বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

কাঁচা এলাচের গন্ধ পার্ট ১

"ফ্যান্টাসি" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান Ridiyah Ridhi (০ পয়েন্ট)

X শ্রাবণ মাসের ঝুম বৃষ্টিতে লোকটা এলো। বাড়ির পিছন দিকে বিশাল বাগান। ফলফলারির গাছে দিনেরবেলাও অন্ধকার হয়ে থাকে। তারপর খাল। খালপারে বহুকালের পুরনো একটা বকুলগাছ। লোকটা দাঁড়িয়েছিল বকুলগাছটার তলায়। পরনে হালকা নীল রংয়ের লুঙ্গি আর গেরুয়া রংয়ের হাফহাতা ফতুয়া। দুটোই জীৰ্ণ । খালি পা। মুখে মাথায় কাঁচাপাকা চুলদাড়ি। তেমন লম্বা না। মাঝারি সাইজের রোগা পটকা মানুষ। চেহারায় চোখে পরবার মতো কোনও বৈশিষ্ট্য নেই। ভিজে কাকপক্ষীর মতো চুপসে গেছে। পুরোপুরি দুপুর তখনও হয়নি। রান্না শেষ করে আমি বেরিয়েছি গোসল করতে। রান্নাঘরের পাশেই কলতলা। সুন্দর বেদী করে চাপকল বসানো। সাধারণত চাপকল চেপেই গোসল করি। কলের মুখে প্লাস্টিকের সবুজ বালতিটা বসিয়ে কল চেপে বালতি ভরি, তারপর মগে তুলে তুলে শরীরে ঢালি। এরকম বৃষ্টিতে কলতলায় বসে গোসল করতে ইচ্ছা করল না। হাঁটুর ওপর লুঙ্গি তুলে, গামছাটা কাঁধে ফেলে উঠানে নামলাম। বৃষ্টিতে ভেজাও হবে, গোসলও হবে। কুকুরটা শুয়ে আছে আমি যে ঘরে থাকি সেই ঘরের বারান্দায়। এরকম তুমুল বৃষ্টিতে আমাকে উঠানে নামতে দেখে মুখ তুলে একবার তাকালো। তারপর আবার আগের কায়দায় ঘুম।রান্নাঘর নিয়ে বাড়িতে মোট পাঁচটা ঘর। রান্নাঘরের পাশে আমার থাকার ঘরটা লম্বা মতন। চারদিকে ইটের দেয়াল, মাথার ওপর টিনের চালা সামনে বেশ চওড়া বারান্দা। ঘরের ভেতর দুদিকে বড় সাইজের দুটো চৌকি ফেলা। আলনা আছে, পুরনো কাঠের একখানা আলমারি আছে, দুটো হাতলঅলা চেয়ার আছে। চেয়ারগুলোর বয়স কত কে জানে। বেশ ওজনদার। আজকাল এত ওজনদার চেয়ার হয় না। আলমারি আলনা চেয়ার চৌকি, অর্থাৎ এই ঘরের সব জিনিসই পরিত্যাক্ত বাড়ির কাজের লোকদের ব্যবহারের জন্য। ঘরটাও তাদের জন্যই। এখন কাজের লোক বলতে বাড়িতে কেউ নেই। থাকবে কেন? বাড়িতে মালিক না থাকলে, তার পরিবার না থাকলে কাজের লোক দিয়ে কী হবে? থাকি শুধু আমি। বাড়ির কেয়ারটেকার। আমার নাম খাদেম। ক্লাস নাইন পর্যন্ত পড়েছিলাম। কাজকাম জোটে না দেখে এই বাড়ির কেয়ারটেকারের কাজ নিয়েছি। থাকা খাওয়া বাদে মাসিক বেতন তিন হাজার টাকা। বাড়ির মালিক কাশেম সাহেব টেক্সটাইল মিলের মালিক। ঢাকার গুলশানে থাকেন। মাস দুমাসে এক আধবার পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়িতে আসেন। দুচারদিন থাকেন। তখন বাড়িটা জীবন্ত হয়। অন্যসময় মৃত একা এই খাদেম আর ওই কুকুরটা মৃত বাড়িটায় পড়ে থাকে। বাহাত্তোর বিঘার ওপর বাড়িটা পাহারা দেয়। ফলফলারীর দিনে পাহারাটা একটু বেশি দিতে হয়। ফলচোরের তো আর অভাব নেই দেশ গ্রামে! আম কাঁঠালের দিনে, জাম সফেদার