো ঠেকছে না, তাও এখন পজিটিভ ভাবতে হবে। এখন নিজেকে বুঝাতে হবে ল্যাম্প পোস্টের আলোয় একা একা হাঁটার সুযোগ পাওয়া গেলো।
ল্যাম্পপোস্ট যত গুলো দেখা যাচ্ছে, সবগুলোতে লাইট লাগানো হয় নি, ৩/৪টা গ্যাপ রেখে লাইট লাগানো হয়েছে। হয়ত স্থানীয় প্রশাসন সরকারের খরচ যথাসম্ভব কম করাতে চেয়েছেন। দেশের সবাই যেহেতু জনগণকে নিয়ে ভাবছে, সরকারকে নিয়ে না ভাবলে ব্যাপারটা না-ইনসাফি হবে।
কিন্তু, এখন সরকার বা জনগণ কাউকে নিয়ে ভাবার সময় নেই।সবচেয়ে বড় চিন্তার কারণ হলো ছিনতাইকারী।মোহাম্মদপুর অফলাইনে এবং অনলাইনে উক্ত কারণে বেশ বিখ্যাত।অনেক মিমস ও দেখেছে ফেসবুকে মোহাম্মদপুর নিয়ে। আচ্ছা এতটা নেগেটিভ চিন্তা আসার তো কোনও কারণ নেই, হতেও পারে পাবলিক মোহাম্মদপুরে ছিনতাই নিয়ে বাড়াবাড়ি করেছে।হয়ত বাস্তবে এই এলাকা ঢাকার সবচেয়ে নিরাপদ এলাকা।তিলকে তাল বানানো এই জাতির স্বভাব, তাই চিন্তা দূর করে তুষার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।
এতক্ষণ গলির রাস্তা ধরেই হাটছিলো তুষার, এখন মেইন-রোডে চলে এসেছে। যাই হোক, কোনও বিপদে পড়তে হয় নাই তার।এলাকাটা আসলেই নিরাপদ, পাবলিক হুদাই বানোয়টা ছিনতাই এর বানোয়াট কাহিনী শুনায়।
মুহূর্তের মধ্যেই তুষার ভুল প্রমাণিত হলও।সামনে একটু দূরেই ৬-৭জন ছেলেপেলে সিগারেট হাতে একসাথে আড্ডা দিচ্ছে।তুষার তাদের দেখছে, কিন্তু তারা এখনো তুষারকে খেয়াল করে নাই।খেয়াল করার দরকারও নাই, তুষার সামনে পড়লে ছুড়ি অথবা পিস্তল ঠেকিয়ে বলবে “যা আছে বাইর কর”।নিয়ে নিবে তুষারের শখের ৫মাস আগে কেনা অপ্পো ফোন আর চামড়ার প্রিয় মানিব্যাগ।পালানোর পথ নাই, ভাগ্যে এটাই ছিলও।তুষার আগোনের আগেই তারা তুষারকে দেখতে পেলো, তাদের সবার চোখ বেশ বড় হয়ে গেলো।হয়ত শিকারের গন্ধ পেয়েছে তাই তাকিয়েছে, কিন্তু চোখ বড় হওয়ার বিষয়টা তুষারের বুঝে ঠেকলও না।একটু এগোতেই তাদের সবচেয়ে সামনের দুইজন দৌড় দিয়ে চলে গেলো।কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সবাই চলে গেলো।মনে হচ্ছে এরা বাঘ দেখেছে, তুষারকে কি বাঘের মতো দেখা যায়?সে তো শুকনা একটা ছেলে।তাকে দেখে দৌড়ে পালানোর কারণ বুঝতেই পারছে না।হয়তো কোনও ঐশ্বরিক শক্তিতে সে বেঁচে গেলো।
বাম দিকে তাকাতেই সে সেই শক্তির দেখা পেলো, একটা পুলিশের গাড়ি হেডলাইটে জ্বালিয়ে তার দিকে আসছে।গাড়ি থেকে দুইজন পুলিশ নামলো।তুষারের এখন ইচ্ছা করছে তাদের পা ধরে গড়াগড়ি করতে, কিন্তু সেটা সম্ভব না।অন্তত হাত ধরে ধন্যবাদ তো দেয়া যায়, সেটাই করা উচিত।প্রাণ ভরে ধন্যবাদ দিবে তুষার।সামনে গিয়ে এগিয়ে সালাম দেয়ার আগেই মোটা অফিসারটা কড়া গলায় বললো,
“যা আছে বাইর কর”!
সূত্র এই গল্পটার লেখক আমি না
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now