বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
অনেক দিন আগের কথা কিন্তু একদমই নয়! এইতো গোটা কয়েকদিন আগে। দুপুর বেলা আমি টুনটুনির সাথে গল্প করছিলাম। সে রাজার নাক কাটার গল্প বলছিলো। গল্প করে ও চলে গেলো। আমি ভাবছি এখন কি করা যায়। উদাস মনে ভাবতে ভাবতে হাটছি। নদী দেখে মনে নদীতে সাঁতার কাটার ইচ্ছে হলো। আমি তখন নদীতে নামলাম। আপন মনে সাঁতার কাটছি।
" বাঁচাও,বাঁচাও,"
মায়া জড়ানো একটা আর্তনাদ শুনতে পেলাম। চারিদিকে তাকালাম। কেউ নেই। কিন্তু কথাটা তো কানে এসেছিলো। তার মানে আমার কান ভূল শুনেছিলো! আমি আবার সাঁতার কাটতে শুরু করি।
" আমাকে বাঁচাও,"
নাহ্, এবার তো ঠিকই শুনলাম বলে মনে হলো। আমি তাকিয়ে দেখি কেউ নেই। তাই আমি বললাম, কে কথা বলছো?
-- আমি যেই হই আপনি আমাকে বাঁচান।
-- তো তুমি কোথায় আছো? সামনে এসো।
-- আসবো। কিন্তু আপনি ভয় পাবেন নাতো!
-- না পাবো না।
-- আপনি একটু বাঁ দিকে ঘুরে দাড়ান।
আমি বাঁ দিকে ঘুরে দাড়ালাম। যা দেখলাম তাতে অবাক না হয়ে উপায় নেই। একটি মাছ! সে কথা বলছে। আমি তো বললাম, তুমি মাছ হয়ে কিভাবে কথা বলছো?
-- আসলে আমি সাধারণ মাছ নই।
-- তো!
-- আমি হলাম মৎস্যকুমারী। আমার আসল রূপ দেখো। আমি দেখলাম যে সে মাছ থেকে এক তরুণীতে পরিণত হচ্ছে। কোকরানো কালো ( যদিও অন্য মৎকুমারীদের চুল সোনালী রঙের হয়) রঙের চুল। এলোমেলো হয়ে আছে। ফর্সা মতো মুখমন্ডল। ঘন কালো ভ্রু। টানা টানা ময়াবী চোখ। টিকালো নাক। গোলাপী ঠোঁটে অদ্ভুত এক টান। কোমর পর্যন্ত জলের উপরে আছে।কোমর দেখে মনে হচ্ছে যে কোমর থেকে নিচে পা নেই। সেটা মাছের লেজ!
-- আশ্চর্য ! আমার সামনে দাড়িয়ে আছে এক মৎস্যকুমারী! আমার তো বিশ্বাসী হচ্ছে না।
-- হুমম। আপনি সত্যি দেখছেন।
-- কি নাম তোমার?
-- চমকলতা.....
-- আরে বাঃ চমৎকার নাম তো তোমার!
-- হুমম, আমাকে আগে বাঁচান!
-- কি হয়েছে?
-- আমাকে লিপ্পন হাঙর তারা করেছে।
-- কিন্তু হাঙরের সাথে আমি কি করে পেরে উঠবো!
-- আমি জানি না।
তারপর আমরা দেখলাম যে একটা বিশাল আকৃতির হাঙর এদিকে তীরের বেগে ধেয়ে আসছে। বিশাল বড় হা করে। তার বড় বড় ধারালো দাঁত চকচক করছে। চোখদুটো রক্তিম বর্ণ ধারন করেছে। আমি চিৎকার দিয়ে বললাম, চমকলতা, তারাতারি পাড়ে চলে এসো! বলেই আমি পারে চলে আসতে থাকি। চমকলতাও আসছে। আর লিপ্পন হাঙরও তীরের বেগে আসছে। আমি পাড়ে উঠে এলাম।
কিন্তু চমকলতা চিৎকার দিলো, এই দাড়ান, আমি কিভাবে উঠবো! আমার তো পা নেই! আমি তো চিন্তায় পরে গেলাম। লিপ্পন হাঙর এগিয়ে আসছে। প্রায় আর একটু এলেই চমকলতাকে ধরে ফেলে। তখনই আমি হাত বাড়িয়ে দিলাম। বললাম, চমকলতা, আমার হাত ধরো। চমকলতা তার হাত বাড়িয়ে দিলো। আমি ওর কোমল হাতের কব্জি ধরে হেচকা একটা টান দিলাম। আমি চিৎ হয়ে পাড়ে পরে গেলাম। আর চমকলতা টপকে এসে আমার বুকে পড়লো। ওর ভেজা চুল থেকে টপ টপ করে জল পরছিলো আমার মুখে। আর শুরু হয়ে গেলো বাংলা ফিল্মের নায়ক নাইকাদের মতো একে অপরের চোখের দিকে চাওয়া চাওয়ি!!
ওর মায়াবী চোখের দিকে তাকিয়ে ভাবছি যে কারো চোখে এতো মায়া থাকে কিভাবে ! একটা ঘোরে পরে যাই। শুধু তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে।
-- আপনার লাগেনি তো?
-- লেগেছে,
-- কোথায়?
-- মনে লেগেছে!
-- একি বলছেন! মনে ব্যথা লেগেছে!
-- না, ব্যথা নয়, প্রেম লেগেছে!
সে হঠাৎ এক ঝটকা দিয়ে ওর হাত ছাড়িয়ে নেয়। আর হাত মাটিতে ধাক্কা দিয়ে নিজে অপর দিকে গড়িয়ে যেতে থাকে। আমি ঘোর থেকে চমকে উঠি! একি বললাম আমি ওকে! ওর দিকে তাকিয়ে দেখি ও উল্টোদিকে মুখ ঘুড়িয়ে বালুর উপর বসে আছে। হঠাৎ নদীতে সরাৎ করে শব্দ হলো। তাকিয়ে দেখি লিপ্পন হাঙর ফোঁস ফোঁস শব্দ করছে। আমি তখন পাশ থেকে একটা পাথর দিয়ে দিলাম ঢিল দিলাম। আর ও সেটা তার বিরাট হা দিয়ে গিলে নিলো। তখন একটা বড় পাথর দিয়ে ওর একটা দাঁতকে লক্ষ্য করে ছুড়লাম। কাজ হলো। ওর দাঁতে লেগেছে। আর সে ঘুরে এক্কেবারে মাঝ নদীতে চলে গেলো।
যাইহোক ঝামেলা গেলো। ফিরে মৎস্য কুমারীর কাছে গেলাম। দেখি সে আগের মতোই বসে আছে। মনে হয় রেগে গেছে আমার কথায়। তাই আমি ওর রাগ ভাঙ্গানোর চেষ্টা করি। কিন্তু সে আমার দিকে ফিরেও চাইলো না। উল্টোদিকে মুখ গোমড়া করে বসে আছে।
-- চমকলতা! দেখো লিপ্পন হাঙর চলে গেছে।
-- (চুপ)
-- মনে হয় ও আর আসবে না।
-- (চুপ) --
কি হলো তোমার?
-- (চুপ)
-- আমার উপর রাগ করেছো তাই না?
-- (চুপ)
-- আসলে আমি দুঃখিত। আমি বুঝতে পারি নি যে আমার মুখ দিয়ে এমন কথা বের হবে। আমি তখন ঘোরের মধ্যে ছিলাম। তাই আবেগে মুখ ফসকে বেরিয়েছে। আমার কথায় কষ্ট পেয়ে থাকলে আমাকে ক্ষমা করে দেবেন। আমি চললাম।
এই বলে আমি গভীর জঙ্গলের দিকে যেতে থাকি।
-- এই দাড়ান! আমাকে একা ফেলে কোথায় যাচ্ছেন? পিছন থেকে কথাটা শুনে থমকে যাই। কি করবো ভেবে পাই পা। তখন আমি আবার ফিরে এলাম। বললাম, এখানে আপনার কোনো ভয় নেই। এখানে কেউ কারো ক্ষতি করে না। কেউ এলে আমার কথা বললেই সাহায্য করবে।
-- কিন্তু আপনাকে তো ভালো করে চিনিই না।
-- চিনতে হবে না। কেউ এলে শুধু বলবেন যে একজন মানুষ আপনাকে এখানে রেখেছে। আর আপনাকে সাহায্য করতে বলেছে।
-- কিন্তু কেউ যদি আমার ক্ষতি করে?
-- ক্ষতি তো আপনার মানুষ করতে পারে। এখানে আমি ছাড়া আর দ্বিতীয় মানুষ নেই।
-- তো কে সাহায্য করবে আমাকে?
-- হয় তো সিংহ, বাঘ, হরিণ, হাতি বা এদের মতো কেউ।
-- কিন্তু তারা যদি আমাকে খেয়ে ফেলে !
তখন আমি আমার গলা থেকে আমার লকেটটা খুলে ওর দিকে বাড়িয়ে দিলাম। সে বললো, এটা কি?
-- এই লকেটটা আপনার সাথে রাখুন। কেউ এলে দেখাবেন। তখন সবাই আপনাকে সাহায্য করবে।
এই বলে আমি লকেটটা ওর হাতে দিলাম। ও হাত বাড়িয় নিলো। আর আমার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখতে থাকে। আমি কিছু না বলে চলে গেলাম গভীর অরণ্যে। সে আমার চলে যাওয়ার পথে তাকিয়ে ছিলো কি না জানি না। কিন্তু আমি পিছনে একবারও তাকাই নি। অরণ্যের ভেতর এসে একটা গাছের নিচে বসলাম। কি রকম এই মৎস্য কুমারী। শুধু নিজেরটাই ভাবে! একবারও বললো না যে যা হয়েছে তা ভূলে যান। আপনাকে ক্ষমা করে দিলাম বা আপনাকে ক্ষমা চাইতে হবে না। আমি কি এমন ভূল করেছি? এটা তো আমি ইচ্ছে করে করি নি বা কথাগুলো একেবারে মন থেকে বলি নি। আচ্ছা সে কি তার রুপের বড়াই করে নাকি! করুক গে। তাতে আমার কি! ভালো লাগছে না। বিকেল হয়ে গেছে। শরীরটা শুকিয়ে গেছে বাতাসে। চলে গেলাম নিজের কুঁড়েঘরে। পেটের ভিতরে হাঙরে গোল্লাছুট খেলছে। দেখি কিছু খাবার পাই কি না। কই, কোথাও কিছু নেই। কি যে খাই। আম গাছ থেকে আম পেড়ে খাই। আজ আর রান্না করতে ইচ্ছে করছে না। গেলাম আম পেড়ে খেতে। গাছে উঠে কিছু আম পাড়লাম। পাকা পাকা আম, খেতেও সুস্বাদু। পেট মন দুটোই ভরবে। এমন সময় হরিণ এলো।
-- কি ব্যাপার হরিণ! আজকাল তো তোমার দেখাই পাওয়া যায় না।
-- আর দেখা পাওয়া! আজ তোমাকে কে দেখে সেটা তো শুনো।
-- কেন হরিণ, কি হয়েছে?
-- রাজা মশাই তোমাকে ডাকছে।
-- কেন? কি সমস্যা?
-- তুমিই জানো দাদা, কি সমস্যা বাঁধিয়েছো। রাজা মশাই ডাকছে। চলো আমার সাথে।
-- অগত্যা চলো।
চলবে.........
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now