বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
“যদি কেউ দেখে ফেলে?” “দেখলে দেখবে।"
তিতুনি একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, “তুমি আসলে কী চাও, আমাকে বলবে?”
মেয়েটা কিছুক্ষণ গাছের ডালে বসে তিতুনির দিকে তাকিয়ে রইল, তারপর গাছ থেকে নেমে আসতে শুরু করল। তিতুনি ভয়ে ভয়ে এদিক-সেদিক তাকিয়ে থাকে, তার পরিচিত কেউ যদি এখন হঠাৎ করে চলে আসে তখন কী হবে?
মেয়েটা নিচে নেমে এসে বলল, “চলো।"
“কোথায়?”
স্কুলে ।
তিতুনি ভয় পাওয়া গলায় বলল, “স্কুলে?”
হ্যাঁ ।“দুইজন একসাথে?”
মেয়েটা মাথা নাড়ল, “না, ঠিক একসাথে না, একটু আগে-পরে। তাহলে ঝামেলা কম হবে।”
“ঝামেলা কম হবে?” তিতুনি গরম হয়ে বলল, “একটা ক্লাশে দুইজন তিতুনি আর সেটা ঝামেলা কম?” মেয়েটা ভালো মানুষের মতো হাসল, বলল, “তুমি এত ভয় পাচ্ছ
কেন? আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি স্কুলের কেউ আমাদের দুইজনকে একসাথে দেখবে না। হয় তোমাকে দেখবে না হয় আমাকে দেখবে। কখনোই বুঝবে না আমরা দুইজন আলাদা মানুষ।” “সেটা কেমন করে হবে?”
মেয়েটা বলল, “সেটা আমার উপর ছেড়ে দাও।”
“তোমার উপর ছেড়ে দিলে কী হয় সেটা আমার খুব ভালো জানা আছে। টোটন আমাদের দুইজনকে একসাথে দেখার পর কি ঝামেলা হয়েছিল মনে আছে?”
মেয়েটা বলল, “মনে আছে। আর সেটা আমার জন্যে হয় নাই, সেটা হয়েছে তোমার মাতবরির জন্যে।"তিতুনি চোখ পাকিয়ে বলল, “আমার মাতবরি? আমি কী মাতবরি করেছিলাম?" “পুরো একটা নাটক করলে আমাকে ফ্যানের উপর বসে
থাকতে হলো।” “তাহলে আমার কী করা উচিত ছিল?”
“আমার উপরে ছেড়ে দেওয়া উচিত ছিল।”
“তাহলে তুমি কী করতে?”
“আমি টোটনের মাথার ভেতরে ঢুকে তার নিউরন থেকে দুইজনকে একসাথে দেখার দৃশ্যটা মুছে দিতাম।”
তিতুনি মুখ হাঁ করে বলল, “তুমি কী করতে?”
“বললাম তো, যেসব নিউরনে দৃশ্যটা আছে সেটা মুছে দিতাম।
দুইজনকে একসাথে দেখার কোনো স্মৃতি থাকত না। কেস কমপ্লিট।” তিতুনি মুখ হাঁ করে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থেকে আবার জিজ্ঞেস করল, “তুমি কী করতে?”
মেয়েটা একটু বিরক্ত হয়ে বলল, “এক কথা কয়বার বলব?”
তিতুনি রীতিমতো কষ্ট করে তার হাঁ হয়ে থাকা মুখটা বন্ধ
করে বলল, “তুমি যখন ইচ্ছা যার মাথার ভেতরে ঢুকে যা খুশি তাই
করতে পারো?” মেয়েটা কোনো কথা না বলে মাথা নাড়ল, যেন এটা এমন কোনো ব্যাপারই না। তিতুনি আবার জিজ্ঞেস করল, “কীভাবে?”