দিনে কুকুরটাকে সঙ্গে নিয়ে বাগানের দিকে ঘুরে বেড়াই। তাও রক্ষা করতে পারি না সব । চুরি হয়ই। এই অঞ্চলের বনেদী বাড়ি মানে টিনের বিশাল বিশাল ঘর। সেইসব ঘর আবার দোতলা হতে হবে। নিচতলা ওপরতলা দুতলার মেঝেই হতে হবে কাঠের। এই অঞ্চলে বলে পাটাতন করা ঘর। একেকটা ঘরের পিছনে পঁচিশ তিরিশলাখ টাকা খরচা। কাশেম সাহেবের বাড়িতে এরকম তিনখানা ঘর। ঘরগুলো তালা মারা। আমি মাঝে মাঝে খুলে পরিষ্কার করি। ঝাটফাট দেই। এই বৃষ্টিতে ঘর পরিষ্কারের দরকার নেই। বর্ষাকালে কাশেম সাহেব বাড়িমুখো হন না। তার ওপর এবার হয়ে গেছে প্রবল বন্যা। মাঠঘাট ছাপিয়ে বর্ষার পানি ঢুকেগেছে বাড়িতে। কোনও কোনও বাড়ির উঠান ভেসে গেছে, নিচু বাড়িগুলোর ঘরেও ঢুকে গেছে পানি। এই বাড়ি উঁচু বলে উঠান পর্যন্ত এখনও পানি আসেনি। তবে বাগানের দিকে খাল উপচে একটু একটু করে ঢুকছে। খালে তুমুল স্রোত। পদ্মার ঘোলাপানি তুমুল বেগে ছুটছে খাল বেয়ে। এলাকার বাড়িগুলো বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে লোকটা এখানে এলো কোত্থেকে? প্রথমে তাকে আমি দেখতে পাইনি। বৃষ্টি এমন নামা নেমেছে, আকাশভাঙা বৃষ্টি যাকে বলে। চারদিক একেবারে ধূসর করে ফেলেছে। ঘন কুয়াসার মতো অবস্থা। দশ বিশহাত দূরের কিছু দেখা যায় না। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে খালপারটায় গেছি। বন্যার কী অবস্থা দেখবো, খালে নেমে কয়েকটা ডুব দিয়ে গোসল সারবো। তখন হঠাৎই দেখি লোকটা। বকুলতলায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করছে। বৃথা চেষ্টা। কোনও মানে নেই। আমি অবাক। আপনি কে? কোন বাড়ির লোক? এখানে দাঁড়িয়ে কী করছেন? একসঙ্গে তিনটা প্রশ্ন। লোকটার ভড়কে যাওয়ার কথা। কিন্তু সে সরল মুখ করে হাসল। আমাকে আপনি চিনবেন না। আমি এই গ্রামের না। তাহলে? কোন গ্রামে বাড়ি? এখানে এলেন কী করে? লোকটি আবার সেরকম হাসলো। ভাসতে ভাসতে আসছি বাবা। এরকম বৃষ্টি বন্যায় অন্যকোনও দিকে যেতে পারিনি। এজন্য এখানটায় দাঁড়িয়ে আছি৷ কথাবার্তা সুন্দর, বলার ভঙ্গি সুন্দর কিন্তু কী রকম রহস্যময়। ভাসতে ভাসতে আসা মানে কী? বৃষ্টি বন্যায় অন্য কোনওদিকে যেতে পারেনি মানে? আমার মনের কথা যেন সে শুনতে পেল। বলল, অবাক হচ্ছেন বাবা? ভাসতে ভাসতে আসা, অন্য কোনওদিকে যেতে না পারা... অবাক হওয়ারই কথা। আপনি কি বন্যার পানিতে ভেসে এলেন? ভাসতে ভাসতে এখানটায় হঠাৎ একটুখানি শুকনা মাটি পেয়ে উঠেছেন? আমার এই প্রশ্নের কোনও উত্তর দিল না সে। মৃদু হাসল। এখান থেকে যাবেন কোথায়? দেখি কোনদিকে যাওয়া যায়। তবে আর ভাসতে ইচ্ছা করছে না বাবা।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৩৫২ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
  • পীযূষ কান্তি দাস
    User ৫ মাস পুর্বে
    গল্প টা কি এখানেই শেষ ?