বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
দীপুর দম বন্ধ হয়ে আসে উত্তেজনায়। তাদের কালাচিতাই তা হলে সেই জায়গা! কিন্তু সে তো কিছুতেই বলবে না জামশেদ সাহেবকে। তারিক খুঁজে বের করেছে জায়গাটা। তারিককে জিজ্ঞেস না করে সে কিছু বলতে পারবে না।
ভদ্রলোক খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, এবার বুঝতে পেরেছ কেন এই চিতাবাঘ কোথায় পাওয়া গেছে এটা জানতে চাইছি?
দীপু মাথা নাড়ল। তারপর বলল, কিন্তু আমি এখন সেটা বলতে পারব না।
তুমি জায়গাটা চেন?
হ্যাঁ, চিনি।
তা হলে চলো আমার সাথে, নিয়ে চলো সেখানে।
দীপু ওর আব্বার দিকে তাকাল। আব্বা অন্য দিকে তাকিয়ে আছেন, কাজেই আবার ঘুরে তাকাল জামশেদ সাহেবের দিকে। বলল, চাচা, আপনি কিছু মনে করবেন না, কিন্তু এখন আমি আপনাকে সেখানে নিয়ে যেতে পারব না।
কেন? ভদ্রলোক এবারে যেন রেগে উঠলেন।
আমি আমার বন্ধুকে কথা দিয়েছি ওটা কাউকে বলব না। ওকে জিজ্ঞেস না করে আমি আপনাকে সেখানে নিয়ে যেতে পারব না।
দীপু বুঝতে পারল ভদ্রলোক রেগে উঠেছেন। এখানে রেগে ওঠার কি আছে সে বুঝতে পারছিল না। জামশেদ সাহেব খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে খুব ঠান্ডা গলায় বললেন, তোমার বন্ধুর বাসা কোথায়? ওর বাসায় টেলিফোন আছে?
না, ওদের টেলিফোন নেই। বাসা অনেক দূরে, ধোপীর খালের ওধারে সুতার পাড়ায়।
ওর আব্বার নাম কী, কী করেন?
আব্বার নামটা ভুলে গেছি। কাঠমিস্ত্রির কাজ করেন।
হোয়াট? কাঠমিস্ত্রি?
ভদ্রলোক খুব অবাক হয়ে গেলেন, তারপর ওর আব্বার মুখের দিকে তাকিয়ে ইংরেজিতে বললেন, হাসান তোমার ছেলে কীরকম মানুষের সাথে ঘুরোঘুরি করছে খবর রাখ না?
ওর আব্বা বললেন, জামশেদ, আমি পরে এটা নিয়ে তোমার সাথে আলাপ করব।
ভদ্রলোক খুব বিরক্ত হয়ে উঠে দাঁড়ালেন, দীপুকে প্রায় ধমকে উঠে বললেন, তোমার ঐ বন্ধুকে পরে বলে দিলেই হবে। এখন আমার সাথে চলো।
দীপ খুব ঠান্ডা গলায় বলল, না।
হোয়াট?
আপনি আমার উপর রাগ করছেন কেন? আমি তো বলেছি আমি আমার বন্ধুকে জিজ্ঞেস না করে আপনাকে সেখানে নিয়ে যেতে পারব না।
ভদ্রলোক ভীষণ রেগে দীপুর আব্বার দিকে তাকালেন, তারপর ইংরেজিতে বললেন, ছেলেটিকে তুমি ভদ্রতা শেখাওনি মনে হচ্ছে।
দীপুর এবারে খুব রাগ হয়ে গেল। বড়দের সাথে ও কখনও অভদ্রতা করে না, কিন্তু তাই বলে সে এবারে চুপ করে থাকল না। আস্তে আস্তে বলল, চাচা, আমি অল্প অল্প ইংরেজি বুঝতে পারি। আমি যদি আপনার সাথে অভদ্রতা করে থাকি তা হলে তার জন্যে মাফ চাইছি। তারপর একটু থেমে যোগ করল, কিন্তু তবুও আমার বন্ধুকে জিজ্ঞেস না করে আমি আপনাকে সেখানে নিয়ে যেতে পারব না।
ভদ্রলোক রাগে থমথম করতে লাগলেন। আব্বা দীপুকে বললেন, দীপু তুই যা এখন, হাতমুখ ধুয়ে মানুষ হ।
দীপু বেরিয়ে যেতেই আব্বা বললেন, জামশেদ, আমার মনে হয় তুমি ঐ কথাটি না বললে ভাল করতে।
কোন্ কথাটি?