মেয়েটা কেমন যেন হতাশভাবে মাথা নাড়ল, বলল, “তুমি কেন ভুলে যাচ্ছ আমি তোমার মতো দেখতে হলেও তোমার মতো বোকাসোকা, সাদাসিধে মানুষ না। আমি অনেক দূর গ্যালাক্সি থেকে এসেছি; অনেক উন্নত, অনেক বুদ্ধিমান একটা প্রাণী-যার ক্ষমতা তুমি কিংবা তোমাদের মানুষের চৌদ্দ গুষ্টি কল্পনা করতে পারবে না-"
তিতুনি মুখ শক্ত করে বলল, “তুমি যে মহাকাশের যত বড় লাট সাহেবই হও না কেন, তুমি কিন্তু খুবই খারাপ ভাষায় কথা বলছ।” “সেটা আমার দোষ না, সেটা তোমার দোষ। তোমার সাথে কথা
বলার জন্য আমি তোমার ব্রেন ব্যবহার করছি, তুমি যেভাবে কথাবলো আমি সেভাবে কথা বলছি। এইগুলি আমার কথা না, এইগুলি তোমার কথা, তুমি নিজে ভদ্রভাবে কথা বলা প্র্যাকটিস করে তারপর আমাকে উপদেশ দিও।”
তিতুনি বকুনিটা হজম করে বলল, “তোমরা কীভাবে কথা বলো?” “আমরা কথা বলি না।”
“কথা বলো না? একজনের সামনে আরেকজন মুখ ভোঁতা করে বসে থাকো?”
মেয়েটা ফিক করে হেসে ফেলল, বলল, “আমাদের মুখ নাই, তাই
মুখ ভোঁতা করার উপায় নাই।” “মুখ নাই?” তিতুনি রীতিমতো চিৎকার করে বলল, “তাহলে খাও কোন দিক দিয়ে?” মেয়েটা বলল, “তোমাকে এগুলো বোঝাতে সময় লাগবে। তুমি
ধরেই নিয়েছ মহাজাগতিক প্রাণীদেরও তোমাদের মতো হাত, পা, মুখ
থাকতে হবে, খেতে হবে, কথা বলতে হবে। সেটা সত্যি নয়। হাত,
পা, মুখ ছাড়াও প্রাণী হওয়া সম্ভব। তোমাদের সাথে মহাজাগতিক
প্রাণীর শুধু একটা জায়গায় মিল আছে।”
“সেটা কী?”
“তোমরা নূতন জিনিস জানতে চাও। আমরাও চাই।” তিতুনি মুখ শক্ত করে বলল, “সরি।”
মেয়েটা জিজ্ঞেস করল, “সরি?”
“হ্যা, আমার নূতন জিনিস জানার কোনো ইচ্ছা নাই। কেন
আমার এলজেবরা শিখতে হবে? বাংলা ব্যাকরণ শিখতে হবে?
তেলাপোকা কীভাবে খাবার হজম করে জেনে আমার কী লাভ?” মেয়েটা আবার হেসে ফেলল, বলল, “আমি জানি। কিন্তু তোমাদের পৃথিবীর বোকাসোকা মানুষেরা যে এ পর্যন্ত টিকে আছে তার কারণ হচ্ছে মানুষ সব সময় নূতন জিনিস জানতে চায়।”
“আমি চাই না।"
“চাও। তাই একটু পরে পরে আমার কাছে আমাদের সম্পর্কে জানতে চাইছ। আমরা কীভাবে কথা বলি। কীভাবে খাই।”তিতুনি মুখ শক্ত করে বলল, “সেটা অন্য কথা।”
“অন্য কথা না, একই কথা।”
হঠাৎ করে তিতুনি কেমন যেন আতঙ্কে জমে গেল, বলল, “সর্বনাশ!”
“কী হয়েছে?”
“মাহতাব চাচা।”
মেয়েটা সামনে তাকাল, দেখল আব্বুর দূর সম্পর্কের ভাই মাহতাব চাচা বগলে একটা ছাতা আর হাতে একটা বাজারের ব্যাগ নিয়ে সড়ক ধরে আসছেন। তিতুনি শুকনো গলায় বলল, “এখন কী হবে?”
মেয়েটা বলল, “আমার উপর ছেড়ে দাও। আমি যা বলব তুমি ঠিক তাই করবে।" “ঠিক আছে।”
দুজনে হেঁটে যেতে লাগল, মাহতাব চাচা আরেকটু কাছে আসার
পর হঠাৎ মেয়েটা বলল, “এখন।”
“এখন কী?”
“তুমি নিচু হয়ে ভান করো তোমার জুতার ফিতে খুলে গেছে, সেটা বাঁধার চেষ্টা করো। মাথাটা নিচু করে রেখো যেন তোমার চেহারা দেখতে না পায়।"
তিতুনি মাথা নিচু করে জুতার ফিতা বাঁধার ভান করতে
লাগল আর মাহতাব চাচা কাছে এসে দাঁড়ালেন। মেয়েটা বলল, “স্লামালেকুম চাচা ।" “ওয়ালাইকুম সালাম তিতুনি। স্কুলে যাচ্ছিস?”
“জি চাচা।”
“স্কুলে লেখাপড়া হয়?”
মেয়েটা তিতুনির মতো হি হি করে হাসল। বলল, “মাঝে মাঝে।” “আজকালকার লেখাপড়ার মাথামুণ্ডু কিছু বুঝি না। তোর বাবা
ভালো আছে?”
আছে ।“মা? টোটন?”“আছে। সবাই ভালো আছে।"
“ঠিক আছে। স্কুলে যা।" বলে মাহতাব চাচা তাদেরকে পিছনে ফেলে হেঁটে গেলেন।
তিতুনি তখন উঠে দাঁড়াল। মেয়েটা রাজ্য জয় করার ভঙ্গি করে
তিতুনিকে বলল, “দেখলে, কোনো সমস্যা হয়েছে?” তিতুনি চাপা গলায় বলল, “মাহতাব চাচা আমার চেহারা দেখেন নাই সে জন্যে সমস্যা হয় নাই। এখানে তোমার কোনো ক্রেডিট নাই।”
“দেখলেও কোনো সমস্যা ছিল না-”মেয়েটার কথা প্রমাণ করার জন্যেই কি না কে জানে হঠাৎ করে পিছন থেকে মাহতাব চাচা ডাকলেন, “এই তিতুনি। একটু দাঁড়া!” তিতুনি এবং তিতুনির মতো দেখতে এলিয়েন মেয়ে দুজনেই
দাঁড়াল। তিতুনি চাপা গলায় জিজ্ঞেস করল, “এখন? এখন করব?"
মেয়েটা বলল, “কিছুই করতে হবে না।”
মাহতাব চাচা লম্বা পা ফেলে এসে তিতুনিকে বললেন, “একটা
কথা বলতে ভুলে গেছি। তোর বাবাকে বলিস-"
মাহতাব চাচা হঠাৎ করে থেমে গেলেন, তিতুনির পাশে দাঁড়ানো মেয়েটি তার চোখে পড়েছে আর কেমন যেন ইলেকট্রিক শক খাওয়ার মতো তার সারা শরীর কেঁপে উঠল। আমতা আমতা করে বললেন, “এ-এ-এইটা কে?"
“কোনটা?” প্রশ্নটা খুবই বোকার মতো হয়ে গেল কিন্তু তিতুনি আর কী করবে বুঝতে পারল না।
মাহতাব চাচা তোতলাতে তোতলাতে বললেন, “দু-দু-দু দুইটা তিতুনি?” তিতুনি মাথা নাড়ল, “জি চাচা। দুইটা।”
“দুইটা কেমন করে হয়?” মাহতাব চাচার মুখটা কেমন যেন হাঁ
হয়ে গেল । মাছের মতো কেমন যেন খাবি খেলেন। তিতুনি মাথা চুলকে বলল, “আমিও ঠিক জানি না চাচা।”মাহতাব চাচা হঠাৎ কেমন যেন মাথা ঘুরে পড়ে যেতে গিয়ে নিজেকে সামলে নিলেন। তিতুনি খপ করে মাহতাব চাচার হাতটা ধরে ফেলল, ডাকল, “মাহতাব চাচা।”
মাহতাব চাচা কোনো উত্তর না দিয়ে কেমন যেন ঘোলা চোখে
তিতুনির দিকে তাকিয়ে রইলেন। তিতুনির মতো দেখতে এলিয়েন মেয়েটি ফিসফিস করে বলল, “আমি সরে যাই। স্মৃতি মুছে দিয়েছি-” মেয়েটি ঘুরে জোরে জোরে পা ফেলে স্কুলের দিকে যেতে শুরু করল আর মাহতাব চাচা হঠাৎ কেমন করে জানি জেগে উঠলেন, তিতুনির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “তিতুনি? স্কুলে যাচ্ছিস?” বোঝাই যাচ্ছে তার আগের কথা কিছু মনে নাই।
তিতুনি শুকনো মুখে বলল, “জি চাচা।”
“স্কুলে লেখাপড়া হয়?”
তিতুনি একটু হাসার চেষ্টা করে বলল, “মাঝে মাঝে।” মাহতাব চাচা মাথা নেড়ে বললেন, “আজকালকার লেখাপড়ার
মাথামুণ্ডু কিছু বুঝি না।” তিতুনি মাথা নাড়ল, “আমিও বুঝি না।”
“তোর বাবা ভালো আছে?”
"আছে।”
“মা? টোটন?”
“আছে। সবাই ভালো আছে।” তিতুনি চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। মাহতাব চাচা আব্বুকে কিছু একটা বলার জন্য ফিরে এসেছিলেন, সেটা শুনে যাক। মাহতাব চাচা অবশ্যি কিছু বললেন না, চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলেন। তিতুনি জিজ্ঞেস করল, “মাহতাব চাচা, আব্বুকে কিছু একটা বলতে হবে?”
মাহতাব চাচা মাথা নাড়লেন, “হ্যা হ্যা। তোর বাবাকে বলবি-”, বলে মাহতাব চাচা দাঁড়িয়ে মনে করার চেষ্টা করতে লাগলেন। খানিকক্ষণ চেষ্টা করলেন কিন্তু মনে করতে পারলেন না। মেয়েটা মাহতাব চাচার স্মৃতি থেকে ওই কথাটাও মুছে দিয়েছে। মাহতাব চাচা কেমন যেন বোকার মতো একটু হেসে বললেন, “কী আশ্চর্য। মনে করতে পারছি না।” তারপর তিতুনির দিকে তাকিয়ে বললেন, “কিন্তু তুই কেমন করে বুঝতে পারলি তোর বাবাকে একটা কথা বলতে চাইছি?”
তিতুনি কাঁধ ঝাঁকাল, বলল, “জানি না। কেন জানি মনে হলো।” মাহতাব চাচা কথাটা শুনে খুব অবাক হলেন বলে মনে হলো না। হেঁটে হেঁটে চলে গেলেন। তিতুনিও একটা বড় নিঃশ্বাস ফেলে স্কুলের দিকে হাঁটতে লাগল। সে সামনে তাকাল, তিতুনির মতো দেখতে এলিয়েন মেয়েটি হনহন করে স্কুলের দিকে যাচ্ছে। মেয়েটা আসলেই একজনের মাথার ভেতরে ঢুকে তার স্মৃতি মুছে ফেলতে পারে। কী আশ্চর্য। মুছতে যখন পারে তাহলে কি উল্টোটা সম্ভব? কারো মস্তিষ্কে কি স্মৃতি লিখে দিতে পারবে? এলজেবরা কিংবা বাংলা ব্যাকরণ কিংবা তেলাপোকার পাচক প্রণালি কি মেয়েটা তার মগজে লিখে দিতে পারবে? তাহলে তাকে আর কষ্ট করে লেখাপড়া করতে হবে না।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now