কার ছেলের সাথে ঘুরাঘুরি করছে খবর রাখি কিনা।
কেন? আজেবাজে লোকের বদ ছেলের সাথে ঘুরাঘুরি করছে, আর তুমি—
আস্তে জামশেদ, আমি চাই না দীপু এসব কথা শুনুক।
কেন?
তার ভাল লাগবে না। আমি ওকে আমার মনের মতো মানুষ করতে চাই।
কোন্টা তোমার মনের মতো? বদ ছেলেপিলের–
আস্তে জামশেদ। আমার ক্ষমতা ছিল দীপুকে ঢাকায় কিংবা বাইরে খুব ভাল ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে মানুষ করার। খুব স্মার্ট হয়ে বড় হতো তা হলে, ইংরেজিতে খাঁটি ব্রিটিশ টান থাকত, আর দশটা বড়লোকের ছেলের মতো কমিক পড়ে টিভি দেখে মানুষ হতো। হয়তো খুব ভদ্র হতেই পারত—রাস্তার একটা ছেলের সাথে হয়তো বেশ ফ্রেন্ডলি হতে পারত কিন্তু সব বাইরে থেকে। ভেতরে ভেতরে কোনোদিন ওদের নিজের মানুষ বলে মনে হতো না—ওর ক্লাসের যে ছেলেটা পয়সার অভাবে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে আইসক্রীম বিক্রি করতে চলে গেছে, ওর জন্যে ভেউভেউ করে কাঁদতে পারত না! আমি চাই আমার ছেলে খুব সাধারণ একটা ছেলে হোক-কাঠমিস্ত্রির ছেলের সাথে ঘুরেঘুরে নিজেকে চিনুক। রাস্তায় মার খেয়ে ফিরে আসুক—আরেকদিন পাল্টা মার দিয়ে নিজের শক্তির উপরে বিশ্বাস হোক। দুধ মাখন খেয়ে খেয়ে শো-কেসের পুতুল যেন না হয়।
জামশেদ সাহেব চুপ করে বসে থাকলেন। অনেকক্ষণ পর আস্তে আস্তে মাথা নেড়ে বললেন, ওসব বড় কথা ছেড়ে দাও হাসান। মা নেই বলে এরকম হয়েছে। কোথায় তুমি…
আব্বা হাত নেড়ে বললেন, ওসব ছেড়ে দাও। আমার ছেলেকে আমি ঠিক আমার মনের মতো করে মানুষ করব। যেটা ভাল বোঝে সেটা করবে, তাতে দুনিয়া রসাতলে যাক–
জামশেদ সাহেব একটু রেগে উঠলেন, যদি আমার ছেলে হতো আমি পিটিয়ে সিধে করে দিতাম। কোথায় পেয়েছে চিতাবাঘটা জানতে চেয়েছিলাম, বললই না। অথচ চিন্তা কর কত ইম্পর্ট্যান্ট।
আব্বা হেসে বললেন, কালকের দিনটা থেকে যাও, দীপু তার বন্ধুর সাথে কথা বলে যদি দেখাতে চায় দেখিয়ে দেবে।
হ্যাঁ, আমি প্লেনের টিকেট ক্যানসেল করে থেকে গেলাম, আর তোমার ছেলে বলল, দেখানো যাবে না। তখন?
হুঁ–তা বটে। আব্বা একটু হেসে বললেন, তোমার এত বড় বড় সব আর্কিওলজিসই তোমরা কেন বাচ্চা ছেলেদের উৎপাত করে বেড়াচ্ছ? নিজেরা খুঁজে বের করে ফেল না।
দীপু পাশের ঘর থেকে শুনল জামশেদ সাহেব রেগেমেগে ইংরেজিতে কী বলছেন আর দীপুর আব্বা হো হো করে হাসছেন।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ...